মাহে রমজানে রহমতের প্রথম দশক by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
পবিত্র মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও বরকতময় মাস। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে প্রতিবছর মুসলিম বিশ্বের দ্বারে ফিরে আসে মহিমান্বিত রমজান মাস। ‘রমজান’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেওয়া। রমজান মাসকে রমজান এ জন্য বলা হয় যে আল্লাহ তাআলা এ মাসে এত অধিক রহমত-বরকত নাজিল করেন যে এতে বান্দার গুনাহ ও পাপ জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ মাস বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে নিজেকে সোপর্দ করার মাস। এ মাসটি প্রাপ্তির জন্য মুমিন মুসলমানের অন্তর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। স্বয়ং নবী করিম (সা.) এ মাসটি আসার আগেই শাবান মাসে মাহে রমজান পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে মিনতিভরা হূদয় নিয়ে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবানের মধ্যে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
রমজান মাসে আল্লাহর সব সৃষ্টি তাঁর অশেষ রহমতের পাশে ধন্য হয়। এই নিয়ামতপূর্ণ মোবারকময় মাসে পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার রহমতের দরজাগুলো তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজান মাস সমুপস্থিত। এটা অতিশয় বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের রোজা আল্লাহ তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। এ মাসে রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, আর এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানকে আটক করে রাখা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে লোক এই রাতের মহাকল্যাণ লাভ থেকে বঞ্চিত থাকল, সে প্রকৃতই সবকিছুই থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি।’ (বায়হাকি, আহমাদ ও নাসাঈ)
আকাশের দরজা খুলে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, রমজান মাসে আল্লাহর অসীম রহমত উম্মতের ওপর অনবরত বৃষ্টির মতো বর্ষিত হতে থাকে। সত্কাজ ও নেক আমলসমূহ মহান আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং দোয়া কবুল হয়। আর বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়ার অর্থ এই যে মাহে রমজানে অন্য মাসের তুলনায় নেক আমল বা সত্কাজ করার বেশি তাওফিক হয়, যা দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করা সহজ হয়। যখন রোজাদার ব্যক্তি বেশি নেক আমল করবেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই বেহেশতের উপযোগী হবেন এবং দোজখ থেকে বাঁচবেন। আর যখন বান্দা রমজান মাসের বদৌলতে গুনাহর কাজ করা থেকে বেঁচে থাকবেন, তখন জাহান্নামের দরজা বন্ধই থাকবে।
মহাবরকত ও কল্যাণের মাস মাহে রমজানে বেশি বেশি দোয়া-দরুদ পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ও প্রার্থনা পেশের মাধ্যমে মাগফিরাত ও রহমত কামনার জন্য উত্তম। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘এ মাসে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা তোমাদের দিকে শুভ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং রহমত বর্ষণ করেন, তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেন ও দোয়া কবুল করেন। তোমাদের মধ্যে যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী অধিক সত্কাজ করে শীর্ষস্থান অধিকার করতে পারে, আল্লাহ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যক্ষ করতে থাকেন ও ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। তোমরা অনেক বেশি সত্কাজ করে আল্লাহকে দেখিয়ে দাও। আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহ থেকে এ মাসে একমাত্র হতভাগ্যরাই বঞ্চিত থাকে।’
নবী করিম (সা.) মাহে রমজানকে রহমত, বরকত ও কল্যাণের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। ঝরনাধারার ন্যায় আল্লাহর আশীষধারা রোজাদারদের অন্তর-রাজ্যে লোকদৃষ্টির অলক্ষ্যে বর্ষিত হতে থাকে। রমজান মাস এমন একটি মাস, যার প্রথম ১০ দিন রহমতের দ্বারা পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নামের শাস্তি থেকে নাজাত ও মুক্তির জন্য নির্ধারিত। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আর এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভ রয়েছে।’ (মিশকাত)
