ফোনের ফাঁদে কলেজ শিক্ষক by জিয়া শাহীন
কখনও বিসিএস ক্যাডার, কখনও কলেজের
শিক্ষিকা, কখনও বা সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা- এমন পরিচয়ে ফাঁদে ফেলানোয়
পটু প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা শাহনাজ পারভীন। একে একে তিনজনকে ফাঁদে ফেলেছেন
তিনি।
জনৈক সৌদি প্রবাসী এবং বগুড়া সরকারি আযিযুল হক
কলেজের সহকারী অধ্যাপক- এ দু’জন কোনভাবে রক্ষা পেলেও কলেজ শিক্ষক ড. রফিকুল
ইসলাম প্রতারণা মামলার জালে আবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন জনের কাছে সাহায্যের জন্য
ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
শাহনাজের পরিচয়: এক সময় বগুড়ার একটি এনজিওতে মাঠকর্মী ছিলেন। সেখানে তাকে নিয়ে নানা কথা চাউর রয়েছে। তারপরে বেসরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। পিতা ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল। পিতার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটে চাকরি হলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তা ভুয়া আখ্যায়িত করে তালিকা প্রকাশ করেছে। শাহনাজের পৈতৃক নিবাস বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার আচুয়ার পাড়ার গ্রামে। এখন তিনি পুরান বগুড়ার বিদ্যুৎ নগরে থেকে নন্দীগ্রামের বুরুইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি করছেন।
এলাকাবাসী জানান, শাহনাজের প্রথম বিয়ে হয়, নন্দীগ্রামের থালতামাছ ইউনিয়নের পার্সন গ্রামের খলিলুর রহমানের সঙ্গে। ওই বিয়েটাও ছিল ফোনে ফাঁদ পাতিয়ে। খলিলুর রহমান সৌদি আরব থেকে এসে শাহনাজের প্রতারণা বুঝতে পারে। তারপর তাকে ডিভোর্স করে। এর পর মোবাইল ফোনে বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের ইসলামি ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপককে ফাঁদে ফেলানোর চেষ্টা করে। কিছু দিন ফোনে কথাও হয় তার সঙ্গে। এক পর্যায়ে আমিনুল ইসলামের বাসায় চলে আসেন শাহনাজ। নিজেকে আমিনুল ইসলামের স্ত্রী পরিচয় দেন। পরে বৈধ কোন পরিচয় দেখাতে না পারলে এলাকাবাসী তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনার পর শাহনাজ পারভীন পরবর্তী মিশনে হাত দেন। টার্গেট করে সান্তাহার সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামকে। তার ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তার সঙ্গে নিজস্ব কাজে দেখা করবেন বলে জানান। এরপর মাঝে মাঝেই বলেন, অন্য একদিন আসবো। রফিকুলকে বলেন, আপনাকে না দেখলেও আমার খুব ভাল লাগে। তাই আপনার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাই। অন্তত কথা বলার সুযোগটা আমাকে দিন। ড. রফিকুল ইসলামও কোন আপত্তি করেননি। তাকে টার্গেট করার কারণ তিনি এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়েছিলেন। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
তারিখটা ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০১২। সময় রাত ৮টা। ড. রফিকুল ইসলাম কলেজ থেকে ট্রেনযোগে বগুড়া রেল স্টেশনে নামেন। হঠাৎ ফোন আসে শাহনাজ পারভীনের। ফোনের ওপার থেকে বলা হয়- আপনি এখন কোথায়? উত্তরে রফিকুল ইসলাম জানান, এই মাত্র বগুড়া স্টেশনে নামলাম। রেল স্টেশন থেকে রিকশাযোগে বাদুরতলা এলাকায় যাওয়ার সময় হঠাৎ করে পাঁচটি মোটরসাইকেলযোগে হাদি নামের একজনের নেতৃত্বে ১৫ জন সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ফেলে। অস্ত্র উঁচিয়ে ড. রফিকুলকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরান বগুড়া মিশুক ছাত্রাবাসে। সেখানে নিয়ে তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়। মারপিটের সময় হঠাৎ আগমন ঘটে শাহনাজ পারভীন ও তার পরিবারের সদস্যদের। এ সময় শাহনাজ পারভীন কান্নার ভঙ্গিতে বলেন, আমার স্বামীকে আপনারা মারবেন না। তখনই থেমে যায় মারপিট। এ সময় সন্ত্রাসীরা তিনটি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় ড. রফিকুল ইসলামের। তারপরে রাত ১২টায় ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। পরদিন তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের কাছে বিষয়টি খুলে বলেন। এরপর হাদি নামের শাহনাজ পারভীনের এক সময়ের এনজিওর সহকর্মীর কাছ থেকে দু’টি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। একটি স্ট্যাম্প হাদি ফেরত দেয়নি। ওই স্ট্যাম্প দিয়ে এবং মানিব্যাগের থাকা ছবি দিয়ে শাহনাজ পারভীন তার সহযোগীদের মাধ্যমে বিয়ের এফিডেভিট করেন।
