স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানিকগঞ্জে না মালয়েশিয়ায়?
ডেঙ্গু
ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়ার সংখ্যা কমপক্ষে ৪১ জন।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এডিস মশা বৃদ্ধির তুলনা করে আলোচনায় আসেন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কিন্তু, গত কয়েকদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে
কোথাও দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কেউ বলছেন
মন্ত্রী মানিকগঞ্জে বন্যাপীড়িতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন। যদিও
সংবাদকর্মীরা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে তাকে দেখছেন না।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেলো, তিনি মালয়েশিয়ায় গেছেন। আরো জানা গেলো, তিনি সরকারি কোনো কাজে যাননি। ঢাকা বিমানবন্দর সূত্র উল্লেখ করে প্রথম আলো সংবাদ প্রকাশ করেছে, গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সপরিবারে মালয়েশিয়ায় গেছেন। এমন দুর্যোগকালে তার মালয়েশিয়া যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন আজ (৩১ জুলাই) কথা বলেছে সাবেক মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন জোটের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত-এর সঙ্গে।
সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, “আমার মনে হয় যে এধরনের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে প্রত্যেককে তার নিজস্ব দায়িত্বের জায়গায় থাকা এবং কাজ করা উচিত। এটি তার বিবেকের ব্যাপার। নিঃসন্দেহে এখন দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে লন্ডন থেকে ফোন করেছেন। আমি মনে করি, একটি জাতীয় দুর্যোগময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এটি আমাদের সবাইকে মিলেই মোকাবিলা করতে হবে।”
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, “যদি ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকে তাহলে মন্ত্রী কোথায় থাকলেন এটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের ধারাবাহিকতা যদি সঠিকভাবে চলতো, ডেঙ্গুর পূর্বাভাস অনুযায়ী কাজ যদি সঠিকভাবে করা হতো তাহলে কারোর উপস্থিতি আছে কী নেই সেটি গুরুত্বপূর্ণ হতো না। উনিতো অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকতে পারতেন। তাহলে আমরা ডেঙ্গুতে ভুগবো, কী ভুগবো না? আমার প্রশ্ন এ জায়গায়।”
“এধরনের দুরবস্থায় সরকারি ট্যুর বাতিল করে দেশে থাকার কথা” উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “সব সরকারি কর্মচারী, মন্ত্রীদের মাথার ভেতর আছে প্রধানমন্ত্রী বললে পরে ঘুম থেকে উঠে কাজ করবেন। এভাবে তো একটি দেশ চলতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী আজকে আছেন, তিনি কালকে পদত্যাগ করতে পারেন। তাতে কী দেশ অচল হওয়ার কথা? তা তো হওয়ার কথা না। এটি আমাদের প্রত্যেককে বুঝতে হবে।”
“আমার কাছে মন্ত্রী কোথায় গেলেন বা কোথায় থাকলেন তা এই প্রযুক্তির যুগে এটি গুরুত্বপূর্ণ না। আমি ধরেই নিচ্ছি যে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। তাহলে কী বাংলাদেশের মানুষ সেসময় ডেঙ্গুতে ভুগবেন? এই প্রশ্নটির উত্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চাওয়া যেতে পারে।”
সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, “দেখুন, দায়িত্বশীল মানুষগুলোকে সবসময় দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। যখন দায়িত্বপূর্ণ মানুষগুলো একটি দুর্যোগময় মুহূর্তে ‘হাইড অ্যান্ড সিক’ করেন, বা রাষ্ট্র যখন সঙ্কটে থাকে তখন এ ধরনের খেলা দেশের জন্যে প্রচণ্ড ক্ষতিকর। এতে সমাজে খারাপ বার্তা যায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিআরও বলছেন তিনি মানিকগঞ্জে আছেন। আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন উনি সেখানে নেই। এই ‘হাইড অ্যান্ড সিক’ খেলাটি খুবই দুঃখজনক। উনি মানিকগঞ্জে থাকলে সেখানকার ডিসি সাহেবকে ফোন করলে তা জানা যাবে।”