এসব সুসংবাদ কেবল তাঁদের জন্যই, যাঁরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মাহে রমজানের পূর্ণ একটি মাস রোজা পালন করেন, নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখেন। এ রোজাদার ব্যক্তিরাই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। তাঁরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে লাভ করেন অসীম রহমত। কেবল অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরাই তা সম্যক অবলোকন করতে পারেন। প্রকৃত ও খাঁটি রোজাদারেরা তাতে অবগাহন করে ১১ মাসের পুঞ্জীভূত পাপ-পঙ্কিলতা ও কলুষ-কালিমা থেকে পরিশুদ্ধ ও পূতপবিত্র হয়ে যান। যাঁরা প্রকৃত সতর্ক ও জ্ঞানী তাঁরা এ সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণ করতে পারে না এবং তিনি কিছু নিরুদ্ধ করতে চাইলে এরপর কেউ তার উন্মুক্তকারী নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা আল-ফাতির, আয়াত-২)
রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মুমিন বান্দারা আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হন। তাই আল্লাহ তাআলা রোজাদারদের জন্য পবিত্র রমজান মাসে তাঁর রহমতের দরজা অবারিত করে দেন। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। ১. রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহ তাদের দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন, আর আল্লাহ যার দিকে দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি প্রদান করেন না। ২. সন্ধ্যার সময় তাদের মুখ থেকে যে গন্ধ বের হয় তা আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। ৩. রমজানের প্রতিটি দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করেন। ৪. আল্লাহ তাআলা তাঁর বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও! আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে অব্যাহতি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে। ৫. রমজানের শেষ রাতে আল্লাহ তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন। এক ব্যক্তি বলল, এটা কি লাইলাতুল কদর? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘না, তুমি দেখনি শ্রমিকেরা যখন কাজ শেষ করে তখনই পারিশ্রমিক পায়?’ (বায়হাকি)
যারা অপরিণামদর্শী তারা এসবের খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, বিভিন্ন অজুহাতে রোজা রাখে না, অশালীনতা, বেহায়াপনা ও প্রকাশ্যে পানাহার করে—এসব অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণ্যকাজ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি প্রদত্ত অবকাশ ও অসুস্থতা ব্যতীত এক দিনও রমজানের দিনের রোজা ভঙ্গ করে, জীবনভর রোজা রাখলেও তার পরিপূরক হবে না।’ (তিরমিজি)
অতএব, যে রমজান মাসকে আল্লাহ তাআলা এত অধিক মর্যাদা, রহমত, বরকত ও পুণ্যময় করেছেন, সেই মহান মাসের প্রতি সবারই যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা উচিত। আমরা যেন মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা, বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। সেই সঙ্গে পরম করুণাময় আমাদের রহমত নিয়ামতে ভরপুর রমজানুল মোবারকে আত্মশুদ্ধি ও নাজাতের অছিলা হিসেবে গ্রহণ করুন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
রমজান মাসে আল্লাহর সব সৃষ্টি তাঁর অশেষ রহমতের পাশে ধন্য হয়। এই নিয়ামতপূর্ণ মোবারকময় মাসে পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার রহমতের দরজাগুলো তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজান মাস সমুপস্থিত। এটা অতিশয় বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের রোজা আল্লাহ তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। এ মাসে রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, আর এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানকে আটক করে রাখা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে লোক এই রাতের মহাকল্যাণ লাভ থেকে বঞ্চিত থাকল, সে প্রকৃতই সবকিছুই থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি।’ (বায়হাকি, আহমাদ ও নাসাঈ)
আকাশের দরজা খুলে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, রমজান মাসে আল্লাহর অসীম রহমত উম্মতের ওপর অনবরত বৃষ্টির মতো বর্ষিত হতে থাকে। সত্কাজ ও নেক আমলসমূহ মহান আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং দোয়া কবুল হয়। আর বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়ার অর্থ এই যে মাহে রমজানে অন্য মাসের তুলনায় নেক আমল বা সত্কাজ করার বেশি তাওফিক হয়, যা দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করা সহজ হয়। যখন রোজাদার ব্যক্তি বেশি নেক আমল করবেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই বেহেশতের উপযোগী হবেন এবং দোজখ থেকে বাঁচবেন। আর যখন বান্দা রমজান মাসের বদৌলতে গুনাহর কাজ করা থেকে বেঁচে থাকবেন, তখন জাহান্নামের দরজা বন্ধই থাকবে।
