বিজ্ঞান আলোচনা- 'মহাকাশের পড়শিরা' by মো: সাইফুল ইসলাম
পড়শিদের সম্বন্ধে সবারই জানতে ইচ্ছ করে। সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহরা যে আমাদের পড়শি এ কথা মানুষ জেনেছে বহুকাল থেকে।
আর অনেকেই ভেবেছে এসব গ্রহ-উপগ্রহে আমাদের সাথী হওয়ার মত জীব আছে।
এ নিয়ে অনেক কল্পকাহিনীও রচিত হয়েছে । আমাদের সবচেয়ে নিকট পড়শি হলো চাঁদ। আর চাঁদে যে কোন রকম জীবনের চিহ্ন মাত্র নেই সে কথা আমরা আগেই জানি।
চাঁদ ছাড়া আমাদের আরও অনেক পড়শি আছে। এদের সবাই গ্রহ আর বৈশিষ্ট্য অনেকটা পৃথিবীর মতো। এদের কিছু অনেক বড় আবার কিছু ছোট। অর্থাৎ আকারের হিসাবে এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
এক ভাগে আছে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল আর প্লুটোর মতো খুদে গ্রহ। অন্য ভাগে আছে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস আর নেপচুনের মতো দানবাকার গ্রহ।
বুধগ্রহ : বুধের কথা মানুষ বহুকাল আগে থেকেই জানে। সূর্য থেকে এটি প্রায় ৫.৭৯ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫.৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। এর ভর পৃথিবীর ০.০৬ গুণ আর ব্যাস ০.৩৮ গুণ। এর গড় ঘনত্ব পানির ৫.৪ গুণ। সূর্যের চারপাশে আবর্তন করতে এর সময় লাগে ৮৮ দিন। এর তাপমাত্রা ১৮০০ থেকে ৪৩০০ সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর বায়ুমণ্ডলে প্রধানত সোডিয়াম, হিলিয়াম, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত।
শুক্রগ্রহ : সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে আর ভোরের পুব আকাশে আমরা শুক্রগ্রহকে তারার মতো দেখি। কিন্তু এটি একটি গ্রহ। সূর্য থেকে ১০.৮২ কোটি কিলোমিটার আর পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর ভর পৃথিবীর ০.৮২ গুণ আর ব্যাস পৃথিবীর ০.৯৫ গুণ। এর গড় ঘনত্ব পানির প্রায় ৫.৩ গুণ। সূর্যের চারপাশে আবর্তন করতে এর সময় লাগে ২২৫ দিন। এর তাপমাত্রা ৪৫৯০ সেন্টিগ্রেড। এর বায়ুমণ্ডল প্রধানত কার্বনডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত। এতে অতি সামান্য পরিমাপ জলীয়বাষ্প, আর্গন, কার্বন মনোক্সাইড প্রভৃতি আছে।
মঙ্গলগ্রহ : গ্রহদের মধ্যে কেবলমাত্র মঙ্গলেই মানুষের বসবাস উপযোগী তাপমাত্রা আছে। মঙ্গলগ্রহ সূর্য থেকে ২২.৭৯ কোটি কিলোমিটার আর পৃথিবী থেকে প্রায় ২২.৭ কোটি কিলোমিটার দূরে। এর ভর পৃথিবীর প্রায় ০.১১ গুণ আর ব্যাস পৃথিবীর ০.৫৩ গুণ। এর গড় ঘনত্ব পানির ৩.৯ গুণ। এটির নিজ অক্ষের চারপাশে ঘুরতে সময় লাগে ২৪.৬ ঘণ্টা আর সূর্যের চারপাশে আবর্তন করতে সময় লাগে ৬৮৭ দিন। এর তাপমাত্রা Ñ৮৭০ থেকে ১৭০ সেন্টিগ্রেড। এর বায়ুমণ্ডল কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন, আর্গন, অক্সিজেন, ক্রিপটন, জলীয়বাষ্প ইত্যাদি দ্বারা গঠিত। মঙ্গলের দুটো ছোট উপগ্রহ আছে; ফোবস আর ডেইমস। এর দুটোই আবিষ্কার করেছিলেন র্রে পুব আকামে আমরা শুশুক্র গ্যহকে তারার মতে দেখি। কিন্তু এটি একটি গ্রহ। সূর্য থেকে ১০.