এই আশরাফুলকেই তো চায় বাংলাদেশ by তারেক মাহমুদ
হলিডে ইন হোটেলের লবিতে হঠাত্ বাংলা কথা। বাংলাদেশ দল যে হোটেলের বাসিন্দা সেখানে বাংলাভাষী তো পাওয়া যাবেই। কিন্তু যাদের মুখে বাংলা কথা শুনছি সেই চার তরুণের কেউই যে বাংলাদেশ দলের সদস্য নন!
হিমেল, সুমন, আসিফ আর শামীম। পরশু প্রথম ওয়ানডের দিন ৭০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে তাঁরা এসেছেন বতসোয়ানা থেকে। বাংলাদেশের খেলা দেখবেন, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করবেন—এই হলো উদ্দেশ্য। কিন্তু বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব মাঠে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল তিনটা, মানে ম্যাচের অনেকটাই শেষ। তার পরও হোটেল লবিতে এই চার তরুণ হাস্যোজ্জ্বল। শেষ মুহূর্তে এলেও বাংলাদেশের জয়টা তো দেখা গেছে! তার চেয়েও বড় কথা, তাঁরা সাক্ষী হতে পারলেন আশরাফুলের অনবদ্য এক সেঞ্চুরির।
যে সেঞ্চুরির পর আশরাফুলকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। শুধু শোনা যায়। কথাটা কেমন যেন হয়ে গেল তাই না? কিছু করার নেই। বাস্তবিক অর্থেই পরশু সেঞ্চুরি করে ওয়ানডেতে তিন হাজার রান পাওয়া আশরাফুল অস্পর্শনীয় হয়ে গেলেন। টিম হোটেলে ঘণ্টা দেড়েকের অপেক্ষার পর তাঁর দেখা মিলল, কিন্তু ধরা গেল না। সতীর্থদের সঙ্গে বাসে উঠে চলে গেলেন ডিনার করতে। তবে এই প্রতিবেদকের ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হবে। আশরাফুল প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন রাতে ফোন করলে কথা বলবেন।
সেই ফোনালাপে আশরাফুলের কণ্ঠ শোনার সৌভাগ্য হলো, কিন্তু কণ্ঠে সেঞ্চুরিয়ানের আনন্দ কই? প্রতিক্রিয়া খুবই নিষ্প্রাণ, নিরুত্তাপ। ‘আমি কিছু বলতে চাই না...’, ‘আমার কিছু বলার নেই...’ কিংবা ‘আগে রান করতে পারি নাই, এখন পারছি’, ‘বলে কী লাভ? এক-দুই ম্যাচ খারাপ খেললেই তো আবার...’—এ জাতীয় পাশ কাটানো অভিমানী কথা। হলিডে ইনে দেড় ঘণ্টার ব্যর্থ অপেক্ষার পর মার্কিন ডলারে ফোন বিল উঠিয়ে এসব কথা শুনতে কার ভালো লাগে? এমন একটা সেঞ্চুরির পর আশরাফুলের কাছ থেকে দিলখোলা কথা শোনা যাবে না, তবে আর মহাদেশ বদলে এত দূর আসা কেন?
