প্রয়োজন উচ্চশিক্ষায় আরও মনোযোগী হওয়া by ড. ইকবাল হোসেন
প্রকাশিত
হলো এসএসসি ও সমমানের সব পরীক্ষার ফলাফল। অভিনন্দন কৃতকার্য সকল
শিক্ষার্থীকে। পাশাপাশি পরবর্তী বছরের শুভ কামনা থাকবে বাকিদের জন্য।
প্রথমেই ফলাফলের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক।
বিগত সরকারের
২০০৮ সালে রেখে যাওয়া এসএসসি পাসের হার ছিল ৬৮.৯১%। ২০০৯ সালে বর্তমান
সরকারের প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৮.১৯%। পরে সরকারের
প্রচেষ্টায় পাসের হার ২০১০-এ ৭৮.১৯%, ২০১১-তে ৮২.১৬%, ২০১২-তে ৮৬.৩২% এবং
সর্বশেষ ২০১৩-তে প্রায় ৯০.০০%-তে ক্রমান্বয়ে উন্নীত হয়। প্রচেষ্টার
প্রাপ্তি যেন জিপিএ-৫ ধারীদের মাঝেও স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান। যেমন, বিগত
সরকারের রেখে যাওয়া ৪১৯১৭ হতে বৃদ্ধি পেয়ে জিপিএ-৫ ধারীদের সংখ্যা ২০০৯-এ
৪৫৯৩৪, ২০১০-এ ৬২১৩৪, ২০১১-তে ৬২৭৮৮, ২০১২-তে ৬৫২৫২ ও সর্বশেষ ২০১৩-তে
প্রায় ৭৭,০০০-এ উন্নীত হয়। সমমানের পরীক্ষায়ও রয়েছে অনুরূপ চিত্র। ফলাফলের
এই অগ্রগতি নিয়ে যদি এক কথায় কিছু বলতে হয় তাহলে আমি বলব, এ অগ্রগতি
প্রশ্নমুক্ত নয়; তথাপী এর গঠনমূলক কিছু অর্জন রয়েছে, যা অবশ্যই কল্যাণকর।
বর্তমান
সরকারের শিক্ষাখাতে আরও উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে। প্রথমেই চলে আসে জাতীয়
শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন প্রসঙ্গ। এই শিক্ষানীতির পূর্ণ-বাস্তবায়ন
শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্যসমূহ দূরীকরণপূর্বক পরবর্তী প্রজন্মকে দক্ষ
ও আলোকিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করা যায়।
সরকার প্রথমবারের মতো ২০১০-শিক্ষাবর্ষ হতে মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী, দাখিল,
কারিগরি ও ভোকেশনাল স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক
সরবরাহের ব্যবস্থাও করেছে। কাক্সিক্ষত সুফল যদিও আজ প্রশ্নমুক্ত নয় তথাপি
বলবো, অষ্টম শ্রেণীতে জেএসসি পরীক্ষার প্রবর্তনও সরকারের শিক্ষাখাতে এক
ধরনের অর্জন। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার মতো মাদরাসা শিক্ষায়ও
বিজ্ঞান-কম্পিউটার শাখা চালু করা হয়েছে। বেশ কিছু-সংখ্যক মাদরাসায় ভোকেশনাল
কোর্স চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় এই প্রথমবারের
মত ৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। প্রাথমিক-মাধ্যমিক
শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিঙ্গ-সমতা আনয়নে রয়েছে সরকারের ভূমিকা। শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন বন্ধের লক্ষ্যে যৌননিপীড়ন রোধ নীতিমালা প্রণয়ন
করাসহ আরও বেশ কিছুসংখ্যক উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম-অর্জন রয়েছে এ সরকারের।
সুতরাং সরকার আসলেই এক্ষেত্রে অনেক কাক্সিক্ষত ভূমিকাই পালন করে আসছে এবং
অবশ্যই সবার প্রশংসা প্রাপ্য।
তবে সার্বিক পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট যে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক ও এর সমতুল্যরা প্রায় এককভাবেই ছিল বর্তমান সরকারের সুনজরে। প্রায় সারাটা সময় সরকারের উদাসীন দৃষ্টিতেই ছিল আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা। বর্তমান সরকারের প্রথম দু’বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল স্বয়ং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেই। প্রতিবেদনের প্রধান ১৩টি কার্যক্রমের মধ্যে মাত্র দুটি কার্যক্রম ছিল আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ঘিরে। প্রথমটি ছিল ‘আইন ও সংস্কার’ এবং দ্বিতীয়টি ছিল ‘গবেষণা সহায়তা ও উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রসঙ্গে’। আইন ও সংস্কার বলতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর আইন এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস