হিটলারের এসএসআর বাহিনী by মিনা ফারাহ
হিটলারের টার্গেট ইহুদি। আমাদের টার্গেট বিরোধী দল আর গরিব শ্রেণী। নিরীহ বাংলাদেশ যে জার্মানি নয় ৪২ বছর ধরেই শাসকেরা তা মানতে রাজি নন। ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ আবারো টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। হিটলারের ছিল গ্যাস চেম্বার, আমাদের বেলায় ১৬ কোটি মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারছে রাজনীতির দাবানল।
মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে ইরাক ম্যাসাকার আর জালিয়ানওয়ালাবাগের মতো বিশেষ শ্রেণীকে টার্গেট করা দু’টি হত্যাকাণ্ড জাতিসঙ্ঘের সংজ্ঞায় গণহত্যা। একটি সরকারের হাতে তিন কিস্তিতে কেন গণহত্যা ঘটল এবং জড়িতদের বিচারের বিষয়টি এখন পর্যন্ত আদালতের নজরে না আসাটা দুঃখজনক। ‘সহিংসতা কাম্য নয়, সংলাপে বসুন?’ কথায় কথায় ড্রোন ফেলে অথচ পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের চোখের সামনে পরপর দুটো হত্যাকাণ্ড সত্ত্বেও নীরব দর্শকের ভূমিকা যেমন নিন্দনীয় তেমনি মানবাধিকার পরিপন্থী। স্পেকট্রাম ঘটনার পর পশ্চিমারা দায়িত্বশীল হলে পোশাক কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটত কি? এরা তো ভালো করেই জানে, বাংলাদেশের আইনহীনতা এবং দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যের কথা। অন্য দিকে মৃত্যু যেন পুতুল পুতুল খেলা মনোভাবের উদাসীন সরকারের উদ্বেগজনক দায়িত্বহীনতা। সাধারণ মানুষের উদাসীনতায় আমরা হতবাক।হিটলারের ছিল ছয়টি অঙ্গসংগঠন। খুন-খারাবি এরাই করত। বিটিভির মতো তাদেরও রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত করত অপপ্রচার মন্ত্রী গোয়েবলস। আমেরিকাকে শায়েস্তা করতে হিটলারের বুদ্ধিমতো জাপানিরা পার্ল হারবার আক্রমণ করলে বাধ্য হয়ে মিত্রবাহিনী নাগাসাকি-হিরোশিমার ওপর বোমা ফেললে আত্মসমর্পণে বাধ্য হলো জাপান। আওয়ামী লীগেরও আছে কয়েকটি অঙ্গসংগঠন। জয়নাল হাজারী থেকে দেলোয়ার হোসেন কিংবা মুরাদ জং থেকে সোহেল রানা… স্বাধীনতার পর থেকেই সন্ত্রাসে লিপ্ত। প্রধানমন্ত্রী না বললে খুনি কেন গ্রেফতার হবে না বিষয়টি কেন আদালতের নজরে আসেনি, কোনো সুস্থ মানুষের পইে বোধগম্য নয়। রানা ছাত্রলীগের নয় প্রমাণ করতে সিএনএন-এর সাথে ১৫ মিনিটের বাগযুদ্ধ রীতিমতো আত্মঘাতী এবং লজ্জার। আমাদের সমস্যা রানা নয়, রানার স্রষ্টা। এসএসআর বাহিনী হিটলারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ হাসিনার নেতৃত্বে নেই। তাই চার বছরের পুঞ্জীভূত অপরাধ ঠেকাতে লিটলম্যান বোমার মতো রানা প্লাজাও যেন অলৌকিক হস্তপে এবং হরতালটিও অলৌকিক না হলে উদ্ধার টিম দেরিতে পৌঁছাত বললে কি ভুল হবে? ভবন ভাঙেনি, ভেঙেছে আওয়ামী লীগের কপাল। আবার প্রমাণ হলো আওয়ামী লীগ বিপজ্জনক দল এবং অবকাঠামো ভেঙে পুনর্জন্ম না নিলে বারবার দেখা দেবে বৌদ্ধবিহার, হলমার্ক, পদ্মা সেতু, রানা প্লাজার মতো ক্যান্সার।
বর্তমান শাসক শ্রেণী হয়তো ভাবেন, বাংলাদেশ হলো জার্মানির মতো একটি অসম্ভব বড়লোক এবং যুদ্ধমুখী দেশ। প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক আপ্যায়নব্যয় প্রায় তিন লাখ টাকা। সেনাবাহিনীর জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনলেও বাস্তবে আমাদের টাকা নেই, আক্রমণেরও ভয় নেই। তাহলে নিজেকে জার্মানি ভাবা কেন? কারণ যে যায় লঙ্কা, সে হয় রাবণ।
হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নায়ক এমপি মুরাদবাহিনীর সাথে রানাবাহিনীর সম্পৃক্ততা মিডিয়া ১০০ ভাগ স্পষ্ট করলেও এমপি মুরাদ কেনো গ্রেফতার হলেন না। তবে সিএনএন সাাৎকারে রানার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং সাংবাদিকের ঝগড়াঝাঁটি প্রমাণ করল, আমাদের মিডিয়াগুলো মিথ্যুক। অন্যথায় মিডিয়াকেই আবারো মুরাদ জং আর রানার সম্পর্ক প্রমাণ করতে হবে। পশ্চিমের মে দিবসের কাঠগড়ায় বাংলাদেশ। জোর করে পিটিয়ে ভাঙা ভবনে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি হইচই ফেলে দিয়েছে। আর এসবের মূলে এসএসআর বাহিনীর মতো সন্ত্রাসী আওয়ামী অঙ্গসংগঠনগুলো।
কেন এই হত্যাকাণ্ড
খালেদাকে শায়েস্তা করাই হত্যাকাণ্ডের খলনায়ক। হরতালের নেতৃত্বে গডফাদার মুরাদ জং ও রানার কপালে চুমো খাওয়ার ছবিটি এমনকি পশ্চিমেও হইচই ফেলে দিয়েছে। এ রকম হাজার হাজার সোহেল রানা নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনীতি এবং বিলিয়ন ডলারের অপরাধ জগৎ। খুনি ক্রেতা-বিক্রেতা-সরকার মিলে ত্রিভুজ ষড়যন্ত্রের শিকার বাংলাদেশ এখন মৃত্যুপুরী। বিজএমইএ, বিকেএমইএ-র প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার পরেই ভবন মালিক গ্রেফতারে আমরা উদ্বিগ্ন। সিএনএন আমাদের মিথ্যবাদী বলেছে। ২৭ এপ্রিল প্রথম আলোর প্রতিবেদন, ভবন মালিকদের বাঁচিয়ে দেয় বিজিএমইএ। দেলোয়ার হোসনকেও লুকিয়ে থাকতে পরামর্শ দিয়েছিল বিজিএমইএ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রশ্ন, সরকারের সাথে বিজিএমইএ-এর দহরম মহরম শেষ হবে কবে? ইকোনমিস্ট বলছে, কয়েকটি প্রভাবশালী মিডিয়ার মালিক তারা, চাঁদা এবং মিডিয়া দিয়ে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রশ্ন, সবাই মিথ্যাবাদী আর সরকারই শুধু সত্যবাদী?
৯/১১ এবং হাইতির দুর্ঘটনায় মাসের পর মাস পশ্চিমা মিডিয়ার ভূমিকা স্পষ্ট করতে ব্যর্থ বাংলা মিডিয়াগুলো। আমরাও চাই সাভার হত্যাকাণ্ড কয়েক মাস মিডিয়ায় থাকুক, কিন্তু পুঁজিবাদীদের আগ্রাসনে তা অসম্ভব। বিজেএমইএ-এর ধৃষ্টতা অপরিসীম। শত শত নিখোঁজ, শত শত খুন অথচ ২০ বিলিয়ন ডলারের লোভী, খুনি বিজেএমইএ আজ পর্যন্ত একটি তালিকা দিতে পারল না। এখন বলছে তালিকার অভাবে শ্রমিকের বেতন দেয়াও সম্ভব নয়। তাহলে কি ধরে নেবো প্রায় চার হাজার নিখোঁজের তালিকা জানাজানি হলে সস্তা শ্রম হারাবার ভয়ে আতঙ্কিত ক্রেতাদের থেকে অনুমতি পায়নি কিংবা পশ্চিমা মিডিয়ার ভয়ে সরকার বাদ সেধেছে? বিক্রেতাদের একমাত্র চিন্তা মেরেকেটে দৈনিক ২৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি। সুতরাং রানা প্লাজার সামনে নিয়ে খুনিদের সব ক’টাকে ফাঁসি দিলেও যথেষ্ট নয়। আমাদের প্রশ্ন, সরকারের সাথে বিজেএমইএ-এর দহরমমহরম শেষ হবে কবে? রাতারাতি গার্মেন্ট শিল্প এত বাড় বাড়ল যে, সরকারের কাজ শুধু পেছনের দরজা দিয়ে লাইসেন্স। পশ্চিমা রক্তচোষারা চায় সবচেয়ে কম দামে পোশাক। সস্তা শ্রম হাতে পেয়ে যেকোনো শর্তে রাজি বিজিএমইএ। রাতারাতি একতলা ভবন নয়তলা বানানোর হিড়িক। এভাবেই বিকাশ হয়েছে ত্রিমুখী মাফিয়া জগৎ। মার্কিন শ্রমিক নেতা বারবারা ব্রিক্সের ােভ, ওয়ালমার্টকে বলা হলো এক পয়সা মজুরি বাড়াও, ওয়ালমার্ট বলল মজুরি দুই পয়সা কমাও। বেশি বেশি কাজ পেতে ওরা সেটা শ্রমিকের বেতনের ওপর চাপায়। ফলে ইউনিয়ন ও ন্যায্য বেতন কোনোটাই সম্ভব নয়। ওয়ালমার্টের মতো বটগাছ যখন এক পয়সার জন্য নিরাপত্তাচুক্তি থেকে সরে গেল, সবাই পিছু হটল।