৮২ কোটি কি. মি. আর পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কি. কিম. দুরে অবস্থি। এর ভর পৃথিবলি ০.৮২ গুণ আর ব্যাস পৃথিবলি ০.৯৫ গুণ। এর গড় ঘনত্ব াকা কাকাতআসাফ হল ১৮৭৭ সালে। এ পর্যন্ত মঙ্গলে কোন প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু পৃথিবীর বাইরে মানুষ যদি মহাকাশে আস্তানা গাড়তে চায় তবে তার মঙ্গলই উপযুক্ত জায়গা।
বৃহস্পতি গ্রহ : বৃহস্পতি হলো গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এমনকি সৌরজগতের অন্য সব গ্রহ একসঙ্গে করলেও তার অর্ধেক হবে না। বৃহস্পতি সূর্য থেকে ৭৭.৮৪ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আর পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৮০ কোটি কিলোমিটার। এর ভর পৃথিবীর ৩১৭.৮ গুণ আর ব্যাস ১১.২ গুণ। এর গড় ঘনত্ব পানির ১.৩ গুণ। নিজ অক্ষের চারপাশে এর ঘূর্ণনকাল ৯.৮ ঘণ্টা আর সূর্যের চারপাশে আবর্তন করতে এর সময় লাগে ১১.৮৬ বছর। এর তাপমাত্রা Ñ১২৫০ থেকে ১৭০ সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, অতি সামান্য পরিমাপ মিথেন অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোক্সাইড, জলীয়বাষ্প ইত্যাদি দ্বারা গঠিত। বৃহস্পতির আছে ১৬টি উপগ্রহ। উপগ্রহগুলোর মধ্যে গ্যানিমেড সৌরজগতে সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। এমনকি এটি বুধের চেয়েও বড়।
শনিগ্রহ : প্রাচীনকালে ইউরেনাস আবিষ্কারের আগে শনিই ছিল সৌরজগতের দূরতম গ্রহ। শনি দেখতে অপরূপ রূপময়। সূর্য থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৪২.৯৪ কোটি কিলোমিটার। আর পৃথিবী থেকে এটি প্রায় ১৪৭ কোটি কিলোমিটার। এর ভর পৃথিবীর ৯৫.১ গুণ আর ব্যাস ৯.৪২ গুণ, এর গড় ঘনত্ব পানির ০.৭ গুণ। নিজ অক্ষের চারপাশে এর ঘূর্ণনকাল ১০.৬৬ ঘণ্টা। সূর্যের চারপাশে আবর্তন করতে এর সময় লাগে ২৯.৪৬ বছর। এর তাপমাত্রা ১৭৬০ সেন্টিগ্রেড। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং অতি সামান্য মিথেন, অ্যামোনিয়া, ইথেন ও ফসফিন দ্বারা এর বায়ুমণ্ডল গঠিত। শনির ১৮টি উপগ্রহ আছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উপগ্রহের নাম টাইটান।
ইউরেনাস : ১৭৮১ সালে জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেল এই গ্রহটি আবিষ্কার করেন এটি সূর্য থেকে প্রায় ২৮৭.৫০ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ২৮৭.১৫ কোটি কিলোমিটার। এর ভর পৃথিবীর ১৪.৫ গুণ। আর ব্যাস ৪.০১ গুণ। এর গড় ঘনত্ব পানির ১.২ গুণ। এটি নিজ অক্ষের চারপাশে ১৭.২৪ ঘণ্টায় একবার ঘুরে। সূর্যের চারপাশ আবর্তনে এর সময় লাগে ৮৪.৪১ বছর। এর তাপমাত্রা ২১৬০ সেন্টিগ্রেড। এর বায়ুমণ্ডল হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন দ্বারা গঠিত। এর মোট ১৫ উপগ্রহ আছে। আর এদের সবার নামই শেক্সপিয়রের নায়ক-নায়িকাদের নামে।
