খবর- মৃত ভেবে মাছুমার নিথর দেহ ওরা ফেলে দেয় মহাসড়কে

বিয়ের আট মাস যেতে না যেতেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাছুমা আক্তারের মাথা, কপাল ও গালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেছে। তারা সারা শরীর কুপিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বাঁ হাত মুচড়ে ভেঙেও ফেলে। বাঁ পায়ের উরুর মাংস কুপিয়ে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে; এমনকি গ্যাস লাইটের আগুন দিয়ে ডান হাত পুড়িয়ে দেয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অমানুষিক নির্যাতনে মাছুমার দেহ এক পর্যায়ে নিথর হয়ে যায়। তারা মাছুমাকে মৃত ভেবে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য সেই নিথর দেহটিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ফেলে দেয়।
ব্যস্ততম সড়কে মুমূর্ষু অবস্থায় মাছুমাকে পড়ে থাকতে দেখে হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি থামায়। তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে তিন দিন পর জ্ঞান ফেরে মাছুমার। তিনি ঢাকায় চিকিৎসা শেষে বর্তমানে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর আঘাতের কারণে এখনো নড়াচড়া করতে পারেন না। হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের চৈতন্যা গ্রামে এ অমানবিক ঘটনা ঘটে।
মাছুমার একটাই অপরাধ, তিনি দেবর-ভাবির অপকর্ম দেখে ফেলেন এবং দেবরের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া দেননি। আর এ কারণেই তাঁকে নির্যাতন করে নিথর দেহ রাস্তায় ফেলে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে মাছুমা আক্তার বাদী হয়ে নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় মাছুমার স্বামী মোয়াজ্জেম হোসেন, দেবর তোফাজ্জল হোসেন, ভাশুর আলাল উদ্দিন, জা শাহিদা আক্তার, শ্বশুর ফজলুর রহমান ও ননদ নীলা আক্তারকে। অভিযোগটি শিবপুর থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনো অভিযুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মাছুমার চাচা বাদল মিয়া জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ পিবিনগর গ্রামের শহিদ মিয়ার মেয়ে মাছুমা আক্তার। জন্মের এক বছরের মাথায় তাঁর মা ফরিদা বেগম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ কারণে পরবর্তী সময়ে বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। এরই মধ্যে বাবা কাজের খোঁজে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি দেন। শত বাধা পেরিয়ে আদিয়াবাদ বেলায়াত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ মেলে মাছুমার। এ সময়ই মাছুমাকে সৎমা রহিমা বেগম সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেন। ছেলে প্রবাসী হওয়ায় মোবাইল ফোনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। বিয়ের পর মাছুমা শ্বশুরবাড়িতে চলে যান।
বাদল মিয়া বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে মাছুমার শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাকে ফোনে জানানো হয়, মাছুমা টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে পালানোর সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে মাছুমার বীভৎস অবস্থা দেখে চমকে যাই।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে নির্যাতিত মাছুমা আক্তার কালের কণ্ঠকে জানান, ভাশুর জালাল উদ্দিন প্রবাসী। তাঁর স্ত্রী শাহিদা আক্তারের সঙ্গে দেবর তোফাজ্জল হোসেনের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। একদিন তাদের অনৈতিক কার্যকলাপ তিনি দেখে ফেলেন। পাশাপাশি দেবর তোফাজ্জল হোসেন তাঁকে অনৈতিক প্রস্তাব দিলে তিনি সাড়া দেননি। বিষয়টি শাশুড়ি হাওয়া বেগমকে জানালে তাঁরা মাছুমার প্রতি উত্তেজিত হন। তাঁদের সমর্থন দেন ভাশুর আলাল উদ্দিন ও ননদ নীলা আক্তার।
ঘটনার দিন পরিকল্পনামতো রাত ১০টার দিকে দেবর তোফাজ্জল হোসেন মাছুমাকে ভাই বিদেশ থেকে ফোন করেছে বলে ডেকে ঘর থেকে বের করে। এ সময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা ভাশুর আলাল উদ্দিন, জা শাহিদা আক্তার ও ননদ নীলা আক্তার শাহিদার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দা ও ছুরি দিয়ে মাথায় ও শরীরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। আলাল উদ্দিন গ্যাস লাইটের আগুন দিয়ে ডান হাত পুড়িয়ে দেয়।
