স্থাপত্যকলায় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ইতিহাস
নবীন
রাষ্ট্র পাকিস্তানের স্থাপত্যকলার ইতিহাসের ওপর বই লেখার জন্য
মেলন-ভক্সওয়াগন ফেলোশিপ পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যানসাস
স্কুল অব আর্কিটেকচার এন্ড ডিজাইনের বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সহকারি অধ্যাপক
করিম। তিনি এখন সেই বই লেখার কাজে ব্যস্ত। বইটিতে তৎকালিন পূর্ব ও পশ্চিম
পাকিস্তান, তথা বর্তমানে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্থাপত্যকালার শুরুর
দিককার ইতিহাসটি উঠে আসছে।
করিম বলেন, আমি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত উত্তর-ওপনিবেশ যুগে পাকিস্তানের ইতিহাস দেখার চেষ্টা করেছি। বিশ্বের ইতিহাসে এই এই সময়টির আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। একটি ইউটোপিয়া হিসেবে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিলো। মুসলিম জাতীয়তাবাদ ধারণার ওপর পাকিস্তানের দুই অংশের সৃষ্টি হয়েছিলো। যদিও রাষ্ট্রটির দুই অংশের মধ্যে হাজার মাইলের ব্যবধান ছিলো। বাংলাদেশ নামে স্বাধীন হওয়া পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি ছিলো পশ্চিমের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা।
এক শতকের বেশি সময় শাসন করার পর ১৯৪৭ সালে বৃটেন ভারতীয় উপমহাদেশকে ছেড়ে যায়। তারা ধর্মের ভিত্তিতে সমরূপ দুটি রাষ্ট্র পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টি করে।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে এবং বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তবে আরেকটি বিরোধ সামনে চলে আসে – কাশ্মির নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধ। সেই বিরোধ এখনো চলছে।
করিম বলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যারা ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ একটি বিব্রতকর অধ্যায়। বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার ক্ষেত্রে বিপুল তারতম্য রয়েছে। তবে, আমি স্থাপত্যকলার ইতিহাসবিদ। এই অংশটি খুব কমই আলোচনা করা হয়েছে।
করিম আরো বলেন, আমি স্থাপত্যবিদ্যার ইতিহাসের চশমা দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি নকশা, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার স্থাপত্যের মধ্য দিয়ে কিভাবে পাকিস্তানের নির্মাণশিল্পটি নির্মিত হয়েছে। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ব্রাজিলের লা ব্রাজিলা বা ভারতের চন্ডিগড়ের মতো সম্পূর্ণ নতুন গড়ে তোলা একটি শহর। দলে দলে নকশাবিদের আগমন ঘটেছে এখানে। তাদের কাছে পরিকল্পনা থাকলেও উত্তেজনা কাজ করছিলো। তারা ছিলেন শূণ্যের মাঝে দাঁড়িয়ে এবং তাদেরকে গোটা একটি নগরী নির্মাণের জন্য বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে শিক্ষা সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলো। বৃটিশদের তাড়িয়ে দেয়া হলেও পাকিস্তানের নিজস্ব কোন শিক্ষা কাঠামো ছিলো না। তাই পাকিস্তান যখন একটি সম্পূর্ণ জাতি-গঠন প্রকল্প গ্রহণ করে তখন তাদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্থাপত্যবিদ ছিলো না। আর সে কারণে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিতে হয়েছে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া সহায়তা অবকাঠামো নির্মাণের কাজে পাকিস্তান ব্যয় করে।
করিম জানান, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, তুরস্ক, জাপান ও জার্মানি থেকে স্থাপত্যবিদরা পাকিস্তানে এসে ভীড় জামান। এদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন লুই কান। তিনি পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমানে বাংলাদেশের সংসদ ভবনের নকশা তৈরি করেন। তৎকালিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান লুই কানকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান এই সংসদ ভবনের নকশা তৈরির জন্য।
করিম বলেন, স্থাপত্যবিদ্যার ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে লুই কান এক অনন্য প্রতিভা। তিনি অনেক মাস্টারপিস নির্মাণ করেন। তার সঙ্গে ইউএসএআইডি’র সুসম্পর্ক ছিলো। স্নায়ুযুদ্ধকালে দক্ষিণ এশিয়ায় তার ভূমিকাও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। স্থাপত্যবিদ্যার ইতিহাস নিয়ে আলোচনাকালে তাকে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়। কিন্তু আমরা যখন বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লুই কানকে বিশ্লেষণ করি আমাদের চোখের সামনে একটি নতুন দৃশ্যপট উন্মোচিত হয়।
করিম গত পাঁচ বছর ধরে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে ও গ্রিসের আর্কাইভগুলোতেও বিচরণ করেছেন। গত পাঁচ বছরে তাকে ১৫টি দেশে ঘুরতে হয়েছে বলে করিম জানান। তার মতে এটা একটি মহাকাব্যের মতো ঘটনা। তাই মহাকাব্যের মতো বিস্তৃত পরিসরেই একে বর্ণনা করতে হবে।
