জনগণের নিরাপত্তা -নৈতিকতার কোনো জায়গা নেই, শুধুই রাজনীতি by কুলদীপ নায়ার
ভারত কোনো ব্যানানা রিপাবলিক নয়। কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে ভারত দ্রুত সভ্য দেশ বলে গণ্য হওয়ার অধিকার খোয়াচ্ছে। গোয়াতে রাশিয়ার এক নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনার কথাই ভাবুন। কোনো নারী অপরিচিতদের সঙ্গে মধ্যরাতের পর চলাফেরা করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হলে এটিকে অন্য সব ধর্ষণের ঘটনা থেকে আলাদাভাবে গণ্য করা হোক, এমনটা দাবি করেছেন রাজ্যসভার সদস্য শান্তারাম নায়েক। রাজ্যসভায় তাঁর বক্তব্য এ বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। ধর্ষণের এ ঘটনা নিয়ে এই ব্যক্তির কোনো দুঃখবোধ নেই, কারণ সেই রুশ নারী রাত ১২টার পর তাঁর বাসস্থানের বাইরে ছিলেন।
আমি ভেবেছিলাম, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী দিগম্বর কামাত এ জন্য নায়েককে তিরস্কার করবেন; কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। উল্টো মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পুরুষের সঙ্গে রাতের বেলা বাইরে যাওয়া এক নারী ধর্ষণ-জাতীয় বিষয়ে বলছিলেন। তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে ভারত ও বহির্বিশ্বে কী ধরনের অভিব্যক্তি তৈরি হচ্ছিল, তার কোনো তোয়াক্কা করেননি তিনি। নায়েকের বিরুদ্ধে তাঁর সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে—এ প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার সরকার আগে আমার কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে লিখুক, তারপর দেখা যাবে।’ তবু বারবার রাজ্যের পুলিশ ধর্ষণের শিকার নারীকে ঘুষ সেধেছে। শেষবার যে ঘুষ সাধা হয়, তার পরিমাণ ১৫ লাখ রুপি।
কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণাও নিন্দা জানিয়ে কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘বিদেশিদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’ জানি না, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ কথার সঙ্গে পর্যটনমন্ত্রী একমত হবেন কি না। কিন্তু এ রাজ্যের এক মন্ত্রী গোয়াকে ‘দুনিয়ার ধর্ষণ রাজধানী’ বললে কেমন করে গোয়া আশা করে, বিদেশিরা, এমনকি ভারতীয়রা এখানে ঘুরতে আসবে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুম্বাইয়ে মস্কোর কনসুল জেনারেল আলেকসান্দর মানতিিস্ক একটি চিঠিতে তাঁর দেশের পক্ষ থেকে তাঁর উদ্বেগের কথা জানান। একটি হিসাব থেকে জানা যায়, প্রতিবছর গোয়াতে ঘুরতে আসা চার লাখ আন্তর্জাতিক পর্যটকের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার রাশিয়া থেকে আসে। বেইলানচো সাদ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা চালান সাবিনা মার্টিন্স। থলের বেড়াল বেরিয়ে এসেছে তাঁর কথায়, ‘আজকের পর্যটন বিজ্ঞাপনে আর এ রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা রাজ্যবাসীর অতিথিপরায়ণতার কথা বলা হয় না। প্রচারণায় “মদ, নারী ও গান” দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে আলাদা।’
প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছি কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর নীরবতায়। অভিযুক্ত জন ফার্নান্দেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে গোয়ার কংগ্রেস সরকারের ওপর কী ধরনের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ঘটবে, তিনি হয়তো সে হিসাব কষতে ব্যস্ত। এ রাজ্যে জন ফার্নান্দেজ রাজনৈতিকভাবে বেশ প্রভাবশালী। এ রাজ্যে কংগ্রেসের শাসন দোদুল্যমান, কয়েকজন সদস্য বিদ্রোহ করলে সরকারের পতন ঘটতে পারে বা বিরোধী দল ক্ষমতায় চলে আসতে পারে, এ কথা সত্য। কিন্তু এটিই কি চূড়ান্ত বিবেচ্য? নৈতিকতার কোনো জায়গা নেই, শুধুই রাজনীতি!
একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পর পর তিন দিন জানতে চেয়েছে, ধর্ষকের বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কয়েকজন সাংসদও সরকারকে এ প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু সরকার এখনো নীরব। প্রশ্ন হলো, ধর্ষণের একটি ঘটনা ঘটার পর সে বিষয়টি অনুসরণ করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো দায় আছে কি না। অভিযুক্ত পার পেয়ে যেতে পারে বা তার বিরুদ্ধে কোনো কিছু প্রমাণ নাও হতে পারে। কিন্তু কেমন করে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ চুপ করে বসে থাকে? রাজনৈতিক চাপের কারণে ধর্ষক পার পেয়ে যেতে পারে, এ বিষয়টি এখন স্পষ্ট।
এ আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে হরিয়ানার এক ঘটনায়। ১৯ বছর পর সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) বিশেষ আদালত রাজ্য পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক এস পি এস রাঠোরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক হাজার রুপি জরিমানা করেন। ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর ওপর যৌন নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশের মহাপরিচালকের মাত্র ছয় মাসের সাজা হওয়া বিচারের নামে প্রহসন। লঘুদণ্ড দেওয়ার জন্য আদালতকে দায়ী করা ঠিক হবে না; কারণ, সিবিআই পুলিশের এক মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে প্রকৃত অপরাধের অভিযোগ দাখিল করতে চায়নি। যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটার নয় বছর পর এফআইআর করা হয়, কিন্তু সেটাকেও বদলে দেওয়া হয় একটি স্মারকে। কী পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। তখন আইজি থাকা অবস্থায় রাঠোর রাজ্য সরকারের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন যে এই অপরাধ করার পরও তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাসার বাইরে গুন্ডাদের লেলিয়ে দেওয়া হয় মেয়েটি বাইরে বেরোলে তাকে উত্ত্যক্ত ও হয়রানি করার জন্য। রাঠোর যে কতটা ক্ষমতাবান ছিলেন, এ থেকেই বোঝা যায়। মেয়েটির বাড়িতে পাথর ছুড়ে মারা হতো। তিন বছর এভাবে চলার পর মেয়েটি কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করে। তার বাবা চণ্ডীগড়ের কাছের পাচখোলার বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে কলকাতায় চলে যান। মেয়েটির দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ১১টি মিথ্যা মামলা করা হয়। বছরের পর বছর এসব মামলা চলার পর অবশেষে তাঁরা খালাস পান। মেয়েটির মা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাঠোরের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে স্মারক দায়ের করার পর আমাদের হুমকি দেওয়া হয়।’ কিন্তু লঘু কারাদণ্ডেও রাঠোরকে জামিন দেওয়া হয়। হরিয়ানার পুলিশব্যবস্থা ও তদন্তকাজে অংশ নেওয়া সিবিআইতে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার প্রধান বিচারপতি মুকুল মুগডাল এ মামলা পুনঃ তদন্তে একটি বিশেষ দল নিযুক্ত করতে পারেন। গুজরাটের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট এমনটি করেছিলেন; শেষে প্রমাণিত হয়, আগের বিচার ঠিক ছিল না।
ভারতের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পুলিশ সংস্কার ও বিচারব্যবস্থা সংস্কার করার সময় হয়েছে। পুলিশের সাবেক মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের এক মামলা কেমন করে ১৯ বছর ধরে চলতে পারে? যেসব মন্ত্রী, আমলা আর পুলিশ কর্মকর্তা একে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের সবার বিচার হওয়া উচিত। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসীন কাউকে বিচারের মাধ্যমে দণ্ড দেওয়ার পরীক্ষার ক্ষেত্র হোক এটি। বিস্তারিত বিবরণ জানার পর দেশবাসী প্রচণ্ড ঘৃণা বোধ করছে। নীরবতা বা নিষ্ক্রিয়তাকে মনে হবে, চাপ ও ক্ষমতার কাছে নতি-স্বীকার।