মাথায় আঘাতের যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করতে করতে ঘটনার বর্ণনা দেন মাছুমা। তিনি জানান, মোবাইলে বিয়ে হওয়ায় স্বামীকে সশরীরে দেখার ভাগ্য হয়নি। এখন স্বামী দেশে ফিরে নিজের পরিবারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে।
নাতনির এমন অবস্থা দেখে দাদি সত্তরোর্ধ্ব সখিনা বেগম পাশে বসে সারাক্ষণ চোখের জল ফেলেন। সখিনা বেগম বলেন, বিয়ের আগে আমার নাতিনের মুখটা কি সুন্দর ছিল। শ্বশুরবাড়ির লোকজন মারার পর এহন আর তারে চিনন যায় না। আমার নাতিনের কি দোষ? এমনভাবে মাইনষে মানুষরে মারতে পারে! আপনারা এর বিচার করেন।
মাছুমার চিকিৎসক নরসিংদী জেলা হাসপাতালের সার্জারিবিশেষজ্ঞ মো. আজিজুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে জানান, মাথা থেকে গাল পর্যন্ত জখম হয়েছে। হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানের আঘাতও গুরুতর। তার সুস্থ হতে দীর্ঘদিন লাগবে। এমনকি কিছু কিছু আঘাতের ক্ষত সারা জীবনেও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শিবপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) বদরুল আমিন বলেন, মামলার পর সব আসামি গা-ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ আসামিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, দেবর ও জায়ের অপকর্ম দেখে ফেলা, দেবরের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়া ও যৌতুকের কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাছুমার ওপর নির্যাতন চালায়। মাছুমার সঙ্গে প্রবাসী স্বামীর মোবাইলে বিয়ে এবং এক দিনও সংসার না করার কারণে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা নেই। তাই সেও পরিবারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বসহকারে দেখছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে শিগগিরই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
এদিকে অভিযুক্ত সবাই গা ঢাকা দেওয়ায় ও মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
======================
অদ্ভুত ফিচার- 'বাংলার বিস্ময়ঃ আশ্চর্য কুলাগিনা' by মেহরিন জাহান  স্মরণ- 'ডা. মিলনকে যেন না ভুলি' by পলাশ আহসান  রাজনৈতিক আলোচনা- 'যার যা কাজ' by আতাউস সামাদ  নিবন্ধ- 'অবলা বলে কেন না-বলা থাকবে' by মোস্তফা হোসেইন  ইতিহাস- সিপাহি বিদ্রোহঃ সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে  আন্তর্জাতিক- 'কোরিয়া সীমান্তে তুলকালাম' by দাউদ ইসলাম  আন্তর্জাতিক- 'চেচনিয়ার ‘যুদ্ধবাজ ইমাম’ by মিজান মল্লিক  আন্তর্জাতিক- আমি স্বাধীনতা চাই না: রমজান কাদিরভ  সাহিত্যালোচনা- 'মৃত্যুশতবার্ষিকীর তলস্তয়' by আন্দালিব রাশদী  গল্পসল্প- 'দুঃখটাকে ভাগাভাগি করি' by মুহম্মদ জাফর ইকবাল  গল্প- 'দাদার দোকানে শূন্য দশক' by সালাহউদ্দিন  শিল্পি- 'সফিউদ্দিন আহমেদের সৃষ্টিসমগ্র-অশেষ আলোর আলোর আধার' by সৈয়দ আজিজুল হক  নিবন্ধ- 'সব শিল্পই যাবে প্রকৃতির কাছে। by খান মিজান  গল্পসল্প- 'কাউন্ট লিও তলস্তয়' by আন্দালিব রাশদী  আলোচনা- 'সেই আমি এই আমি' by আতিকুল হক চৌঁধুরী  ইতিহাস- 'কাউন্ট লিও তলস্তয়ের হৃদয়সংবেদী ডায়েরি' by দেবেশ রায়  স্মরণ- 'কাউন্ট লিও তলস্তয়ের মৃত্যু-শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি' by বেলাল চৌধুরী  ইতিহাস- 'বাংলায় সিপাহি বিদ্রোহ' by রিদওয়ান আক্রাম  শিল্প-অর্থনীতি 'এখন প্রয়োজন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের' by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ  রাজনৈতিক আলোচনা- 'গণতন্ত্র : চাইলেই ধরা দেয় না' by এমাজউদ্দীন আহমদ  আন্তর্জাতিক- 'কোরীয় অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা কত দূর যেতে পারে?' by জগলুল আহমেদ চৌধূরী



দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
সুমন বর্মণ, নরসিংদী থেকে


এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.