বাস্তব ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় রাহুল গান্ধী by আফসান চৌধুরী
ব্রিটিশ
ও ভারতীয়দের একই মঞ্চে নিয়ে এসে সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য ১৮৮৫
সালে জনৈক ইংরেজের হাত ধরে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (আইএনসি) যাত্রা
শুরু হয়েছিলো। তবে শিগগিরই এটি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সত্ত্বা হিসেবে
আত্মপ্রকাশ করে, যা তাকে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতকে স্বাধীন
করার কৃতিত্ব এনে দেয়।
মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ – এরা সবাই ছিলেন আইএনসি’র অংশ। কিন্তু ক্রমেই এটি দেশের সবার প্রতিনিধিত্ব করার বদলে সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হয়ে ওঠে।
এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিম লীগ শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি করে। কিন্তু মুসলিম লীগের গোটা ভারতের মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধি হওয়ার দাবিও যে অলীক ছিলো ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়া তার প্রমাণ।
যাই হোক, ১৯৪৭ সালের পর আইএনসি একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়, যা ব্রিটিশ শাসনের উপযুক্ত উত্তরসূরি নেহেরুর নেতৃত্বে ফ্যাবিয়ান সোস্যালিজমের উদার ও পশ্চিমা ধাঁচের এলিট শ্রেণীর মূল্যবোধগুলো তুলে ধরে।
নেহেরুর শাসনামলে রাজনৈতিক ভিশনের ভিত্তিটি ন্যায়সঙ্গত সমাজের বদলে ভারতের এলিট শ্রেণীকেই প্রধান্য দেয়। কংগ্রেস শাসনামলে পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও বিশেষ সুবিধা প্রভাব বিস্তার করে। অন্যান্য উদীয়মান শ্রেণী ও সম্প্রদায়ের স্বার্থকে উপেক্ষা করে কংগ্রেস। এটি বংশীয় রাজনীতিরও সূচনা ঘটায়।
উত্তর ভারতীয় ভারত
উত্তর ভারতীয়দের ‘এক ভারত’ ধারণার ভিত্তিতে ভারত সবসময় ঐক্যবদ্ধ ছিলো। দেশটি কখনো এক না থাকলেও স্বপ্নটি লালন করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান এই ধারণা ভেঙ্গে দেয়। এটা ছিলো দিল্লিভিত্তিক এলিট শ্রেণীর উপর একটি বড় আঘাত। শিগগিরই ‘বিতর্কিত’ কাশ্মির উদ্ধার করা তার প্রধান জাতীয় লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে আগের মতোই মনযোগ ছিলো ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উপর।
কাশ্মির দুই দেশের এলিট শ্রেণীর জন্যই বেশ উপযুক্ত ইস্যু ছিলো। কাশ্মির সংঘাত থেকে সরে যেতে পাকিস্তান ইচ্ছুক ছিলো না। অন্যদিকে পাকিস্তানের কবল থেকে ভূখণ্ডটি উদ্ধার করা ভারতের মূল জাতীয় পরিচয়ে পরিণত হয়।
পাকিস্তান ও এর সেনাবাহিনীর জন্য কাশ্মির ইস্যুটি উপনিবেশ-পূর্ব সামন্ততান্ত্রিক সামরিক শাসন কাঠামোতে ফিরে যাওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দেয়, যেখানে সেনাবাহিনী হলো রাষ্ট্রের চূড়ান্ত গ্যারান্টার। রাজনৈতিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সেনাবাহিনীর মানে হলো দীর্ঘদিনের তুর্কি-আফগান ধরনের প্রশাসন পুনরুজ্জীবন এবং সেই মোতাবেক শ্রেণী ও অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন।
