গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ কাম্য নয় by মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম
গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক দেশ বা সমাজ অর্থই হচ্ছে বহুদলীয় সমাজ। আর
বহু দল মানেই বহু মত তথা ভিন্ন ভিন্ন মতের অস্তিত্ব। সংবাদপত্র তথা
সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়া বহু মতের অস্তিত্ব প্রকাশের অধিকার বিশ্বাস করে।
তাই গণতন্ত্রের সাথে সংবাদপত্র এবং মিডিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। যেখানে
বা যে দেশে বা রাষ্ট্রে, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত সেখানে সংবাদপত্র
বা মিডিয়ার স্বাধীনতাও যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত বা বিদ্যমান থাকে।
গণতান্ত্রিক সমাজেই মিডিয়া তার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে।
অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সংবাদপত্র বা মিডিয়া এক অপরিহার্য
উপাদান। তাই গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের তিন মূল স্তম্ভ তথা
শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের পর একটি স্তম্ভ তথা চতুর্থ স্তম্ভ
বা ফোর্থ স্টেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাই সংবাদপত্র তথা মিডিয়ার
গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে কোনো কোনো মনীষী সংবাদপত্রবিহীন রাষ্ট্রের
তুলনায় রাষ্ট্রহীন সংবাদপত্রই কাম্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বর্তমানে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক সরকার আমাদের দেশ
শাসন করছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, জনগণের ভোটে নির্বাচিত এই
সরকার গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা সংবাদপত্র ও
মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব করে অতি সম্প্রতি আকস্মিকভাবে জনপ্রিয় টিভি
চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে। এখানে
উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রায় এক মাস আগে সরকার দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাহসী সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে এবং আমার
দেশের ছাপাখানা বন্ধ করে দিয়ে পত্রিকাটি প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে কার্যত
সংবাদপত্রটি বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমান সরকার এর আগে চ্যানেল ওয়ানকে বন্ধ
করে দেয়। যমুনা টিভিকে আনুষ্ঠানিক সম্প্রচারে আসতে দেয়া হয়নি। অনলাইন
পত্রিকা শীর্ষ নিউজ ডটকমসহ আরো সংবাদমাধ্যম এ সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়া
হয়। গণতান্ত্রিক সরকারের সময় সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া অপ্রত্যাশিত ও
অনাকাক্সিত।
একটি আদর্শ ও দায়িত্বশীল মিডিয়া সমাজের দর্পণই মাত্র নয়, ব্যাপক অর্থে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে। আর সাংবাদিকেরা হলো জাতির বিবেক। বস্তুনিষ্ঠতা ও সত্যানুসন্ধানই সাংবাদিকতা তথা গণমাধ্যমের মূলনীতি। সত্য, সুন্দর ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে সাংবাদিকেরা তথা গণমাধ্যম দেশ ও জাতির কল্যাণসাধন করে থাকেন। প্রকৃত সাংবাদিকেরা নীতি ও আদর্শের সাথে কোনো আপস করেন না। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। জনগণের সমস্যাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এর সঠিক চিত্র গণমাধ্যমে তুলে ধরা সাংবাদিকদের নৈতিক দায়িত্ব। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন কবি নজরুল সাহসী সাংবাদিকতার এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সম্পাদক নজরুল নবযুগ , ধূমকেতু ও লাঙ্গল পত্রিকায় তার ুরধার লেখনীর মাধ্যমে ঔপনিবেশিক ইংরেজদের বিরুদ্ধে এবং ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। গণতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীন সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যম সরকারকে সমাজের ত্রুটিগুলো দেখিয়ে দিয়ে দেশ পরিচালনায় সঠিক পরামর্শ ও পথনির্দেশ করে থাকে। তবে একটি স্বাধীন সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম সব দেশেই সব কালে স্বৈরশাসকদের জন্য ভয় ও আতঙ্কের বিষয় হিসেবে গণ্য হয়েছে। গণমাধ্যম স্বৈরশাসকদের গণবিরোধী কর্মকাণ্ড, জুলুম, নির্যাতন ও দুর্নীতির খবর ফলাও করে জনসমক্ষে তুলে ধরে থাকে। তাই স্বৈরশাসক ও সামরিক জান্তারা ক্ষমতা দখল করে প্রথমেই সংবাদপত্রের টুঁটি চেপে ধরে। গণতান্ত্রিক সমাজে সরকার ও জনগণের মধ্যে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম যে সেতুবন্ধ রচনা করে স্বৈরশাসকেরা তা বানচাল করে দেয়। মুক্ত