২১শে সেপ্টম্বর, ২০১২। হঠাৎ শাহনাজ পারভীন নামাজগড় এলাকায় ড. রফিকুল ইসলামের বাসায় ঢুকে পড়েন। এ সময় রফিকুল স্থানীয় লোকজনকে খবর দেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডালিয়া আকতার রিক্তা, স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল হাসিব বেগসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা চলে আসেন। এসময় শাহনাজ পারভীন ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। পরে এলাকার লোকজন দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তার সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তিনি তার কাবিননামা দেখাতে না পারায় এলাকাবাসী তাকে বাসা থেকে চলে যেতে বলে। পরে দিন থানার ওসি মাহমুদুল আলম ড. রফিকুল ইসলামকে থানায় আসতে বলেন। তিনি থানায় গেলে ওসি মাহমুদুল আলম রুমের দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। এ ঘটনা জানার পর চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডালিয়া আকতার রিক্তা ও মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসিব বেগ থানায় যান। ওসি জোরপূর্বক কাবিননামায় ড. রফিকুলের স্বাক্ষর নেন। পরে ওসি তদন্ত আতিয়ার রহমানকে দিয়ে ড. রফিকুল ও শাহনাজকে ঘোনপাড়ায় পাঠিয়ে দেন। ঘোনপাড়ায় গিয়ে ওসি তদন্ত আতিয়ার রহমান জোরপূর্বক মাওলানা হাসিব বেগকে দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেন। ড. রফিকুল পরে শাহনাজ পারভীনকে ডিভোর্স করেন। কোর্টে পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডালিয়া আকতার রিক্তা ও মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসিব বেগ জোরপূর্বক তাদের স্বাক্ষরসহ বিয়ে পড়ানোর বিষয়ে এফিডেফিট করেন। ডিভোর্সের পর ড. রফিক গত বছর ২৫শে অক্টোবর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শাহনাজ পারভীনসহ তার পরিবারের ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেন। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কাবিনে সাক্ষী, ছাত্রাবাসের ছাত্রদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। গত ১৫ই এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে ড. রফিকুলের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়। এদিকে, শাহনাজের ভাই সামিউল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছর ১৮ই অক্টোবর ড. রফিকুল ইসলামসহ তার পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলাটি পুলিশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। শাহনাজ পারভীনের মামলার সাক্ষী না হলেও পরবর্তী সময়ে তিন ব্যক্তি হাসিবুর রহমান বিলু, শাজাহান আলী বাবু, মনিরুল ইসলাম মারুফ আদালতে নারাজি আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি এখনও হয়নি। অন্যদিকে, সান্তাহার সরকারি কলেজের কর্মরত থাকাকালে নন্দীগ্রাম থানায় শাহনাজ পারভীন তাকে স্কুল থেকে অপহরণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে ড. রফিকের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার হাজী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, আকবর আলী কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে তার দুই মেয়ের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা জেলা কমান্ডার প্রকাশ করেছে। চাকরির স্বার্থে আকবর আলীর পক্ষে আদালতে আপিল করা হয়েছে। এদিকে, শাহনাজ পারভীনের ঘটনা তদন্তের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ড. আফছারুল আমীন নির্দেশ দিলেও নন্দীগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এখনও তদন্ত শুরু করেননি। ভুক্তভোগীরা জানায়, শাহনাজ পারভীন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয়ে ফোনে ফাঁদ পাতে। তারপর একসময় তাদের গলায় ঝুলে পড়ার কৌশল নেয়।