“এই মুহূর্তে সমস্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের ঠাঁই নেই। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী চলে গেলেন মালয়েশিয়ায়। তিনি চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তার পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়ানোর এটি সময় নয়। এই সময় তাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা। প্রতিদিন হাসপাতালগুলো মনিটর করার কথা। মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে কী না সেটি দেখার কথা। বেসরকারি হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত বিল নিচ্ছে কী না সেটি চেক করার কথা। তিনি সেগুলো বাদ দিয়ে চলে গেলেন বিনোদন ভ্রমণে। আমি মনে করি, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। উনি এটি করতে পারেন না। একজন মন্ত্রী হিসেবে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথের সময় তার অঙ্গীকার ছিলো দেশের প্রতি সঠিক সময়ে সঠিক দায়িত্ব পালন করার।”
“এদেশে স্বাস্থ্যখাতে দুর্যোগ চলছে” উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “একদিকে, তিনি স্বাস্থ্যখাতে লুটপাট বন্ধ করতে পারেননি। যারা হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতি সাপ্লাই দেওয়ার কথা বলে তা সাপ্লাই না দিয়েই অর্থ আদায় করে চলে যায় তাদেরকে তিনি আটকাতে পারেননি। অন্যদিকে, যখন সারা বাংলাদেশে সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসার জন্যে ভিড় করছেন সেই মুহূর্তে তিনি চলে গেছেন পরিবারকে নিয়ে ভ্রমণ করতে। জাতির সঙ্গে এটি এক ধরনের প্রতারণার সামিল। আমি এটিকে দুঃখজনক মনে করি। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আমি সেটিই প্রত্যাশা করি।”
সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “ডেঙ্গু পরিস্থিতির পুরো বিষয়টিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবরই সিটি করপোরেশনের বিষয় বলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। এটি সিটি করপোরেশনের বিষয় বটে, তবে এর সেকেন্ডারি স্টেজটি অর্থাৎ রোগীদের দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। দুর্ভাগ্যজনক হলো যে আমরা তা দেখিনি। যদিও, গত দুই-একদিনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।”
“মন্ত্রী কোথায়? এমন প্রশ্ন খুবই দুর্ভাগ্যজনক” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি নিউজটি দেখেছি। কেউ বলছেন তিনি মালয়েশিয়ায়, কেউ বলছেন তিনি মানিকগঞ্জে। আমার ধারণা উনি দেশে নেই। ওই প্রতিবেদনেই রয়েছে যে তার ফোনে রোমিংয়ের আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে। যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে মন্ত্রী তখন নিজেই দেশে নেই। আমি মনে করি, এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। কারণ, প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা দরকার। বিশেষ করে আগামীতে যদি আরো ১ বা ২ হাজার রোগী বেড়ে যায় তাহলে এমন হতে পারে যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি করতে হতে পারে। প্রয়োজন হলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে সেখানে অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপনের করা জরুরি। যে হারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আগামী কয়েকদিন তা আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশে না থাকলে এই পুরো বিষয়টি কে করবেন?”
