ভয়ঙ্কর প্লাস্টিক দূষণ, বছরে ক্ষতি ৬১৫০ কোটি টাকা by জিয়া চৌধুরী
পরিবেশ
ও জীবনের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি হয়ে উঠছে প্লাস্টিক বর্জ্য। অনিয়ন্ত্রিতভাবে
প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ায় দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে সংকট। এভাবে চলতে থাকলে
প্লাস্টিক বর্জ্য দেশে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকাসহ সব বড় শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের জন্য আলাদা
ব্যবস্থা না থাকায় পুনর্ব্যবহার করা যাচ্ছে না এসব পণ্যের।
পাশাপাশি সিটি করপোরশেনগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য আলাদা গ্রেডিং ও ব্যবস্থাপনা না করায় গৃহস্থালির প্রাকৃতিক বা অরগানিক বর্জ্যও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক বর্জ্যের সাথে মিশে এসব প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশে। সরাসরি দূষণের পাশাপাশি জলাশয়ে গিয়ে মিশে জলজ প্রাণির জীবনচক্রে প্রভাব ফেলছে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য। বছরের পর বছর ধরে ঠিকে থাকা এসব প্লাস্টিক পণ্য বিরূপ প্রভাব ফেলছে মানুষের খাদ্যচক্রেও।
ওয়েস্ট কনসার্ন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসেবে দেখা গেছে, বছরে বাংলাদেশে অন্তত ১০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে যার বেশিরভাগ পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত বর্জ্যের কারণে বছরে ৬১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে ও বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি রুখতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলাদা নীতিমালা প্রণয়ণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গ্রেডিং সিস্টেম ও জিরো ওয়েস্ট পদ্ধতির চালুর সুপারিশ করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। এরই মধ্যে, দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনরায় ব্যবহারের উদ্যোগ শুরু করে দিয়েছেন অনেকে।
পুরনো ফেলে দেয়া প্লাস্টিক থেকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরিসহ বিদেশেও রপ্তানি করা শুরু করেছেন অনেক উদ্যোক্তা। তারা বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারে সরকার এখনো মনোযোগী নয়। বেসরকারিভাবে অনেকে উদ্যোগ নিলেও সরকারি প্রণোদনার অভাবে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ‘বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রভাব ও পুনর্ব্যবহার’ বিষয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক ও দুইজন শিক্ষার্থী একটি গবেষণা করছেন।
অতিরিক্ত মাত্রায় প্লাস্টিকের ব্যবহারকে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখানো হয়েছে গবেষণায়। তবে প্লাস্টিক বর্জ্য শুধুই সংকট নয় সম্ভাবনা বলেও মনে করছে ওই গবেষণা দল। শাবিপ্রবি’র রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও গবেষণা দলের সদস্য মো. মাহমুদুল হাসান গতকাল মানবজমিনকে বলেন, গৃহস্থালি, অফিস ও কারখানার প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের একটা বড় সুযোগ রয়েছে। তবে হতাশার বিষয়, আমরা এখনো সে বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিতে পারিনি। শাবিপ্রবি’র ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৩ সালে প্রতিদিন দেশে প্রায় ৫ হাজার ৬০ টন বর্জ্য তৈরি হতো। বছরে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬ লাখ টন। তবে, ২০২৫ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার টনের বেশি বর্জ্য তৈরি হবে বলে গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বছরে যার পরিমান দাঁড়াবে প্রায় ৫৫ লাখ টনে। বর্জ্য অপসারণে নাগরিকদের তেমন কোন অংশগ্রহণ নেই বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিপুল জনসংখ্যার অধিকাংশই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় না হওয়ায় এটি এক ধরনের চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও সেবা সংস্থাগুলোকে আরো উদ্যোগী হতে হবে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
