গাজায় ফিলিস্তিনি বন্দীদের ছবিতে দেখা সেই শিশুটির কী হলো
ছবিতে এতগুলো মানুষের মধ্যে তাকে খুঁজে বের করাটাই যেন কঠিন কাজ। ছবির বাঁ দিকে একটু পেছনের দিকে খুব খেয়াল করে দেখলে ছোট্ট এ শিশুটিকে চোখে পড়বে।
ছবিটি সর্বপ্রথম এক সাংবাদিকের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রকাশ হয়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ভেতরের তথ্য পাওয়ার মতো যথেষ্ট সংবাদসূত্র সেই সাংবাদিকের আছে।
ছবিতে থাকা লোকগুলোকে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত বলে মনে হচ্ছে। ছবিতে ছোট্ট মেয়েটিকে শনাক্ত করেছেন বিবিসির একজন প্রযোজক। মেয়েটি অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো ক্যামেরার বাইরে থাকা কোনো কিছু তার নজর কেড়েছে। আবার হতে পারে, সে সেনা এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্রের দিকে তাকাতে চাইছিল না।
ইসরায়েলি সেনারা লোকগুলোকে সেখানে বসে থাকতে বলেছিল। তাদের পেছনে বোমায় বিধ্বস্ত ভবন দেখা যাচ্ছে। পুরুষ বন্দীদের বসিয়ে তল্লাশির কাজ করছিল ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছিল। লোকগুলোর কাছে অস্ত্র, নথিপত্র বা হামাস সংশ্লিষ্টতার অন্য কোনো প্রমাণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছিল।
ব্যক্তিপর্যায়ে মানুষের নানা দুর্দশার মধ্য দিয়ে বারবারই এই যুদ্ধের ভয়াবহতা। এই ছবিতে শিশুটির উপস্থিতি, তার দূরে তাকিয়ে থাকার অভিব্যক্তি অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছে।
মেয়েটি কে? সে সেখানে এল কীভাবে? এমন সব প্রশ্ন উঠেছে।
ছবিটি সপ্তাহখানেক আগে তোলা। এই এক সপ্তাহে যুদ্ধে নতুন করে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে। অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শিশুরা হয় বিমান হামলায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে মারা গেছে, নয়তো আহত হওয়ার পর ওষুধ ও চিকিৎসাকর্মীর অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে।
বিবিসি আরবির গাজা টুডে অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে যৌথভাবে ছবির শিশুটির খোঁজ শুরু হয়। বিবিসি বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে গাজায় স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করার সুযোগ দেয় না ইসরায়েল। এ জন্য সেখানকার সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিবিসিকে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের একটি বিশ্বস্ত নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করতে হয়।
বিবিসির প্রতিনিধিরা গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণকাজে যুক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাস্তুচ্যুতরা যেসব জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানে মেয়েটির ছবিটি দেখিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খবর মেলে। ফোনে আসা খুদে বার্তায় লেখা- ‘আমরা তাকে খুঁজে পেয়েছি!’
মেয়েটির নাম জুলিয়া আবু ওয়ার্দা। বয়স তিন বছর। সে জীবিত আছে।
বিবিসির সাংবাদিক গাজা নগরীতে পরিবারটির কাছে পৌঁছান। জাবালিয়া থেকে পালিয়ে আসা আরও অনেক পরিবার গাজা নগরীতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাবা, মা এবং দাদার সঙ্গে ছিল শিশু জুলিয়া।
মুঠোফোনে কার্টুন দেখছিল সে। অবশ্য মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া ইসরায়েলি ড্রোনের তীব্র শব্দে কার্টুনের কথা-গান কিছুই ভালো শোনা যাচ্ছিল না। তাকে নিয়ে অচেনা আগন্তুকের আগ্রহ অবাক চোখে দেখছিল জুলিয়া। তার বাবা মোহাম্মেদ খেলার ছলে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার নাম কী?’
