চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা -চারদিক by শান্তনু চৌধুরী
গোবিন্দ হালদারের কথা ও আপেল মাহমুদের সুরে কালজয়ী গান ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলব না’। জাগরণের গানটি শুনতে শুনতে কথা বলছিলাম সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেনের সঙ্গে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামের ডিসি হিলে শুরু হচ্ছে ১০ দিনের ‘স্মৃতি একাত্তর’ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা। তিনি এ মেলার আয়োজকদের অন্যতম।
মেলার মাধ্যমে কোন বার্তাটি তাঁরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে চান, জানতে চাইছিলাম সেটা। অনুপম সেন বলেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের জীবনে মুক্তিযুদ্ধ একটি বৃহত্ ঘটনা। এর মাধ্যমেই বাঙালি প্রকৃত অর্থে প্রথম স্বাধীনতা অর্জন করে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাঙালির জীবনে যেভাবে স্বাধীনতা এসেছে, তা জনগণের ছিল না। ফলে রাষ্ট্রটিও ছিল না জনগণের। কিন্তু ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাসংগ্রামের মাধ্যমে জনগণ একটি রাষ্ট্র পেল, অবশ্য এর জন্য অনেক মূল্যও দিতে হয়েছে। বাঙালির এই স্বাধীনতার ইতিহাসটি হাজার হাজার বছর ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবে। আমরা চাইছি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের তরুণ প্রজন্মের হাতে বই তুলে দিতে, যা তাদের মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগকে জানাতে, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যথাযথ সম্মান জানাতে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে শেখাবে।’
বাংলাদেশে এটাই প্রথম মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা বলে দাবি করেন আয়োজকেরা। মূলত ২০০৬ সাল থেকে এ বইমেলা শুরু হয়। তখন এটিকে মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা নাম দেওয়া হয়নি। তরুণ সংগঠক ও সাংবাদিক শওকত বাঙালির ইচ্ছা ছিল, ঢাকায় যেমন একটি বইমেলা হয়, তেমনি চট্টগ্রামেও বইমেলা হোক। সেই সময় মাত্র তিন দিন বইমেলা হয়। ২০০৭ সালে মেলা হয় সাত দিন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের কারণে দুই দিন। শওকত বাঙালি জানালেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রতিদিনের অহংকার। এই স্লোগান সামনে রেখে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা সেসব তরুণকে ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাই, যারা গত নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, তারাই অন্ধকার দূর করে আলো জ্বালাবে। সেসব তরুণকে আমরা জানাতে চাই, তাদের বয়সী তরুণেরাই ’৭১ সালে জীবন বাজি রেখে, জীবন দান করে এ দেশ আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। বইয়ের মাধ্যমে আমরা তরুণদের আলোকিত করতে চাই। তাই এবারের মেলায় আমাদের দাবি, অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক।’
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে এবারের মেলার ১০ দিন নামকরণ করা হয়েছে ১০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে। প্রতিদিন তাঁদের স্বজনেরা করবেন স্মৃতিচারণা। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যেসব স্বজন স্মৃতিচারণা করবেন, তাঁরা হলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে মেঘনা গুহঠাকুরতা, জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান, শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার, আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে জাহীদ রেজা নূর, সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদ, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের বোন অধ্যাপক হামিদা বানু, ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. শম্পা আলীম ও অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের স্বজনেরা। বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। বইয়ের আদলে তৈরি ক্যানভাসে স্বাক্ষর করে এ মেলার উদ্বোধন করা হবে। মেলায় প্রতিদিন থাকছে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেওয়া যোদ্ধাদের কথামালা দিয়ে সাজানো ‘রণাঙ্গনের স্মৃতিচারণ’। প্রথম দিনে এ স্মৃতিচারণায় অংশ নেবেন বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান।
মেলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাটক, প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে প্রতিদিন। এর মধ্যে রয়েছে জীবন থেকে নেয়া, পলাশী থেকে ধানমন্ডি, ধ্রুবতারা, যুদ্ধাপরাধ, স্পার্টাকাস ’৭১, শরত্ ’৭১, আলোর মিছিল, মুক্তিযুদ্ধের গান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জয়যাত্রা ও মাটির ময়না। প্রথমা থেকে প্রকাশিত প্রথম আলোর সংকলন একাত্তরের চিঠি থেকে প্রতিদিন পাঠ করবেন আবৃত্তিকারেরা। দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নাট্যকার ও কবিরা অংশ নেবেন প্রতিদিনের আলোচনায়। এ ছাড়া রয়েছে শিশু-কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমী, শিশু একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউটসহ খ্যাতনামা প্রকাশনীর ৫০টি স্টল রয়েছে। মেলার আয়োজক ‘আমরা করবো জয়’ নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী একটি সংগঠন। এ ছাড়া সহযোগী সংগঠন হিসেবে থাকছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার এবং ও এফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।