দেশের রাজধানী খোদ ঢাকাতেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার করুণ চিত্র দেখা গেছে, যেখানে মাত্র শতকরা ৩৭ ভাগ বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। গত প্রায় এক দশকে দেশে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার প্রসঙ্গে কিছুটা ইঙ্গিত করা হয়েছে ওই গবেষণায়। মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্টে (এমএসডব্লিউ) দিন দিন প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে। দেশের নগর ও শিল্প এলাকায় খাবার ও কাগজ জাতীয় বর্জ্যের পরেই সবচেয়ে বেশি বর্জ্য তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক থেকে। এমনকি গ্রাম ও প্রান্তিক এলাকায়ও প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ, প্লাস্টিক প্যাকেজিং, পিইটি বোতল ও গৃহস্থালি কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে পলি বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে।
২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল এই এক দশকে দেশের নগর এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে শতকরা প্রায় ২.৬০ ভাগ। এই সময়ে শহর ও পৌরসভা এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনের হার বেড়েছে যথাক্রমে শতকরা প্রায় ৩.৩০ ও ৩.৭৩ ভাগ। বেশ কয়েকটি সংগঠন ও সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের শতকরা প্রায় ৭২ ভাগ পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে না। প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে দেশে বছরে প্রায় ৬১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলেও গবেষণায় জানানো হয়েছে।
এছাড়া, দেশের ভেতরে প্রায় ৫ হাজার ছোট-বড় প্লাস্টিক কারখানায় বছরে ৪ হাজার টন প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন হয়। এসব পণ্যের চার ভাগের প্রায় এক ভাগ বর্জ্য হিসেবে থেকে যাচ্ছে, যা পুনরায় ব্যবহার হচ্ছে না। উৎপাদিত বর্জ্যের শতকার মাত্র ২৮ ভাগ পুনরায় ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে, এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করলে জ্বালানি তেলের বড় যোগান হবে বলেও শাবিপ্রবির গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে, এনভায়রন্টমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে।
সংগঠনটির মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, গৃহস্থালি কাজে বহুবার ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিক পণ্য দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশঙ্কার কারণ হচ্ছে মাত্র এক বার ব্যবহার করা হয় এমন প্লাস্টিক সামগ্রী। সামাজিক অনুষ্ঠান ও খাবারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব পণ্য। তবে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক পণ্যের কারণে দেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমান বাড়ছে।
তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে দেশে ই-বর্জ্যের পরিমাণও বাড়ছে বলে জানান এসডো’র মহাসচিব। শাহরিয়ার হোসেন মানজমিনকে জানান, ই-বর্জ্যের প্রায় শতকরা ৭০ ভাগেই থাকে প্লাস্টিক। প্রচলিত বর্জ্য থেকে আলাদা করে এসব প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশন ও সেবা সংস্থাগুলো কোন উদ্যোগ নেয়নি। প্রচলিত গৃহস্থালির প্রাকৃতিক বর্জ্যের সঙ্গে ডাম্পিং স্টেশনগুলোতে অপসারণ করার ফলে ক্ষতির মাত্রা আরো বেশি হচ্ছে। পোড়ানোর পর, তা মাটি ও জল ও বাতাসে মিশে থাকছে। প্রভাব ফেলছে মানুষের খাদ্যচক্রেও।
শাহয়িরার হোসেন আরো বলেন, গৃহস্থালি ও বাসাবাড়ির প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ বর্জ্য অর্গানিক। তবে, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণে কোন আলাদা পদ্ধতি না থাকায় পচনশীল বর্জ্য কোন কাজে আসছে না। সিটি করপোরেশন থেকে লাল, হলুদ ও সবুজ তিন রংয়ের আলাদা চিহ্নিত ক্যানে বর্জ্য সংগ্রহে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। পাশাপাশি, এসব বর্জ্য ডাম্পিয়ের সময় প্লাস্টিক বর্জ্যকে আলাদা চেম্বারে রেখে অর্গানিক বর্জ্য থেকে সার বা প্রয়োজনীয় কাজে লাগানো সম্ভব বলেও মত তার। তিনি আরো বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রসেসের দিকে মনোযোগী হতে হবে। যাতে করে, বর্জ্যের পরিমাণ না বাড়ে, পুনর্ব্যবহার বাড়াতে হবে। এদিকে, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার করে আবারো পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে ইনোকা বাংলাদেশে প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. নিয়ামুল কবির মিঠু বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্ভব। সরকারকে এমন উদ্যোগে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, যারা প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরি করছে তাদেরও প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে, দেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে যাওয়া সম্ভব।
