কেন এ হরতাল-আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন
হেফাজতে ইসলাম রবিবারের হরতাল প্রত্যাহার করে নেওয়ায় স্বস্তি ফিরে এলেও
একই দিনে জামায়াতের ডাকা হরতালে আবারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে
জামায়াতের হরতাল ডাকার বৈধতা ও যৌক্তিকতা নিয়েও। এর আগে ১৮ দলের পক্ষ থেকে
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতাল ডাকা হয়েছিল।
ঢিলেঢালাভাবে হরতাল হলেও জনজীবনে
তার প্রভাব কম হয়নি। রবিবার আবার হরতাল ডাকার কারণে বুধবার থেকে রবিবার
পর্যন্ত দেশ অচল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃহস্পতিবারই জামায়াতে ইসলামীর
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও একাত্তরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের আলবদর বাহিনীর
অন্যতম সংগঠক কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায় ঘোষণা হয়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাঁকে
ফাঁসির আদেশ দেন। সংগত কারণেই প্রশ্ন আসে, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কেউ
হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে পারে কি না। প্রচলিত আইনের আওতায়
বিচারক রায় দিয়েছেন। সেই রায় তাদের সংক্ষুব্ধ করতে পারে। এ ধরনের বিচারে
আপিল করার সুযোগ অন্য কোথাও না থাকলেও বাংলাদেশে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সেই সুবাদে তাদের সামনে আপিল করার পথ উন্মুক্ত। জামায়াত নেতার পক্ষের উকিল
আপিল করার সিদ্ধান্তের কথাও ইতিমধ্যে বলেছেন। এমন অবস্থায় হরতাল ডাকার
উদ্দেশ্য কী থাকতে পারে সে সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। রায়ে সংক্ষুব্ধ
হওয়ার কারণে দলীয়ভাবে যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আপিল করা হবে, সেখানে
কর্মী-সমর্থকদের ধংসাত্মক কাজে জড়িত করা হচ্ছে কেন, যা স্পষ্টত ফৌজদারি
অপরাধে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় জামায়াতের কর্মীদের ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি
ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করার ঘটনা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া যায় না। হরতাল
করার অধিকার থাকলেও হরতাল বাস্তবায়নের প্রয়োজনে গাড়ি ভাঙচুর করার কোনো আইনি
অধিকার কারো নেই। সুতরাং সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। এ
প্রসঙ্গে প্রশাসনের দক্ষতা কিংবা আন্তরিকতার বিষয়টিও আসে। এত নৃশংস ঘটনা
ঘটছে দেশে। গাড়ি ভাঙচুর, বোমা বিস্ফোরণ, অগি্নসংযোগের মতো এত ঘটনা ঘটছে,
কিন্তু সেই পরিমাণে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর সদস্যরা। হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে গাড়ি পোড়ানোর মতো ঘটনাগুলোতে
যেসব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে তাদের বিচারের বিষয়টিও জনসমক্ষে
প্রকাশ করা হচ্ছে না। বিচার কোন পর্যায়ে আছে, তদন্ত হলে তদন্তে প্রাপ্ত
তথ্য প্রকাশে যদি আইনগত কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে তা প্রকাশ করা জরুরি।
তাহলে নতুন করে নৃশংসতা ঘটার আশঙ্কা কমে যাবে।
No comments