১৯৪৭ সালের পাকিস্তানের মৃত্যু ছিলো ব্রিটিশদের কাছে মোঘলদের পরাজয়ের মতো অনিবার্য। সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তান সংলগ্ন কাশ্মিরের প্রতি নজর দিলেও পূর্বাঞ্চলের নাজুক অবস্থার প্রতি তাদের নজর ছিলো না। আইএনসি’র অধীনে ভারতকে সম্ভবত তার সবচেয়ে বড় বিজয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটি ভাঙ্গার আশা করছিল, যে রাষ্ট্রটি তার নিজের সাঙ্ঘাতিক ভুলের কারণেই ১৯৪৭ সালে সৃষ্টি হয়েছিলো।
১৯৪৭ সালে নেহেরু বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন, তার কন্যা সেগুলো সংশোধন করেন, অন্তত আংশিকভাবে, ১৯৭১ সালে। সাফল্যটি ছিলো রাজনৈতিক-সামরিক, তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ অক্ষমতা থেকে যায়।
এমনকি ভারতের প্রাণকেন্দ্র, উত্তর ভারতেও, ভারতের একতা কতটা অগভীর তা ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড এবং এর জের ধরে শিখ বিরোধী দাঙ্গার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।
হোঁচট খায় বংশীয় রাজনৈতিক মডেল
ভারতের উত্তর ভারতীয় সামন্ত ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গকারী বংশীয় শাসন কিছু সময়ের জন্য কাজ করলেও সবসময় চাপের মুখে ছিলো। বাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুধু বঞ্চিতদের পক্ষ থেকেই প্রতিরোধ আসেনি, আসে দক্ষিণ, উত্তর-পূর্ব ও অন্যান্য অঞ্চলের জাতিগত ও ভাষাগত আন্দোলনের কাছ থেকেও।
দিল্লির নেতৃত্বাধীন স্লোগানের নীচে শ্রেণী, সম্প্রদায়ের বিভক্তি চাপা পড়ে গেলেও ২০১৯ সালের নির্বাচন প্রমাণ করেছে নেহেরুর ভারত কল্পকাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
প্রাক-পশ্চিমা ভারতের ঐতিহ্যগত শ্রেণী ও বর্ণ প্রাধান্যপূর্ণ কাঠামোর মধ্যে থাকা, ‘খাঁটি’ তৃণমূলের রাজনীতিকের বেশে থাকা অপশ্চিমা এলিটরা সবসময় তাদের পাখা ঝাপটাচ্ছিল। তারা এখন বেরিয়ে এসে নিজেদের জাহির করেছে।
স্বল্পকালীন হলেও মোরারজি দেশাইয়ের আমল প্রথম অতীতের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটায়। এর পর ছিলো দেবগৌড়ার ব্যর্থ জোট। নরসীমা রাও ও এ বি বাজপেয়ীর সময়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ওই প্রবণতা দেখানো অব্যাহত রাখে।
আমলাতন্ত্র ও দিল্লির পছন্দের উদার এলিট-চালিত ‘সোস্যালিস্ট’ মডেল তেমন কিছু করতে এবং চাহিদা বৃদ্ধি ও সীমিত সরবরাহের ভারতে টিকতে পারছিলো না। বিশ্বায়ন মানে হয় অর্থনৈতিক মৃত্যুদণ্ড। কংগ্রেসের অধীনে ভারত ওইসব উপাদান মিস করছিলো যা আন্ত:সামাজিক ও আঞ্চলিক জোটের সৃষ্টি করে।
স্বাধীনতাউত্তর ভারতকে ‘ন্যায়নিষ্ঠ’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও এটা ১৯৪৭ সালের আগের মতোই অনেক ফাটল তৈরি করে। প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও রাখা হয়নি বা রাখা যায়নি। ক্ষমতাসীন শ্রেণীর টিকে থাকার জন্য আমলা নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির মাধ্যমে সুবিধা সৃষ্টির আইএনসি মডেলের চেয়ে সম্পদ-ভিত্তিক ভিন্ন একটি মডেল অনুসরণ সহজ ছিলো।
পাকিস্তান-চীন ফ্যাক্টর
ভারতের জন্য পাকিস্তানের পাশাপাশি চীনও বাহ্যিক মাথা ব্যাথার কারণ ছিলো। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে ব্যর্থ হন নেহেরু। পরাজিত ব্যক্তি হিসেবে ১৯৬৪ সালে তার মৃত্যু হয়। ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী জয়ী হন, তবে চীন আরেকটি ১৯৬২ সাল ঘটাবে না তা নিশ্চিত হওয়ার পরেই সব পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। বরফপাত চীনা সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে অসম্ভব করে তোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়।