পাশাপাশি সিটি করপোরশেনগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য আলাদা গ্রেডিং ও ব্যবস্থাপনা না করায় গৃহস্থালির প্রাকৃতিক বা অরগানিক বর্জ্যও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক বর্জ্যের সাথে মিশে এসব প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশে। সরাসরি দূষণের পাশাপাশি জলাশয়ে গিয়ে মিশে জলজ প্রাণির জীবনচক্রে প্রভাব ফেলছে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য। বছরের পর বছর ধরে ঠিকে থাকা এসব প্লাস্টিক পণ্য বিরূপ প্রভাব ফেলছে মানুষের খাদ্যচক্রেও।
ওয়েস্ট কনসার্ন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসেবে দেখা গেছে, বছরে বাংলাদেশে অন্তত ১০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে যার বেশিরভাগ পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত বর্জ্যের কারণে বছরে ৬১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে ও বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি রুখতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলাদা নীতিমালা প্রণয়ণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গ্রেডিং সিস্টেম ও জিরো ওয়েস্ট পদ্ধতির চালুর সুপারিশ করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। এরই মধ্যে, দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনরায় ব্যবহারের উদ্যোগ শুরু করে দিয়েছেন অনেকে।
পুরনো ফেলে দেয়া প্লাস্টিক থেকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরিসহ বিদেশেও রপ্তানি করা শুরু করেছেন অনেক উদ্যোক্তা। তারা বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারে সরকার এখনো মনোযোগী নয়। বেসরকারিভাবে অনেকে উদ্যোগ নিলেও সরকারি প্রণোদনার অভাবে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ‘বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রভাব ও পুনর্ব্যবহার’ বিষয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক ও দুইজন শিক্ষার্থী একটি গবেষণা করছেন।
অতিরিক্ত মাত্রায় প্লাস্টিকের ব্যবহারকে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখানো হয়েছে গবেষণায়। তবে প্লাস্টিক বর্জ্য শুধুই সংকট নয় সম্ভাবনা বলেও মনে করছে ওই গবেষণা দল। শাবিপ্রবি’র রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও গবেষণা দলের সদস্য মো. মাহমুদুল হাসান গতকাল মানবজমিনকে বলেন, গৃহস্থালি, অফিস ও কারখানার প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের একটা বড় সুযোগ রয়েছে। তবে হতাশার বিষয়, আমরা এখনো সে বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিতে পারিনি। শাবিপ্রবি’র ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৩ সালে প্রতিদিন দেশে প্রায় ৫ হাজার ৬০ টন বর্জ্য তৈরি হতো। বছরে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬ লাখ টন। তবে, ২০২৫ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার টনের বেশি বর্জ্য তৈরি হবে বলে গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বছরে যার পরিমান দাঁড়াবে প্রায় ৫৫ লাখ টনে। বর্জ্য অপসারণে নাগরিকদের তেমন কোন অংশগ্রহণ নেই বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিপুল জনসংখ্যার অধিকাংশই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় না হওয়ায় এটি এক ধরনের চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও সেবা সংস্থাগুলোকে আরো উদ্যোগী হতে হবে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
দেশের রাজধানী খোদ ঢাকাতেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার করুণ চিত্র দেখা গেছে, যেখানে মাত্র শতকরা ৩৭ ভাগ বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। গত প্রায় এক দশকে দেশে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার প্রসঙ্গে কিছুটা ইঙ্গিত করা হয়েছে ওই গবেষণায়। মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্টে (এমএসডব্লিউ) দিন দিন প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে। দেশের নগর ও শিল্প এলাকায় খাবার ও কাগজ জাতীয় বর্জ্যের পরেই সবচেয়ে বেশি বর্জ্য তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক থেকে। এমনকি গ্রাম ও প্রান্তিক এলাকায়ও প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ, প্লাস্টিক প্যাকেজিং, পিইটি বোতল ও গৃহস্থালি কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে পলি বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে।