ভারতের জন্য অসম্মানজনক আরও একটি ঘটনা ঘটিয়েছে আমেরিকার আইসক্রিম কোম্পানি হাগেন-ডেইজ। দিল্লিতে এটির শাখা উদ্বোধন করার সময় বাইরে একটি বোর্ডে লেখা হয়, শুধু বিদেশি পাসপোর্টধারীরা এখান থেকে আইসক্রিম কিনতে পারবে। যার অর্থ হলো, ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ। কোনো সার্বভৌম দেশের জন্য এটি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনা। কোম্পানিটি সেই বোর্ড সরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি। শুধু বলেছে, এই বিজ্ঞাপনটি তারা যেভাবে ভেবেছিল, সেভাবে কাজ করেনি। একটি সহজ প্রশ্নের উত্তর এ কোম্পানির দেওয়া উচিত, এটি কি নিজ দেশ আমেরিকায় এমন কোনো বোর্ড টাঙিয়ে দিতে সাহস দেখাত? উন্নত বিশ্ব নিজেদের উদ্ধত ও উদ্ভট ধারণাগুলো পরীক্ষার ক্রীড়াক্ষেত্র মনে করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। কিন্তু এভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অবমাননাপ্রবণ হয়ে উঠেছে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
আমি ভেবেছিলাম, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী দিগম্বর কামাত এ জন্য নায়েককে তিরস্কার করবেন; কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। উল্টো মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পুরুষের সঙ্গে রাতের বেলা বাইরে যাওয়া এক নারী ধর্ষণ-জাতীয় বিষয়ে বলছিলেন। তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে ভারত ও বহির্বিশ্বে কী ধরনের অভিব্যক্তি তৈরি হচ্ছিল, তার কোনো তোয়াক্কা করেননি তিনি। নায়েকের বিরুদ্ধে তাঁর সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে—এ প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার সরকার আগে আমার কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে লিখুক, তারপর দেখা যাবে।’ তবু বারবার রাজ্যের পুলিশ ধর্ষণের শিকার নারীকে ঘুষ সেধেছে। শেষবার যে ঘুষ সাধা হয়, তার পরিমাণ ১৫ লাখ রুপি।
কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণাও নিন্দা জানিয়ে কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘বিদেশিদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’ জানি না, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ কথার সঙ্গে পর্যটনমন্ত্রী একমত হবেন কি না। কিন্তু এ রাজ্যের এক মন্ত্রী গোয়াকে ‘দুনিয়ার ধর্ষণ রাজধানী’ বললে কেমন করে গোয়া আশা করে, বিদেশিরা, এমনকি ভারতীয়রা এখানে ঘুরতে আসবে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুম্বাইয়ে মস্কোর কনসুল জেনারেল আলেকসান্দর মানতিিস্ক একটি চিঠিতে তাঁর দেশের পক্ষ থেকে তাঁর উদ্বেগের কথা জানান। একটি হিসাব থেকে জানা যায়, প্রতিবছর গোয়াতে ঘুরতে আসা চার লাখ আন্তর্জাতিক পর্যটকের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার রাশিয়া থেকে আসে। বেইলানচো সাদ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা চালান সাবিনা মার্টিন্স। থলের বেড়াল বেরিয়ে এসেছে তাঁর কথায়, ‘আজকের পর্যটন বিজ্ঞাপনে আর এ রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা রাজ্যবাসীর অতিথিপরায়ণতার কথা বলা হয় না। প্রচারণায় “মদ, নারী ও গান” দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে আলাদা।’
প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছি কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর নীরবতায়। অভিযুক্ত জন ফার্নান্দেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে গোয়ার কংগ্রেস সরকারের ওপর কী ধরনের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ঘটবে, তিনি হয়তো সে হিসাব কষতে ব্যস্ত। এ রাজ্যে জন ফার্নান্দেজ রাজনৈতিকভাবে বেশ প্রভাবশালী। এ রাজ্যে কংগ্রেসের শাসন দোদুল্যমান, কয়েকজন সদস্য বিদ্রোহ করলে সরকারের পতন ঘটতে পারে বা বিরোধী দল ক্ষমতায় চলে আসতে পারে, এ কথা সত্য। কিন্তু এটিই কি চূড়ান্ত বিবেচ্য? নৈতিকতার কোনো জায়গা নেই, শুধুই রাজনীতি!
একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পর পর তিন দিন জানতে চেয়েছে, ধর্ষকের বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কয়েকজন সাংসদও সরকারকে এ প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু সরকার এখনো নীরব। প্রশ্ন হলো, ধর্ষণের একটি ঘটনা ঘটার পর সে বিষয়টি অনুসরণ করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো দায় আছে কি না। অভিযুক্ত পার পেয়ে যেতে পারে বা তার বিরুদ্ধে কোনো কিছু প্রমাণ নাও হতে পারে। কিন্তু কেমন করে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ চুপ করে বসে থাকে? রাজনৈতিক চাপের কারণে ধর্ষক পার পেয়ে যেতে পারে, এ বিষয়টি এখন স্পষ্ট।
এ আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে হরিয়ানার এক ঘটনায়। ১৯ বছর পর সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) বিশেষ আদালত রাজ্য পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক এস পি এস রাঠোরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক হাজার রুপি জরিমানা করেন। ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর ওপর যৌন নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশের মহাপরিচালকের মাত্র ছয় মাসের সাজা হওয়া বিচারের নামে প্রহসন। লঘুদণ্ড দেওয়ার জন্য আদালতকে দায়ী করা ঠিক হবে না; কারণ, সিবিআই পুলিশের এক মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে প্রকৃত অপরাধের অভিযোগ দাখিল করতে চায়নি। যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটার নয় বছর পর এফআইআর করা হয়, কিন্তু সেটাকেও বদলে দেওয়া হয় একটি স্মারকে। কী পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। তখন আইজি থাকা অবস্থায় রাঠোর রাজ্য সরকারের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন যে এই অপরাধ করার পরও তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাসার বাইরে গুন্ডাদের লেলিয়ে দেওয়া হয় মেয়েটি বাইরে বেরোলে তাকে উত্ত্যক্ত ও হয়রানি করার জন্য। রাঠোর যে কতটা ক্ষমতাবান ছিলেন, এ থেকেই বোঝা যায়। মেয়েটির বাড়িতে পাথর ছুড়ে মারা হতো। তিন বছর এভাবে চলার পর মেয়েটি কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করে। তার বাবা চণ্ডীগড়ের কাছের পাচখোলার বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে কলকাতায় চলে যান। মেয়েটির দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ১১টি মিথ্যা মামলা করা হয়। বছরের পর বছর এসব মামলা চলার পর অবশেষে তাঁরা খালাস পান। মেয়েটির মা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাঠোরের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে স্মারক দায়ের করার পর আমাদের হুমকি দেওয়া হয়।’ কিন্তু লঘু কারাদণ্ডেও রাঠোরকে জামিন দেওয়া হয়। হরিয়ানার পুলিশব্যবস্থা ও তদন্তকাজে অংশ নেওয়া সিবিআইতে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার প্রধান বিচারপতি মুকুল মুগডাল এ মামলা পুনঃ তদন্তে একটি বিশেষ দল নিযুক্ত করতে পারেন। গুজরাটের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট এমনটি করেছিলেন; শেষে প্রমাণিত হয়, আগের বিচার ঠিক ছিল না।
ভারতের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পুলিশ সংস্কার ও বিচারব্যবস্থা সংস্কার করার সময় হয়েছে। পুলিশের সাবেক মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের এক মামলা কেমন করে ১৯ বছর ধরে চলতে পারে? যেসব মন্ত্রী, আমলা আর পুলিশ কর্মকর্তা একে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের সবার বিচার হওয়া উচিত। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসীন কাউকে বিচারের মাধ্যমে দণ্ড দেওয়ার পরীক্ষার ক্ষেত্র হোক এটি। বিস্তারিত বিবরণ জানার পর দেশবাসী প্রচণ্ড ঘৃণা বোধ করছে। নীরবতা বা নিষ্ক্রিয়তাকে মনে হবে, চাপ ও ক্ষমতার কাছে নতি-স্বীকার।
ভারতের জন্য অসম্মানজনক আরও একটি ঘটনা ঘটিয়েছে আমেরিকার আইসক্রিম কোম্পানি হাগেন-ডেইজ। দিল্লিতে এটির শাখা উদ্বোধন করার সময় বাইরে একটি বোর্ডে লেখা হয়, শুধু বিদেশি পাসপোর্টধারীরা এখান থেকে আইসক্রিম কিনতে পারবে। যার অর্থ হলো, ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ। কোনো সার্বভৌম দেশের জন্য এটি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনা। কোম্পানিটি সেই বোর্ড সরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি। শুধু বলেছে, এই বিজ্ঞাপনটি তারা যেভাবে ভেবেছিল, সেভাবে কাজ করেনি। একটি সহজ প্রশ্নের উত্তর এ কোম্পানির দেওয়া উচিত, এটি কি নিজ দেশ আমেরিকায় এমন কোনো বোর্ড টাঙিয়ে দিতে সাহস দেখাত? উন্নত বিশ্ব নিজেদের উদ্ধত ও উদ্ভট ধারণাগুলো পরীক্ষার ক্রীড়াক্ষেত্র মনে করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। কিন্তু এভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অবমাননাপ্রবণ হয়ে উঠেছে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
No comments