‘একটি মুহূর্তের জন্যও বাবাকে ভুলতে পারি না’ by রিপন আনসারী
মরহুম
হারুনার রশিদ খান মুন্নু। দেশের শিল্পবিপ্লবের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী ও মানবসেবাসহ সর্বগুণে
গুণান্বিত ছিলেন বলেই সারা দেশের ন্যায় মানিকগঞ্জের সর্বজন মানুষের সম্মান
এবং ভালোবাসার এক নিদর্শন হয়ে আছেন তিনি। সততা আর আদর্শ ছিল যার জীবনের মহৎ
গুণ। সেই গুনের অধিকারী ও আলোকিত এই মানুষটি নেই। তবে তার কর্মগুণের কারণে
মানুষের মাঝে অমর হয়ে আছেন।
সাবেক মন্ত্রী ও শিল্পপতি মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। আজকের এইদিনে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন অনন্তকালের ঠিকানায়।
ঘুমিয়ে আছেন তারই হাতে গড়া মানিকগঞ্জের মুন্নু সিটিতে দৃষ্টিনন্দন মসজিদের পাশে। দিন, মাস এবং বছর পেরিয়ে গেলেও বিন্দু পরিমাণ শোক কাটেনি মুন্নু পরিবারে। প্রিয় এই মানুষটির কথা মনে করে সর্বক্ষণই তাদের চোখে পানি ঝরে। মুন্নু সিটিতে সমাহিত বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে প্রায়ই কাঁদতে দেখা যায় পরিবারের বড় কন্যা মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান রিতাকে। তার বাবা ছিলেন তার আদর্শ। ছোট থেকেই বাবার সেই আদর্শ অনুসরণ করেই আফরোজা খান রিতা পথ চলছেন। বাবার কাছ থেকে শিখেছেন কীভাবে ব্যবসা, রাজনীতি, সামাজিকতা আর মানবসেবা করতে হয়। পিতার মতো তিনিও সাধারণ মানুষের কাছে আলোকিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন অনেক আগে থেকেই। বাবা চলে গেলেও যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তার বাবার রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ হাতেই পরিচালনা করে আসছেন আফরোজা খান রিতা।
একান্ত আলাপচারিতায় আফরোজা খান রিতা মানবজমিনকে তার বাবার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন, কি যে হারিয়েছি বোঝাতে পরবো না। একটি মুহূর্তের জন্যও বাবাকে ভুলতে পারি না। তাকে ছাড়া সব কিছুই যেন খাঁ খাঁ করছে। ঘরে বাইরে যে দিকেই চোখ বুলাই শুধুই বাবার স্মৃতি ভেসে উঠে।
বলেন, আমার বাবা ছিলেন একজন আদর্শবান মানুষ এবং আদর্শবান পিতা। তিনি ছিলেন আমাদের অহঙ্কার, আমার আদর্শ এবং আমার পরিবারের বটবৃক্ষ। শিশুকাল থেকেই যার শীতল ছায়ায় একটু শান্তির নীড় খুঁজে পেতাম। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের পুরো পরিবারকে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু বড় অসময়ে চলে গেলেন।
আফরোজা খান রিতা বলেন, সেই ছোট কাল থেকেই আমরা দুই বোন তার কাছ থেকে অসম্ভব ভালোবাসা পেয়েছি। আমাদেরকে ‘মা’ ছাড়া কোনো সময় ডাকতেন না। সর্বক্ষণ বাবার সেই ‘মা’ ডাক আমার কানে ভেসে বেড়ায়। খাবার সময় হলেই বাবা-মা খাবার নিয়ে টেবিলে বসে অপেক্ষায় থাকতেন আমি কখন আসবো। আমি এলেই তারা খাবার শুরু করতেন। কিন্তু আজ দু’টি বছর খাবার টেবিলে বাবাকে পাশে পাই না। বাবার অভাব আর স্মৃতিগুলো সর্বক্ষণ আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। একটি মুহূর্তের জন্য আমি তাকে ভুলতে পারি না। আজ দু’টি বছর ধরে আব্বা বলে ডাকতে পারি না। হৃদয়ের ভেতর কি যে কষ্ট হয় তা কাউকে বোঝাতে পারবো না।
রিতা বলেন, আমি দেখেছি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার বাবা তার সততা থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটেননি। একজন আদর্শবান পিতার সন্তান হয়ে তাই আমি গর্বিত। তিনি জীবদ্দশায় স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন। তার স্বপ্ন ছিল মানিকগঞ্জের বুকে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা করা। আর মানিকগঞ্জের বুকে প্রথম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন আমার বাবা। স্বপ্ন ছিল গ্রামের বুকে আন্তর্জাতিক মানের