করিম তার বইয়ের নাম দিয়েছে ‘একটি জাতির স্বপ্ন দেখা’। বইটি লেখার জন্য কর্মস্থল তাকে ১০ মাস ছুটি দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার স্থাপত্যকলাই ইতিহাস সম্পর্কে আমরা কত কম জানি তা নিয়ে করিমের আক্ষেপের শেষ নেই।
[সাউথএশিয়ানমনিটরে পুন:/অনবাদ প্রকাশের জন্য বিশেষ অনুমতি নেয়া হয়েছে]
করিম বলেন, আমি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত উত্তর-ওপনিবেশ যুগে পাকিস্তানের ইতিহাস দেখার চেষ্টা করেছি। বিশ্বের ইতিহাসে এই এই সময়টির আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। একটি ইউটোপিয়া হিসেবে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিলো। মুসলিম জাতীয়তাবাদ ধারণার ওপর পাকিস্তানের দুই অংশের সৃষ্টি হয়েছিলো। যদিও রাষ্ট্রটির দুই অংশের মধ্যে হাজার মাইলের ব্যবধান ছিলো। বাংলাদেশ নামে স্বাধীন হওয়া পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি ছিলো পশ্চিমের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা।
এক শতকের বেশি সময় শাসন করার পর ১৯৪৭ সালে বৃটেন ভারতীয় উপমহাদেশকে ছেড়ে যায়। তারা ধর্মের ভিত্তিতে সমরূপ দুটি রাষ্ট্র পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টি করে।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে এবং বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তবে আরেকটি বিরোধ সামনে চলে আসে – কাশ্মির নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধ। সেই বিরোধ এখনো চলছে।
করিম বলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যারা ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ একটি বিব্রতকর অধ্যায়। বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার ক্ষেত্রে বিপুল তারতম্য রয়েছে। তবে, আমি স্থাপত্যকলার ইতিহাসবিদ। এই অংশটি খুব কমই আলোচনা করা হয়েছে।
করিম আরো বলেন, আমি স্থাপত্যবিদ্যার ইতিহাসের চশমা দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি নকশা, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার স্থাপত্যের মধ্য দিয়ে কিভাবে পাকিস্তানের নির্মাণশিল্পটি নির্মিত হয়েছে। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ব্রাজিলের লা ব্রাজিলা বা ভারতের চন্ডিগড়ের মতো সম্পূর্ণ নতুন গড়ে তোলা একটি শহর। দলে দলে নকশাবিদের আগমন ঘটেছে এখানে। তাদের কাছে পরিকল্পনা থাকলেও উত্তেজনা কাজ করছিলো। তারা ছিলেন শূণ্যের মাঝে দাঁড়িয়ে এবং তাদেরকে গোটা একটি নগরী নির্মাণের জন্য বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে শিক্ষা সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলো। বৃটিশদের তাড়িয়ে দেয়া হলেও পাকিস্তানের নিজস্ব কোন শিক্ষা কাঠামো ছিলো না। তাই পাকিস্তান যখন একটি সম্পূর্ণ জাতি-গঠন প্রকল্প গ্রহণ করে তখন তাদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্থাপত্যবিদ ছিলো না। আর সে কারণে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিতে হয়েছে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া সহায়তা অবকাঠামো নির্মাণের কাজে পাকিস্তান ব্যয় করে।
করিম জানান, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, তুরস্ক, জাপান ও জার্মানি থেকে স্থাপত্যবিদরা পাকিস্তানে এসে ভীড় জামান। এদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন লুই কান। তিনি পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমানে বাংলাদেশের সংসদ ভবনের নকশা তৈরি করেন। তৎকালিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান লুই কানকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান এই সংসদ ভবনের নকশা তৈরির জন্য।
করিম বলেন, স্থাপত্যবিদ্যার ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে লুই কান এক অনন্য প্রতিভা। তিনি অনেক মাস্টারপিস নির্মাণ করেন। তার সঙ্গে ইউএসএআইডি’র সুসম্পর্ক ছিলো। স্নায়ুযুদ্ধকালে দক্ষিণ এশিয়ায় তার ভূমিকাও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। স্থাপত্যবিদ্যার ইতিহাস নিয়ে আলোচনাকালে তাকে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়। কিন্তু আমরা যখন বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লুই কানকে বিশ্লেষণ করি আমাদের চোখের সামনে একটি নতুন দৃশ্যপট উন্মোচিত হয়।
করিম গত পাঁচ বছর ধরে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে ও গ্রিসের আর্কাইভগুলোতেও বিচরণ করেছেন। গত পাঁচ বছরে তাকে ১৫টি দেশে ঘুরতে হয়েছে বলে করিম জানান। তার মতে এটা একটি মহাকাব্যের মতো ঘটনা। তাই মহাকাব্যের মতো বিস্তৃত পরিসরেই একে বর্ণনা করতে হবে।
করিম তার বইয়ের নাম দিয়েছে ‘একটি জাতির স্বপ্ন দেখা’। বইটি লেখার জন্য কর্মস্থল তাকে ১০ মাস ছুটি দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার স্থাপত্যকলাই ইতিহাস সম্পর্কে আমরা কত কম জানি তা নিয়ে করিমের আক্ষেপের শেষ নেই।
[সাউথএশিয়ানমনিটরে পুন:/অনবাদ প্রকাশের জন্য বিশেষ অনুমতি নেয়া হয়েছে]
No comments