মাশরাফির কান্নায় ভেজা বিশ্বকাপ দল
বাংলাদেশ দল
সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিক, শাহরিয়ার নাফীস, রকিবুল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম, নাঈম ইসলাম মাহমুদউল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, নাজমুল হোসেন মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী
মোহাম্মদ আশরাফুল, না অলক কাপালি?
জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এটি উড়ে বেড়াল কোটি টাকার প্রশ্ন হয়ে। শুধু এই একটি প্রশ্নের উত্তর জানতেই যেন সাংবাদিক-টিভি ক্যামেরার উপচে পড়া ভিড়। সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আরেকটি অদ্ভুত প্রশ্নও—শেষ পর্যন্ত নির্বাচকদের নির্বাচিত দলই থাকছে তো?
ক্রিকেট দল ঘোষণার সঙ্গে সব সময়ই একটা রোমাঞ্চ মিশে থাকে। আর এটি তো বিশ্বকাপের দল! কিন্তু দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন-সারথিদের নাম নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ওই দুটি নামে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল কেন? হয়েছে দল ঘোষণার আগের দুই দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অস্বাভাবিক কর্মতৎপরতা এবং সেটি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়ায়। নির্বাচকদের নির্বাচিত ১৫ জনের নাম প্রথম আলোয় দুই দিন আগেই ছাপা হয়ে গেছে। বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটি যে আশরাফুলের বদলে অলককে নিতে নির্বাচকদের চাপাচাপি করছে, এই খবরও। প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম সপ্তম খেলোয়াড় হিসেবে ‘মোহাম্মদ আশরাফুল’ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই যেন তাই দল নিয়ে সব কৌতূহলের সমাপ্তি। একে একে বাকি নামগুলো বলে গেলেন রফিকুল। টেকনিক্যাল কমিটির রক্তচক্ষুকে তাহলে উপেক্ষা করতে পেরেছেন নির্বাচকেরা। এটি তো নির্বাচকদের দলই। যাতে আবারও ইনজুরিকে হারানোর সংগ্রামরত মাশরাফি বিন মুর্তজা ছিলেন না। নেইও। মতবিরোধটা অবশ্য মাশরাফিকে নিয়ে ছিল না। ছিল—আশরাফুল, না কাপালি?
মাশরাফি কেন নেই—এ নিয়ে বেশ কটি প্রশ্ন হলো। তবে দেশের সেরা পেসারের না-থাকাটাও সেভাবে বিস্ময়ের ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ল না। আভাস যে আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন সবাই। রফিকুল আলম অনুমিত ব্যাখ্যাই দিলেন। মাশরাফিকে আগে শারীরিকভাবে পুরো ফিট হয়ে উঠতে হবে। এর পরও থাকবে ম্যাচ ফিটনেসের প্রশ্ন। এই ঝুঁকি কীভাবে নেওয়া যায়?
তবে সামনের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে পেছনের খিড়কিটা যেন খোলা রাখতে চাইলেন রফিকুল। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ফিট হয়ে গেলে মাশরাফি বিশ্বকাপ খেলতেও পারেন। কীভাবে—সেটি ব্যাখ্যা করলেন না। উপায় তো আসলে একটাই। অন্য কারও ইনজুরির জন্য প্রার্থনা করা!
ক্রিকেট কখনো কখনো বড় নিষ্ঠুর হয়। সেই নিষ্ঠুরতার রূপ মাশরাফির চেয়ে বেশি দেখেছেন খুব কম ক্রিকেটারই। ক্যারিয়ারজুড়েই চোট-আঘাত তাঁর ছায়াসঙ্গী। স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গ যাঁর ডানে আর বাঁয়ে হাঁটে। নিয়তিকে মেনে নিতেও কি শিখিয়েছে তা?
হয়তো বা। তবে এতটা নয়, যা দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে না পারার দুঃখ মুছে দিতে পারে। এই কয়েক মাস আগেও এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই বিশ্বকাপেই তিনি দর্শক! মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশে একাডেমি মাঠে প্র্যাকটিস করে গেলেন তার পরও। নেটে ব্যাটিংয়ের সময় যেন বলের ওপর ঝাল মেটাতে চাইলেন। বল উড়িয়ে দিয়ে সেটির সঙ্গে উড়িয়ে দিতে চাইলেন সব দুঃখ। কিন্তু চাইলেই কি আর পারা যায়!
বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘিরে ধরেছেন সাংবাদিকেরা। হঠাৎই টোকা পড়ল আবেগের তারে। মাশরাফি ভেঙে পড়লেন। তাঁর কান্নায় রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেলটা মুহূর্তেই বিষণ্ন হয়ে গেল।
মাশরাফির না থাকাটা নিয়েই যা একটু আলোচনা। নইলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে চমক-টমক বলতে যা বোঝায়, তা একদমই নেই। নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত দুটি সিরিজে যাঁরা খেলেছেন, তাঁদের মধ্য থেকেই এই ১৫ জন। ও হ্যাঁ, একটা বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা হলো। দলে পেসার মাত্র তিনজন। যেটির পক্ষে প্রধান নির্বাচকের যুক্তি, খেলা হবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে। বাংলাদেশের কন্ডিশনে তখন স্পিনাররাই হয়ে উঠবেন নির্ধারক। কোচ জেমি সিডন্সও অনেক আগেই বলে দিয়েছিলেন, দুজনের বেশি পেসার নিয়ে মাঠে নামার ইচ্ছা নেই তাঁর।
ব্যাটসম্যান হিসেবেও সাকিব দলে থাকেন বলে তাঁর পরিচয় শুধু বাঁহাতি স্পিনার নয়। তাঁকে নিয়ে দলে বাঁহাতি স্পিনারের সংখ্যা তিন। এর বাইরে তিন ওপেনার, তিন মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান, দুই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার ও উইকেটকিপার মিলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল।
১৫ জনের দলে বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা আছে পাঁচজনের। সাকিব, তামিম, মুশফিকুর, রাজ্জাক ও নাফীস খেলেছেন ২০০৭ বিশ্বকাপে। একমাত্র আশরাফুলেরই অভিজ্ঞতা আছে এর আগে দুটি বিশ্বকাপে খেলার। সেই আশরাফুলকে নিয়েই এবারের দল নির্বাচনে বড় নাটক!
আশরাফুল নিজেকে বড় মঞ্চের খেলোয়াড় বলে দাবি করেন। এখন তাঁর সেটি প্রমাণের দায়।
সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিক, শাহরিয়ার নাফীস, রকিবুল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম, নাঈম ইসলাম মাহমুদউল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, নাজমুল হোসেন মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী
মোহাম্মদ আশরাফুল, না অলক কাপালি?
জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এটি উড়ে বেড়াল কোটি টাকার প্রশ্ন হয়ে। শুধু এই একটি প্রশ্নের উত্তর জানতেই যেন সাংবাদিক-টিভি ক্যামেরার উপচে পড়া ভিড়। সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আরেকটি অদ্ভুত প্রশ্নও—শেষ পর্যন্ত নির্বাচকদের নির্বাচিত দলই থাকছে তো?
ক্রিকেট দল ঘোষণার সঙ্গে সব সময়ই একটা রোমাঞ্চ মিশে থাকে। আর এটি তো বিশ্বকাপের দল! কিন্তু দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন-সারথিদের নাম নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ওই দুটি নামে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল কেন? হয়েছে দল ঘোষণার আগের দুই দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অস্বাভাবিক কর্মতৎপরতা এবং সেটি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়ায়। নির্বাচকদের নির্বাচিত ১৫ জনের নাম প্রথম আলোয় দুই দিন আগেই ছাপা হয়ে গেছে। বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটি যে আশরাফুলের বদলে অলককে নিতে নির্বাচকদের চাপাচাপি করছে, এই খবরও। প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম সপ্তম খেলোয়াড় হিসেবে ‘মোহাম্মদ আশরাফুল’ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই যেন তাই দল নিয়ে সব কৌতূহলের সমাপ্তি। একে একে বাকি নামগুলো বলে গেলেন রফিকুল। টেকনিক্যাল কমিটির রক্তচক্ষুকে তাহলে উপেক্ষা করতে পেরেছেন নির্বাচকেরা। এটি তো নির্বাচকদের দলই। যাতে আবারও ইনজুরিকে হারানোর সংগ্রামরত মাশরাফি বিন মুর্তজা ছিলেন না। নেইও। মতবিরোধটা অবশ্য মাশরাফিকে নিয়ে ছিল না। ছিল—আশরাফুল, না কাপালি?