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ‘এক ভারত’ মডেল অবসানের ইংগিত মেলে। পণ্য ও সেবার চাহিদা বাড়তে থাকায় ভারতের অর্থনীতি যুদ্ধ করছিলো কিন্তু সে ছিলো খুবই অপটু ও মরিয়া। আর চাকায় পেরেক ফুটিয়ে যাচ্ছিল আমলাতন্ত্র।
স্থায়ী ফ্যাক্টরটি ছিলো শুধু কাশ্মির ও পাকিস্তান-বিরোধী মনোভাব। কিন্তু এতেও দেখা যায় ভারতের রাজনৈতিক নেতারা ১৯৪৭ পূর্ব শত্রুতা ছাড়া নতুন কিছু দিতে পারছিলেন না। এটা উত্তেজনায় ভরপুর জনগণের মধ্যে সুপের মতো কাজ করে, বিশেষ করে যখন সংখ্যাগরিষ্ঠের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়। এটা একটি সুবিধাজনক দোষারুপের খেলা।
এর মানে হলো, পাকিস্তান ও এর প্রক্সি জনগণ, তথা ভারতীয় মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে দানবীয় রূপে উপস্থাপন হলো ভারতের জাতীয় টিকে থাকার নীতির একটি অনিবার্য উপজাত। বিজেপি তা বুঝতে পেরেছে, অন্যদিকে বিভ্রমের মধ্যেই ঘুরপাক খায় আইএনসি।
এটা রাহুল গান্ধীর ভুল নয়। তিন এমন এক সময় শাসন করতে এলেন যখন ইতিহাস শুধু তাকেই নয়, কংগ্রেস, এমন কি ভারতের একটি বড় অংশকে পাশ কাটিয়ে গেছে।
অতীতে কংগ্রেস যেমন এলিট কলোনিয়াল কলাবরেটর মডেলের চেষ্টা করেছে তেমনি বিজেপি এখন টিকে আছে উপনিবেশিক শক্তির ক্লাসিক ডিভাইড এন্ড রুল কৌশলের উপর ভিত্তি করে। ঐতিহাসিকভাবে দুটিই ব্যর্থ। তবে ভারতীয় রাজনীতিতে কমই বিকল্প আছে।
তবে, আকাঙ্ক্ষা প্রবল হলে তা যদি মেটানো না হয় তাহলে ভারত বড় ধরনের সংকটে পড়বে। রাজনৈতিক নেতারা যদি জনগণের অর্থনৈতিক প্রয়োজনগুলো ভালোভাবে পূরণ করতে পারেন তাহলে পরিস্থিতি ভালো থাকবে। এদিকে অপেক্ষা করছে চীন।
রাহুল গান্ধী কি ভারতকে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন?
রাহুল গান্ধী ভারতের উদার-বাম জনগণকে ভয়াবহভাবে আঘাত করেছে এবং কংগ্রেসের নির্বাচনী বিপর্যয়ের জন্য লোকরঞ্জনবাদ, সাম্প্রদায়িতকতা, গোষ্ঠীতন্ত্র, ইত্যাদিকে দায়ি করা হচ্ছে।
তারা ভুলে যাচ্ছেন যে অতীতে কংগ্রেসের মতো একই পথে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, অর্থাৎ জনগণের ভোটে। সিস্টেম বদলায়নি এবং জনগণ ভোট দিয়েছে। জনগণ শুধু কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপিকে চেয়েছে। মানুষ বদলায়নি, ভোট বদলেছে।
মোদি ট্রাম্পের মতোই বাস্তব। কংগ্রেস বা ডেমক্রেটরা আর জনপ্রিয় নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা দলকে জয়ী হওয়ার জন্য দোষ দেয়া যায় না। কৌশল জানে বিজেপি, কংগ্রেস জানে না। কংগ্রেসের ইতিহাসই তার জন্য বোঝা হয়ে গেছে এবং তার এলিটপন্থী ভিশনও তাই, ভারতে তা কেউ আর কিনেনি। কংগ্রেস যেরকম দেখাতে চায় ও আবেদন জানাতে চায় ততটা ‘মহৎ লোক’ নয় ভারতীয়রা। তাদের ভিশনকে কংগ্রেস ভালোভাবে পড়তে পারেনি, বিজেপি পেরেছে এবং জয়ী হয়েছে।
ভারতের জনগণকে এক আবেগঘন বিদায়ী পত্র লিখেন রাহুল, যেখানে তিনি দেশকে ভাগ করার জন্য বিজেপিকে দায়ি করেছেন। সমস্যা এমনটি হতে পারে যে কংগ্রেসের ভারত শুধু বাম ও উদার ঘরানার ক্ষীণ এলিট চক্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সাধারণ মানুষের মধ্যে নয়। তারা জানে তারা কি চায়।