“শুনলে অবাক হয়ে যাবেন- শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রীই নন, মন্ত্রণালয়ের আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বিদেশে রয়েছেন। আমি জানি কয়েকটি হাসপাতালের পরিচালকও বিদেশ রয়েছেন। মুগদা হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখেন সেখানকার পরিচালক ভিয়েতনামে রয়েছেন। আমি জানি না, এগুলো দেখার কেউ আছেন কী না। আমাদের দেশে দুর্ভাগ্য যে যতোক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী না দেখেন ততোক্ষণ পর্যন্ত কিছু হয় না।”
“গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন। আজ সকালে জানলাম, পুলিশের একজন এসআই মারা গেছেন। তার মানে ডেঙ্গুর বিস্তার ও ভয়াবহতা কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা এলাকায় নয়, এটি সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের সচেতনতা তৈরি ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্যে দরকার ছিলো একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। এর মূল দায়িত্ব নিতে পারেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অথবা স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। সেটিতো এখন হওয়ার নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই নেই, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ধারণা তিনি জরুরি ভিত্তিতে হয়তো আজ-কালকের মধ্যে চলে আসবেন। যেহেতু এ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে সেহেতু হয়তো দুই-একদিনের মধ্যে উনাকে পাওয়া যাবে।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেলো, তিনি মালয়েশিয়ায় গেছেন। আরো জানা গেলো, তিনি সরকারি কোনো কাজে যাননি। ঢাকা বিমানবন্দর সূত্র উল্লেখ করে প্রথম আলো সংবাদ প্রকাশ করেছে, গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সপরিবারে মালয়েশিয়ায় গেছেন। এমন দুর্যোগকালে তার মালয়েশিয়া যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন আজ (৩১ জুলাই) কথা বলেছে সাবেক মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন জোটের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত-এর সঙ্গে।
সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, “আমার মনে হয় যে এধরনের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে প্রত্যেককে তার নিজস্ব দায়িত্বের জায়গায় থাকা এবং কাজ করা উচিত। এটি তার বিবেকের ব্যাপার। নিঃসন্দেহে এখন দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে লন্ডন থেকে ফোন করেছেন। আমি মনে করি, একটি জাতীয় দুর্যোগময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এটি আমাদের সবাইকে মিলেই মোকাবিলা করতে হবে।”
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, “যদি ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকে তাহলে মন্ত্রী কোথায় থাকলেন এটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের ধারাবাহিকতা যদি সঠিকভাবে চলতো, ডেঙ্গুর পূর্বাভাস অনুযায়ী কাজ যদি সঠিকভাবে করা হতো তাহলে কারোর উপস্থিতি আছে কী নেই সেটি গুরুত্বপূর্ণ হতো না। উনিতো অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকতে পারতেন। তাহলে আমরা ডেঙ্গুতে ভুগবো, কী ভুগবো না? আমার প্রশ্ন এ জায়গায়।”
“এধরনের দুরবস্থায় সরকারি ট্যুর বাতিল করে দেশে থাকার কথা” উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “সব সরকারি কর্মচারী, মন্ত্রীদের মাথার ভেতর আছে প্রধানমন্ত্রী বললে পরে ঘুম থেকে উঠে কাজ করবেন। এভাবে তো একটি দেশ চলতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী আজকে আছেন, তিনি কালকে পদত্যাগ করতে পারেন। তাতে কী দেশ অচল হওয়ার কথা? তা তো হওয়ার কথা না। এটি আমাদের প্রত্যেককে বুঝতে হবে।”
“আমার কাছে মন্ত্রী কোথায় গেলেন বা কোথায় থাকলেন তা এই প্রযুক্তির যুগে এটি গুরুত্বপূর্ণ না। আমি ধরেই নিচ্ছি যে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। তাহলে কী বাংলাদেশের মানুষ সেসময় ডেঙ্গুতে ভুগবেন? এই প্রশ্নটির উত্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চাওয়া যেতে পারে।”
সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, “দেখুন, দায়িত্বশীল মানুষগুলোকে সবসময় দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। যখন দায়িত্বপূর্ণ মানুষগুলো একটি দুর্যোগময় মুহূর্তে ‘হাইড অ্যান্ড সিক’ করেন, বা রাষ্ট্র যখন সঙ্কটে থাকে তখন এ ধরনের খেলা দেশের জন্যে প্রচণ্ড ক্ষতিকর। এতে সমাজে খারাপ বার্তা যায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিআরও বলছেন তিনি মানিকগঞ্জে আছেন। আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন উনি সেখানে নেই। এই ‘হাইড অ্যান্ড সিক’ খেলাটি খুবই দুঃখজনক। উনি মানিকগঞ্জে থাকলে সেখানকার ডিসি সাহেবকে ফোন করলে তা জানা যাবে।”