শাহনাজের পরিচয়: এক সময় বগুড়ার একটি এনজিওতে মাঠকর্মী ছিলেন। সেখানে তাকে নিয়ে নানা কথা চাউর রয়েছে। তারপরে বেসরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। পিতা ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল। পিতার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটে চাকরি হলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তা ভুয়া আখ্যায়িত করে তালিকা প্রকাশ করেছে। শাহনাজের পৈতৃক নিবাস বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার আচুয়ার পাড়ার গ্রামে। এখন তিনি পুরান বগুড়ার বিদ্যুৎ নগরে থেকে নন্দীগ্রামের বুরুইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি করছেন।
এলাকাবাসী জানান, শাহনাজের প্রথম বিয়ে হয়, নন্দীগ্রামের থালতামাছ ইউনিয়নের পার্সন গ্রামের খলিলুর রহমানের সঙ্গে। ওই বিয়েটাও ছিল ফোনে ফাঁদ পাতিয়ে। খলিলুর রহমান সৌদি আরব থেকে এসে শাহনাজের প্রতারণা বুঝতে পারে। তারপর তাকে ডিভোর্স করে। এর পর মোবাইল ফোনে বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের ইসলামি ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপককে ফাঁদে ফেলানোর চেষ্টা করে। কিছু দিন ফোনে কথাও হয় তার সঙ্গে। এক পর্যায়ে আমিনুল ইসলামের বাসায় চলে আসেন শাহনাজ। নিজেকে আমিনুল ইসলামের স্ত্রী পরিচয় দেন। পরে বৈধ কোন পরিচয় দেখাতে না পারলে এলাকাবাসী তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনার পর শাহনাজ পারভীন পরবর্তী মিশনে হাত দেন। টার্গেট করে সান্তাহার সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামকে। তার ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তার সঙ্গে নিজস্ব কাজে দেখা করবেন বলে জানান। এরপর মাঝে মাঝেই বলেন, অন্য একদিন আসবো। রফিকুলকে বলেন, আপনাকে না দেখলেও আমার খুব ভাল লাগে। তাই আপনার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাই। অন্তত কথা বলার সুযোগটা আমাকে দিন। ড. রফিকুল ইসলামও কোন আপত্তি করেননি। তাকে টার্গেট করার কারণ তিনি এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়েছিলেন। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
তারিখটা ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০১২। সময় রাত ৮টা। ড. রফিকুল ইসলাম কলেজ থেকে ট্রেনযোগে বগুড়া রেল স্টেশনে নামেন। হঠাৎ ফোন আসে শাহনাজ পারভীনের। ফোনের ওপার থেকে বলা হয়- আপনি এখন কোথায়? উত্তরে রফিকুল ইসলাম জানান, এই মাত্র বগুড়া স্টেশনে নামলাম। রেল স্টেশন থেকে রিকশাযোগে বাদুরতলা এলাকায় যাওয়ার সময় হঠাৎ করে পাঁচটি মোটরসাইকেলযোগে হাদি নামের একজনের নেতৃত্বে ১৫ জন সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ফেলে। অস্ত্র উঁচিয়ে ড. রফিকুলকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরান বগুড়া মিশুক ছাত্রাবাসে। সেখানে নিয়ে তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়। মারপিটের সময় হঠাৎ আগমন ঘটে শাহনাজ পারভীন ও তার পরিবারের সদস্যদের। এ সময় শাহনাজ পারভীন কান্নার ভঙ্গিতে বলেন, আমার স্বামীকে আপনারা মারবেন না। তখনই থেমে যায় মারপিট। এ সময় সন্ত্রাসীরা তিনটি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় ড. রফিকুল ইসলামের। তারপরে রাত ১২টায় ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। পরদিন তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের কাছে বিষয়টি খুলে বলেন। এরপর হাদি নামের শাহনাজ পারভীনের এক সময়ের এনজিওর সহকর্মীর কাছ থেকে দু’টি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। একটি স্ট্যাম্প হাদি ফেরত দেয়নি। ওই স্ট্যাম্প দিয়ে এবং মানিব্যাগের থাকা ছবি দিয়ে শাহনাজ পারভীন তার সহযোগীদের মাধ্যমে বিয়ের এফিডেভিট করেন।