ভারত: সর্বদাই এক হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র
‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ উষ্কে দেয়ার জন্য মোদিকে রোষারুপ করেছেন রাহুল, অথচ প্রায় সব ভারতীয় এতে বিশ্বাস করে। বিজেপি তা বুঝেছে বলেই সফল হয়েছে। সে তার নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, কতটি জোরপূর্বক দেশপ্রেমের ঘোষণা আদায় করা হয়েছে বা গোরক্ষকরা কতজন মুসলিম বা দলিতকে পিটিয়ে মেরেছে, তাতে কিছু আসে যায় না, মোদির সমর্থন কমবে না।
তিনি নেহেরুর চেয়েও খাঁটি। তিনিই ভারত, অন্তত প্রাধান্যপূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ। সবসময় এই প্রবণতাটি ছিলো। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও অসাম্য থাকবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়বেও। তবে কেউ কেউ সবার চেয়ে বেশি পেলেও সবাই কিছুটা লাভবান হয়।
রাহুল যে নেহেরু মডেল বিকানোর চেষ্টা করে বিফল হয়েছেন তা প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে, যা আগেই দেয়া হয়েছে।
নেহেরু যে কাজটি শুরু করেছিলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মির ও পাকিস্তান-বিরোধিতা বিক্রি করার পর, এর ডালপালার বিস্তার ঘটবে না আশা করা বৃথা। পাকিস্তান মানে মুসলমান, তাই যতদিন সমস্যা থাকবে ততদিন ভারতীয় মুসলমানরা সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হবে না। যতদিন এলিটপন্থী শাসন ব্যবস্থা থাকবে, দলিত নির্যাতন বন্ধ হবে না।
দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বহাল রেখে ভণ্ডমিপূর্ণ স্লোগান একটি সময়ের পর কাজ করে না। শুধু উচ্চ শ্রেণীকে ঘিরে থেকে ভারতের একক প্রতিনিধি হওয়ার কংগ্রেসী দাবি মার খেয়েছে এবং এবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
দু:খজনক হলো এর সবকিছুর জন্য সম্ভবত নেহেরু পরিবারের সবেচেয়ে নিরীহ সদস্যটিকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
বিজেপি’র শুভদিন কতকাল থাকবে?
এই মুহূর্তে বিজেপির জন্য সবকিছু ভালো মনে হচ্ছে। প্রপাগাণ্ডা ও ভোটের জন্য পাকিস্তান-বিরোধী বিষ ও অভিযান পরিচালনা বেশ ভালো কাজ দিয়েছে। মোদির যতটা মনে করেন ততটাই অজ্ঞ গরপড়তা মানুষ।
তবে ভারতের সমস্যা এক জিনিস আর কংগ্রেসকে চাপড় মারা অন্য বিষয়। বিজেপি’র র্অনৈতিক সাফল্য সর্বোপরি মিশ্র। গরীব ও নিম্নমধ্যবিত্তদের চেয়ে ধনীরা স্বচ্ছন্দ বোধ করছে বলে মনে হচ্ছে। এরাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছে এবং যতদিন তিনি গরম গরম জেনোফোবিয়া সরবরাহ করতে পারবেন ততদিন তারা তার সঙ্গেই থাকবে।
দু:খজনক হলো এই মানুষগুলোই আরো বস্তু ও সমৃদ্ধি চায়, শুধু সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চায় না। অর্থনৈতিক উলম্ফনের ফর্মুলা খুঁজে বের করতে হবে বিজেপি’কে, যা এখনো তারা খুঁজে পায়নি।
এদিকে চীন ক্রমাগত বেড়ে উঠছে এবং ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে শত্রুতার নীতি বজায় রাখলেও বাণিজ্যের নীতি গ্রহণ করেছে ভারত। কিন্তু উগ্র দেশপ্রেমের মেশিনে বাতাস দেয়ার চেয়ে চীনের সঙ্গে কিভাবে সহাবস্থান বজায় রাখা যায় তা খুঁজে বের করতে না পারলে জনগণের ক্ষুধার্ত পেট ভারতকে আঘাত করবে।
ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর যেকোন সময়ের চেয়ে এখন ক্ষমতাসীন শ্রেণীর হাতে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ। তাই তাকে রাহুল গান্ধীকে হারানোর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ – এরা সবাই ছিলেন আইএনসি’র অংশ। কিন্তু ক্রমেই এটি দেশের সবার প্রতিনিধিত্ব করার বদলে সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হয়ে ওঠে।
এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিম লীগ শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি করে। কিন্তু মুসলিম লীগের গোটা ভারতের মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধি হওয়ার দাবিও যে অলীক ছিলো ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়া তার প্রমাণ।
যাই হোক, ১৯৪৭ সালের পর আইএনসি একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়, যা ব্রিটিশ শাসনের উপযুক্ত উত্তরসূরি নেহেরুর নেতৃত্বে ফ্যাবিয়ান সোস্যালিজমের উদার ও পশ্চিমা ধাঁচের এলিট শ্রেণীর মূল্যবোধগুলো তুলে ধরে।
নেহেরুর শাসনামলে রাজনৈতিক ভিশনের ভিত্তিটি ন্যায়সঙ্গত সমাজের বদলে ভারতের এলিট শ্রেণীকেই প্রধান্য দেয়। কংগ্রেস শাসনামলে পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও বিশেষ সুবিধা প্রভাব বিস্তার করে। অন্যান্য উদীয়মান শ্রেণী ও সম্প্রদায়ের স্বার্থকে উপেক্ষা করে কংগ্রেস। এটি বংশীয় রাজনীতিরও সূচনা ঘটায়।
উত্তর ভারতীয় ভারত
উত্তর ভারতীয়দের ‘এক ভারত’ ধারণার ভিত্তিতে ভারত সবসময় ঐক্যবদ্ধ ছিলো। দেশটি কখনো এক না থাকলেও স্বপ্নটি লালন করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান এই ধারণা ভেঙ্গে দেয়। এটা ছিলো দিল্লিভিত্তিক এলিট শ্রেণীর উপর একটি বড় আঘাত। শিগগিরই ‘বিতর্কিত’ কাশ্মির উদ্ধার করা তার প্রধান জাতীয় লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে আগের মতোই মনযোগ ছিলো ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উপর।
কাশ্মির দুই দেশের এলিট শ্রেণীর জন্যই বেশ উপযুক্ত ইস্যু ছিলো। কাশ্মির সংঘাত থেকে সরে যেতে পাকিস্তান ইচ্ছুক ছিলো না। অন্যদিকে পাকিস্তানের কবল থেকে ভূখণ্ডটি উদ্ধার করা ভারতের মূল জাতীয় পরিচয়ে পরিণত হয়।
পাকিস্তান ও এর সেনাবাহিনীর জন্য কাশ্মির ইস্যুটি উপনিবেশ-পূর্ব সামন্ততান্ত্রিক সামরিক শাসন কাঠামোতে ফিরে যাওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দেয়, যেখানে সেনাবাহিনী হলো রাষ্ট্রের চূড়ান্ত গ্যারান্টার। রাজনৈতিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সেনাবাহিনীর মানে হলো দীর্ঘদিনের তুর্কি-আফগান ধরনের প্রশাসন পুনরুজ্জীবন এবং সেই মোতাবেক শ্রেণী ও অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন।
১৯৪৭ সালের পাকিস্তানের মৃত্যু ছিলো ব্রিটিশদের কাছে মোঘলদের পরাজয়ের মতো অনিবার্য। সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তান সংলগ্ন কাশ্মিরের প্রতি নজর দিলেও পূর্বাঞ্চলের নাজুক অবস্থার প্রতি তাদের নজর ছিলো না। আইএনসি’র অধীনে ভারতকে সম্ভবত তার সবচেয়ে বড় বিজয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটি ভাঙ্গার আশা করছিল, যে রাষ্ট্রটি তার নিজের সাঙ্ঘাতিক ভুলের কারণেই ১৯৪৭ সালে সৃষ্টি হয়েছিলো।
