মানিকগঞ্জে কাদেরপত্নীর গাড়িচালকের ডুপ্লেক্স বাড়ি
সরজমিন আতিকুর রহমানের গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, কাঁচা-পাকা রাস্তা পেরিয়ে দৃষ্টিনন্দন একটি ডুপ্লেক্স ভবন। সবেমাত্র বাড়িটির কাজ শেষ হয়েছে। ভবনের নিচে বাইরের আঙিনায় বসে থাকতে দেখা যায় আতিকুরের বৃদ্ধ মা সালেহা খাতুন, ছোট বোন রাবেয়া আক্তার, চাচাতো ভাইয়ে স্ত্রী বন্যা আক্তারকে। গত ৫ই আগস্টের পর থেকে বাড়িটিকে ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে কাসিমনগর এলাকায়। আতিকুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা এনিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। পরিবারটির দাবি, কষ্ট করেই আতিক বাড়িটি করেছেন।
আতিকের বৃদ্ধ মা সালেহা খাতুন ও ছোট বোন রাবেয়া আক্তার জানান, আতিকের বাবা মৃত রেহাজ উদ্দিন সড়ক ও জনপদ বিভাগের পিয়নের চাকরি করতেন। শুধু বাবাই নন আতিকসহ তার তিন ভাই একই বিভাগে গাড়িচালকের চাকরি পান। ২০০৫ সালে আতিকুর রহমান তার বড় ভাই হাফিজুর রহমানের তদবিরে সেখানে গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ পান। তার মেজোভাই আজিজুর রহমানও একই বিভাগে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করছেন।
আতিকুর চাকরির শুরুতে ওই বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়ারের গাড়ি চালাতেন। ২০১২ সালের পরে সাবেক সড়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা কাদেরের নিজস্ব ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত হন।
পরিবারটি জানিয়েছেন, অনেক কষ্ট করে আতিক ডুপ্লেক্স বাড়িটি করেছে। বাড়ি করতে গিয়ে অনেক ঋণও হয়েছে। চাকরির পাশাপাশি ইট সাপ্লাইয়ের ব্যবসা এবং ঢাকায় পিসি ও পার্লারের ব্যবসা রয়েছে আতিকের। এসব ব্যবসা থেকেই ডুপ্লেক্স বাড়িটি করেছেন। বাড়িটি করতে প্রায় তিন বছর সময় লেগেছে।
তারা জানান, আশপাশের আরও কতো সুন্দর সুন্দর বাড়ি রয়েছে তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। মূলত ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালানোর কারণেই বাড়িটি মানুষের চোখে পড়েছে। ৫ই আগস্টের পর থেকেই বাড়ির দিকে অনেকের কুদৃষ্টি পড়েছে বলে পরিবারটি জানান।
আতিকের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী বন্যা আক্তার জানান, মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতেই ডুপ্লেক্স ভবনটি করেছে। এই ভবন করতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আতিকুর রহমান সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। একসময় এলকায় বেবিট্যাক্সি চালাতো। তার বাবা মৃত রিহাজ উদ্দিনও একসময় সড়ক বিভাগে পিয়ন ছিলেন। এ বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেন পরিবার। আতিকুর যখন সড়ক বিভাগে গাড়িচালকের চাকরিতে যোগ দেন তখন তার বাড়িতে চারচালা টিনের ঘর ছিল। তবে অভাব অনটন বলতে যেটা বোঝায় সেটা পরিবারে ছিল না।
সড়ক বিভাগের চাকরি পাওয়ার পরপরই তার ভাগ্য খুলে যায়। গাড়িচালক হলেও এলাকায় মর্যাদা বেড়ে যায় ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়িচালক হওয়ায়। গাড়িচালকের পাশাপাশি তার প্রধান ব্যবসা ছিল ইট সাপ্লাইয়ের। সিংগাইর উপজেলার কয়েকটি ইটভাটার সঙ্গে তার ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। সড়ক বিভাগের রাস্তাঘাট তৈরিতে একটি অংশের ইটের জোগান দিতেন গাড়িচালক আতিকুর রহমান। একসময় সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে সখ্যতায় সড়ক বিভাগে ইটের জোগান দিতেন। তখন থেকেই টাকার উৎস খুঁজে পান আতিক। ১৮ হাজার টাকা বেতনে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন ঢাকা শহরে।
ইট ব্যবসার পাশাপাশি ঢাকায় দুটি অত্যাধুনিক পুরুষ পার্লার ব্যবসা এবং পিসি’র (খাবার) ব্যবসাসহ নামে বেনামে আরও ব্যবসা রয়েছে।
সড়ক বিভাগের চাকরির সুবাধে বিভিন্ন তদবির বাণিজ্যের সঙ্গে আতিক জড়িত বলে এলাকার মানুষজন জানিয়েছেন। যার কারণে আওয়ামী লীগের সময় তিনি অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনেও মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে আতিক জড়িত ছিল।
তাছাড়া করোনাকালীন সময় যখন সারা দেশ স্থবির ছিল এবং যানবাহন চলাচলে বাধা-নিষেধ ছিল তখন সড়ক মন্ত্রী ও তার স্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে সিংগাইর থেকে প্রতিদিন ইটের গাড়িগুলো ঢাকায় আনা-নেয়া করতে গাড়িপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে বখরা নিতো বলে অভিযোগ রয়েছে। তখন বিভিন্ন ইটভাটার মালিকেরা আতিকের শরণাপন্ন হতো।
No comments