উদ্ভট উটের পিঠে আইভরি কোস্ট

মাদের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের একটি কাব্যগ্রন্থের নাম 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ'। এ শিরোনামে তার একটি সাড়া জাগানো কবিতাও রয়েছে। যতদূর মনে পড়ে কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন আশির দশকের শুরুতে। বাংলাদেশ তখন নতুন করে সামরিক স্বৈরশাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছে। গণতন্ত্রের সম্ভাবনা সুদূরপরাহত।
শুধু তাই নয়, যে-সব মৌলিক ও মানবিক অধিকারের জন্য এ দেশের মানুষ অভূতপূর্ব ত্যাগ স্বীকার করেছে, তার সবই তখন পদদলিত। আশাহীন, স্বপ্নহীন ও উদ্দেশ্যহীন এক গোলকধাঁধার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল দেশের ভবিষ্যৎ। স্বদেশবাসীর সেই অব্যক্ত ও অন্তহীন বেদনাই ভাষা পেয়েছিল শামসুর রাহমানের 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ' শীর্ষক অসাধারণ সেই কবিতায়। চিত্রকল্পটি স্থায়ীভাবে খোদিত হয়ে গিয়েছিল জনমনে। কেন জানি না, গণমাধ্যমে আইভরি কোস্টের সামপ্রতিক ঘটনাপ্রবাহের বিবরণ পাঠ করতে গিয়ে আমার চোখের সামনে সেই চিত্রকল্পটিই ভেসে উঠছিল বারবার। বলতে দ্বিধা নেই যে, দেশটির বর্তমান অবস্থা তার চেয়েও বহুগুণ বেশি ভয়াবহ। ভয়ঙ্কর একটি গৃহযুদ্ধের ধকল সামলে ওঠার আগেই আরেকটি গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা প্রবলভাবে কড়া নাড়ছে দেশটির দরোজায়।
আইভরি কোস্ট পশ্চিম আফ্রিকার গৃহযুদ্ধ-বিধ্বস্ত দরিদ্র একটি দেশ। পুুরো নাম দি রিপাবলিক অব আইভরি কোস্ট। জাতিসংঘের ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যা ২১ দশমিক ৬ মিলিয়ন (দুই কোটি ১৬ লাখ)। আয়তন ৩ লাখ ২২ হাজার ৪শ' ৬২ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যার বিচারে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য লোকজ ধর্মে বিশ্বাসীদের সংখ্যাও উপেক্ষা করার মতো নয়। রফতানি পণ্য তালিকার শীর্ষে রয়েছে কোকো, কফি, খনিজ তেল, তুলা, কলা, আনারস, পাম তেল ও মাছ প্রভৃতি। বিশ্বব্যাংকের ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী মাথাপ্রতি আয় ১ হাজার ৬০ মার্কিন ডলার। দীর্ঘ প্রায় সাত দশক ফ্রান্সের কলোনী বা আশ্রিত রাষ্ট্র থাকার পর ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভ করলেও ঔপনিবেশিক প্রভাব ও মানসিকতা কখনই দেশটির পিছু ছাড়ে নি। ফলে স্বাধীনতার পর পশ্চিম আফ্রিকার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আইভরি কোস্ট বিশ্ববাসীর সপ্রশংস মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অব্যাহত ঝড়ে সব তছনছ হয়ে যায়। রাজনৈতিক বিভাজনের এ বিষ ছড়িয়ে পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের জন্য যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারতো, তা-ই এখন বিভক্তির অনতিক্রম্য দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ যদি এর জন্য দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বহীনতা ও অদূরদর্শিতাকেও দায়ী করেন তা হলে তাকে দোষও দেয়া যাবে না।
স্বাধীনতার পর আইভরি কোস্টের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন প্রয়াত ফেলিক্স এইচ. বোয়েগনি। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য ঔপনিবেশিক শাসনে নিষ্পেষিত এ দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুদায়িত্বও অর্পিত হয়েছিল তার ওপরই। কিন্তু তিনি সেই পথে হাঁটেন নি। বরং ঔপনিবেশিক শাসনের ধারাবাহিকতায় তিনি নিজেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন দীর্ঘ তিনটি দশক। কায়েম করেছিলেন একদলীয় শুধু নয়, এক ব্যক্তির শাসন। ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে ১৯৯০ সালে, বহুদলীয় ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য হলেও সেই নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংকটের যে বীজটি তিনি বপন করেছিলেন তার আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত এখানেই। তারই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার রক্তাক্ত লড়াই। এক পর্যায়ে দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটে সামরিক বাহিনীর। সেইসঙ্গে স্পষ্ট হয়ে ওঠে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের স্বঘোষিত রক্ষাকর্তা হিসেবে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের অতি উৎসাহী ভূমিকাও। আর এ সবেরই পরিণতি হলো ২০০২ সালের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ_যা সেখানে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপকে অনিবার্য করে তোলে। এ গৃহযুদ্ধ সম্ভাবনাময় এ দেশটিকে বিভক্ত শুধু নয়, প্রায় ধ্বংসই করে দিয়েছে। গত অর্ধযুগে এ-ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশটিকে টেনে তোলার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তোড়জোড় কম হয় নি। কিন্তু সবই যে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান সংকটই তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ হিসেবে উত্থাপিত হতে পারে।
বিশিষ্ট রাজনীতিক লরেন্ট জিব্যাগবো ৫ বছরের জন্য আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০০০ সালে। কিন্তু নানা ছলছুতোয় তিনি এখনও ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। তার মেয়াদ যখন শেষ হয় তখন অবশ্য 'শান্তির স্বার্থে' আফ্রিকান ইউনিয়নের এক প্রস্তাবের ভিত্তিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলই অন্তর্বতর্ীকালীন সরকার হিসেবে তাকে আরও এক বছর ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছিল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সমপ্রতি দু'দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফায় গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ৩১ নভেম্বর আবারও ভোট গ্রহণ করা হয়। এ নির্বাচনের ফলাফল নিয়েই শুরু হয় নতুন করে সংঘাত। দৃশ্যত সংঘাতের কারণও সেই একটাই_ফলাফল মেনে না নেয়ার অগণতান্ত্রিক মানসিকতা। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট লরেন্ট জিব্যাগবোর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অ্যালাসান ওয়াত্তারা। তারা উভয়েই বিদগ্ধ রাজনীতিক। এ সংঘাতের সম্ভাব্য পরিণতি কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তাও তারা ভালো করেই জানেন। গণতন্ত্রের জন্য যথেষ্ট অশ্রুপাতও করেন। কিন্তু ক্ষমতার প্রশ্নে কেউ কাউকে এতোটুকু ছাড় দিতে রাজি নন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ বিরোধে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ দু'টি প্রতিষ্ঠানই শুধু নয়, জড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ও।
প্রেসিডেন্ট মিত্র হিসেবে বিবেচিত দেশটির সাংবিধানিক পরিষদ জিব্যাগবোকেই বিজয়ী ঘোষণা করেন। আর নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণা করে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যালাসানে ওয়াত্তারাকে। উভয়ে পৃথকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথও নিয়েছেন। ওয়াত্তারার শপথ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। তার মনোনীত ব্যক্তিই এখন জাতিসংঘে আইভরি কোস্টের প্রতিনিধিত্ব করছেন। জাতিসংঘ শুধু নয়, ওয়াত্তারার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট 'ইকোওয়াস' ও বিশ্বব্যাংকসহ আরও অনেকে। ইকোওয়াস-এর পক্ষ থেকে বেনিন, সিয়েরা লিওন ও কেপ-ভার্দের প্রেসিডেন্ট সমপ্রতি আইভরি কোস্ট সফর করেছেন। তাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে জিব্যাগবোকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় সামরিক অভিযানসহ যে কোনো চরম ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে। ওয়াত্তারার ঘনিষ্ঠ এক সহযোগী খোলাখুলিই বলেছেন যে, জিব্যাগবোকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে নামানোই এ সংকটের 'একমাত্র সমাধান'। কিন্তু সাংবিধানিক পরিষদ ও সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট জিব্যাগবো তার অবস্থানে অনড়। তার অভিযোগ, তাকে নির্বাচনে হারানোর জন্য ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করেছিল। নির্বাচনে ওয়াত্তারাকে বিজয়ী করার জন্য এ দুই দেশের দূতাবাস নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল বলেও তিনি দাবি করেন। পেশায় ইতিহাসবিদ সাবেক ট্রেড ইউনিয়নিস্ট কট্টর জাতীয়তাবাদী এ নেতা জানিয়ে দিয়েছেন যে, দেশি-বিদেশি কোনো চাপের মুখেই তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না।