স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সে স্বপ্নও তার পূরণ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি অসম্ভব দুর্বল ছিলেন তিনি। তাই তো কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আর গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করতে তিনি বেশি পছন্দ করতেন। হরিরামপুরে পদ্মার থাবায় যারা বাড়িঘর হারিয়েছেন, যাদের মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই ছিল না তাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন রিতা আবাসন প্রকল্প। এছাড়া তার হাতে গড়া মুন্নু সিরামিক, মুন্নু ফেব্রিক্স, মুন্নু অ্যাটেয়া, মুন্নু নার্সিং মেডিকেল কলেজসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে যেখানে হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী মানুষ আমার বাবাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, ভালো বাসতেন।
পিতার রাজনীতি জীবন সম্পর্কে আফরোজা খান রিতা বলেন, আমার বাবা সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মানুষের বিপদ-আপদে সব সময়ই ছুটে বেড়াতেন। কখনো ক্লান্ত হননি। রাজনীতি করতে গিয়ে কখনোই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল বলেই চার বার হয়েছেন এমপি, হয়েছেন মন্ত্রী। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চারবার বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনে একই সঙ্গে নির্বাচন করে দু’টি আসনেই জয়লাভ করে তার জনপ্রিয়তার কারিশমা দেখান। দলীয় নেতাকর্মীদের আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা ছিল তার প্রতি। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দলের প্রতি ছিল তার প্রচণ্ড রকম ভালোবাসা। সব মিলিয়ে একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ ছিলেন আমার বাবা। তার কর্মগুণের কারণে মানিকগঞ্জের প্রতিটি মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করতেন এবং ভালোবাসতেন। সেই সঙ্গে আমার রাজনীতি, ব্যবসা, সমাজসেবাসহ সব কিছু্র হাতেখড়িই হচ্ছেন আমার বাবা। বাবার সেই আদর্শকে সামনে রেখেই আমি পথ চলছি।
সমস্ত আবেগ ছিল মানিকগঞ্জের মানুষকে ঘিরে:
বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সাবেক মন্ত্রী হারুনার রশিদ খান মুন্নুর জীবনী নিয়ে ’আমার জীবন উপাখ্যান’- নামের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেই বইয়ের প্রত্যেকটি অক্ষরে অক্ষরে তুলে ধরা হয়েছে তার জীবন- সংগ্রামের সব গল্প। ২২৪ পাতার এই বইয়ের একজায়গায় মানিকগঞ্জের প্রতি তার সমস্ত আবেগ ভালোবাসার কথা তুলে ধরেছেন। সেখানে হারুনার রশিদ খান মুন্নু বলেছেন, আমার সমস্ত আবেগ মানিকগঞ্জের মানুষকে ঘিরে। তাই রাজধানীর অভিজাত এলাকা ছেড়ে এসে আমি সব গড়েছি সোঁদা মাটির গন্ধজুড়ে থাকা প্রাণের মানিকগঞ্জে। মানুষ কিছুটা সচ্ছল হওয়া মাত্রই শহরমুখী হয়। আর আমি আমার ঝলমলে পৃথিবী ছেড়ে চলে এসেছি মাটির কাছাকাছি। আমার অন্য কোনো দায় ছিল না। অন্য কোনো মোহ ছিল না। আমার সমস্ত টান এবং মমত্ববোধজুড়ে মানিকগঞ্জের মাটি ও মানুষ। আমি তাদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমগ্র জীবন আমি মানিকগঞ্জেই থাকবো। আমার চলে যাওয়ার সময়-স্থান-প্রেক্ষাপট নিয়ে আমার অগ্রিম কোনো ধারণা নেই। তবুও আমি সবাইকে জানিয়ে রেখেছি, আমার কবরটা যেন এই মাটিতেই হয়। আমার আয়ু ফুরোবার পর এ মানিকগঞ্জের মাটিতে শেষ ঘুম ঘুমাতে চাই। মুন্নু সিটির ভেতরে জামে মসজিদের প্রাত্যহিক আজান যেন আমি শুনতে পাই। এ মাটি ছেড়ে আমি অন্য কোথাও যেতে চাই না। মানিকগঞ্জের প্রতি আমার আবেগের প্রাবল্য এখানেই। বইয়ে লেখা হারুনার রশিদ খান মুন্নুর শেষ চাওয়াটাও পূরণ হয়েছে।
মুন্নুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে যা থাকছে-