মহাবরকত ও কল্যাণের মাস মাহে রমজানে বেশি বেশি দোয়া-দরুদ পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ও প্রার্থনা পেশের মাধ্যমে মাগফিরাত ও রহমত কামনার জন্য উত্তম। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘এ মাসে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা তোমাদের দিকে শুভ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং রহমত বর্ষণ করেন, তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেন ও দোয়া কবুল করেন। তোমাদের মধ্যে যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী অধিক সত্কাজ করে শীর্ষস্থান অধিকার করতে পারে, আল্লাহ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যক্ষ করতে থাকেন ও ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। তোমরা অনেক বেশি সত্কাজ করে আল্লাহকে দেখিয়ে দাও। আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহ থেকে এ মাসে একমাত্র হতভাগ্যরাই বঞ্চিত থাকে।’
নবী করিম (সা.) মাহে রমজানকে রহমত, বরকত ও কল্যাণের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। ঝরনাধারার ন্যায় আল্লাহর আশীষধারা রোজাদারদের অন্তর-রাজ্যে লোকদৃষ্টির অলক্ষ্যে বর্ষিত হতে থাকে। রমজান মাস এমন একটি মাস, যার প্রথম ১০ দিন রহমতের দ্বারা পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নামের শাস্তি থেকে নাজাত ও মুক্তির জন্য নির্ধারিত। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আর এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভ রয়েছে।’ (মিশকাত)
এসব সুসংবাদ কেবল তাঁদের জন্যই, যাঁরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মাহে রমজানের পূর্ণ একটি মাস রোজা পালন করেন, নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখেন। এ রোজাদার ব্যক্তিরাই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। তাঁরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে লাভ করেন অসীম রহমত। কেবল অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরাই তা সম্যক অবলোকন করতে পারেন। প্রকৃত ও খাঁটি রোজাদারেরা তাতে অবগাহন করে ১১ মাসের পুঞ্জীভূত পাপ-পঙ্কিলতা ও কলুষ-কালিমা থেকে পরিশুদ্ধ ও পূতপবিত্র হয়ে যান। যাঁরা প্রকৃত সতর্ক ও জ্ঞানী তাঁরা এ সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণ করতে পারে না এবং তিনি কিছু নিরুদ্ধ করতে চাইলে এরপর কেউ তার উন্মুক্তকারী নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা আল-ফাতির, আয়াত-২)
রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মুমিন বান্দারা আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হন। তাই আল্লাহ তাআলা রোজাদারদের জন্য পবিত্র রমজান মাসে তাঁর রহমতের দরজা অবারিত করে দেন। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। ১. রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহ তাদের দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন, আর আল্লাহ যার দিকে দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি প্রদান করেন না। ২. সন্ধ্যার সময় তাদের মুখ থেকে যে গন্ধ বের হয় তা আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। ৩. রমজানের প্রতিটি দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করেন। ৪. আল্লাহ তাআলা তাঁর বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও! আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে অব্যাহতি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে। ৫. রমজানের শেষ রাতে আল্লাহ তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন। এক ব্যক্তি বলল, এটা কি লাইলাতুল কদর? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘না, তুমি দেখনি শ্রমিকেরা যখন কাজ শেষ করে তখনই পারিশ্রমিক পায়?’ (বায়হাকি)
যারা অপরিণামদর্শী তারা এসবের খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, বিভিন্ন অজুহাতে রোজা রাখে না, অশালীনতা, বেহায়াপনা ও প্রকাশ্যে পানাহার করে—এসব অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণ্যকাজ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি প্রদত্ত অবকাশ ও অসুস্থতা ব্যতীত এক দিনও রমজানের দিনের রোজা ভঙ্গ করে, জীবনভর রোজা রাখলেও তার পরিপূরক হবে না।’ (তিরমিজি)
অতএব, যে রমজান মাসকে আল্লাহ তাআলা এত অধিক মর্যাদা, রহমত, বরকত ও পুণ্যময় করেছেন, সেই মহান মাসের প্রতি সবারই যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা উচিত। আমরা যেন মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা, বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। সেই সঙ্গে পরম করুণাময় আমাদের রহমত নিয়ামতে ভরপুর রমজানুল মোবারকে আত্মশুদ্ধি ও নাজাতের অছিলা হিসেবে গ্রহণ করুন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
No comments