গণমাধ্যমকে সেখানে শৃঙ্খলিত করা হয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অগণতান্ত্রিক তথা স্বৈরাচারী সরকারগুলো নিজেদের শাসনক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করে। এসব সরকার প্রকাশ্য ও গোপনে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সংবাদপত্রের সম্পাদক ও মালিকদের বিভিন্ন খেতাব ও উপঢৌকন দিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমকে দলন করে থাকে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। কিন্তু ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইন করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করা হয়। স্বাধীনতার পর এ দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক মুক্তসমাজের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে বলে আশা করলেও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৩ সালের প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট এবং ’৭৫ সালের একদলীয় বাকশালী শাসনের মাধ্যমে জনগণের আকাক্সাকে ধূলিসাৎ করে দেয়া হয়।
১৯৭৫ সালে দেশে একদলীয় শাসন প্রবর্তন করা হয়। একই বছর ১৬ জুন মাত্র চারটি সংবাদপত্র রেখে সব সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয়। রাতারাতি শত শত সাংবাদিক-কর্মচারী চাকরিচ্যুত হন। সাংবাদিকেরা এখনো ১৬ জুনকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন। পরে কিছু দিন এ অবস্থা থেকে জাতি মুক্তি পেলেও ’৮২ সালে জাতির ওপর আবার স্বৈরশাসন চেপে বসে। সংবাদপত্রের জন্য এ অধ্যায়টি ছিল আরেকটি অন্ধকার যুগ ও কলঙ্কজনক অধ্যায়।
স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকার ‘গণতান্ত্রিক সরকার’ হিসেবে পরিচয় দিলেও ওই সরকার সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত করে। আগেই উল্লেখ করেছি সংবাদপত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স (ডিকারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট প্রবর্তন করে। ১৯৭৪ সালে জারি করে বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইনে সরকার প্রেস সেন্সরশিপের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়। একইসাথে সংবাদপত্র ও সাংবাদিক দমনে ব্যাপক ক্ষমতা লাভ করে। সর্বশেষ ১৯৭৫ সালে ‘The Newspaper (Annulment & Declaration) Act, 1975′ জারির মাধ্যমে চারটি বাদে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। ওই চারটি পত্রিকা সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এভাবে স্বাধীন সংবাদপত্র প্রকাশ ও স্বাধীন সংবাদপত্রের বিকাশ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। এর আগে ১৯৭২ সালে ‘সুপ্রিম টেস্ট’ সম্পাদকীয় লেখার অপরাধে(?) তৎকালীন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভার-এর সম্পাদক আবদুস সালামকে মুজিব সরকার চাকরিচ্যুত করে। সে সময় গণকণ্ঠ যথার্থ সমাজদর্পণ ও গণবিবেকের ভূমিকা পালনে অকুতোভয় থাকার কারণে সম্পাদক কবি আল মাহমুদকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হয়। উল্লিখিত কালাকানুনের বিরুদ্ধে এ দেশের সাংবাদিক সমাজ দীর্ঘ দিন সংগ্রাম করেছেন। তাদের এই নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ফলে ১৯৯১ সালে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক অধ্যাদেশ জারি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধকারী সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোকে বাতিল করে। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত বিএনপি সরকার সেই অধ্যাদেশকে পার্লামেন্টে বৈধতা দিলে সেই কালো আইনগুলো স্থায়ীভাবে অপসারিত হয়। এর ফলে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।
তৎকালীন বিএনপি সরকার নতুন সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে যে জটিলতা ছিল, তা-ও দূর করে। ফলে সংবাদপত্র প্রকাশ করা সহজতর হয়ে ওঠে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে গত শতাব্দীর শেষ দশকে বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে রাতারাতি আমূল পরিবর্তন ঘটে। আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে বর্ণাঢ্যভাবে নতুন নতুন পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। কিন্তু ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার সংবাদপত্র দলন করে। দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, বিচিত্রা ও আনন্দ বিচিত্রা বন্ধ করে দিয়ে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিককে বেকার করে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে নিউজ প্রিন্টের কোটা কমিয়ে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সঙ্কুচিত করার চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয় এবং ওই আমলে কমপক্ষে ১০ জন সাংবাদিক দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন। পেশাগত কারণে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার ঘাতকদের গ্রেফতার পর্যন্ত করতে পারেনি।
