ব্রিটেনের সূর্য এখন নিবুনিবু
বলা হয়ে থাকে, এমন একটা সময় ছিল যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। এতটাই বিশাল ছিল তার ব্যাপ্তি। কিন্তু প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে এই প্রতাপশালী রাষ্ট্রের আধিপত্যের পতন শুরু। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মহাপরাক্রমশালী দেশ হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব ‘আমেরিকা’ (যুক্তরাষ্ট্র) নামের এক রাষ্ট্রের। ব্রিটেন হারায় প্রতিপত্তি। কিন্তু তার পরও ষাট, সত্তর ও আশির দশকে ‘ঠান্ডা লড়াই’য়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুঁজিবাদের ঝান্ডা বহন করে ব্রিটেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার নিজের অবস্থান কোনো রকমে ধরে রেখেছিল।
আশির দশকেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সঙ্গেই উচ্চারিত হতো তত্কালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচারের নাম। এই ঐতিহ্য বজায় ছিল ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকে ন্যাটোর প্রতিটি পদক্ষেপে। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্রিটেনের সেই দিন আর নেই। তার সূর্য এখন নিবুনিবু। ১৯৯৭ সালে রক্ষণশীলদের প্রভাব ভেঙে লেবার পার্টির ক্যারিশম্যাটিক নেতা টনি ব্লেয়ারের আবির্ভাবে কিছুটা আস্থা সৃষ্টি হয়েছিল ব্রিটেনবাসীর। তত দিনে পতন ঘটেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের। যুক্তরাষ্ট্রের সমান্তরালে পরাশক্তি তখন আর কেউ নেই। কিন্তু তার পরও কর্তার ইচ্ছায় কর্মের মতো টনি ব্লেয়ারকেও দেখা গেল মার্কিন পতাকাতলেই। ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জোট হয়ে যুদ্ধে জড়িয়েছে। এভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রিটেনের অবশিষ্ট ভাবমূর্তিরও অবসান ঘটে ক্যারিশম্যাটিক ব্লেয়ারের আমলেই।
২০০৮ সালের শুরুই হয় বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা দিয়ে। এ সময় মার্কিন প্রভাববলয়ে থেকে বিশ্বরাজনীতিতে পেশিশক্তির মহড়া দেখানো ব্রিটেনকেও দেখা গেল মন্দায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায়। দেশটির মাথাপিছু গড় আয় হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী, ব্রিটেনের মাথাপিছু আয় ২০০৮ সালের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে ছয় বছর বা এর চেয়েও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। ব্রিটেনে বেকারত্ব ১৯৯৯ সালের তুলনায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সূচকগুলো এমন পর্যায়ে রয়েছে, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এদিকে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্রিটেন বাধ্য হয়েছে তার সামরিক বাজেটে কাটছাঁট আনতে। লেবার পার্টি ও রক্ষণশীল দল বাজেট কাটছাঁট না করার যতই ঘোষণা দিক না কেন, আদতে বিরাট সামরিক বাজেট রাখার মতো অবস্থানে ব্রিটেন নেই।
অবস্থা যখন এই তখন অনেক দিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের চেয়ে বরং বিশ্ব অর্থনীতির অন্যান্য দ্রুত উন্নয়নশীল শক্তির দিকেই বেশি ঝুঁকছে। চীন, ভারত কিংবা ব্রাজিলের মতো অর্থনীতির নতুন শক্তিগুলোর সাহচর্য এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অনেক বেশি কাম্য।
বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা শহর লন্ডন নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ব্রিটেনবাসীর গর্বের অন্ত ছিল না। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ পাতালরেল, গণপরিবহনের নানামুখী ব্যবস্থা লন্ডনকে করেছিল বিশ্বের অনেক শহরের কাছেই উদাহরণ। লন্ডন ছিল ব্রিটেনের প্রতিপত্তির সবচেয়ে বড় কারণ। বহু বছর ধরে লন্ডন ছিল অর্থনীতি, শিল্প, সাহিত্যের সেরা পীঠস্থান। বিশ্বের অনেক পুরোনো করপোরেট সংস্থাও গড়ে ওঠে এই শহরে। ওয়াল স্ট্রিট-এর নানা উন্নয়নসূচকে ছিল লন্ডনের কোম্পানিগুলোর দাপট। ব্যাংকিং, গৃহায়ণ প্রভৃতি সেক্টরে অর্থনৈতিক মন্দার কামড় লন্ডনের ওই কোম্পানিগুলোকে একেবারেই পথে বসিয়ে দিয়েছে।
ব্রিটিশরা এখন চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির ইঁদুর দৌড়ে তারা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। ব্রিটেনের এ অবস্থার মূলে অর্থনৈতিক মন্দা হলেও অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এর জন্য ব্রিটেনের মার্কিনপন্থী অবস্থান ও বিশ্ব সমর-রাজনীতিতে তাদের ভুল অবস্থানকে দায়ী করেন। ব্রিটেনের ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে জড়ানো ছিল অনেক বড় রাজনৈতিক ভুল—দেশটির জনগণ ও সুশীল সমাজ এখন এটি বুঝতে শুরু করেছে।
ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ইতিমধ্যেই বিশ্বরাজনীতিতে তাঁর দেশের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থান টের পাচ্ছেন। আর কিছুদিনের মধ্যেই দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন। বর্তমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে আধিপত্য ফিরে পেতে প্রয়োজন যোগ্য, উদ্যমী ও গতিশীল নেতৃত্ব। কিন্তু ব্রিটেনের নেতাদের মধ্যে এগুলোরই এখন সবচেয়ে বড় অভাব।
আশির দশকেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সঙ্গেই উচ্চারিত হতো তত্কালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচারের নাম। এই ঐতিহ্য বজায় ছিল ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকে ন্যাটোর প্রতিটি পদক্ষেপে। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্রিটেনের সেই দিন আর নেই। তার সূর্য এখন নিবুনিবু। ১৯৯৭ সালে রক্ষণশীলদের প্রভাব ভেঙে লেবার পার্টির ক্যারিশম্যাটিক নেতা টনি ব্লেয়ারের আবির্ভাবে কিছুটা আস্থা সৃষ্টি হয়েছিল ব্রিটেনবাসীর। তত দিনে পতন ঘটেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের। যুক্তরাষ্ট্রের সমান্তরালে পরাশক্তি তখন আর কেউ নেই। কিন্তু তার পরও কর্তার ইচ্ছায় কর্মের মতো টনি ব্লেয়ারকেও দেখা গেল মার্কিন পতাকাতলেই। ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জোট হয়ে যুদ্ধে জড়িয়েছে। এভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রিটেনের অবশিষ্ট ভাবমূর্তিরও অবসান ঘটে ক্যারিশম্যাটিক ব্লেয়ারের আমলেই।
২০০৮ সালের শুরুই হয় বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা দিয়ে। এ সময় মার্কিন প্রভাববলয়ে থেকে বিশ্বরাজনীতিতে পেশিশক্তির মহড়া দেখানো ব্রিটেনকেও দেখা গেল মন্দায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায়। দেশটির মাথাপিছু গড় আয় হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী, ব্রিটেনের মাথাপিছু আয় ২০০৮ সালের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে ছয় বছর বা এর চেয়েও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। ব্রিটেনে বেকারত্ব ১৯৯৯ সালের তুলনায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সূচকগুলো এমন পর্যায়ে রয়েছে, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এদিকে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্রিটেন বাধ্য হয়েছে তার সামরিক বাজেটে কাটছাঁট আনতে। লেবার পার্টি ও রক্ষণশীল দল বাজেট কাটছাঁট না করার যতই ঘোষণা দিক না কেন, আদতে বিরাট সামরিক বাজেট রাখার মতো অবস্থানে ব্রিটেন নেই।
অবস্থা যখন এই তখন অনেক দিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের চেয়ে বরং বিশ্ব অর্থনীতির অন্যান্য দ্রুত উন্নয়নশীল শক্তির দিকেই বেশি ঝুঁকছে। চীন, ভারত কিংবা ব্রাজিলের মতো অর্থনীতির নতুন শক্তিগুলোর সাহচর্য এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অনেক বেশি কাম্য।
বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা শহর লন্ডন নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ব্রিটেনবাসীর গর্বের অন্ত ছিল না। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ পাতালরেল, গণপরিবহনের নানামুখী ব্যবস্থা লন্ডনকে করেছিল বিশ্বের অনেক শহরের কাছেই উদাহরণ। লন্ডন ছিল ব্রিটেনের প্রতিপত্তির সবচেয়ে বড় কারণ। বহু বছর ধরে লন্ডন ছিল অর্থনীতি, শিল্প, সাহিত্যের সেরা পীঠস্থান। বিশ্বের অনেক পুরোনো করপোরেট সংস্থাও গড়ে ওঠে এই শহরে। ওয়াল স্ট্রিট-এর নানা উন্নয়নসূচকে ছিল লন্ডনের কোম্পানিগুলোর দাপট। ব্যাংকিং, গৃহায়ণ প্রভৃতি সেক্টরে অর্থনৈতিক মন্দার কামড় লন্ডনের ওই কোম্পানিগুলোকে একেবারেই পথে বসিয়ে দিয়েছে।
ব্রিটিশরা এখন চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির ইঁদুর দৌড়ে তারা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। ব্রিটেনের এ অবস্থার মূলে অর্থনৈতিক মন্দা হলেও অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এর জন্য ব্রিটেনের মার্কিনপন্থী অবস্থান ও বিশ্ব সমর-রাজনীতিতে তাদের ভুল অবস্থানকে দায়ী করেন। ব্রিটেনের ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে জড়ানো ছিল অনেক বড় রাজনৈতিক ভুল—দেশটির জনগণ ও সুশীল সমাজ এখন এটি বুঝতে শুরু করেছে।
ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ইতিমধ্যেই বিশ্বরাজনীতিতে তাঁর দেশের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থান টের পাচ্ছেন। আর কিছুদিনের মধ্যেই দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন। বর্তমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে আধিপত্য ফিরে পেতে প্রয়োজন যোগ্য, উদ্যমী ও গতিশীল নেতৃত্ব। কিন্তু ব্রিটেনের নেতাদের মধ্যে এগুলোরই এখন সবচেয়ে বড় অভাব।
No comments