অবিশ্বাস্য বটে। রয়টায়ের বিশেষ প্রতিবেদনে জানলাম, একজন সংসদ সদস্য ২৮টি কারাখানার মালিক। বার্ষিক আয় ২০০ মিলিয়ন ডলার। শ্রমিকসংখ্যা ২৮ হাজার। সুইমিংপুলসহ বিশাল ব্যয়বহুল বাড়ি। অথচ উৎপাদিত একটি শার্টের সমান শ্রমিকের সারা মাসের বেতন।’ গার্মেন্টশ্রমিক দেখলে ভুল হবে এ দেশ আইভরি কোস্ট আর মালিকের বেশভূষায় সব ক’টা ‘মুকেশ আম্বানি’। দেশে বিদেশে এদের টাকার পাহাড়। সংসদে ৭৫ ভাগের ৯০ ভাগই ব্যবসায়কুমির। কোটি কোটি টাকা চাঁদা দিয়ে সরকারের ওপর এমন নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে যে, না বলার কোনো মতাই নেই। ওই সংসদ সদস্য যদি ২০০ মিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট ব্যবসায় করেন তাহলে সংসদে গিয়ে তিনি কি আমার-আপনার কথা ভাববেন? এ দিকে ১৮০০ শতাব্দীর ইংরেজদের মতো ক্রীতদাস পিটিয়ে শ্রমিক আন্দোলন নস্যাৎ করতে ২০১০ সালে যে নির্যাতন বাহিনী বানাল সরকার এবং বিজেএমইএ, এরই নাম ‘শিল্পপুলিশ’। এদের কাজ পিটিয়ে দাবিদাওয়া নস্যাৎ করা। আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডটি নিশ্চিত করেছে, ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অঘোষিত মার্শাল ল। সুতরাং ১০টা রানা প্লাজা ঘটলেও সরকার বাঁচিয়ে দেবে। সরকার এবং ব্যবসায়ীদের এহেন অনৈতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক উদঘাটনে দেশীয় সংবাদ বিশ্লেষক এবং বামদের ভূমিকা হতাশাজনক। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমে মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত দুর্বল। দু’দিন পরেই বেরিয়ে যাচ্ছে রানা। তাই শাহবাগের লাকি আক্তারের স্লোগান ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’ কানে বড় মধুর লাগছে।
এবার সরকারের সতীত্ব পরীার সময়
মাফিয়া চক্রটি বরাবরই শ্রমিকদের রাজনৈতিক এবং পুঁজিবাদের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। মিছিলে সাহেব যায় না যায় শ্রমিক। ঘণ্টায় ১৪ পয়সার বিনিময়ে ১০০ ডলার দামের জিন্স সেলাই থেকে মিছিলে যোগদান, কোথায় নেই শ্রমিকেরা? আর এই ল্েয সরকারগুলো বরাবরই গরিব নামের একটি শ্রেণী জিইয়ে রেখেছে সুপরিকল্পিতভাবে। সিএনএন রিপোর্ট, একটি ডেনিম জিন্স তৈরি করতে আমেরিকার খরচ ১৫ ডলার, বাংলাদেশে চার। সরকারের প্রায় প্রতিটি কর্মকাণ্ডে ব্যবসায়ীরা, প্রধানমন্ত্রীর বিদেশভ্রমণের তালিকার শীর্ষে, বিরোধী দলকে শাসায়। এদিকে প্রায় সব গার্মেন্টই ঝুঁকিপূর্ণ বলে খবর দিলো ফক্স নিউজ। অভিযোগ বিজেএমইএ বারবার মিথ্যা আশ্বাস দেয়, আর মিথ্যা আশ্বাসের ওপর জড়ো হয় মানুষের হাড়গোড়। গ্লুমবার্গ নিউজ বলেছে, নিষেধ অমান্য করে জোর করে পিটিয়ে মানুষ ঢুকিয়েছে। সিএনএনের খবর, জীবন দিয়ে সস্তা পোশাকের মূল্য দিচ্ছে গরিব মানুষেরা। টাইমস ম্যাগাজিন কভার স্টোরি করেছে। প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরীর মতে, বেশির ভাগ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং মুরাদ জংকে রিমান্ডে নিলে যেসব তথ্য বেরিয়ে আসবে তাতে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হবেই। এই দুঃসময়ে চুপ থাকার সুযোগ আদালতের আর নেই।
