জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রস্তুতির এখনই সময় -জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ
মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় যে দুর্যোগ হামাগুড়ি দিয়ে আসছে, তা হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়। বিশেষ করে বাংলাদেশেই এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি হবে বলে জাতিসংঘের আইপিসিসি বিশেষজ্ঞ ও জলবায়ুবিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে গত রোববার প্রথম আলো জানিয়েছে, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যেও বড়সড় নৈরাজ্য ডেকে আনতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন থাকতে পারে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। এ অবস্থা বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে গভীর উদ্বেগের কারণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ যদি সত্য হয়, তাহলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যাবে, লবণাক্ত হয়ে পড়বে অনেক মিঠা পানির অঞ্চল। দেখা দেবে নতুন নতুন রোগ। বেড়ে যাবে বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে।
জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা আইপিসিসি দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও জার্মানির মতো অতিমাত্রায় জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতির দেশ এবং পাশ্চাত্যের অতিভোগী জীবনযাপনকে। কিন্তু উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে পড়ার মতো করে ধনী দেশগুলোর পরিবেশবিনাশী কার্যকলাপের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো গরিব দেশগুলোকে। অথচ দারিদ্র্য ও নিম্নপ্রযুক্তিগত ক্ষমতার কারণে এ পরিস্থিতি মোকাবিলার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তাই যাদের দায় বেশি, তাদেরই খেসারত দিতে বাধ্য করতে হবে। এর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার তিনটি ক্ষেত্র, যথা—তথ্য আদান-প্রদান, অভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং অভিন্ন তহবিল গঠনে সফল হতেই হবে। সার্কের অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ব-সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে এ অঞ্চলের স্বার্থে নীতি প্রণয়ন এবং দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য সোচ্চার হওয়ারও বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ একেবারে বসেও নেই। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি জাতীয় কমিটি গঠন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে একটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচিবালয়, ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন (নাপা) প্রভৃতি পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসবের জন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থ। গত বছর ঢাকায় সার্ক দেশগুলোর বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশমন্ত্রীদের বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলায় ‘ঢাকা ঘোষণা’ প্রণয়ন নিশ্চয়ই আশাবাদী পদক্ষেপ। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে বাংলাদেশকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশকে ১৩২ মিলিয়ন ডলারের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ২০০১ সালে মরক্কোয় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে শিল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দুই বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা এখনো আসেনি। পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনায় কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর না করা দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষায় দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ, সস্তায় পরিবেশবান্ধব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি পাওয়ার নিশ্চয়তাও প্রয়োজন।
এ বিপর্যয় সরাসরি জাতীয় উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচিকে আঘাত করবে। সুতরাং সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে উন্নয়ন না থমকিয়েই বিপর্যয় মোকাবিলার দীর্ঘমেয়াদি কৌশলী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। জনগণ ও তৃণমূল পর্যায়ের প্রশাসনকে সচেতন করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ সুরক্ষাবলয় বানাতে হবে।
তবে বিপর্যয়ের সুযোগে জলবায়ু ব্যবসা ও সামরিকায়নের যেসব প্রয়াস পশ্চিম গোলার্ধের ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলো নিচ্ছে, তার ফাঁদও এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। দুর্যোগ, অশান্তি ও মহামারি আজ বহুজাতিক কোম্পানি ও যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রের মুনাফা বৃদ্ধি ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পন্থা। সেদিকেও প্রখর দৃষ্টি রাখা চাই।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ যদি সত্য হয়, তাহলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যাবে, লবণাক্ত হয়ে পড়বে অনেক মিঠা পানির অঞ্চল। দেখা দেবে নতুন নতুন রোগ। বেড়ে যাবে বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে।
জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা আইপিসিসি দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও জার্মানির মতো অতিমাত্রায় জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতির দেশ এবং পাশ্চাত্যের অতিভোগী জীবনযাপনকে। কিন্তু উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে পড়ার মতো করে ধনী দেশগুলোর পরিবেশবিনাশী কার্যকলাপের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো গরিব দেশগুলোকে। অথচ দারিদ্র্য ও নিম্নপ্রযুক্তিগত ক্ষমতার কারণে এ পরিস্থিতি মোকাবিলার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তাই যাদের দায় বেশি, তাদেরই খেসারত দিতে বাধ্য করতে হবে। এর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার তিনটি ক্ষেত্র, যথা—তথ্য আদান-প্রদান, অভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং অভিন্ন তহবিল গঠনে সফল হতেই হবে। সার্কের অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ব-সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে এ অঞ্চলের স্বার্থে নীতি প্রণয়ন এবং দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য সোচ্চার হওয়ারও বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ একেবারে বসেও নেই। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি জাতীয় কমিটি গঠন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে একটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচিবালয়, ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন (নাপা) প্রভৃতি পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসবের জন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থ। গত বছর ঢাকায় সার্ক দেশগুলোর বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশমন্ত্রীদের বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলায় ‘ঢাকা ঘোষণা’ প্রণয়ন নিশ্চয়ই আশাবাদী পদক্ষেপ। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে বাংলাদেশকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশকে ১৩২ মিলিয়ন ডলারের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ২০০১ সালে মরক্কোয় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে শিল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দুই বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা এখনো আসেনি। পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনায় কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর না করা দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষায় দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ, সস্তায় পরিবেশবান্ধব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি পাওয়ার নিশ্চয়তাও প্রয়োজন।
এ বিপর্যয় সরাসরি জাতীয় উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচিকে আঘাত করবে। সুতরাং সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে উন্নয়ন না থমকিয়েই বিপর্যয় মোকাবিলার দীর্ঘমেয়াদি কৌশলী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। জনগণ ও তৃণমূল পর্যায়ের প্রশাসনকে সচেতন করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ সুরক্ষাবলয় বানাতে হবে।
তবে বিপর্যয়ের সুযোগে জলবায়ু ব্যবসা ও সামরিকায়নের যেসব প্রয়াস পশ্চিম গোলার্ধের ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলো নিচ্ছে, তার ফাঁদও এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। দুর্যোগ, অশান্তি ও মহামারি আজ বহুজাতিক কোম্পানি ও যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রের মুনাফা বৃদ্ধি ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পন্থা। সেদিকেও প্রখর দৃষ্টি রাখা চাই।
No comments