প্রকৃতি- বাংলাদেশের ঝুঁকি বাড়ছে কমেনি কার্বন নিঃসরণ by ইফতেখার মাহমুদ

আটকে আছে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখার উদ্যোগও। কোপেনহেগেন মতৈক্য অনুযায়ী, কোনো শিল্পোন্নত দেশই তাপমাত্রা ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার পালন করেনি। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ২৩ নভেম্বর জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) কোপেনহেগেন মতৈক্যের এক বছরের অগ্রগতি নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলছে, বর্তমানে যেভাবে বিশ্ব চলছে, তা আশঙ্কাজনক।
শিল্পোন্নত ৩৭টি দেশ ও উদীয়মান অর্থনীতির পাঁচটি দেশ যে হারে কার্বন নিঃসরণ করছে, তাতে এই শতাব্দীর মধ্যে তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যাবে।
কোপেনহেগেন মতৈক্য মেনে চলতি শতাব্দীর মধ্যে তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দিতে না চাইলে চলতি বছর থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৬০ শতাংশ কমাতে হবে বলে মনে করছে ইউএনইপি। কোপেনহেগেনে শিল্পোন্নত দেশগুলো ২০২০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৪০ শতাংশ কমানোর অঙ্গীকার করেছিল।
ঝুঁকি বাড়ছে: বিশ্বের ৩০ জন শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানী পরিচালিত জাতিসংঘের ওই সমীক্ষাটি সম্পর্কে মূল্যায়ন করে ইউএনএফসিসির এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ক্রিশ্চিয়ানা ফিগুইরেস বলেন, চলতি শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বনেতাদের কী করতে হবে, তার একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকে বাঁচাতে হলে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।
জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্যানেলের (আইপিসিসি) সদস্য আতিক রহমান বলেন, ‘প্রতিবেদনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি।’
উন্নত দেশগুলো কানকুনে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর ব্যাপারে একমত হতে না পারলে চলতি শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি অতিক্রম করে তিন ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে—এ মন্তব্য করে আতিক রহমান বলেন, এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আইপিসিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী এক সেন্টিমিটার না বেড়ে দুই সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতে বাংলাদেশের ৩০ শতাংশের বেশি এলাকা ডুবে যাবে।
অন্যদিকে বিশ্বের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার ‘জিও সায়েন্স গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্ট’ শীর্ষক এক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, বৈশ্বিক মন্দার কারণে ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। তবে মন্দা কিছুটা কমে যাওয়ায় ২০১০ সালের মধ্যে তা ৩ শতাংশ বাড়বে। ২০০৯ সালে বিশ্বে রেকর্ড পরিমাণে ৩০ দশমিক ৮ বিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ হয়েছে উল্লেখ করে জিও সায়েন্স বলছে, শিল্পোন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার কারণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়েছে। আর উদীয়মান অর্থনীতির দেশ চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেনি।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০০৯ সালে জাপান ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, জার্মানি ৭ শতাংশ এবং রাশিয়া ৮ দশমিক ৪ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়েছে।