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ইন সুইং, আউট সুইং বা ইয়র্কার কোনোটাই দিতে হলো না। নিজ থেকেই খুলে দিলেন মনের দরজা। যে দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল একটা সত্য—কাঁধে অধিনায়কত্বের চাপ নেই বলেই আশরাফুলের এই বদলে যাওয়া ব্যাটিং, ‘এখন আমার ওপর কোনো চাপ নেই। আমি এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারি। বাড়তি চিন্তা করতে হয় না। শুধু চিন্তা করি কীভাবে পারফর্ম করে দলকে সাহায্য করব।’
আশরাফুলের কাছে দল এই সাহায্যটাই প্রার্থনা করে আসছিল অনেক দিন থেকে। ভালো ব্যাটিং করে দলকে বহুবার সাফল্য এনে দিয়েছেন, কিন্তু লম্বা সময় নিয়ে ফর্ম ধরে রাখা হয়নি কখনো। আশরাফুলের ভালো ইনিংস মানেই ছিল একটা অবধারিত প্রশ্ন—আবার কত দিন পর দেখা যাবে এমন ব্যাটিং? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের ধারাবাহিক ভালো ব্যাটিংয়ের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই অপরাজিত ১০৩ রান, ম্যান অব দ্য ম্যাচ—সেই প্রশ্নেরই কি জবাব আসতে শুরু করল এবার? আশরাফুলের কাছে অবশ্য এটা কোনো জবাব নয়, ব্যাটিংয়ের কিছু দাঁড়ি-কমা বদলে নেওয়ার ফলাফল মাত্র, ‘আগে নেমেই শট খেলতাম। এখন সেটা করি না। প্রথম ৩০-৪০ রান করতে প্রয়োজনে দ্বিগুণ বল খেলি। এভাবে খেলেই গত চার ইনিংসে একটা সেঞ্চুরি আর তিনটা ফিফটি পেলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে রান না পেলেও এখন একই গেম প্ল্যান নিয়ে প্রতিটি ম্যাচে ভালো খেলতে পারছি। যেটা আট বছরে হয়নি সেটা এখন হচ্ছে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ দলের ফলাফলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছে আশরাফুলের পারফরম্যান্স। বোর্ড কর্মকর্তারা হুঙ্কার দিলেন, মাথার ওপর থেকে সরে গেল অভিভাবকের ছাতা, কেড়ে নেওয়া হলো অধিনায়কত্ব। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আশরাফুল যেন কোনো ভিলেনের নাম! সেই আশরাফুল দেয়ালে ঠেকে যাওয়া পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে সময় নিলেন দুটি টেস্ট। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জটিল বাঁকটাতে এসেই সর্বোচ্চ দক্ষতায় স্টিয়ারিং ঘোরালেন। কীভাবে? পোড় খাওয়া চালকেরা বুঝি এমনই হয়, ‘খারাপ সময়ই তো আমার ক্যারিয়ারে বেশি এসেছে। ভালো সময় সেভাবে আসেনি, আসলেও থাকেনি। এবার আমাকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন দিয়েছে সতীর্থ আর টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা। কোচ থেকে শুরু করে দলের সবাই আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমি সেটারই প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করছি শুধু। দলের সবার আন্তরিকতা আমার ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়েছে...।’
আশরাফুলকে ধন্যবাদ, বলব না, বলব না করেও অনেক কথা বললেন শেষ পর্যন্ত। এই দয়াটুকু তিনি না দেখালেই বা কী করার ছিল? আশরাফুলের মতো ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে জ্বলজ্বল করবে তারকাদ্যুতি, সেটি কেবল দূর থেকেই দেখা যাবে—সেটাই তো হওয়া উচিত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসব মেনে নেওয়ার দিনকে কে না স্বাগত জানাবে!
হিমেল, সুমন, আসিফ আর শামীম। পরশু প্রথম ওয়ানডের দিন ৭০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে তাঁরা এসেছেন বতসোয়ানা থেকে। বাংলাদেশের খেলা দেখবেন, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করবেন—এই হলো উদ্দেশ্য। কিন্তু বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব মাঠে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল তিনটা, মানে ম্যাচের অনেকটাই শেষ। তার পরও হোটেল লবিতে এই চার তরুণ হাস্যোজ্জ্বল। শেষ মুহূর্তে এলেও বাংলাদেশের জয়টা তো দেখা গেছে! তার চেয়েও বড় কথা, তাঁরা সাক্ষী হতে পারলেন আশরাফুলের অনবদ্য এক সেঞ্চুরির।
যে সেঞ্চুরির পর আশরাফুলকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। শুধু শোনা যায়। কথাটা কেমন যেন হয়ে গেল তাই না? কিছু করার নেই। বাস্তবিক অর্থেই পরশু সেঞ্চুরি করে ওয়ানডেতে তিন হাজার রান পাওয়া আশরাফুল অস্পর্শনীয় হয়ে গেলেন। টিম হোটেলে ঘণ্টা দেড়েকের অপেক্ষার পর তাঁর দেখা মিলল, কিন্তু ধরা গেল না। সতীর্থদের সঙ্গে বাসে উঠে চলে গেলেন ডিনার করতে। তবে এই প্রতিবেদকের ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হবে। আশরাফুল প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন রাতে ফোন করলে কথা বলবেন।
সেই ফোনালাপে আশরাফুলের কণ্ঠ শোনার সৌভাগ্য হলো, কিন্তু কণ্ঠে সেঞ্চুরিয়ানের আনন্দ কই? প্রতিক্রিয়া খুবই নিষ্প্রাণ, নিরুত্তাপ। ‘আমি কিছু বলতে চাই না...’, ‘আমার কিছু বলার নেই...’ কিংবা ‘আগে রান করতে পারি নাই, এখন পারছি’, ‘বলে কী লাভ? এক-দুই ম্যাচ খারাপ খেললেই তো আবার...’—এ জাতীয় পাশ কাটানো অভিমানী কথা। হলিডে ইনে দেড় ঘণ্টার ব্যর্থ অপেক্ষার পর মার্কিন ডলারে ফোন বিল উঠিয়ে এসব কথা শুনতে কার ভালো লাগে? এমন একটা সেঞ্চুরির পর আশরাফুলের কাছ থেকে দিলখোলা কথা শোনা যাবে না, তবে আর মহাদেশ বদলে এত দূর আসা কেন?