আইন নামক দুটি আইন পাসের কথা বলা হয়। বলা হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন নীতিগতভাবে অনুমোদন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ পাস করার কথা। এই আইনসমূহের প্রয়োগ-বাস্তবায়নে স্বয়ং সরকারের-ই আদৌ কোন সন্তুষ্টি রয়েছে কিনা প্রশ্ন করা যেতে পারে। গবেষণা সহায়তা ও উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রসঙ্গে নতুনত্বের ন্যূনতম কোন ছোয়াও ছিল না। বরং তা সীমাবদ্ধ ছিল কিছু নিয়মিত কার্যক্রমে। আর গত দু’বছরে এই উচ্চশিক্ষায় সরকারের উদাসীনতার দৃশ্যমান ফসল হলো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিরাজমান বিশেষ অস্থিরতা। এ অস্থিরতার ছোবল হতে স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহেরও রেহাই মিলেনি। শিক্ষকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হেয় করার মতো ঘটনাও ঘটেছে স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে। শিক্ষকদের শারীরিকভাবে প্রহৃত হতেও দেখা গিয়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দুর্ভাগ্য আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার, অনেকটাই ব্যর্থ সরকারের সুনজর পেতে।
প্রাসঙ্গিকভাবেই এবার একটি গল্প শোনা যাক। একদা ছিল দুই ভাই। বড় ভাইটি কিছুটা সহজ-সরল প্রকৃতিরই ছিল। প্রায় সময় ছোট ভাইয়ের চতুরতার কাছে হার মানতে হতো তাকে। ছিল না ছোট ভাইয়ের প্রতি কোন আক্ষেপ-অভিযোগ। নিজেকে সেভাবেই মানিয়ে নিতো সে। প্রিয় দুদর্শনীকে লক্ষ্য করেই বড় ভাইয়ের ইচ্ছে হলো একটি গোলাপ গাছ লাগানোর। চতুর ছোট ভাই বড় ভাইয়ের সেই ইচ্ছের কারণ ধরে ফেলল খুব সহজেই। যাই হোক, বড় ভাই তার ইচ্ছেমত গোলাপের ছোট্ট একটি গাছ লাগিয়েই ফেলল। ব্যস্ত হয়ে পড়ল গাছের মূলে সঠিকভাবে পরিচর্যায়। গাছটি বেড়ে উঠে একদিন ফুল দেয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাল। ঠিক সেই মুহূর্তেই চতুর ছোট ভাই গাছটির অগ্রভাগ কেটে নিল। কি আর করা, ব্যথিত হয়েই বড় ভাই আবারও পূর্বের ন্যায় গাছের পরিচর্যা চালিয়ে গেল। অন্যদিকে ছোট ভাই সময় মতো গাছের অগ্রভাগটি কেটে নিল। এভাবে বেশ কিছু দিন চলার পর বড় ভাই সেই প্রিয় সুদর্শনীর কাছে ঘটনাটি তুলে ধরল। সুদর্শনী মুচকি হেসে বলল, ফুল পেতে শুধু গাছের মূলে পরিচর্যা যথার্থ নয়; বরং গাছের অগ্রভাগেও নজর দিতে হয়। গল্পের শিক্ষাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এটা মেনে নিতে হবে যে, মূল অর্থাৎ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা-ব্যবস্থা যতই মজবুত হোক না কেন যথাযথ গুরুত্ব প্রদানপূর্বক অগ্র তথা উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ব্যতিরেকে শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য/ উদ্দেশ্য অর্জিত হতে পারে না। সুতরাং এই উচ্চশিক্ষাকেই নিয়ে আসতে হবে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। আর প্রয়োজনীয় অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে থাকতে হবে যথার্থ উদ্যোগ, কার্যক্রম ও প্রচেষ্টা।
উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, কার্যক্রম ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে অনেক মতামত ও প্রস্তাবনা ইতিমধ্যেই রয়েছে। তথাপী সীমিত জ্ঞানে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বলবো। প্রথমেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান-প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে, প্রশাসনিক পদে নিয়োগদান প্রক্রিয়ায় ঐতিহ্য-নীতিমালার পূর্ণ অনুসরণ হতে হবে, শিক্ষার মান কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কার্যসীমা বাড়িয়ে কমিশনকে আরো মজবুত করতে হবে, শিক্ষাদান পদ্ধতিতে মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগ/কার্যক্রমের ধরন ও মাত্রা আরও অনেক বাড়িয়ে আনতে