মিডিয়া খুললেই বাংলাদেশ
সিএনএন সাাৎকারে প্রায় ৯০ শতাংশ গার্মেন্টই ঝুঁকিপূর্ণÑ বিষয়টি পশ্চিমজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তবে ুব্ধ সঞ্চালকের প্রশ্নের অর্থবহ উত্তর দিতে ব্যর্থ হলেও প্রধানমন্ত্রীর একটি কথার সাথে আমি একমত, পশ্চিমারাও দায়ী। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই এরা শুধু খাই খাই। বেশি বেশি মাল পাঠাও। সুতরাং গার্মেন্ট শিল্পকে এক নম্বর বানাতে ড্যান মজিনার অতি উচ্ছ্বাসে আনন্দের বদলে আতঙ্কিত। তাই রানা প্লাজা বা তাজরীনের মতো হত্যাকাণ্ডের পরেও ঘাপটি মেরে বসে থাকে মানুষ মারা বেনিয়ারা। এরা প্রত্যেকেই জানে হত্যাকাণ্ডের জন্য নিজেরাও কত বড় দোষী। বেশির ভাগ ফ্যাক্টরিতে কমপ্লাইন্স ও লাইভ লোডের পাত্তা না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটবে জেনেও অবৈধ কারখানাগুলোতেই কাজ দিচ্ছে। সরকার কেন ইউনিয়ন করতে দেয় না সেটাও পশ্চিমাদের সমর্থনেই। কারণ ইউনিয়ন হলে শ্রমিকের কোমরের জোর বাড়ে। তাজরীনের অবৈধ ভবনটি আমার নিজ চোখে দেখা অথচ শহরে থেকেও বিজিএমইএ এবং পশ্চিমা দূতদের চোখে পড়েনি যারা মনে করে তারা গাধাগোত্রীয়। অন্যথায় বুলি কপচানো বন্ধ রেখে কারখানাগুলোতে ঝটিকা সফরে যেতে পারতেন সারা দেশ চষে বেড়ানো মজিনা সাহেব। কেন যাননি সেই প্রশ্ন বিশ্লেষকদের জন্য থাকুক। তবে পশ্চিমে কোড ভাঙার শাস্তি ন্যূনতম ৪০ বছরের জেল এবং জরিমানা জেনেও ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে দিয়ে নীরব থাকার কারণ, পশ্চিমে মরলে শ্রমিকপ্রতি ৫০ মিলিয়ন কিন্তু এ দেশে মরলে কিছুই দিতে হয় না। এই হত্যাকাণ্ডের পর সংসদে প্রধানমন্ত্রীর যা বলা উচিত ছিল, বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে না, আগে সব কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকের নিরাপত্তা, বৈধতা, কমপ্লায়েন্স চেক করার হুকুম দিচ্ছি, যেন নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ ভবনে না ঢোকে। সিলগালা করারও হুকুম দিচ্ছি। শিল্পপুলিশ ও র্যাব তা নিশ্চিত করে আমার কাছে রিপোর্ট দেবে। আমি গরিব মানুষের জন্য রাজনীতি করি, তাই মানুষ মেরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পে আমি নই। বরং সংসদে দাঁড়িয়ে শ্রমিকদেরকে ধমকালেন, কাজে না গেলে বেতন পাবে না, আন্দোলন ছেড়ে গার্মেন্টে যাও। অথচ শ্রমিকগুলো আন্দোলন করে সেই দায়িত্বই পালন করছিল, যা করা উচিত ছিল সরকার এবং বিজিএমইএ-এর। কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বরং আবারো কাজে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী এবং বিষয়টি আদালতের নজরে না আসার কারণ নেই। ‘দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে’ সিএনএনে মন্তব্যটি বরং ব্যক্তিযোগ্যতাকেই আরো প্রশ্নবিদ্ধ করল। আমিনুল ইসলাম কোনো শ্রমিকনেতাই নন অর্থাৎ ড. ইউনূসের পর হিলারি কিন্টনকেও মিথ্যুক বানিয়ে ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী। আমি মনে করি না, কোনো দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলতে পারেন। ২৩ তারিখে র্যাব পুলিশসহ ভবনটিতে ফাটল দেখার পরেও সিলগালা না করে মে দিবসে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে বিজেএমইএ-এর সভাপতির উপস্থিতি নিশ্চিত করে, কাদের আশকারায় এরা এই মাপের খুন করেও পার পেয়ে যায়। গত ৪ বছরে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কত টাকা চাঁদা দিয়েছে, রানা প্লাজার পর বিষয়টি আদালতের নজরে না আসার কারণ দেখছি না বরং স্বপ্রণোদিত হয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশসহ সব কারখানা বন্ধ রেখে আগে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার হুকুমও আসা উচিত।
উদ্ধারকাজে সরকারের সামর্থ্য সর্বোচ্চ ১০-১৫ ভাগ সত্ত্বেও বিদেশীদের আহ্বান ফিরিয়ে দেয়ায় বিপুল প্রাণহানি এবং উদ্ধারকাজ এত দীর্ঘ এবং কঠিন হয়েছে। পশ্চিমাদের দতার কারণে হয়তো দ্রুত পৌঁছে যেত ভুক্তভোগীদের কাছে। ফলে প্রথম আট দিনে জ্যান্ত উদ্ধার হতো অনেক মানুষ। শিল্পকারখানায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করত না বাংলাদেশ। একটি বুলডোজার ছাড়া সব ভারী যন্ত্রই ব্যক্তিমালিকানায়। আমাদের সেনাবাহিনী বিদেশীদের নিরাপত্তা দেয়, বিদেশীদের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের যন্ত্রপাতি কিনি। আর আমাদের মহাদুর্যোগে লোহা কাটার যন্ত্র নেই? অক্সিজেন চেয়ে আবেদন? করাত দিয়ে হাত-পা কাটার নাম হয় সন্ত্রাস নয়, রসিকতা! মাত্র ছয় মাস আগে চায়না থেকে দুর্যোগব্যবস্থার জন্য যে যন্ত্রপাতি কেনা হলো সেগুলোও কি মিগের মতো উড়ে গেল? অথচ নিক্সনকে এর চেয়ে তুচ্ছ কেলেঙ্কারিতে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল মার্কিনিরা।
খবরে প্রকাশ, বিজিএমইএকে হুমকি দেয়া হয়েছিল, ২৭ তারিখের মহাসমাবেশে ১৫ লাখ শ্রমিক না দিলে ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, আদালতের রায় সত্ত্বেও বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী একাই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। সুতরাং প্রশাসন যখন অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ে… আইনের চোখে অপরাধ যে করে আর অপরাধে যে সায় দেয়, উভয়ই সমান অপরাধী। এবিসি নিউজ জানিয়েছে, প্রায় হাজারের ওপরে মারা গেছে। ঘটনার আগের রাতে টিভিতে ফাটল নিয়ে সোহেল রানার বক্তব্যসহ টিভি সংবাদ প্রচারের পরেও যদি সিলগালা না হয়, তাহলে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সব ক’টাকে কেন রিমান্ডে নেয়া হবে না সেই চিন্তা আদালতের। খুনি দেলোয়ার হোসেন কেন কারাগারে নেই, আমাদের শেষ আশ্রয়স্থলটিও কি শেষ হয়ে গেল? তবে রাজউক চেয়ারম্যানের পাপ ঘাঁটায় রুচি নেই, হাজী ভদ্রলোক প্রচুর অবৈধ কাজে লিপ্ত বলে মিডিয়ায় প্রকাশ। (আগামীকাল সমাপ্য)
লেখক : নিউ ইয়র্ক প্রবাসী মানবাধিকারকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক
ই-মেইল : faramina@gmail.com
No comments