প্রথম দিনে দু দলই সমানে সমান
দেশ থেকে একটাও ভালো খবর আসছে না। একদিন ভবন হেলে পড়ার খবর তো আরেক দিন ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ। পুরান ঢাকার নবাব কাটরায় ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ছুঁয়ে গেছে ইংল্যান্ড সফররত ক্রিকেটারদেরও। শোকের প্রতীক হিসেবে কাল ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে বাংলাদেশ দল খেলতে নেমেছে হাতে কালো কাপড় বেঁধে।
শোক নাকি শক্তিরও উৎস কখনো কখনো। কাল যেন সেই শক্তিটাই খুঁজে পেল সাকিব আল হাসানের দল! দেশে যখন রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা, ম্যানচেস্টারে বাংলাদেশ দল কাটাল বলার মতো একটা দিন। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে দিনশেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের রান ২৭৫। আলোকস্বল্পতায় ৭ ওভার আগে শেষ হওয়া ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের প্রথম দিনে তো সমান সমানেই লড়ল বাংলাদেশ!
একাদশ ঠিক করা নিয়ে অনেক রকম সমীকরণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরুর আগে। তিন পেসার না দুই পেসার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার আগেই তামিম ইকবালকে নিয়ে অনিশ্চয়তা। পরশু রাতে চিকিৎসককে দেখানোর আগ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, এবার বুঝি তামিম খেলবেনই না! শেষমেশ লর্ডসের মতো এখানেও ইনজুরি-জয়, চিকিৎসক খেলার ছাড়পত্র দিলেন বাঁহাতি এই ওপেনারকে। দলে যে পরিবর্তনটা এসেছে, সেটা তাই তামিমের কারণে নয়। রবিউল আর রুবেলকে বসিয়ে শফিউল আর রাজ্জাককে খেলানোর পরিকল্পনা ছিল আগে থেকেই।
ইংল্যান্ডের মাটিতে মাত্র দুই পেসার নিয়ে টেস্ট খেলতে নামাটা বোকামি হয়ে গেল কি না, আরও এগোলেই বোঝা যাবে সেটা। তবে প্রথম দিনেই পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ে শফিউলের মাঠের বাইরে চলে যাওয়াটা কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে দল নির্বাচনকে। ইনিংসের ৪২তম ওভারে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ব্যথা পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুটা সময় বাংলাদেশ এক পেসারের দল হয়েই থাকল। পাঁচ দিনের ম্যাচে যে যেকোনো সময় যে কারও, বিশেষ করে পেসারদের ইনজুরিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে, একাদশ বানানোর সময় টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো সেটা ভুলেই গিয়েছিল! শেষ পর্যন্ত শফিউল মাঠে ফেরায় আপাতত রক্ষা।
এর আগে পেস আক্রমণ শুরুটাও খারাপ করেনি একেবারে। চার ওভারে ২৬ রান দিয়ে ফেলায় শাহাদাতের প্রথম স্পেল ওখানেই বন্ধ করে দিতে হলেও শফিউল তাঁর প্রথম স্পেলে টানা ৯ ওভার বল করেছেন, ১৮ রানে নিয়েছেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস আর লর্ডস টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান জোনাথন ট্রটের উইকেট দুটি। ৪৮ রানে ২ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে পরের ধাক্কা দুটি দিয়েছেন দুই স্পিনার। দলের ৮৩ রানে রাজ্জাকের বলে অ্যালিস্টার কুক প্রথম স্লিপে জুনায়েদের ক্যাচ হলে ৩ উইকেটে ৯২ রান নিয়ে লাঞ্চে যেতে হয় ইংল্যান্ডকে। ২১৫ রানে চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে ইংল্যান্ডের উইকেট পড়েছে আর একটিই, সেটিও গেছে আরেক স্পিনারের দখলে। তবে বোলারের নাম সাকিব আল হাসান আর ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন হওয়াতে এই উইকেটটা বিশেষ কিছুই।
বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে কেভিন পিটারসেনের ব্যাটিং দেখার মতো। তেড়েফুঁড়ে ব্যাট চালানো বা ঝোড়ো গতিতে রান তোলা—সবই যেন ভুলে যান তখন! পরিসংখ্যানও এখানে তাঁর দুর্বলতার কথাই বলে। গত দুই বছরে পিটারসেন ১৬ বার আউট হয়েছেন বাঁহাতি স্পিনারের বলে। বাংলাদেশের বিপক্ষে কালকের আগে খেলা তিন টেস্টে তিনবার আউট হয়েছেন সাকিবের বলে, একবার তাঁর উইকেট নিয়েছেন রাজ্জাক। এ ছাড়া ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাত ম্যাচ খেলে যে পাঁচ ইনিংস ব্যাট করেছেন, পাঁচবারই কোনো না কোনো বাঁহাতি স্পিনারের শিকার তিনি! রাজ্জাক একাই আউট করেছেন তিনবার, বাকি দুবার প্রয়াত মানজারুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান। মুশফিকুর রহিমের স্টাম্পিংয়ে সাকিব কাল আরও একবার পেলেন পিটারসেনের উইকেট। তবে আউট হওয়ার আগে পিটারসেনও যেন শেষ দেখে নিতে চাইলেন মহাশত্রু হয়ে ওঠা বাঁহাতি স্পিনকে। ৬৪ রানের ইনিংসে সাত বাউন্ডারির পাঁচটিই স্পিনারদের বলে, একমাত্র ছক্কাটিও। পিটারসেনের উইকেট নেওয়ার পর কাল সে কারণেই কি বেশি তৃপ্ত মনে হলো সাকিবকে?
ধাক্কা খেয়ে শুরু হলেও চতুর্থ উইকেটে পিটারসেনের সঙ্গে ৭০ রান ও পরের উইকেটে এউইন মরগানের সঙ্গে আরেকটি ৭০ রানের জুটিতে ইংল্যান্ড ইনিংসের চালিকাশক্তি হয়ে আছেন ইয়ান বেল। ষষ্ঠ উইকেটে ম্যাট প্রিয়রের সঙ্গে ৫২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি, দিনশেষে নিজে ৮৭ রানে অপরাজিত—দলকে সুন্দর দ্বিতীয় দিনের সম্ভাবনাই দেখাচ্ছেন বেল। তবে তিনি এ জন্য ধন্যবাদ দিতে পারেন বাংলাদেশের উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমকে। ব্যক্তিগত ৩৬ রানের সময় সাকিবের বলে বেলের ক্যাচটা যদি গ্লাভসে পুরতে পারতেন মুশফিকুর, দিনশেষে বাংলাদেশের হাসিটা হতে পারত আরও বিস্তৃত।
No comments