মাশরাফি কেন নেই—এ নিয়ে বেশ কটি প্রশ্ন হলো। তবে দেশের সেরা পেসারের না-থাকাটাও সেভাবে বিস্ময়ের ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ল না। আভাস যে আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন সবাই। রফিকুল আলম অনুমিত ব্যাখ্যাই দিলেন। মাশরাফিকে আগে শারীরিকভাবে পুরো ফিট হয়ে উঠতে হবে। এর পরও থাকবে ম্যাচ ফিটনেসের প্রশ্ন। এই ঝুঁকি কীভাবে নেওয়া যায়?
তবে সামনের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে পেছনের খিড়কিটা যেন খোলা রাখতে চাইলেন রফিকুল। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ফিট হয়ে গেলে মাশরাফি বিশ্বকাপ খেলতেও পারেন। কীভাবে—সেটি ব্যাখ্যা করলেন না। উপায় তো আসলে একটাই। অন্য কারও ইনজুরির জন্য প্রার্থনা করা!
ক্রিকেট কখনো কখনো বড় নিষ্ঠুর হয়। সেই নিষ্ঠুরতার রূপ মাশরাফির চেয়ে বেশি দেখেছেন খুব কম ক্রিকেটারই। ক্যারিয়ারজুড়েই চোট-আঘাত তাঁর ছায়াসঙ্গী। স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গ যাঁর ডানে আর বাঁয়ে হাঁটে। নিয়তিকে মেনে নিতেও কি শিখিয়েছে তা?
হয়তো বা। তবে এতটা নয়, যা দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে না পারার দুঃখ মুছে দিতে পারে। এই কয়েক মাস আগেও এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই বিশ্বকাপেই তিনি দর্শক! মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশে একাডেমি মাঠে প্র্যাকটিস করে গেলেন তার পরও। নেটে ব্যাটিংয়ের সময় যেন বলের ওপর ঝাল মেটাতে চাইলেন। বল উড়িয়ে দিয়ে সেটির সঙ্গে উড়িয়ে দিতে চাইলেন সব দুঃখ। কিন্তু চাইলেই কি আর পারা যায়!
বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘিরে ধরেছেন সাংবাদিকেরা। হঠাৎই টোকা পড়ল আবেগের তারে। মাশরাফি ভেঙে পড়লেন। তাঁর কান্নায় রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেলটা মুহূর্তেই বিষণ্ন হয়ে গেল।
মাশরাফির না থাকাটা নিয়েই যা একটু আলোচনা। নইলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে চমক-টমক বলতে যা বোঝায়, তা একদমই নেই। নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত দুটি সিরিজে যাঁরা খেলেছেন, তাঁদের মধ্য থেকেই এই ১৫ জন। ও হ্যাঁ, একটা বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা হলো। দলে পেসার মাত্র তিনজন। যেটির পক্ষে প্রধান নির্বাচকের যুক্তি, খেলা হবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে। বাংলাদেশের কন্ডিশনে তখন স্পিনাররাই হয়ে উঠবেন নির্ধারক। কোচ জেমি সিডন্সও অনেক আগেই বলে দিয়েছিলেন, দুজনের বেশি পেসার নিয়ে মাঠে নামার ইচ্ছা নেই তাঁর।
ব্যাটসম্যান হিসেবেও সাকিব দলে থাকেন বলে তাঁর পরিচয় শুধু বাঁহাতি স্পিনার নয়। তাঁকে নিয়ে দলে বাঁহাতি স্পিনারের সংখ্যা তিন। এর বাইরে তিন ওপেনার, তিন মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান, দুই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার ও উইকেটকিপার মিলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল।
১৫ জনের দলে বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা আছে পাঁচজনের। সাকিব, তামিম, মুশফিকুর, রাজ্জাক ও নাফীস খেলেছেন ২০০৭ বিশ্বকাপে। একমাত্র আশরাফুলেরই অভিজ্ঞতা আছে এর আগে দুটি বিশ্বকাপে খেলার। সেই আশরাফুলকে নিয়েই এবারের দল নির্বাচনে বড় নাটক!
আশরাফুল নিজেকে বড় মঞ্চের খেলোয়াড় বলে দাবি করেন। এখন তাঁর সেটি প্রমাণের দায়।
No comments