টেনে টেনে সে তার নাম বলল, ‘জু...লিয়া’।
জুলিয়া শারীরিকভাবে অক্ষত আছে। তার পরনে জাম্পার ও জিনস। চুলগুলো ব্যান্ড দিয়ে বাঁধা।
জুলিয়ার বাবা মোহাম্মেদ ছবির পেছনের গল্পটা বলতে শুরু করলেন।
জানালেন, ২১ দিনে তাঁর পরিবারকে পাঁচবার ঘর ছাড়তে হয়েছে। প্রতিবারই বিমান হামলা ও গুলি থেকে বাঁচতে ছুটে বেড়াতে হয়েছে তাঁদের।
যেদিন ছবিটি তোলা হয়, সেদিন তাঁরা আল-খালুফা এলাকায় ছিলেন। সেখানে হামাসের বিরুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছিল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। একটি ইসরায়েলি ড্রোন থেকে এলাকাটি খালি করার বার্তা প্রচার করা হচ্ছিল।
মোহাম্মেদ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘নির্বিচার গোলা হামলা চলছিল। আমরা চেকপয়েন্টের দিকের রাস্তাটা ধরে জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের কেন্দ্রস্থলের দিকে চলে যাই।’
পরিবারটির সঙ্গে ছিল তাদের পোশাক, কিছু টিনজাত খাদ্য এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র। প্রথমে জুলিয়া, তার বাবা মোহাম্মেদ, মা আমল, ১৫ মাস বয়সী ভাই হামজা, এক দাদা, দুই চাচা এবং এক চাচাতো ভাই একসঙ্গেই ছিল।
কিন্তু বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির একপর্যায়ে মেয়ে জুলিয়াকে নিয়ে মোহাম্মেদ অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
মোহাম্মেদ বলেন, ‘ভিড়ের কারণে আমি ওর মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। আমাদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্রগুলোও হারিয়ে ফেলি। ও (জুলিয়ার মা) সেখান সরে যেতে পেরেছিল। আমি সেখানেই থেকে যাই।’
বাবা-মেয়ে মানুষের স্রোতের সঙ্গেই এগিয়ে যেতে থাকেন। রাস্তাজুড়ে ছিল মৃত্যুর চিহ্ন।
মোহাম্মেদ বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপ দেখতে পাচ্ছিলাম আমরা, মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল লাশ।’
সেগুলো জুলিয়ার চোখ থেকে আড়াল করার কোনো উপায় ছিল না। অন্তত কিছুটা হলেও সে দেখেছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে শিশুরাও সহিংস মৃত্যুর দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
এর পর হাঁটতে হাঁটতে মোহাম্মেদরা ইসরায়েলের একটি তল্লাশিচৌকিতে (চেকপয়েন্ট) পৌঁছান।
মোহাম্মেদ বলেন, ‘ট্যাংকের ওপরে, মাটিতে সেনারা অবস্থান করছিল। তারা লোকজনের দিকে এগিয়ে আসে, ওপরের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। গুলির সময় মানুষগুলো ঠেলাঠেলি করে একে অপরের সঙ্গে সেঁটে দাঁড়ায়।’
মোহাম্মেদ আরও বলেন, ইসরায়েলি সেনারা ওই দলে থাকা পুরুষদের অন্তর্বাস বাদে বাকি সব পোশাক খুলে ফেলার আদেশ দিয়েছিল। লুকিয়ে রাখা অস্ত্র বা আত্মঘাতী হামলাকারী খুঁজে বের করতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি নিয়মিত কার্যক্রম ছিল এটি।
মোহাম্মেদ জানান, তল্লাশিচৌকিতে তাদের ছয় থেকে সাত ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। ওই সময়েরই কোনো একটা পর্যায়ে ওই ছবিটি তোলা হয়।
ছবিতে জুলিয়াকে অবিচলিত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, এরপরে কী দুর্দশা হয়েছিল, বলছিলেন তার বাবা।
‘ও চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বলতে থাকে, সে মায়ের কাছে যেতে চায়।’ বলেন মোহাম্মেদ।
পরিবারটি অবশেষে আবারও একত্র হয়েছে। বাড়িঘর হারানো মানুষগুলোকে ছোট ছোট জায়গায় গাদাগাদি করে অবস্থান করতে হচ্ছে। তবে তাদের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ়।
জাবালিয়া থেকে কারও আত্মীয়স্বজন এলে আলাপ জমে ওঠে।
জুলিয়াকে আগলে রেখেছে তার প্রিয় মানুষেরা। তার জন্য মিষ্টি, পটেটো চিপস আলাদা করে রেখে দেওয়া হয়।
তারপরও জুলিয়ার মতো একটি শিশুকে ভাগ্যবান বলা কঠিন। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য বলছে, গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ হাজার শিশুর প্রাণ গেছে। জুলিয়া তার এইটুকু জীবনে যা দেখেছে, যার মধ্য দিয়ে গেছে... কে জানে সামনের দিনগুলোয় এগুলো দুঃস্বপ্ন হয়ে বারবার তার স্মৃতিতে ফিরে আসবে কি না!