হবে, পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ যৌক্তিক সময়ের ব্যবধানে নিয়মিতভাবে চালিয়ে নিতে হবে, শিক্ষার্থীদের অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে আনতে হবে, দেশীয় গবেষণা ইন্সটিটিউট আর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা কার্যকরভাবে বাড়িয়ে আনতে হবে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারগুলোর মান ক্রমান্বয়ে উন্নত করতে হবে, মৌলিক গবেষণা উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বিশেষ করে দাতা-সংস্থাসমূহকে অর্থায়নে আগ্রহী করে তুলতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, উচ্চশিক্ষায় দিন দিন ভর্তি ইচ্ছুকদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধ্যমত যৌক্তিকভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে নেয়ার কার্যকর চেষ্টা থাকতে হবে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে শিক্ষা-গবেষণায় সহযোগিতার কার্যকর ব্যবস্থা বৃহৎ পরিসরে গড়ে তুলতে হবে ইত্যাদি।
অবশেষে আশা করবো, দূরীভূত হবে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের সব উদাসীনতা-প্রতিবন্ধকতা। অর্জিত হবে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি নিয়মিতভাবে। আর প্রিয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ধাপে ধাপে।
-ড. ইকবাল হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট
তবে সার্বিক পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট যে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক ও এর সমতুল্যরা প্রায় এককভাবেই ছিল বর্তমান সরকারের সুনজরে। প্রায় সারাটা সময় সরকারের উদাসীন দৃষ্টিতেই ছিল আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা। বর্তমান সরকারের প্রথম দু’বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল স্বয়ং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেই। প্রতিবেদনের প্রধান ১৩টি কার্যক্রমের মধ্যে মাত্র দুটি কার্যক্রম ছিল আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ঘিরে। প্রথমটি ছিল ‘আইন ও সংস্কার’ এবং দ্বিতীয়টি ছিল ‘গবেষণা সহায়তা ও উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রসঙ্গে’। আইন ও সংস্কার বলতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর আইন এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস আইন নামক দুটি আইন পাসের কথা বলা হয়। বলা হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন নীতিগতভাবে অনুমোদন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ পাস করার কথা। এই আইনসমূহের প্রয়োগ-বাস্তবায়নে স্বয়ং সরকারের-ই আদৌ কোন সন্তুষ্টি রয়েছে কিনা প্রশ্ন করা যেতে পারে। গবেষণা সহায়তা ও উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রসঙ্গে নতুনত্বের ন্যূনতম কোন ছোয়াও ছিল না। বরং তা সীমাবদ্ধ ছিল কিছু নিয়মিত কার্যক্রমে। আর গত দু’বছরে এই উচ্চশিক্ষায় সরকারের উদাসীনতার দৃশ্যমান ফসল হলো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিরাজমান বিশেষ অস্থিরতা। এ অস্থিরতার ছোবল হতে স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহেরও রেহাই মিলেনি। শিক্ষকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হেয় করার মতো ঘটনাও ঘটেছে স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে। শিক্ষকদের শারীরিকভাবে প্রহৃত হতেও দেখা গিয়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দুর্ভাগ্য আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার, অনেকটাই ব্যর্থ সরকারের সুনজর পেতে।