বিতর্কিত মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসে মিডিয়ার সাথে বৈরী আচরণ শুরু করে। তারা ভিন্নমতের সংবাদপত্র ও মিডিয়াকে সরকারি বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে দলন করে। দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে এবং তাকে গ্রেফতার করে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। দীর্ঘ এক বছর কারারুদ্ধ থাকার পর চলতি বছর তাকে আবার গ্রেফতার এবং আমার দেশ পত্রিকাকে দ্বিতীয়বারের মতো কৌশলে বন্ধ করে দেয়া হয়। অতি সম্প্রতি অর্থাৎ গত ৫ মে রাত সোয়া ৪টায় দিগন্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। সে দিন রাত ৩টার দিকে ইসলামিক টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় সরকার। সর্বশেষ টিভি চ্যানেল দু’টির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ না এনে দায়িত্বশীলতার পরিবর্তে ঘটনাকে উসকে দেয়ার এবং বিদ্বেষ ও গুজব ছড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এগুলো ঢালাও অভিযোগ। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সংগঠন (অ্যাডকো) গত ৭ মে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সাথে সাক্ষাৎ করে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে। বেসরকারি টিভি মালিকেরা বলেন, চ্যানেল দু’টি কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে তার জন্য নোটিশ প্রদান এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া উচিত ছিল। চ্যানেল মালিকেরা কোনো কারণ ছাড়াই সরকারের চ্যানেল বন্ধ করার ব্যাপারে আপত্তি জানান। বৈঠকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার নীতিমালা শিগগির প্রণয়নের ব্যাপারে আলোচনা হয়। মন্ত্রী চ্যানেল দু’টি বন্ধ করার বিষয়টি সাময়িক পদক্ষেপ বলে চ্যানেল মালিকদের জানিয়েছেন। আমরা আশা করব সরকার চ্যানেল বন্ধের সাময়িক পদক্ষেপ শিগগির প্রতাহার করে নেবে। সরকার অভিযোগ করেছে বিরোধী দলের পক্ষে প্রচার-প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসব সংবাদমাধ্যম অতিরঞ্জিত, অসত্য ও জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর সংবাদ পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু সরকারপক্ষের এই অভিযোগ সঠিক কি না তা নিয়েও বির্তক আছে।
বর্তমানে দেশে অনেক ইলেকট্রনিক মিডিয়া রয়েছে এবং বেশির ভাগই হচ্ছে সরকার সমর্থক মিডিয়া। ভিন্নমত গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ। গণতন্ত্রে ভিন্নমত দলন নয়, ভিন্ন মতকে লালন করাই হচ্ছে নিয়ম। ভিন্নমত গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এখন মিডিয়া বা তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। দু’টি ভিন্নমতের টিভি চ্যানেল ও একটি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে কিংবা বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে বিরোধী পক্ষের প্রচার বন্ধ করা এখন বাস্তবসম্মত নয়। এতে জনমনে সন্দেহ-অবিশ্বাস দানা বাঁধবে এবং সরকার সমর্থক মিডিয়ার খবরও সাধারণ মানুষ আর বিশ্বাস করতে চাইবে না। এতে লাভের চেয়ে সরকারের বরং ক্ষতিই হবে বেশি। Tolerance গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। তাই ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করা। কিন্তু তিনটি মিডিয়া হাউজ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়ার কারণে বহু সাংবাদিক, কর্মচারী, প্রেস শ্রমিক ও তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। এই কঠিন দুর্দিনে কিভাবে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করবেন? আমরা আশা করব সরকার নিজেদের এবং জনগণের স্বার্থে ভিন্ন মত দলনের এই নেতিবাচক পথ থেকে ফিরে আসবে। ভিন্ন মতকে সম্মান করবে এবং মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করার জন্য তিনটি মিডিয়ার ওপর থেকে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেবে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কয়েক হাজার মানুষের রুটিরুজির বিষয়ও জড়িত। তাদের প্রতি সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার অবিলম্বে দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং আমার দেশ পত্রিকার প্রেস খুলে দেবে বলে আমরা আশা করি। সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে এসে গণমাধ্যমের কণ্ঠারোধের পদেক্ষপ সরকারের জন্য মোটেই সুখকর নয় বরং বুমেরাং হতে পারে বলেই পর্যবেক্ষক মহল মনে করে।
No comments