ছবিতে থাকা লোকগুলোকে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত বলে মনে হচ্ছে। ছবিতে ছোট্ট মেয়েটিকে শনাক্ত করেছেন বিবিসির একজন প্রযোজক। মেয়েটি অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো ক্যামেরার বাইরে থাকা কোনো কিছু তার নজর কেড়েছে। আবার হতে পারে, সে সেনা এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্রের দিকে তাকাতে চাইছিল না।
ইসরায়েলি সেনারা লোকগুলোকে সেখানে বসে থাকতে বলেছিল। তাদের পেছনে বোমায় বিধ্বস্ত ভবন দেখা যাচ্ছে। পুরুষ বন্দীদের বসিয়ে তল্লাশির কাজ করছিল ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছিল। লোকগুলোর কাছে অস্ত্র, নথিপত্র বা হামাস সংশ্লিষ্টতার অন্য কোনো প্রমাণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছিল।
ব্যক্তিপর্যায়ে মানুষের নানা দুর্দশার মধ্য দিয়ে বারবারই এই যুদ্ধের ভয়াবহতা। এই ছবিতে শিশুটির উপস্থিতি, তার দূরে তাকিয়ে থাকার অভিব্যক্তি অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছে।
মেয়েটি কে? সে সেখানে এল কীভাবে? এমন সব প্রশ্ন উঠেছে।
ছবিটি সপ্তাহখানেক আগে তোলা। এই এক সপ্তাহে যুদ্ধে নতুন করে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে। অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শিশুরা হয় বিমান হামলায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে মারা গেছে, নয়তো আহত হওয়ার পর ওষুধ ও চিকিৎসাকর্মীর অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে।
বিবিসি আরবির গাজা টুডে অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে যৌথভাবে ছবির শিশুটির খোঁজ শুরু হয়। বিবিসি বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে গাজায় স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করার সুযোগ দেয় না ইসরায়েল। এ জন্য সেখানকার সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিবিসিকে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের একটি বিশ্বস্ত নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করতে হয়।
বিবিসির প্রতিনিধিরা গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণকাজে যুক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাস্তুচ্যুতরা যেসব জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানে মেয়েটির ছবিটি দেখিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খবর মেলে। ফোনে আসা খুদে বার্তায় লেখা- ‘আমরা তাকে খুঁজে পেয়েছি!’
মেয়েটির নাম জুলিয়া আবু ওয়ার্দা। বয়স তিন বছর। সে জীবিত আছে।
বিবিসির সাংবাদিক গাজা নগরীতে পরিবারটির কাছে পৌঁছান। জাবালিয়া থেকে পালিয়ে আসা আরও অনেক পরিবার গাজা নগরীতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাবা, মা এবং দাদার সঙ্গে ছিল শিশু জুলিয়া।
মুঠোফোনে কার্টুন দেখছিল সে। অবশ্য মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া ইসরায়েলি ড্রোনের তীব্র শব্দে কার্টুনের কথা-গান কিছুই ভালো শোনা যাচ্ছিল না। তাকে নিয়ে অচেনা আগন্তুকের আগ্রহ অবাক চোখে দেখছিল জুলিয়া। তার বাবা মোহাম্মেদ খেলার ছলে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার নাম কী?’