মুক্তিযুদ্ধের বইমেলায় শহীদদের স্বজনদের প্রতিদিনের স্মৃতিচারণার বিষয়টি অনুভব করার জন্য চট্টগ্রামের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ প্রস্তুত। তাঁদের এ স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে আজকের তরুণেরা হয়তো সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ সন্ধান করবে। মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা সফল হোক—সেটাই চাইছে চট্টগ্রামবাসী।
মেলার মাধ্যমে কোন বার্তাটি তাঁরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে চান, জানতে চাইছিলাম সেটা। অনুপম সেন বলেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের জীবনে মুক্তিযুদ্ধ একটি বৃহত্ ঘটনা। এর মাধ্যমেই বাঙালি প্রকৃত অর্থে প্রথম স্বাধীনতা অর্জন করে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাঙালির জীবনে যেভাবে স্বাধীনতা এসেছে, তা জনগণের ছিল না। ফলে রাষ্ট্রটিও ছিল না জনগণের। কিন্তু ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাসংগ্রামের মাধ্যমে জনগণ একটি রাষ্ট্র পেল, অবশ্য এর জন্য অনেক মূল্যও দিতে হয়েছে। বাঙালির এই স্বাধীনতার ইতিহাসটি হাজার হাজার বছর ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবে। আমরা চাইছি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের তরুণ প্রজন্মের হাতে বই তুলে দিতে, যা তাদের মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগকে জানাতে, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যথাযথ সম্মান জানাতে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে শেখাবে।’
বাংলাদেশে এটাই প্রথম মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা বলে দাবি করেন আয়োজকেরা। মূলত ২০০৬ সাল থেকে এ বইমেলা শুরু হয়। তখন এটিকে মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা নাম দেওয়া হয়নি। তরুণ সংগঠক ও সাংবাদিক শওকত বাঙালির ইচ্ছা ছিল, ঢাকায় যেমন একটি বইমেলা হয়, তেমনি চট্টগ্রামেও বইমেলা হোক। সেই সময় মাত্র তিন দিন বইমেলা হয়। ২০০৭ সালে মেলা হয় সাত দিন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের কারণে দুই দিন। শওকত বাঙালি জানালেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রতিদিনের অহংকার। এই স্লোগান সামনে রেখে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা সেসব তরুণকে ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাই, যারা গত নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, তারাই অন্ধকার দূর করে আলো জ্বালাবে। সেসব তরুণকে আমরা জানাতে চাই, তাদের বয়সী তরুণেরাই ’৭১ সালে জীবন বাজি রেখে, জীবন দান করে এ দেশ আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। বইয়ের মাধ্যমে আমরা তরুণদের আলোকিত করতে চাই। তাই এবারের মেলায় আমাদের দাবি, অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক।’
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে এবারের মেলার ১০ দিন নামকরণ করা হয়েছে ১০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে। প্রতিদিন তাঁদের স্বজনেরা করবেন স্মৃতিচারণা। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যেসব স্বজন স্মৃতিচারণা করবেন, তাঁরা হলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে মেঘনা গুহঠাকুরতা, জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান, শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার, আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে জাহীদ রেজা নূর, সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদ, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের বোন অধ্যাপক হামিদা বানু, ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. শম্পা আলীম ও অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের স্বজনেরা। বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। বইয়ের আদলে তৈরি ক্যানভাসে স্বাক্ষর করে এ মেলার উদ্বোধন করা হবে। মেলায় প্রতিদিন থাকছে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেওয়া যোদ্ধাদের কথামালা দিয়ে সাজানো ‘রণাঙ্গনের স্মৃতিচারণ’। প্রথম দিনে এ স্মৃতিচারণায় অংশ নেবেন বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান।
মেলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাটক, প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে প্রতিদিন। এর মধ্যে রয়েছে জীবন থেকে নেয়া, পলাশী থেকে ধানমন্ডি, ধ্রুবতারা, যুদ্ধাপরাধ, স্পার্টাকাস ’৭১, শরত্ ’৭১, আলোর মিছিল, মুক্তিযুদ্ধের গান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জয়যাত্রা ও মাটির ময়না। প্রথমা থেকে প্রকাশিত প্রথম আলোর সংকলন একাত্তরের চিঠি থেকে প্রতিদিন পাঠ করবেন আবৃত্তিকারেরা। দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নাট্যকার ও কবিরা অংশ নেবেন প্রতিদিনের আলোচনায়। এ ছাড়া রয়েছে শিশু-কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমী, শিশু একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউটসহ খ্যাতনামা প্রকাশনীর ৫০টি স্টল রয়েছে। মেলার আয়োজক ‘আমরা করবো জয়’ নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী একটি সংগঠন। এ ছাড়া সহযোগী সংগঠন হিসেবে থাকছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার এবং ও এফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।
মুক্তিযুদ্ধের বইমেলায় শহীদদের স্বজনদের প্রতিদিনের স্মৃতিচারণার বিষয়টি অনুভব করার জন্য চট্টগ্রামের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ প্রস্তুত। তাঁদের এ স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে আজকের তরুণেরা হয়তো সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ সন্ধান করবে। মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা সফল হোক—সেটাই চাইছে চট্টগ্রামবাসী।
No comments