১৯৪৭ সালে নেহেরু বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন, তার কন্যা সেগুলো সংশোধন করেন, অন্তত আংশিকভাবে, ১৯৭১ সালে। সাফল্যটি ছিলো রাজনৈতিক-সামরিক, তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ অক্ষমতা থেকে যায়।
এমনকি ভারতের প্রাণকেন্দ্র, উত্তর ভারতেও, ভারতের একতা কতটা অগভীর তা ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড এবং এর জের ধরে শিখ বিরোধী দাঙ্গার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।
হোঁচট খায় বংশীয় রাজনৈতিক মডেল
ভারতের উত্তর ভারতীয় সামন্ত ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গকারী বংশীয় শাসন কিছু সময়ের জন্য কাজ করলেও সবসময় চাপের মুখে ছিলো। বাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুধু বঞ্চিতদের পক্ষ থেকেই প্রতিরোধ আসেনি, আসে দক্ষিণ, উত্তর-পূর্ব ও অন্যান্য অঞ্চলের জাতিগত ও ভাষাগত আন্দোলনের কাছ থেকেও।
দিল্লির নেতৃত্বাধীন স্লোগানের নীচে শ্রেণী, সম্প্রদায়ের বিভক্তি চাপা পড়ে গেলেও ২০১৯ সালের নির্বাচন প্রমাণ করেছে নেহেরুর ভারত কল্পকাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
প্রাক-পশ্চিমা ভারতের ঐতিহ্যগত শ্রেণী ও বর্ণ প্রাধান্যপূর্ণ কাঠামোর মধ্যে থাকা, ‘খাঁটি’ তৃণমূলের রাজনীতিকের বেশে থাকা অপশ্চিমা এলিটরা সবসময় তাদের পাখা ঝাপটাচ্ছিল। তারা এখন বেরিয়ে এসে নিজেদের জাহির করেছে।
স্বল্পকালীন হলেও মোরারজি দেশাইয়ের আমল প্রথম অতীতের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটায়। এর পর ছিলো দেবগৌড়ার ব্যর্থ জোট। নরসীমা রাও ও এ বি বাজপেয়ীর সময়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ওই প্রবণতা দেখানো অব্যাহত রাখে।
আমলাতন্ত্র ও দিল্লির পছন্দের উদার এলিট-চালিত ‘সোস্যালিস্ট’ মডেল তেমন কিছু করতে এবং চাহিদা বৃদ্ধি ও সীমিত সরবরাহের ভারতে টিকতে পারছিলো না। বিশ্বায়ন মানে হয় অর্থনৈতিক মৃত্যুদণ্ড। কংগ্রেসের অধীনে ভারত ওইসব উপাদান মিস করছিলো যা আন্ত:সামাজিক ও আঞ্চলিক জোটের সৃষ্টি করে।
স্বাধীনতাউত্তর ভারতকে ‘ন্যায়নিষ্ঠ’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও এটা ১৯৪৭ সালের আগের মতোই অনেক ফাটল তৈরি করে। প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও রাখা হয়নি বা রাখা যায়নি। ক্ষমতাসীন শ্রেণীর টিকে থাকার জন্য আমলা নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির মাধ্যমে সুবিধা সৃষ্টির আইএনসি মডেলের চেয়ে সম্পদ-ভিত্তিক ভিন্ন একটি মডেল অনুসরণ সহজ ছিলো।
পাকিস্তান-চীন ফ্যাক্টর
ভারতের জন্য পাকিস্তানের পাশাপাশি চীনও বাহ্যিক মাথা ব্যাথার কারণ ছিলো। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে ব্যর্থ হন নেহেরু। পরাজিত ব্যক্তি হিসেবে ১৯৬৪ সালে তার মৃত্যু হয়। ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী জয়ী হন, তবে চীন আরেকটি ১৯৬২ সাল ঘটাবে না তা নিশ্চিত হওয়ার পরেই সব পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। বরফপাত চীনা সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে অসম্ভব করে তোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়।