নেপচুন গ্রহ : অ্যাডামস নামে এক ইংরেজ গণিতবিদ ও লে ভেরিয়ে নামে এক ফরাসি বিজ্ঞানী হিসেব কষে নেপচুনের অবস্থান বের করেছিলেন। আর ইয়োহান গাল ও হাইনরিখ ডারেস্ট নামে দুইজন জার্মান গণিতবিদ ১৮৪৬ সালে গ্রহটি খুঁজে পান। এটি সূর্য থেকে ৪৫০.৪৩ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৪৪৯.৮ কোটি কিলোমিটার।
এর ভর পৃথিবীর ১৭.২ গুণ আর ব্যাস ৩.৮৮ গুণ। আর এর গড় ঘনত্ব পানির ১.৭ গুণ। নিজ অক্ষের চারপাশে ঘুরতে সময় লাগে ১৬ ঘণ্টা। সূর্যের চারপাশে আবর্তনে এর সময় লাগে ১৬৪.৭৯ বছর। এর তাপমাত্রা Ñ২১৮০ সেন্টিগ্রেড এর বায়ুমণ্ডল প্রধানত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন। এর মোট উপগ্রহ ৮টি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হলো ট্রাইটন।
প্লুটো গ্রহ : বিশ শতকের শুরুর দিকে জ্যোতির্বিদ পার্সিভাল লাওয়েল হিসেব করে প্লুটোর কক্ষপথ আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু তিনি এটি খুঁজে পাননি। তার মৃত্যুর ১৪ বছর পর ১৯৩০ সালে ক্লাইভটমবো নামে এক তরুণ শৌখিন জ্যোতির্বিদ এটি আবিষ্কার করেন। সূর্য থেকে এর দূরুত্ব ৫৯০.০১ কোটি কিলোমিটার। আর পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৫৯০.৫ কোটি কিলোমিটার। এর ভর পৃথিবীর ভরের ০.০০৪ গুণ আর ব্যাস ০.১৮ গুণ। এটি অক্ষের চারপাশে ৬.৪ দিনে একবার ঘোরে। সূর্যের চারপাশে আবর্তনে এর সময় লাগে ২৪৭.৭ বছর। এর তাপমাত্রা Ñ২২৩০ থেকে Ñ২৩৩০ সেন্টিগ্রেড। এর বায়ুমণ্ডল প্রধানত মিথেনের তৈরি। প্লুটোর আবার একটি উপগ্রহ আছে। এর নাম কেয়ারন। কেয়ারন ৬.৪ দিনে একবার প্লুটোকে পরিভ্রমণ করে।
==========================
বিজ্ঞান আলোচনা- 'পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড কার' by সাকিব রায়হান বিজ্ঞান আলোচনা- 'হারিয়ে যাবে দানব গ্রহ!' by সাকিব রায়হান গল্প- 'ট্রেনের হুইসেল' by হামিদুল ইসলাম আলোচনা- 'জীবজগতে বেঁচে থাকার কৌশল' by আরিফ হাসান আলোচনা- 'মিনার : মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন' by শেখ মারুফ সৈকত আলোচনা- 'ভাষা নিয়ে যত কথা' by আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ গল্প- 'বোকা জ্যাকের কাণ্ড' অনুবাদঃ জাফর তালুকদার স্মৃতি ও গল্প- 'চানমিয়ার হাতি দেখা' by ড. কাজী দীন মুহম্মদ ভ্রমণ- 'সাগরকন্যার তীরে' by এস এম ওমর ফারুক ইতিহাস- সংবাদপত্রে যেভাবে সংবাদ এলো by জে হুসাইন ভ্রমণ- 'আমার দেখা নরওয়ে' by অধ্যাপিকা চেমন আরা রহস্য গল্প- 'আসল খুনি' সৌজন্যে কিশোরকন্ঠ আলোচনা- 'নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ' by শরীফ আবদুল গোফরান ফিচার- 'মোরা বড় হতে চাই' by আহসান হাবীব ইমরোজ ইসলামী গল্প- 'সেনাপতির নির্দেশ' by কায়েস মাহমুদ ইসলামী গল্প- 'বয়ে যায় নিরন্তর' by কায়েস মাহমুদ
কিশোরকন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ মো: সাইফুল ইসলাম
এই বিজ্ঞান আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
লেখকঃ মো: সাইফুল ইসলাম
এই বিজ্ঞান আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
No comments