সনদবিহীন মুক্তিযোদ্ধা by সুমন আহমেদ
গত ৭ এপ্রিল ২০১৩ প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় ‘একজন সনদহীন মুক্তিযোদ্ধার কথা’ লেখাটি প্রকাশিত হয়। কায়কোবাদ স্যারের লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে সরকারি সা’দত কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোলায়মান কবীরের তত্ত্বাবধানে আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবং তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। এ রকম একজন সনদবিহীন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকারের ভিডিও ধারণ করি। তাঁর নাম এস এম মাসুদ সরকার। বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কল্লা গ্রামে। ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকা আর্ট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি টাঙ্গাইলে ফিরে আসেন। ময়মনসিংহের দক্ষিণাঞ্চলে তৎপর আফসার বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত যোদ্ধা হিসেবে রণাঙ্গনে লড়াই করেন। মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক মুখপত্র সাপ্তাহিক জাগ্রত বাংলার উদ্যোক্তা ও প্রধান সহকারী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। যুদ্ধ চলাকালে জাগ্রত বাংলার ১২টি সংখ্যা বের হয়। পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি হাতে লেখা। সবুজ জমিনে গোলাকার লাল বৃত্ত, যার মাঝখানে বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্র। পতাকার সঙ্গে বাংলার সংগ্রামী জনগণের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য জাগ্রত বাংলা প্রথমে তিন রঙা প্রচ্ছদে প্রকাশ করা হয়। এই প্রচ্ছদের ডিজাইন করেন এস এম মাসুদ সরকার। রাতভর ফুলস্কেপের প্রথম পাতায় এই প্রচ্ছদ আঁকতে থাকেন। সম্পাদক বাঙালি এবং ভালুকা অঞ্চলের ‘আজাদনগর’ নামক ছদ্মনামের জায়গা থেকে এটি প্রকাশিত হয়। হানাদার শোষকদের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচনের জন্য তিনি প্রচুর কার্টুন আঁকেন, যা পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশ পায়। দুই মাস ধরে হাতে লেখা এ পত্রিকার কয়েক হাজার কপি বিক্রি হয়। পরে সাইক্লোস্টাইল মেশিনের সাহায্যে ছাপার ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিল, হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ষষ্ঠ ও অন্যান্য খণ্ডে জাগ্রত বাংলার পঞ্চম থেকে নবম সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া এস এ কালাম সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধে জাগ্রত বাংলা প্রথম থেকে চতুর্থ সংখ্যা পর্যন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রকাশনার বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপট প্রকাশিত হয়েছে।
যুদ্ধকালে তিনি টাঙ্গাইল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ও কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান আনোয়ারুল আলম শহীদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। উল্লেখ্য, কাদেরিয়া বাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের মুখপত্র রণাঙ্গন-এর প্রচ্ছদও করেন এস এম মাসুদ সরকার। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকায় ফিরে গেলে সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর হাতে লেখা সনদ পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পরে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি।
এই সাহসী যোদ্ধা যেমন কলম-কালি-তুলি নিয়ে দিনরাত খেটেছেন, প্রত্যক্ষ সমরেও অংশগ্রহণ করেছেন বীরদর্পে। তিনি আজ বয়সের ভারে ক্লান্ত। অভিমানে, দুঃখে, বুকভরা কান্না চেপে দিনাতিপাত করছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে হলেও জাতির কাছ থেকে উপযুক্ত স্বীকৃতি ও মর্যাদা পাবেন বলেই বিশ্বাস করেন। শিগগিরই তিনি তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি ও সম্মান পাবেন বলে আশা করি।
সুমন আহমেদ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী
সরকারি সা’দত কলেজ, টাঙ্গাইল।
যুদ্ধকালে তিনি টাঙ্গাইল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ও কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান আনোয়ারুল আলম শহীদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। উল্লেখ্য, কাদেরিয়া বাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের মুখপত্র রণাঙ্গন-এর প্রচ্ছদও করেন এস এম মাসুদ সরকার। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকায় ফিরে গেলে সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর হাতে লেখা সনদ পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পরে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি।
এই সাহসী যোদ্ধা যেমন কলম-কালি-তুলি নিয়ে দিনরাত খেটেছেন, প্রত্যক্ষ সমরেও অংশগ্রহণ করেছেন বীরদর্পে। তিনি আজ বয়সের ভারে ক্লান্ত। অভিমানে, দুঃখে, বুকভরা কান্না চেপে দিনাতিপাত করছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে হলেও জাতির কাছ থেকে উপযুক্ত স্বীকৃতি ও মর্যাদা পাবেন বলেই বিশ্বাস করেন। শিগগিরই তিনি তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি ও সম্মান পাবেন বলে আশা করি।
সুমন আহমেদ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী
সরকারি সা’দত কলেজ, টাঙ্গাইল।
No comments