২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে চীন ৮ শতাংশ, ভারত ৬ দশমিক ২ শতাংশ ও দক্ষিণ কোরিয়া ১ দশমিক ৪ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। ২০১০ সালের জুনের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে মোট নিঃসরিত কার্বনের ২৪ শতাংশের জন্য এককভাবে দায়ী চীন। আর ১৭ শতাংশ নিঃসরণ করে দ্বিতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের অবস্থা: জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দেশকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকার ওপর একটি প্রতিবেদন দিতে হবে। আসন্ন কানকুন সম্মেলনে বাংলাদেশ যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রায় ১০ হাজার ভাগের ৭ ভাগ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ দশমিক ৩ টনের কিছু কম; যেখানে বিশ্বের মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ সাড়ে ৪ টন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ২ দশমিক ৮ টন, চীনের ৫ টন, জার্মানি ও দক্ষিণ আফ্রিকার ৯ টন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ২০ টন।
খুব সামান্য পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ করেও বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে আছে বলে বিশ্বের বেশির ভাগ সংস্থা স্বীকার করে। জার্মান ওয়াচ ও ম্যাপলক্রফট জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এক নম্বরে রেখেছে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, গত ৩০ বছরে বাংলাদেশে এক লাখ ৯১ হাজার ৬৩৭ জন মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা গেছে। এর মধ্যে শুধু ঝড়েই মারা গেছে এক লাখ ৬৭ হাজার ১৭৮ জন।
বাংলাদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কী পরিমাণে বেড়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে সমীক্ষা চালিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, হিরণ পয়েন্টে বছরে ৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বেড়েছে। কক্সবাজারে উচ্চতা বেড়েছে ১ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এ হিসাবে ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২৭ সেন্টিমিটার বাড়বে।
আইপিসিসির অপর বাংলাদেশি সদস্য আহসান উদ্দিনের মতে, বাংলাদেশকে শুধু জলবায়ু তহবিলের জন্য দৌড়ঝাঁপ করলে হবে না। উন্নত দেশগুলো যে হারে কার্বন নিঃসরণ বাড়াচ্ছে, তাতে বাংলাদেশসহ জলবায়ু-ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ফলে সরকারের উচিত শিল্পোন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে তাপমাত্রা সীমিত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে চাপ দেওয়া।
========================
প্রথম আলোর সাথে সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস 'সামাজিক ব্যবসা অনেক ক্ষেত্রেই বেশিকার্যকর'  আলোচনা- 'তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে করণীয়' by by মোহাম্মদ জমির  রাজনৈতিক আলোচনা- 'গণতন্ত্রের স্বার্থে পারস্পারিক সম্মানবোধ' by ড. আবু এন. এম. ওয়াহিদ  শিল্প-অর্থনীতি 'চরম দরিদ্রদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে' by জাহাঙ্গীর শাহ  বিশেষ রচনা- মেডির মিরাকল by মাসুদ রহমান  ভ্রমণ- 'ঘুরি দেশে দেশে' by মাহফুজ রহমান  প্রকৃতি- 'বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে হাঁক, দ্বিগুণ হবে বনের বাঘ' by খসরু চৌধুরী  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'সংসদীয় গণতন্ত্র, না ভানুমতির খেল' by সোহরাব হাসান  গল্পালোচনা- 'এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু...' by মুস্তাফা জামান আব্বাসী  ফিচার গল্প- ‘ইতালির রাস্তায় পুলিশ খুঁজতাম' by বাবুল আক্তার  খবর- মৃত ভেবে মাছুমার নিথর দেহ ওরা ফেলে দেয় মহাসড়কে  অদ্ভুত ফিচার- 'বাংলার বিস্ময়ঃ আশ্চর্য কুলাগিনা' by মেহরিন জাহান  স্মরণ- 'ডা. মিলনকে যেন না ভুলি' by পলাশ আহসান  রাজনৈতিক আলোচনা- 'যার যা কাজ' by আতাউস সামাদ  নিবন্ধ- 'অবলা বলে কেন না-বলা থাকবে' by মোস্তফা হোসেইন  ইতিহাস- সিপাহি বিদ্রোহঃ সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে  আন্তর্জাতিক- 'কোরিয়া সীমান্তে তুলকালাম' by দাউদ ইসলাম  আন্তর্জাতিক- 'চেচনিয়ার ‘যুদ্ধবাজ ইমাম’ by মিজান মল্লিক  আন্তর্জাতিক- আমি স্বাধীনতা চাই না: রমজান কাদিরভ  সাহিত্যালোচনা- 'মৃত্যুশতবার্ষিকীর তলস্তয়' by আন্দালিব রাশদী  গল্পসল্প- 'দুঃখটাকে ভাগাভাগি করি' by মুহম্মদ জাফর ইকবাল  গল্প- 'দাদার দোকানে শূন্য দশক' by সালাহউদ্দিন


দৈনিক প্রথম আলোর সৌজন্যে
লেখকঃ ইফতেখার মাহমুদ 


এই সাক্ষাৎকার'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.