২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল এই এক দশকে দেশের নগর এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে শতকরা প্রায় ২.৬০ ভাগ। এই সময়ে শহর ও পৌরসভা এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনের হার বেড়েছে যথাক্রমে শতকরা প্রায় ৩.৩০ ও ৩.৭৩ ভাগ। বেশ কয়েকটি সংগঠন ও সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের শতকরা প্রায় ৭২ ভাগ পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে না। প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে দেশে বছরে প্রায় ৬১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলেও গবেষণায় জানানো হয়েছে।
এছাড়া, দেশের ভেতরে প্রায় ৫ হাজার ছোট-বড় প্লাস্টিক কারখানায় বছরে ৪ হাজার টন প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন হয়। এসব পণ্যের চার ভাগের প্রায় এক ভাগ বর্জ্য হিসেবে থেকে যাচ্ছে, যা পুনরায় ব্যবহার হচ্ছে না। উৎপাদিত বর্জ্যের শতকার মাত্র ২৮ ভাগ পুনরায় ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে, এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করলে জ্বালানি তেলের বড় যোগান হবে বলেও শাবিপ্রবির গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে, এনভায়রন্টমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে।
সংগঠনটির মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, গৃহস্থালি কাজে বহুবার ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিক পণ্য দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশঙ্কার কারণ হচ্ছে মাত্র এক বার ব্যবহার করা হয় এমন প্লাস্টিক সামগ্রী। সামাজিক অনুষ্ঠান ও খাবারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব পণ্য। তবে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক পণ্যের কারণে দেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমান বাড়ছে।
তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে দেশে ই-বর্জ্যের পরিমাণও বাড়ছে বলে জানান এসডো’র মহাসচিব। শাহরিয়ার হোসেন মানজমিনকে জানান, ই-বর্জ্যের প্রায় শতকরা ৭০ ভাগেই থাকে প্লাস্টিক। প্রচলিত বর্জ্য থেকে আলাদা করে এসব প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশন ও সেবা সংস্থাগুলো কোন উদ্যোগ নেয়নি। প্রচলিত গৃহস্থালির প্রাকৃতিক বর্জ্যের সঙ্গে ডাম্পিং স্টেশনগুলোতে অপসারণ করার ফলে ক্ষতির মাত্রা আরো বেশি হচ্ছে। পোড়ানোর পর, তা মাটি ও জল ও বাতাসে মিশে থাকছে। প্রভাব ফেলছে মানুষের খাদ্যচক্রেও।
শাহয়িরার হোসেন আরো বলেন, গৃহস্থালি ও বাসাবাড়ির প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ বর্জ্য অর্গানিক। তবে, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণে কোন আলাদা পদ্ধতি না থাকায় পচনশীল বর্জ্য কোন কাজে আসছে না। সিটি করপোরেশন থেকে লাল, হলুদ ও সবুজ তিন রংয়ের আলাদা চিহ্নিত ক্যানে বর্জ্য সংগ্রহে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। পাশাপাশি, এসব বর্জ্য ডাম্পিয়ের সময় প্লাস্টিক বর্জ্যকে আলাদা চেম্বারে রেখে অর্গানিক বর্জ্য থেকে সার বা প্রয়োজনীয় কাজে লাগানো সম্ভব বলেও মত তার। তিনি আরো বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রসেসের দিকে মনোযোগী হতে হবে। যাতে করে, বর্জ্যের পরিমাণ না বাড়ে, পুনর্ব্যবহার বাড়াতে হবে। এদিকে, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার করে আবারো পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে ইনোকা বাংলাদেশে প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. নিয়ামুল কবির মিঠু বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্ভব। সরকারকে এমন উদ্যোগে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, যারা প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরি করছে তাদেরও প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে, দেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে যাওয়া সম্ভব।
No comments