টেনে টেনে সে তার নাম বলল, ‘জু...লিয়া’।
জুলিয়া শারীরিকভাবে অক্ষত আছে। তার পরনে জাম্পার ও জিনস। চুলগুলো ব্যান্ড দিয়ে বাঁধা।
জুলিয়ার বাবা মোহাম্মেদ ছবির পেছনের গল্পটা বলতে শুরু করলেন।
জানালেন, ২১ দিনে তাঁর পরিবারকে পাঁচবার ঘর ছাড়তে হয়েছে। প্রতিবারই বিমান হামলা ও গুলি থেকে বাঁচতে ছুটে বেড়াতে হয়েছে তাঁদের।
যেদিন ছবিটি তোলা হয়, সেদিন তাঁরা আল-খালুফা এলাকায় ছিলেন। সেখানে হামাসের বিরুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছিল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। একটি ইসরায়েলি ড্রোন থেকে এলাকাটি খালি করার বার্তা প্রচার করা হচ্ছিল।
মোহাম্মেদ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘নির্বিচার গোলা হামলা চলছিল। আমরা চেকপয়েন্টের দিকের রাস্তাটা ধরে জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের কেন্দ্রস্থলের দিকে চলে যাই।’
পরিবারটির সঙ্গে ছিল তাদের পোশাক, কিছু টিনজাত খাদ্য এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র। প্রথমে জুলিয়া, তার বাবা মোহাম্মেদ, মা আমল, ১৫ মাস বয়সী ভাই হামজা, এক দাদা, দুই চাচা এবং এক চাচাতো ভাই একসঙ্গেই ছিল।
কিন্তু বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির একপর্যায়ে মেয়ে জুলিয়াকে নিয়ে মোহাম্মেদ অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
মোহাম্মেদ বলেন, ‘ভিড়ের কারণে আমি ওর মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। আমাদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্রগুলোও হারিয়ে ফেলি। ও (জুলিয়ার মা) সেখান সরে যেতে পেরেছিল। আমি সেখানেই থেকে যাই।’
বাবা-মেয়ে মানুষের স্রোতের সঙ্গেই এগিয়ে যেতে থাকেন। রাস্তাজুড়ে ছিল মৃত্যুর চিহ্ন।
মোহাম্মেদ বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপ দেখতে পাচ্ছিলাম আমরা, মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল লাশ।’
সেগুলো জুলিয়ার চোখ থেকে আড়াল করার কোনো উপায় ছিল না। অন্তত কিছুটা হলেও সে দেখেছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে শিশুরাও সহিংস মৃত্যুর দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
এর পর হাঁটতে হাঁটতে মোহাম্মেদরা ইসরায়েলের একটি তল্লাশিচৌকিতে (চেকপয়েন্ট) পৌঁছান।
মোহাম্মেদ বলেন, ‘ট্যাংকের ওপরে, মাটিতে সেনারা অবস্থান করছিল। তারা লোকজনের দিকে এগিয়ে আসে, ওপরের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। গুলির সময় মানুষগুলো ঠেলাঠেলি করে একে অপরের সঙ্গে সেঁটে দাঁড়ায়।’
মোহাম্মেদ আরও বলেন, ইসরায়েলি সেনারা ওই দলে থাকা পুরুষদের অন্তর্বাস বাদে বাকি সব পোশাক খুলে ফেলার আদেশ দিয়েছিল। লুকিয়ে রাখা অস্ত্র বা আত্মঘাতী হামলাকারী খুঁজে বের করতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি নিয়মিত কার্যক্রম ছিল এটি।
মোহাম্মেদ জানান, তল্লাশিচৌকিতে তাদের ছয় থেকে সাত ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। ওই সময়েরই কোনো একটা পর্যায়ে ওই ছবিটি তোলা হয়।
ছবিতে জুলিয়াকে অবিচলিত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, এরপরে কী দুর্দশা হয়েছিল, বলছিলেন তার বাবা।
‘ও চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বলতে থাকে, সে মায়ের কাছে যেতে চায়।’ বলেন মোহাম্মেদ।
পরিবারটি অবশেষে আবারও একত্র হয়েছে। বাড়িঘর হারানো মানুষগুলোকে ছোট ছোট জায়গায় গাদাগাদি করে অবস্থান করতে হচ্ছে। তবে তাদের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ়।
জাবালিয়া থেকে কারও আত্মীয়স্বজন এলে আলাপ জমে ওঠে।
জুলিয়াকে আগলে রেখেছে তার প্রিয় মানুষেরা। তার জন্য মিষ্টি, পটেটো চিপস আলাদা করে রেখে দেওয়া হয়।
তারপরও জুলিয়ার মতো একটি শিশুকে ভাগ্যবান বলা কঠিন। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য বলছে, গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ হাজার শিশুর প্রাণ গেছে। জুলিয়া তার এইটুকু জীবনে যা দেখেছে, যার মধ্য দিয়ে গেছে... কে জানে সামনের দিনগুলোয় এগুলো দুঃস্বপ্ন হয়ে বারবার তার স্মৃতিতে ফিরে আসবে কি না!
ছবিতে ছোট্ট মেয়েটিকে শনাক্ত করেছেন বিবিসির একজন প্রযোজক। মেয়েটি অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ছবি: বিবিসির এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে সংগৃহীত |
No comments