কাতারি অর্থনীতির হালচাল by মুজাহিদুল ইসলাম

ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির মাইক্রো ইকনোমিক্স সেন্টারের পলিটিক্যাল ইকনোমি বিশেষজ্ঞ খালিদ বিন রাশেদ আল খাতের বলেন, দুই বছর আগে প্রতিবেশী কর্তৃক অবরুদ্ধ হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় আমি বলেছিলাম, কাতারি অর্থনীতি অবরোধের ফলে আগের যেকোনো সময়ের থেকে আরও শক্তিশালী হবে। বর্তমান অবস্থা দেখলে তা বোঝা যায়, কাতার কীভাবে এ অবরোধের মোকাবিলা করেছে। তার ভাষায়, কাতারি অর্থনীতি মৌলিক দুটি কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবরোধ মোকাবিলা করার জন্য অনেকাংশে প্রস্তুত ছিল; উপসাগরীয় দেশগুলোর দুর্বল অর্থনৈতিক অবকাঠামো ও কাতারি অর্থনীতির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য।
উপসাগরীয় অর্থনৈতিক বাস্তবতা
কাতার-অবরোধ ব্যর্থ হওয়ার কারণ জানতে হলে উপসাগরীয় অর্থনীতির কিছু অবস্থা আগেই জানতে হবে। এগুলোর অর্থনীতি ভিত্তিগতভাবে দুর্বল। কারণ, সবাই একই উৎস থেকে আয় করে। তেল উত্তোলন ও রপ্তানি করে। বিপরীতে আন্তর্জাতিক আকাশ ও জলপথে অন্য সবকিছু আমদানি করতে হয়। এজন্য কাতারের ওপর চাপ দেওয়ার মতো খুব বেশি কিছু এসব বয়কটকারী দেশের হাতে নেই।
তেল রপ্তানিতে অর্ধ শতাব্দী চলে যাওয়ার পরও জিসিসির দেশগুলো তাদের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে পারেনি। পারেনি অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন মুদ্রা, প্রাকৃতিক গ্যাস ও রেলের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে। এভাবে তারা তাদের অর্থনীতিকে নিজেরাই বাধাগ্রস্ত করছে। এ দেশগুলোর সঙ্গে আসলে কাতারের খুবই শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও সীমান্তকেন্দ্রিক এমন কিছু নেই, যার কারণে তারা কাতারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় কোনো হুমকি হতে পারে।
কাতারি অর্থনীতি
এর বিপরীতে জিসিসি দেশগুলোর মধ্যে কাতারের অর্থনীতি বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। শুরু থেকেই বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে অবরোধ মোকাবিলা ও তার প্রভাব নির্ধারণ করতে তারা সক্ষম হয়েছে। কাতারের অর্থনীতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; অবরোধ পূর্ব ও অবরোধ পরবর্তী। যেকোনো অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দুই দশক থেকে কাতার তার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদকে বিভিন্নভাবে বিনিয়োগ করে আসছে।
উৎপাদনমুখী অবকাঠামো 
বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক তরল গ্যাস উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য সর্বাধিক বড় প্ল্যান্ট তৈরি করে কাতার। এটা পূর্ববর্তী ও সাম্প্রতিক সংকট মোকাবিলায় অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছে।
পরিকাঠামো
উন্নত ও আধুনিক সড়ক, রেল ও আকাশ যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে কাতার বিশ্বের সঙ্গে খুব সহজে যোগাযোগ করতে সক্ষম। বিকল্প রুটে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে সহজেই অবরোধ চ্যালেঞ্জকে জয় করেছে।
বিনিয়োগ সেক্টর
সংকট ও আগামী প্রজন্মের অধিকার রক্ষা, আয়ে বৈচিত্র্য আনা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার ও অর্থনৈতিক সার্কেল পরিচালনার জন্য বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশে নিজেদের তেল ও মূলধন বিনিয়োগ করেছে। কাতারের এই নীতি ফল দেওয়া শুরু করেছে এবং অবরোধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অবরোধ মোকাবিলায় কাতারের ব্যবস্থা
এক্ষেত্রে কাতার স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। হঠাৎ আঘাত উপশমে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা অনুসারে এয়াররুট ও বিকল্প পথে পণ্য পরিবহন করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। জিসিসি দেশগুলো কাতারের মার্কেট থেকে মূলধন সরিয়ে নেওয়ার আশঙ্কায় অর্থনৈতিক খাতে প্রচুর তারল্য ঢুকানোর পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য নিশ্চিত করার জন্য মজুদ করার ব্যবস্থা করা হয়।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে আত্মনির্ভরশীলতা, আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা এবং অনির্ভরযোগ্য প্রতিবেশীদের থেকে আলাদা হয়ে বিশ্ব শক্তিধরদের সঙ্গে মজবুত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা শুরু করে।
অবরোধের সরাসরি ইতিবাচক ফল
কাতারের কৃষি, পশু উৎপাদন ও হালকা শিল্পকারখানা এ অবরোধের ফলে বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অনেকটা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। তাই বলা চলে, অবরোধ কাতারের অর্থনীতিকে দুর্বল করার পরিবর্তে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল হতে অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছে।
আগামীর আশাবাদ
বিভিন্ন পরিসংখ্যন অনুযায়ী ২০২০ সালে কাতারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি তিন শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, ২০১৭ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৬ শতাংশ। ধারণা করা যাচ্ছে ২০১৮ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ২.৪ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে হবে ৩.১ শতাংশ। তবে কাতারের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মানবসম্পদ বিনির্মাণ।
>>>সূত্র : আলজাজিরা

No comments

Powered by Blogger.