তবে এটা ঠিক যে, জিব্যাগবোর পৃথিবী ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই তিনি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বহির্বিশ্ব থেকে। সেইসঙ্গে বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ। সাংবিধানিক পরিষদ ও তার অনুগত সেনাবাহিনী তাকে কতোটা সুরক্ষা দিতে পারবে সেই প্রশ্ন তো আছেই। তার চেয়েও বড়ো প্রশ্ন হলো, যে-দেশটিকে ঘিরে এতোকিছু_সেই দেশ এবং সেই দেশের জনগণের কী হবে? আরেকটি গৃহযুদ্ধের ধাক্কা কি সামাল দিতে পারবে তারা? এ নিয়ে বিবদমান পক্ষগুলোর কোনো উদ্বেগ এখনও দৃশ্যমান নয়। এদিকে দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, দেশটি এখন আরেকটি গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। তার এ আশঙ্কা অমূলক নয়। নির্বাচন-পরবর্তী সংহিসতায় এ-পর্যন্ত ২শ' মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গৃহযুদ্ধের আশঙ্কায় প্রতিবেশী লাইবেরিয়ায় পালিয়ে গেছে আরও কয়েক হাজার মানুষ। প্যারিসভিত্তিক সংগঠন 'রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার'-এর মতে, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের জন্য বর্তমানে আফ্রিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হলো আইভরি কোস্ট। এমনকি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে সেখানে অবস্থানকারী শান্তিরক্ষী মিশনের সদস্যরাও। উলেস্নখ্য যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তথ্য মতে, সেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে এখনও বাংলাদেশের ২ হাজার ৮৬ জন সেনাসদস্য কর্মরত আছেন।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অসহিষ্ণুতা ও দারিদ্র্যসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত গণতন্ত্র অভিমুখী উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আইভরি কোস্ট একটি জ্বলন্ত উদাহরণও বটে। আমরা জানি যে নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। তবে এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এটাকে উপেক্ষা বা অগ্রাহ্য করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সচল বা কার্যকর রাখা সম্ভব নয়। গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শুধু স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানই যথেষ্ট নয়, সেই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়ার মানসিকতাও থাকতে হবে সংশিস্নষ্ট সকলের মধ্যে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সকলের জন্যই কল্যাণকর হলেও গণতন্ত্রে উত্তরণের পথটি কুসুমাস্তীর্ণ নয়। গণতন্ত্র ও গোয়াতর্ুমি এক সঙ্গে চলে না। গণতন্ত্রের জন্য পরমতসহিষ্ণু, ধৈর্যশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রয়োজন। সেই নেতৃত্বকে অবশ্যই জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। থাকতে হবে জনগণের প্রদত্ত রায়কে সহজভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠান থেকে ফলাফল মেনে নেয়া পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়াটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এতে বিচু্যতি ঘটলে তা যে গোটা দেশের অস্তিত্বের জন্যই গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বর্তমান বিশ্বে তার উদাহরণও একেবারে কম নয়। আইভরি কোস্ট সম্ভবত তার সামপ্রতিকতম উদাহরণ হতে যাচ্ছে।