প্রাসঙ্গিকভাবেই এবার একটি গল্প শোনা যাক। একদা ছিল দুই ভাই। বড় ভাইটি কিছুটা সহজ-সরল প্রকৃতিরই ছিল। প্রায় সময় ছোট ভাইয়ের চতুরতার কাছে হার মানতে হতো তাকে। ছিল না ছোট ভাইয়ের প্রতি কোন আক্ষেপ-অভিযোগ। নিজেকে সেভাবেই মানিয়ে নিতো সে। প্রিয় দুদর্শনীকে লক্ষ্য করেই বড় ভাইয়ের ইচ্ছে হলো একটি গোলাপ গাছ লাগানোর। চতুর ছোট ভাই বড় ভাইয়ের সেই ইচ্ছের কারণ ধরে ফেলল খুব সহজেই। যাই হোক, বড় ভাই তার ইচ্ছেমত গোলাপের ছোট্ট একটি গাছ লাগিয়েই ফেলল। ব্যস্ত হয়ে পড়ল গাছের মূলে সঠিকভাবে পরিচর্যায়। গাছটি বেড়ে উঠে একদিন ফুল দেয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাল। ঠিক সেই মুহূর্তেই চতুর ছোট ভাই গাছটির অগ্রভাগ কেটে নিল। কি আর করা, ব্যথিত হয়েই বড় ভাই আবারও পূর্বের ন্যায় গাছের পরিচর্যা চালিয়ে গেল। অন্যদিকে ছোট ভাই সময় মতো গাছের অগ্রভাগটি কেটে নিল। এভাবে বেশ কিছু দিন চলার পর বড় ভাই সেই প্রিয় সুদর্শনীর কাছে ঘটনাটি তুলে ধরল। সুদর্শনী মুচকি হেসে বলল, ফুল পেতে শুধু গাছের মূলে পরিচর্যা যথার্থ নয়; বরং গাছের অগ্রভাগেও নজর দিতে হয়। গল্পের শিক্ষাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এটা মেনে নিতে হবে যে, মূল অর্থাৎ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা-ব্যবস্থা যতই মজবুত হোক না কেন যথাযথ গুরুত্ব প্রদানপূর্বক অগ্র তথা উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ব্যতিরেকে শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য/ উদ্দেশ্য অর্জিত হতে পারে না। সুতরাং এই উচ্চশিক্ষাকেই নিয়ে আসতে হবে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। আর প্রয়োজনীয় অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে থাকতে হবে যথার্থ উদ্যোগ, কার্যক্রম ও প্রচেষ্টা।
উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, কার্যক্রম ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে অনেক মতামত ও প্রস্তাবনা ইতিমধ্যেই রয়েছে। তথাপী সীমিত জ্ঞানে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বলবো। প্রথমেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান-প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে, প্রশাসনিক পদে নিয়োগদান প্রক্রিয়ায় ঐতিহ্য-নীতিমালার পূর্ণ অনুসরণ হতে হবে, শিক্ষার মান কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কার্যসীমা বাড়িয়ে কমিশনকে আরো মজবুত করতে হবে, শিক্ষাদান পদ্ধতিতে মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগ/কার্যক্রমের ধরন ও মাত্রা আরও অনেক বাড়িয়ে আনতে হবে, পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ যৌক্তিক সময়ের ব্যবধানে নিয়মিতভাবে চালিয়ে নিতে হবে, শিক্ষার্থীদের অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে আনতে হবে, দেশীয় গবেষণা ইন্সটিটিউট আর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা কার্যকরভাবে বাড়িয়ে আনতে হবে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারগুলোর মান ক্রমান্বয়ে উন্নত করতে হবে, মৌলিক গবেষণা উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বিশেষ করে দাতা-সংস্থাসমূহকে অর্থায়নে আগ্রহী করে তুলতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, উচ্চশিক্ষায় দিন দিন ভর্তি ইচ্ছুকদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধ্যমত যৌক্তিকভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে নেয়ার কার্যকর চেষ্টা থাকতে হবে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে শিক্ষা-গবেষণায় সহযোগিতার কার্যকর ব্যবস্থা বৃহৎ পরিসরে গড়ে তুলতে হবে ইত্যাদি।
অবশেষে আশা করবো, দূরীভূত হবে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের সব উদাসীনতা-প্রতিবন্ধকতা। অর্জিত হবে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি নিয়মিতভাবে। আর প্রিয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ধাপে ধাপে।
-ড. ইকবাল হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট
No comments