“এই মুহূর্তে সমস্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের ঠাঁই নেই। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী চলে গেলেন মালয়েশিয়ায়। তিনি চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তার পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়ানোর এটি সময় নয়। এই সময় তাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা। প্রতিদিন হাসপাতালগুলো মনিটর করার কথা। মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে কী না সেটি দেখার কথা। বেসরকারি হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত বিল নিচ্ছে কী না সেটি চেক করার কথা। তিনি সেগুলো বাদ দিয়ে চলে গেলেন বিনোদন ভ্রমণে। আমি মনে করি, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। উনি এটি করতে পারেন না। একজন মন্ত্রী হিসেবে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথের সময় তার অঙ্গীকার ছিলো দেশের প্রতি সঠিক সময়ে সঠিক দায়িত্ব পালন করার।”
“এদেশে স্বাস্থ্যখাতে দুর্যোগ চলছে” উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “একদিকে, তিনি স্বাস্থ্যখাতে লুটপাট বন্ধ করতে পারেননি। যারা হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতি সাপ্লাই দেওয়ার কথা বলে তা সাপ্লাই না দিয়েই অর্থ আদায় করে চলে যায় তাদেরকে তিনি আটকাতে পারেননি। অন্যদিকে, যখন সারা বাংলাদেশে সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসার জন্যে ভিড় করছেন সেই মুহূর্তে তিনি চলে গেছেন পরিবারকে নিয়ে ভ্রমণ করতে। জাতির সঙ্গে এটি এক ধরনের প্রতারণার সামিল। আমি এটিকে দুঃখজনক মনে করি। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আমি সেটিই প্রত্যাশা করি।”
সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “ডেঙ্গু পরিস্থিতির পুরো বিষয়টিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবরই সিটি করপোরেশনের বিষয় বলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। এটি সিটি করপোরেশনের বিষয় বটে, তবে এর সেকেন্ডারি স্টেজটি অর্থাৎ রোগীদের দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। দুর্ভাগ্যজনক হলো যে আমরা তা দেখিনি। যদিও, গত দুই-একদিনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।”
“মন্ত্রী কোথায়? এমন প্রশ্ন খুবই দুর্ভাগ্যজনক” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি নিউজটি দেখেছি। কেউ বলছেন তিনি মালয়েশিয়ায়, কেউ বলছেন তিনি মানিকগঞ্জে। আমার ধারণা উনি দেশে নেই। ওই প্রতিবেদনেই রয়েছে যে তার ফোনে রোমিংয়ের আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে। যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে মন্ত্রী তখন নিজেই দেশে নেই। আমি মনে করি, এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। কারণ, প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা দরকার। বিশেষ করে আগামীতে যদি আরো ১ বা ২ হাজার রোগী বেড়ে যায় তাহলে এমন হতে পারে যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি করতে হতে পারে। প্রয়োজন হলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে সেখানে অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপনের করা জরুরি। যে হারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আগামী কয়েকদিন তা আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশে না থাকলে এই পুরো বিষয়টি কে করবেন?”
“শুনলে অবাক হয়ে যাবেন- শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রীই নন, মন্ত্রণালয়ের আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বিদেশে রয়েছেন। আমি জানি কয়েকটি হাসপাতালের পরিচালকও বিদেশ রয়েছেন। মুগদা হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখেন সেখানকার পরিচালক ভিয়েতনামে রয়েছেন। আমি জানি না, এগুলো দেখার কেউ আছেন কী না। আমাদের দেশে দুর্ভাগ্য যে যতোক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী না দেখেন ততোক্ষণ পর্যন্ত কিছু হয় না।”
“গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন। আজ সকালে জানলাম, পুলিশের একজন এসআই মারা গেছেন। তার মানে ডেঙ্গুর বিস্তার ও ভয়াবহতা কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা এলাকায় নয়, এটি সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের সচেতনতা তৈরি ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্যে দরকার ছিলো একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। এর মূল দায়িত্ব নিতে পারেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অথবা স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। সেটিতো এখন হওয়ার নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই নেই, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ধারণা তিনি জরুরি ভিত্তিতে হয়তো আজ-কালকের মধ্যে চলে আসবেন। যেহেতু এ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে সেহেতু হয়তো দুই-একদিনের মধ্যে উনাকে পাওয়া যাবে।
No comments