ভালো উদাহরণও আছে আমাদের চোখের সামনে। সেটি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। বছরের পর বছর ধরে শুধু রাজনৈতিক কারণে গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ এবং বন্দী নির্যাতন ও হত্যা থেকে শুরু করে কী না হয়েছে সেখানে? বর্ণবাদী শাসনে ক্ষতবিক্ষত শুধু নয়, গোটা পৃথিবী থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল দেশটি। বিশ্ববরেণ্য নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে জীবনের একটি উলেস্নখযোগ্য সময় কাটাতে হয়েছিল কারান্তরালে। সেখানে তার অভিজ্ঞতা ছিল আরও ভয়াবহ। বহু সহযোদ্ধাকে বিনা বিচারে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখেছেন তিনি। অবর্ণনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে মৃতু্যর মুখে ঠেলে দেয়ার উদাহরণও ছিল ভূরি ভূরি। সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় কিছুদিন আগে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ব ফুটবলের জমকালো আসর। স্বৈরশাসন ও বর্ণবাদের সেই ভয়ঙ্কর দানবটিও এখন প্রায় নখদন্তহীন হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রের রথে চেপে মসৃণ গতিতে এগিয়ে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিলেন সে দেশের কিংবদন্তীতুল্য নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। তার হাতে কোনো আলাদীনের আশ্চর্য চেরাগ ছিল না। তিনি শুধু গণতন্ত্রের মূলনীতিগুলোকেই অনুসরণ করেছিলেন নিষ্ঠার সঙ্গে। প্রতিশোধ বা হিংসা নয়, গ্রহণ করেছিলেন সহিষ্ণুতা ও সমঝোতার পথ। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাঁচানোর আর কোনো পথ খোলা ছিল না। এ কথা রাজনৈতিক সংঘাতপীড়িত উন্নয়নশীল সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মনে রাখা আবশ্যক যে, দৃশ্যত ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হলেও সেই খেলা এখনও বন্ধ হয় নি। মুখে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে বাইরের হস্তক্ষেপের পরিণতি কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তাও কারো অজানা থাকার কথা নয়। খাল কেটে কুমীর আনার পরিণতি যে কখনই শুভ হয় না তা কে না জানে!
==========================
আনল বয়ে কোন বারতা!  ফেলানীর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ- নিজ ভূমেই প্রশ্নবিদ্ধ ভারতের মানবিক চেহারা  বাজার চলে কার নিয়ন্ত্রণে  উঠতি বয়সের সংকট : অভিভাবকের দায়িত্ব  বিকল্প ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতি  অন্ধত্ব ও আরোগ্য পরম্পরা  খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার  কক্সবাজার সাফারি পার্কঃ প্রাণীর প্রাচুর্য আছে, নেই অর্থ, দক্ষতা  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গুপ্ত জীবন  ছাব্বিশটি মৃতদেহ ও একটি গ্রেপ্তার  ৩৯ বছর পরও আমরা স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি  সাইবারযুদ্ধের দামামা  সরলতার খোঁজে  সেই আমি এই আমি  আমেরিকান অর্থনীতি ডলারের চ্যালেঞ্জ  বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহার- আশানুরূপ সুফল নেই এক বছরেও  ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাজনীতি  মাস্টারদা সূর্যসেন ও যুব বিদ্রোহ সাতাত্তর  রসভা নির্বাচন ২০১১: একটি পর্যালোচনা  ড. ইউনূস অর্থ আত্মসাৎ করেননি  প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ৩৯ বছর  স্বাধীনতাযুদ্ধের 'বিস্মৃত' কূটনৈতিক মুক্তিযোদ্ধারা  আতঙ্কে শেয়ারবাজার বন্ধঃ বিক্ষোভ  আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে  মানবকল্যাণ আমাদের মন্ত্র  ট্রানজিট নিয়ে সবে গবেষণা শুরু  ভারতের একতরফা সেচ প্রকল্পঃ বাংলাদেশের আপত্তিতে বিশ্বব্যাংকের সাড়া  আমলাদের যাচ্ছেতাই বিদেশ সফর  সরকারের ব্যর্থতায় হতাশাঃ বিরোধী দলের ব্যর্থতায় বিকল্পের অনুপস্থিতি  ক্ষমতা ও গণতন্ত্র  পানি সংকট পানি বাণিজ্য  ২০১০ সালের অর্থনীতি কেমন গেল  গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে বাধা অনেক  কপাটে তালা দিয়ে কেন এই মৃতু্যর আয়োজন  বিজয়ের অর্থনীতি ও সম্ভাবনা  মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লক্ষ্মীর মুখোমুখি  একেই কি বলে আমলাতন্ত্র?  আত্মসমর্পণের সেই বিকেল  আমরা তাঁদের ভুলতে পারি না  সংবিধানের অনেক বক্তব্য পারস্পরিক সংঘাতমূলক



দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে

এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.