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ‘এক ভারত’ মডেল অবসানের ইংগিত মেলে। পণ্য ও সেবার চাহিদা বাড়তে থাকায় ভারতের অর্থনীতি যুদ্ধ করছিলো কিন্তু সে ছিলো খুবই অপটু ও মরিয়া। আর চাকায় পেরেক ফুটিয়ে যাচ্ছিল আমলাতন্ত্র।
স্থায়ী ফ্যাক্টরটি ছিলো শুধু কাশ্মির ও পাকিস্তান-বিরোধী মনোভাব। কিন্তু এতেও দেখা যায় ভারতের রাজনৈতিক নেতারা ১৯৪৭ পূর্ব শত্রুতা ছাড়া নতুন কিছু দিতে পারছিলেন না। এটা উত্তেজনায় ভরপুর জনগণের মধ্যে সুপের মতো কাজ করে, বিশেষ করে যখন সংখ্যাগরিষ্ঠের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়। এটা একটি সুবিধাজনক দোষারুপের খেলা।
এর মানে হলো, পাকিস্তান ও এর প্রক্সি জনগণ, তথা ভারতীয় মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে দানবীয় রূপে উপস্থাপন হলো ভারতের জাতীয় টিকে থাকার নীতির একটি অনিবার্য উপজাত। বিজেপি তা বুঝতে পেরেছে, অন্যদিকে বিভ্রমের মধ্যেই ঘুরপাক খায় আইএনসি।
এটা রাহুল গান্ধীর ভুল নয়। তিন এমন এক সময় শাসন করতে এলেন যখন ইতিহাস শুধু তাকেই নয়, কংগ্রেস, এমন কি ভারতের একটি বড় অংশকে পাশ কাটিয়ে গেছে।
অতীতে কংগ্রেস যেমন এলিট কলোনিয়াল কলাবরেটর মডেলের চেষ্টা করেছে তেমনি বিজেপি এখন টিকে আছে উপনিবেশিক শক্তির ক্লাসিক ডিভাইড এন্ড রুল কৌশলের উপর ভিত্তি করে। ঐতিহাসিকভাবে দুটিই ব্যর্থ। তবে ভারতীয় রাজনীতিতে কমই বিকল্প আছে।
তবে, আকাঙ্ক্ষা প্রবল হলে তা যদি মেটানো না হয় তাহলে ভারত বড় ধরনের সংকটে পড়বে। রাজনৈতিক নেতারা যদি জনগণের অর্থনৈতিক প্রয়োজনগুলো ভালোভাবে পূরণ করতে পারেন তাহলে পরিস্থিতি ভালো থাকবে। এদিকে অপেক্ষা করছে চীন।
রাহুল গান্ধী কি ভারতকে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন?
রাহুল গান্ধী ভারতের উদার-বাম জনগণকে ভয়াবহভাবে আঘাত করেছে এবং কংগ্রেসের নির্বাচনী বিপর্যয়ের জন্য লোকরঞ্জনবাদ, সাম্প্রদায়িতকতা, গোষ্ঠীতন্ত্র, ইত্যাদিকে দায়ি করা হচ্ছে।
তারা ভুলে যাচ্ছেন যে অতীতে কংগ্রেসের মতো একই পথে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, অর্থাৎ জনগণের ভোটে। সিস্টেম বদলায়নি এবং জনগণ ভোট দিয়েছে। জনগণ শুধু কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপিকে চেয়েছে। মানুষ বদলায়নি, ভোট বদলেছে।
মোদি ট্রাম্পের মতোই বাস্তব। কংগ্রেস বা ডেমক্রেটরা আর জনপ্রিয় নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা দলকে জয়ী হওয়ার জন্য দোষ দেয়া যায় না। কৌশল জানে বিজেপি, কংগ্রেস জানে না। কংগ্রেসের ইতিহাসই তার জন্য বোঝা হয়ে গেছে এবং তার এলিটপন্থী ভিশনও তাই, ভারতে তা কেউ আর কিনেনি। কংগ্রেস যেরকম দেখাতে চায় ও আবেদন জানাতে চায় ততটা ‘মহৎ লোক’ নয় ভারতীয়রা। তাদের ভিশনকে কংগ্রেস ভালোভাবে পড়তে পারেনি, বিজেপি পেরেছে এবং জয়ী হয়েছে।
ভারতের জনগণকে এক আবেগঘন বিদায়ী পত্র লিখেন রাহুল, যেখানে তিনি দেশকে ভাগ করার জন্য বিজেপিকে দায়ি করেছেন। সমস্যা এমনটি হতে পারে যে কংগ্রেসের ভারত শুধু বাম ও উদার ঘরানার ক্ষীণ এলিট চক্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সাধারণ মানুষের মধ্যে নয়। তারা জানে তারা কি চায়।
ভারত: সর্বদাই এক হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র
‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ উষ্কে দেয়ার জন্য মোদিকে রোষারুপ করেছেন রাহুল, অথচ প্রায় সব ভারতীয় এতে বিশ্বাস করে। বিজেপি তা বুঝেছে বলেই সফল হয়েছে। সে তার নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, কতটি জোরপূর্বক দেশপ্রেমের ঘোষণা আদায় করা হয়েছে বা গোরক্ষকরা কতজন মুসলিম বা দলিতকে পিটিয়ে মেরেছে, তাতে কিছু আসে যায় না, মোদির সমর্থন কমবে না।
তিনি নেহেরুর চেয়েও খাঁটি। তিনিই ভারত, অন্তত প্রাধান্যপূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ। সবসময় এই প্রবণতাটি ছিলো। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও অসাম্য থাকবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়বেও। তবে কেউ কেউ সবার চেয়ে বেশি পেলেও সবাই কিছুটা লাভবান হয়।
রাহুল যে নেহেরু মডেল বিকানোর চেষ্টা করে বিফল হয়েছেন তা প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে, যা আগেই দেয়া হয়েছে।
নেহেরু যে কাজটি শুরু করেছিলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মির ও পাকিস্তান-বিরোধিতা বিক্রি করার পর, এর ডালপালার বিস্তার ঘটবে না আশা করা বৃথা। পাকিস্তান মানে মুসলমান, তাই যতদিন সমস্যা থাকবে ততদিন ভারতীয় মুসলমানরা সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হবে না। যতদিন এলিটপন্থী শাসন ব্যবস্থা থাকবে, দলিত নির্যাতন বন্ধ হবে না।
দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বহাল রেখে ভণ্ডমিপূর্ণ স্লোগান একটি সময়ের পর কাজ করে না। শুধু উচ্চ শ্রেণীকে ঘিরে থেকে ভারতের একক প্রতিনিধি হওয়ার কংগ্রেসী দাবি মার খেয়েছে এবং এবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
দু:খজনক হলো এর সবকিছুর জন্য সম্ভবত নেহেরু পরিবারের সবেচেয়ে নিরীহ সদস্যটিকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
বিজেপি’র শুভদিন কতকাল থাকবে?
এই মুহূর্তে বিজেপির জন্য সবকিছু ভালো মনে হচ্ছে। প্রপাগাণ্ডা ও ভোটের জন্য পাকিস্তান-বিরোধী বিষ ও অভিযান পরিচালনা বেশ ভালো কাজ দিয়েছে। মোদির যতটা মনে করেন ততটাই অজ্ঞ গরপড়তা মানুষ।
তবে ভারতের সমস্যা এক জিনিস আর কংগ্রেসকে চাপড় মারা অন্য বিষয়। বিজেপি’র র্অনৈতিক সাফল্য সর্বোপরি মিশ্র। গরীব ও নিম্নমধ্যবিত্তদের চেয়ে ধনীরা স্বচ্ছন্দ বোধ করছে বলে মনে হচ্ছে। এরাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছে এবং যতদিন তিনি গরম গরম জেনোফোবিয়া সরবরাহ করতে পারবেন ততদিন তারা তার সঙ্গেই থাকবে।
দু:খজনক হলো এই মানুষগুলোই আরো বস্তু ও সমৃদ্ধি চায়, শুধু সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চায় না। অর্থনৈতিক উলম্ফনের ফর্মুলা খুঁজে বের করতে হবে বিজেপি’কে, যা এখনো তারা খুঁজে পায়নি।
এদিকে চীন ক্রমাগত বেড়ে উঠছে এবং ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে শত্রুতার নীতি বজায় রাখলেও বাণিজ্যের নীতি গ্রহণ করেছে ভারত। কিন্তু উগ্র দেশপ্রেমের মেশিনে বাতাস দেয়ার চেয়ে চীনের সঙ্গে কিভাবে সহাবস্থান বজায় রাখা যায় তা খুঁজে বের করতে না পারলে জনগণের ক্ষুধার্ত পেট ভারতকে আঘাত করবে।
ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর যেকোন সময়ের চেয়ে এখন ক্ষমতাসীন শ্রেণীর হাতে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ। তাই তাকে রাহুল গান্ধীকে হারানোর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
No comments