ঢাকায় গণহত্যা নীরব মিডিয়া
রানা প্লাজায় ভবন ধসে ৯০০ মানুষের মৃত্যুও
যেন যথেষ্ট ছিল না, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় নতুন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
৬ই মে ভোর রাতের দিকে ঢাকায় যা ঘটেছে তা দৃশ্যত গণহত্যার (ম্যাসাকার)
নামান্তর।
বৃটেনের বিখ্যাত ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের আজ
প্রকাশিত সংখ্যায় এসব কথা বলা হয়েছে। এর অনলাইন সংস্করণে এ নিয়ে প্রকাশিত
প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়েছে, পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ, ইন হট
ব্লাড। দ্য কিলিং অব ইসলামিস্ট হার্ডলাইনার প্রমিজ ফার্দার ইন্সটেবেলিটি’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপিয়ান কূটনীতিকরা বলছেন, ঢাকায় কট্টর
ইসলামপন্থিদের সংগঠন হেফজতে ইসলামের সদস্যদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর অভিযানে প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছেন। দেশের অন্যান্য স্থানেও আরও
হত্যার ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার বলছে, দশ হাজার পুলিশ, আধা
সামরিক বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সদস্যের সমন্বয়ে
পরিচালিত অভিযানে শ’ শ’ লোক নিহত হয়েছেন। ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকাতে মৃতদেহ
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ঢাকার বাইরে অন্যান্য স্থানের মতো নারায়নগঞ্জেও
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন ২০ জন। শাপলা চত্বরে আসলেই কি
হয়েছে তা অস্পষ্ট। স্থানীয় মিডিয়াকে নীরব রাখা হয়েছে। গুলি শুরুর আগে পুলিশ
বাণিজ্যিক এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। বাংলাদেশের গ্রামীণ
এলাকা থেকে আসা হাজার হাজার মাদরাসার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের পিছু হটিয়ে
দেয়ার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরা সবাই স্বল্প
পরিচিত হেফাজতের সদস্য। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মাদরাসা থেকে এরা বেশির
ভাগ সমর্থন পেয়েছে। হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার কর্মী গত এপ্রিলে ঢাকায়
লংমার্চ করেছে। তখন তারা ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে তা পূরণের জন্য সময় বেঁধে
দিয়েছিল। এসব দাবির মধ্যে ইসলাম অবমাননার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে
ব্ল্যাসফেমি আইন প্রণয়নের কথাও রয়েছে। এছাড়া তালেবানি স্টাইলের দাবির মধ্যে
রয়েছে নারী উন্নয়ননীতি বাতিল করা, জনসম্মুখে নারী-পুরুষের মেলামেশা
নিষিদ্ধ করাসহ সংখ্যালঘু আহমেদিয়া সমপ্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবি। এসব
দাবি দেশের বেশির ভাগ মডারেট মুসলিম এবং প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর বিপক্ষে।
এরপরেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি হেফাজতকে সমর্থন দিয়েছে। ইসলামপন্থিদের
প্রতি বিএনপির সমর্থন দিনে দিনে আরও প্রকট হয়ে উঠছে। তারা সৌদি আরবের মতো
ইসলামি শাসনের পক্ষপাতি ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী হিসেবে
রয়েছে। এপ্রিল মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আরব দেশের দূতদের
নিয়ে এক বিশেষ বৈঠক করেছেন। এতে কূটনীতিকদের তার দলের প্রতি সমর্থনের
বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেই এ আয়োজন করা হয়েছিল। বাংলাদেশে ধর্মের রাজনীতি বেশ
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচিত আওয়ামী লীগও
নির্বাচনের আগে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা
যায়, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ কট্টরপন্থি খেলাফতে মজলিস পার্টির সঙ্গে
নির্বাচনী চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তিতে হেফাজত আজ যা দাবি করছে সেটা পূরণে
যথা সম্ভব চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। অবশ্য এ বিষয়টি পরে আর
বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ, সেই নির্বাচনই পরবর্তীকালে বাতিল হয়েছিল। এবার ২০১৪
সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে
আওয়ামী লীগও ইসলামপন্থি হয়ে উঠছে। গতমাসে চার নাস্তিক ব্লগারকে গ্রেপ্তার
করতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল। ৬ই মে হেফাজতের ৯০ বছর বয়সী নেতাকে বিমানযোগে
চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তার
করেনি। সামনের দিনগুলো হবে আরও উত্তাল। ইসলামী কট্টরপন্থি নেতা বলে পরিচিত
বেশির ভাগ জামায়াতের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারের
রায় দেয়া শুরু হবে। একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেব্রুয়ারি মাসে দেয়া রায়ের
পরিপ্রেক্ষিতে সহিংস বিক্ষোভে কমপক্ষে ৬৭ জন নিহত হয়েছিলেন। ৯ই মে
যুদ্ধপরাধ বিচারের আদালত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ
কামারুজ্জামানকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড
দিয়েছে। তাই সামনে বাংলাদেশের জন্য আরও রক্তপাত অপেক্ষা করছে।
No comments