২১শে সেপ্টম্বর, ২০১২। হঠাৎ শাহনাজ পারভীন নামাজগড় এলাকায় ড. রফিকুল ইসলামের বাসায় ঢুকে পড়েন। এ সময় রফিকুল স্থানীয় লোকজনকে খবর দেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডালিয়া আকতার রিক্তা, স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল হাসিব বেগসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা চলে আসেন। এসময় শাহনাজ পারভীন ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। পরে এলাকার লোকজন দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তার সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তিনি তার কাবিননামা দেখাতে না পারায় এলাকাবাসী তাকে বাসা থেকে চলে যেতে বলে। পরে দিন থানার ওসি মাহমুদুল আলম ড. রফিকুল ইসলামকে থানায় আসতে বলেন। তিনি থানায় গেলে ওসি মাহমুদুল আলম রুমের দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। এ ঘটনা জানার পর চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডালিয়া আকতার রিক্তা ও মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসিব বেগ থানায় যান। ওসি জোরপূর্বক কাবিননামায় ড. রফিকুলের স্বাক্ষর নেন। পরে ওসি তদন্ত আতিয়ার রহমানকে দিয়ে ড. রফিকুল ও শাহনাজকে ঘোনপাড়ায় পাঠিয়ে দেন। ঘোনপাড়ায় গিয়ে ওসি তদন্ত আতিয়ার রহমান জোরপূর্বক মাওলানা হাসিব বেগকে দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেন। ড. রফিকুল পরে শাহনাজ পারভীনকে ডিভোর্স করেন। কোর্টে পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডালিয়া আকতার রিক্তা ও মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসিব বেগ জোরপূর্বক তাদের স্বাক্ষরসহ বিয়ে পড়ানোর বিষয়ে এফিডেফিট করেন। ডিভোর্সের পর ড. রফিক গত বছর ২৫শে অক্টোবর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শাহনাজ পারভীনসহ তার পরিবারের ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেন। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কাবিনে সাক্ষী, ছাত্রাবাসের ছাত্রদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। গত ১৫ই এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে ড. রফিকুলের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়। এদিকে, শাহনাজের ভাই সামিউল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছর ১৮ই অক্টোবর ড. রফিকুল ইসলামসহ তার পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলাটি পুলিশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। শাহনাজ পারভীনের মামলার সাক্ষী না হলেও পরবর্তী সময়ে তিন ব্যক্তি হাসিবুর রহমান বিলু, শাজাহান আলী বাবু, মনিরুল ইসলাম মারুফ আদালতে নারাজি আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি এখনও হয়নি। অন্যদিকে, সান্তাহার সরকারি কলেজের কর্মরত থাকাকালে নন্দীগ্রাম থানায় শাহনাজ পারভীন তাকে স্কুল থেকে অপহরণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে ড. রফিকের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার হাজী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, আকবর আলী কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে তার দুই মেয়ের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা জেলা কমান্ডার প্রকাশ করেছে। চাকরির স্বার্থে আকবর আলীর পক্ষে আদালতে আপিল করা হয়েছে। এদিকে, শাহনাজ পারভীনের ঘটনা তদন্তের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ড. আফছারুল আমীন নির্দেশ দিলেও নন্দীগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এখনও তদন্ত শুরু করেননি। ভুক্তভোগীরা জানায়, শাহনাজ পারভীন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয়ে ফোনে ফাঁদ পাতে। তারপর একসময় তাদের গলায় ঝুলে পড়ার কৌশল নেয়।
No comments