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ইন সুইং, আউট সুইং বা ইয়র্কার কোনোটাই দিতে হলো না। নিজ থেকেই খুলে দিলেন মনের দরজা। যে দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল একটা সত্য—কাঁধে অধিনায়কত্বের চাপ নেই বলেই আশরাফুলের এই বদলে যাওয়া ব্যাটিং, ‘এখন আমার ওপর কোনো চাপ নেই। আমি এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারি। বাড়তি চিন্তা করতে হয় না। শুধু চিন্তা করি কীভাবে পারফর্ম করে দলকে সাহায্য করব।’
আশরাফুলের কাছে দল এই সাহায্যটাই প্রার্থনা করে আসছিল অনেক দিন থেকে। ভালো ব্যাটিং করে দলকে বহুবার সাফল্য এনে দিয়েছেন, কিন্তু লম্বা সময় নিয়ে ফর্ম ধরে রাখা হয়নি কখনো। আশরাফুলের ভালো ইনিংস মানেই ছিল একটা অবধারিত প্রশ্ন—আবার কত দিন পর দেখা যাবে এমন ব্যাটিং? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের ধারাবাহিক ভালো ব্যাটিংয়ের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই অপরাজিত ১০৩ রান, ম্যান অব দ্য ম্যাচ—সেই প্রশ্নেরই কি জবাব আসতে শুরু করল এবার? আশরাফুলের কাছে অবশ্য এটা কোনো জবাব নয়, ব্যাটিংয়ের কিছু দাঁড়ি-কমা বদলে নেওয়ার ফলাফল মাত্র, ‘আগে নেমেই শট খেলতাম। এখন সেটা করি না। প্রথম ৩০-৪০ রান করতে প্রয়োজনে দ্বিগুণ বল খেলি। এভাবে খেলেই গত চার ইনিংসে একটা সেঞ্চুরি আর তিনটা ফিফটি পেলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে রান না পেলেও এখন একই গেম প্ল্যান নিয়ে প্রতিটি ম্যাচে ভালো খেলতে পারছি। যেটা আট বছরে হয়নি সেটা এখন হচ্ছে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ দলের ফলাফলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছে আশরাফুলের পারফরম্যান্স। বোর্ড কর্মকর্তারা হুঙ্কার দিলেন, মাথার ওপর থেকে সরে গেল অভিভাবকের ছাতা, কেড়ে নেওয়া হলো অধিনায়কত্ব। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আশরাফুল যেন কোনো ভিলেনের নাম! সেই আশরাফুল দেয়ালে ঠেকে যাওয়া পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে সময় নিলেন দুটি টেস্ট। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জটিল বাঁকটাতে এসেই সর্বোচ্চ দক্ষতায় স্টিয়ারিং ঘোরালেন। কীভাবে? পোড় খাওয়া চালকেরা বুঝি এমনই হয়, ‘খারাপ সময়ই তো আমার ক্যারিয়ারে বেশি এসেছে। ভালো সময় সেভাবে আসেনি, আসলেও থাকেনি। এবার আমাকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন দিয়েছে সতীর্থ আর টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা। কোচ থেকে শুরু করে দলের সবাই আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমি সেটারই প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করছি শুধু। দলের সবার আন্তরিকতা আমার ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়েছে...।’
আশরাফুলকে ধন্যবাদ, বলব না, বলব না করেও অনেক কথা বললেন শেষ পর্যন্ত। এই দয়াটুকু তিনি না দেখালেই বা কী করার ছিল? আশরাফুলের মতো ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে জ্বলজ্বল করবে তারকাদ্যুতি, সেটি কেবল দূর থেকেই দেখা যাবে—সেটাই তো হওয়া উচিত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসব মেনে নেওয়ার দিনকে কে না স্বাগত জানাবে!
No comments