আজ বৃহস্পতিবার নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মানিকগঞ্জের গিলন্ড এলাকায় মুন্নু সিটিতে মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালন করবে মুন্নু পরিবার।
মৃত্যুবার্ষিকীর প্রথম প্রহরে মুন্নু সিটিতে হারুনার রশিদ খান মুন্নুর সমাধিতে প্রথম ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন মুন্নু পরিবারের সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত থাকবেন, মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হারুনার রশিদ খান মুন্নুর বড় মেয়ে আফরোজা খান রিতা, মুন্নু ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও মুন্নুপত্নী হুরুন নাহার রশিদ, মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান ও আফরোজা খান রিতার স্বামী মঈনুল ইসলাম স্বপন, মুন্নু সিরামিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আফরোজা খান রিতার বড় ছেলে রাশিদ মাইমুনুল ইসলাম এবং মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্বাহী পরিচলাক ও আফরোজা খান রিতার ছোট ছেলে রাশিদ রাফিউল ইসলাম। এরপর শ্রদ্ধা জানাবেন মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সকল প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশজীবী, সামাজিক,
সাংস্কৃতিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন।
সকাল থেকেই হুরুন নাহার রশিদ জামে মসজিদ ও মরহুমের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হবে কোরআন তিলাওয়াত। মুন্নু গ্রুপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে দোয়া মাহফিল। বিকালে মুন্নু ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে মুন্নু সিটিতে মরহুমের আত্মার মাগফিরত কামনায় অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
এছাড়া হারুনার রশিদ খান মুন্নুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতবারের ন্যায় এবারও মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা দিনব্যাপী বিনা পয়সায় রোগী দেখবেন। এছাড়া মাসব্যাপী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অপারেশনে থাকছে ২০% ভাগ ছাড়।
সাবেক মন্ত্রী ও শিল্পপতি মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। আজকের এইদিনে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন অনন্তকালের ঠিকানায়।
ঘুমিয়ে আছেন তারই হাতে গড়া মানিকগঞ্জের মুন্নু সিটিতে দৃষ্টিনন্দন মসজিদের পাশে। দিন, মাস এবং বছর পেরিয়ে গেলেও বিন্দু পরিমাণ শোক কাটেনি মুন্নু পরিবারে। প্রিয় এই মানুষটির কথা মনে করে সর্বক্ষণই তাদের চোখে পানি ঝরে। মুন্নু সিটিতে সমাহিত বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে প্রায়ই কাঁদতে দেখা যায় পরিবারের বড় কন্যা মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান রিতাকে। তার বাবা ছিলেন তার আদর্শ। ছোট থেকেই বাবার সেই আদর্শ অনুসরণ করেই আফরোজা খান রিতা পথ চলছেন। বাবার কাছ থেকে শিখেছেন কীভাবে ব্যবসা, রাজনীতি, সামাজিকতা আর মানবসেবা করতে হয়। পিতার মতো তিনিও সাধারণ মানুষের কাছে আলোকিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন অনেক আগে থেকেই। বাবা চলে গেলেও যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তার বাবার রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ হাতেই পরিচালনা করে আসছেন আফরোজা খান রিতা।
একান্ত আলাপচারিতায় আফরোজা খান রিতা মানবজমিনকে তার বাবার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন, কি যে হারিয়েছি বোঝাতে পরবো না। একটি মুহূর্তের জন্যও বাবাকে ভুলতে পারি না। তাকে ছাড়া সব কিছুই যেন খাঁ খাঁ করছে। ঘরে বাইরে যে দিকেই চোখ বুলাই শুধুই বাবার স্মৃতি ভেসে উঠে।
