‘ক্রসফায়ার’-এর আসল ও নকল -খুনের গায়ে আইনের রক্ষাকবচ পরানো আর নয়
‘ক্রসফায়ার’ ও ‘বন্দুকযুদ্ধ’ যতই প্রতিদিনকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ততই দেখা যাচ্ছে নিহত ব্যক্তিদের অনেকেই র্যাব-পুলিশের হত্যাকাণ্ডের শিকার। সম্প্রতি নাটোরে এক বিচার বিভাগীয় তদন্তে ক্রসফায়ারের নামে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর এ সংবাদের পাশেই প্রকাশিত হয়েছে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আরও চারজন নিহত হওয়ার সংবাদ। এ ছাড়া হাইকোর্ট চট্টগ্রামে পুলিশের হেফাজতে একটি মৃত্যুর ঘটনা নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে একই দিনে সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে। র্যাব-পুলিশের ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘বন্দুকযুদ্ধ’ যে বেআইনি হত্যাকাণ্ড, উপরোল্লিখিত ঘটনাগুলো সেই অভিযোগকেই আরও জোরালো করে তুলল।
র্যাব ও পুলিশের দাবি, তাদের গুলিতে নিহত প্রতিটি ব্যক্তিই ‘ভয়ংকর অপরাধী’ এবং নিহত ব্যক্তিদের মৃত্যুও আইনের আওতায়ই ঘটেছে। এ রকমভাবে ২০০৪ সালের জুন থেকে ২০০৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিনা বিচারে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৪৬২ জন। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানাচ্ছে, ২০০৯ সালেই নিহত হয়েছেন ২২৯ জন। এর মধ্যে নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের।
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাপ্পী নামের এক তরুণ ঢাকায় ক্রসফায়ারে নিহত হন। র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি ‘দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী’। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা সাধারণ অভিযোগ (জিডি) পর্যন্ত নেই! তাই কোনটি ‘আসল’ ক্রসফায়ার আর কোনটি ‘মিথ্যা’ ক্রসফায়ার, তা প্রমাণ হবে কী করে? যারা সন্ত্রাস দমনের নামে ‘ক্রসফায়ার’-এর পথ বেছে নিয়েছে, তাদের মাধ্যমে সেটা প্রমাণ করা কঠিন। তাই উচ্চতর আদালতের দায়িত্ব হয়ে পড়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করা। নাটোরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম একটি খুনের ঘটনায় সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন উচ্চ আদালতের তরফে সব ‘ক্রসফায়ার’-এর ঘটনায়ও একই রকম তদন্ত হওয়া দরকার।
কাউকেই বিনা বিচারে হত্যা করা আইনের বরখেলাপ। কিন্তু সেই কাজটাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে করানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, নাটোরের ঘটনায় সেটাই দেখা গেছে। এ পদ্ধতিতে যে অপরাধ দমন হয়, অব্যাহত সন্ত্রাস ও খুনোখুনির রেকর্ড তা প্রমাণ করে না।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্টভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘এনকাউন্টার’-এর সমালোচনা করেন। সেদিন তিনি তদন্ত করে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রত্যয়ও ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও ‘ক্রসফায়ার’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি ছিল। অথচ পরিহাস হলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী লাগাতার ‘ক্রসফায়ার’-এর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ কাজে নিয়োজিত করেছে। তাঁদেরই এ অন্যায়ের দায় নিতে হবে। নাটোরের সার ব্যবসায়ী আনছার আলী কিংবা ঢাকার বাপ্পীর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সেই প্রশ্নই জাগিয়ে গেল। এখন সরকারকে ঠিক করতে হবে, এমন জ্বলন্ত অন্যায় তারা আর কত দিন চলতে দেবে?
র্যাব ও পুলিশের দাবি, তাদের গুলিতে নিহত প্রতিটি ব্যক্তিই ‘ভয়ংকর অপরাধী’ এবং নিহত ব্যক্তিদের মৃত্যুও আইনের আওতায়ই ঘটেছে। এ রকমভাবে ২০০৪ সালের জুন থেকে ২০০৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিনা বিচারে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৪৬২ জন। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানাচ্ছে, ২০০৯ সালেই নিহত হয়েছেন ২২৯ জন। এর মধ্যে নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের।
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাপ্পী নামের এক তরুণ ঢাকায় ক্রসফায়ারে নিহত হন। র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি ‘দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী’। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা সাধারণ অভিযোগ (জিডি) পর্যন্ত নেই! তাই কোনটি ‘আসল’ ক্রসফায়ার আর কোনটি ‘মিথ্যা’ ক্রসফায়ার, তা প্রমাণ হবে কী করে? যারা সন্ত্রাস দমনের নামে ‘ক্রসফায়ার’-এর পথ বেছে নিয়েছে, তাদের মাধ্যমে সেটা প্রমাণ করা কঠিন। তাই উচ্চতর আদালতের দায়িত্ব হয়ে পড়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করা। নাটোরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম একটি খুনের ঘটনায় সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন উচ্চ আদালতের তরফে সব ‘ক্রসফায়ার’-এর ঘটনায়ও একই রকম তদন্ত হওয়া দরকার।
কাউকেই বিনা বিচারে হত্যা করা আইনের বরখেলাপ। কিন্তু সেই কাজটাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে করানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, নাটোরের ঘটনায় সেটাই দেখা গেছে। এ পদ্ধতিতে যে অপরাধ দমন হয়, অব্যাহত সন্ত্রাস ও খুনোখুনির রেকর্ড তা প্রমাণ করে না।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্টভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘এনকাউন্টার’-এর সমালোচনা করেন। সেদিন তিনি তদন্ত করে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রত্যয়ও ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও ‘ক্রসফায়ার’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি ছিল। অথচ পরিহাস হলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী লাগাতার ‘ক্রসফায়ার’-এর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ কাজে নিয়োজিত করেছে। তাঁদেরই এ অন্যায়ের দায় নিতে হবে। নাটোরের সার ব্যবসায়ী আনছার আলী কিংবা ঢাকার বাপ্পীর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সেই প্রশ্নই জাগিয়ে গেল। এখন সরকারকে ঠিক করতে হবে, এমন জ্বলন্ত অন্যায় তারা আর কত দিন চলতে দেবে?
No comments