বিশ ডলার নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ কীসের? by শুভজ্যোতি ঘোষ
কর্তারপুরে চলছে শেষ মুহুর্তের তোড়জোড় |
পাকিস্তানের ভেতরে অবস্থিত শিখ
ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান দর্শনের জন্য ইসলামাবাদ মাথাপিছু
কুড়ি মার্কিন ডলার সার্ভিস চার্জ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ভারত তার
তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
ভারত সরকারের বক্তব্য, এই চার্জ গরিব
তীর্থযাত্রীদের প্রতি একটা অন্যায় এবং এখানে পাকিস্তান কোনও 'নমনীয়তা'
দেখাতে রাজি হচ্ছে না।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গতকালই এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই ফি-কে প্রকারান্তরে সমর্থন করেছেন।
তিনি বলেছেন, এতে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে এবং সে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ও বাড়বে।
কিন্তু
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কাউর পাল্টা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তান
এর মাধ্যমে গরিব মানুষের 'ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যবসা ফাঁদতে' চাইছে।
"এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না" বলেও মিস বাদল মন্তব্য করেন।
কিন্তু বিশ ডলারের এই সার্ভিস চার্জ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধটা ঠিক কীসের?
শিখ
ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের শেষ জীবন কেটেছিল পাঞ্জাবের কর্তারপুরে,
যা দেশভাগের পর এখন পড়েছে পাকিস্তানের নারোয়াল জেলাতে।
সেই
কর্তারপুরের দরবারা সাহিব গুরদোয়ারাতে যাতে ভারত থেকে শিখ তীর্থযাত্রীরা
সহজে যেতে পারেন, সেই লক্ষ্যে দুই দেশ মিলে সীমান্ত পেরিয়ে একটি যাত্রাপথ
স্থাপন করছে।
ভারতের গুরুদাসপুরে ডেরা বাবা নানক থেকে পাকিস্তানের কর্তারপুরে দরবারা
সাহিব পর্যন্ত বিস্তৃত এই পথের নামকরণ করা হয়েছে 'কর্তারপুর করিডর'।
গত বছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঠিক পর পরই ইমরান খান এই করিডর খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
তখনই
তিনি জানান, "ভারত-সহ সারা দুনিয়া থেকে আসা শিখদের জন্য এই তীর্থস্থান
উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এবং সেখানে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা
হবে।"
কিন্তু এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে পাকিস্তান প্রত্যেক তীর্থযাত্রীপিছু কুড়ি ডলার চার্জ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়।
সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকরা এক অন্যের দেশে গেলে সাধারণত কোনও ভিসা ফি নেওয়া হয় না।
কিন্তু এখানে পাকিস্তান ভারতীয় নাগরিকদের এই ফি থেকে রেহাই দিতে রাজি হচ্ছে না।
ভারতের
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কাউর বাদল এদিন বলেছেন,
"কুড়ি ডলার মানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দেড় হাজার রুপি!"
"তার মানে একজন গরিব মানুষ তার স্ত্রী বা বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে তীর্থ দর্শন করাতে গেলেও ছ'হাজার রুপি মতো বাড়তি খরচ!"
"এতো টাকা তারা কোথায় পাবেন? আর এই টাকা দিয়ে অর্থনীতির উন্নয়ন?"
"পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ধান্দা করতে চাইছেন", মন্তব্য করেছেন তিনি।
কর্তারপুর
করিডর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা এসসিএল দাস।
তিনিও বিবিসিকে বলেছেন, "এই ফি চার্জ করাটা তীর্থযাত্রার চেতনার পরিপন্থী এবং অত্যন্ত কুরুচিকর।"
তবে ইমরান খান নিজে তার ফেসবুক পোস্টে যুক্তি দিয়েছেন, ধর্মীয় পর্যটন
তার দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে - আর এর মাধ্যমে নানা খাতেই কর্মসংস্থানও
সম্ভব।
বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও এসে এর আগে পাকিস্তানে
বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থানে ঘুরে গেছেন, নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ
নিয়েছেন।
তার মাধ্যমে যে সে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
কর্তারপুর আলোচনায় পাকিস্তানের দিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড: মহম্মদ ফয়সল।
তিনি মাসতিনেক আগেই শায়েরি করে বলেছিলেন, "ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে
আবহাওয়া বদলাচ্ছে - তবে গাছের ডালে এখনও নতুন পাতা আসতে কিছুটা বাকি আছে।"
তিনি তখন আরও দাবি করেছিলেন, 'আশি শতাংশ বিষয় নিয়েই' দুপক্ষের মধ্যে নাকি সমঝোতা হয়ে গেছে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল তিন মাস পরেও গাছের ডালে নতুন পাতা আর এল না - অর্থাৎ বাকি মতবিরোধ দুই দেশ আজও মেটাতে পারল না।
এরই মধ্যে পাকিস্তান একতরফাভাবে ঘোষণা করে দিয়েছে, আগামী ৯ নভেম্বর এই করিডরের উদ্বোধন করা হবে - আর বিশ ডলারের চার্জও জারি হবে।
No comments