বলেন, আমার বাবা ছিলেন একজন আদর্শবান মানুষ এবং আদর্শবান পিতা। তিনি ছিলেন আমাদের অহঙ্কার, আমার আদর্শ এবং আমার পরিবারের বটবৃক্ষ। শিশুকাল থেকেই যার শীতল ছায়ায় একটু শান্তির নীড় খুঁজে পেতাম। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের পুরো পরিবারকে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু বড় অসময়ে চলে গেলেন।
আফরোজা খান রিতা বলেন, সেই ছোট কাল থেকেই আমরা দুই বোন তার কাছ থেকে অসম্ভব ভালোবাসা পেয়েছি। আমাদেরকে ‘মা’ ছাড়া কোনো সময় ডাকতেন না। সর্বক্ষণ বাবার সেই ‘মা’ ডাক আমার কানে ভেসে বেড়ায়। খাবার সময় হলেই বাবা-মা খাবার নিয়ে টেবিলে বসে অপেক্ষায় থাকতেন আমি কখন আসবো। আমি এলেই তারা খাবার শুরু করতেন। কিন্তু আজ দু’টি বছর খাবার টেবিলে বাবাকে পাশে পাই না। বাবার অভাব আর স্মৃতিগুলো সর্বক্ষণ আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। একটি মুহূর্তের জন্য আমি তাকে ভুলতে পারি না। আজ দু’টি বছর ধরে আব্বা বলে ডাকতে পারি না। হৃদয়ের ভেতর কি যে কষ্ট হয় তা কাউকে বোঝাতে পারবো না।
রিতা বলেন, আমি দেখেছি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার বাবা তার সততা থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটেননি। একজন আদর্শবান পিতার সন্তান হয়ে তাই আমি গর্বিত। তিনি জীবদ্দশায় স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন। তার স্বপ্ন ছিল মানিকগঞ্জের বুকে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা করা। আর মানিকগঞ্জের বুকে প্রথম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন আমার বাবা। স্বপ্ন ছিল গ্রামের বুকে আন্তর্জাতিক মানের স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সে স্বপ্নও তার পূরণ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি অসম্ভব দুর্বল ছিলেন তিনি। তাই তো কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আর গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করতে তিনি বেশি পছন্দ করতেন। হরিরামপুরে পদ্মার থাবায় যারা বাড়িঘর হারিয়েছেন, যাদের মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই ছিল না তাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন রিতা আবাসন প্রকল্প। এছাড়া তার হাতে গড়া মুন্নু সিরামিক, মুন্নু ফেব্রিক্স, মুন্নু অ্যাটেয়া, মুন্নু নার্সিং মেডিকেল কলেজসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে যেখানে হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী মানুষ আমার বাবাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, ভালো বাসতেন।
পিতার রাজনীতি জীবন সম্পর্কে আফরোজা খান রিতা বলেন, আমার বাবা সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মানুষের বিপদ-আপদে সব সময়ই ছুটে বেড়াতেন। কখনো ক্লান্ত হননি। রাজনীতি করতে গিয়ে কখনোই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল বলেই চার বার হয়েছেন এমপি, হয়েছেন মন্ত্রী। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চারবার বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনে একই সঙ্গে নির্বাচন করে দু’টি আসনেই জয়লাভ করে তার জনপ্রিয়তার কারিশমা দেখান। দলীয় নেতাকর্মীদের আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা ছিল তার প্রতি। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দলের প্রতি ছিল তার প্রচণ্ড রকম ভালোবাসা। সব মিলিয়ে একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ ছিলেন আমার বাবা। তার কর্মগুণের কারণে মানিকগঞ্জের প্রতিটি মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করতেন এবং ভালোবাসতেন। সেই সঙ্গে আমার রাজনীতি, ব্যবসা, সমাজসেবাসহ সব কিছু্র হাতেখড়িই হচ্ছেন আমার বাবা। বাবার সেই আদর্শকে সামনে রেখেই আমি পথ চলছি।
সমস্ত আবেগ ছিল মানিকগঞ্জের মানুষকে ঘিরে:
বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সাবেক মন্ত্রী হারুনার রশিদ খান মুন্নুর জীবনী নিয়ে ’আমার জীবন উপাখ্যান’- নামের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেই বইয়ের প্রত্যেকটি অক্ষরে অক্ষরে তুলে ধরা হয়েছে তার জীবন- সংগ্রামের সব গল্প। ২২৪ পাতার এই বইয়ের একজায়গায় মানিকগঞ্জের প্রতি তার সমস্ত আবেগ ভালোবাসার কথা তুলে ধরেছেন। সেখানে হারুনার রশিদ খান মুন্নু বলেছেন, আমার সমস্ত আবেগ মানিকগঞ্জের মানুষকে ঘিরে। তাই রাজধানীর অভিজাত এলাকা ছেড়ে এসে আমি সব গড়েছি সোঁদা মাটির গন্ধজুড়ে থাকা প্রাণের মানিকগঞ্জে। মানুষ কিছুটা সচ্ছল হওয়া মাত্রই শহরমুখী হয়। আর আমি আমার ঝলমলে পৃথিবী ছেড়ে চলে এসেছি মাটির কাছাকাছি। আমার অন্য কোনো দায় ছিল না। অন্য কোনো মোহ ছিল না। আমার সমস্ত টান এবং মমত্ববোধজুড়ে মানিকগঞ্জের মাটি ও মানুষ। আমি তাদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমগ্র জীবন আমি মানিকগঞ্জেই থাকবো। আমার চলে যাওয়ার সময়-স্থান-প্রেক্ষাপট নিয়ে আমার অগ্রিম কোনো ধারণা নেই। তবুও আমি সবাইকে জানিয়ে রেখেছি, আমার কবরটা যেন এই মাটিতেই হয়। আমার আয়ু ফুরোবার পর এ মানিকগঞ্জের মাটিতে শেষ ঘুম ঘুমাতে চাই। মুন্নু সিটির ভেতরে জামে মসজিদের প্রাত্যহিক আজান যেন আমি শুনতে পাই। এ মাটি ছেড়ে আমি অন্য কোথাও যেতে চাই না। মানিকগঞ্জের প্রতি আমার আবেগের প্রাবল্য এখানেই। বইয়ে লেখা হারুনার রশিদ খান মুন্নুর শেষ চাওয়াটাও পূরণ হয়েছে।
মুন্নুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে যা থাকছে-
আজ বৃহস্পতিবার নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মানিকগঞ্জের গিলন্ড এলাকায় মুন্নু সিটিতে মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালন করবে মুন্নু পরিবার।
মৃত্যুবার্ষিকীর প্রথম প্রহরে মুন্নু সিটিতে হারুনার রশিদ খান মুন্নুর সমাধিতে প্রথম ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন মুন্নু পরিবারের সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত থাকবেন, মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হারুনার রশিদ খান মুন্নুর বড় মেয়ে আফরোজা খান রিতা, মুন্নু ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও মুন্নুপত্নী হুরুন নাহার রশিদ, মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান ও আফরোজা খান রিতার স্বামী মঈনুল ইসলাম স্বপন, মুন্নু সিরামিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আফরোজা খান রিতার বড় ছেলে রাশিদ মাইমুনুল ইসলাম এবং মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্বাহী পরিচলাক ও আফরোজা খান রিতার ছোট ছেলে রাশিদ রাফিউল ইসলাম। এরপর শ্রদ্ধা জানাবেন মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সকল প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশজীবী, সামাজিক,
সাংস্কৃতিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন।
সকাল থেকেই হুরুন নাহার রশিদ জামে মসজিদ ও মরহুমের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হবে কোরআন তিলাওয়াত। মুন্নু গ্রুপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে দোয়া মাহফিল। বিকালে মুন্নু ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে মুন্নু সিটিতে মরহুমের আত্মার মাগফিরত কামনায় অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
এছাড়া হারুনার রশিদ খান মুন্নুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতবারের ন্যায় এবারও মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা দিনব্যাপী বিনা পয়সায় রোগী দেখবেন। এছাড়া মাসব্যাপী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অপারেশনে থাকছে ২০% ভাগ ছাড়।
No comments