রাব্বির মৃত্যুতে অন্ধকার দেখছে পরিবার by শুভ্র দেব
গতকাল
দুপুর দেড়টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ট্রলিতে
রাখা একটি মরদেহ। ট্রলি ঘিরে কয়েকজন নারী পুরুষের আহাজারি। এক নারীর বুক
ফাটা এক আর্তনাদ। জানতে চাইলে বললেন, বাবারে আর বাঁচাতে পারলাম না। ডেঙ্গু
রোগে আমার বাবাটা মরে গেল। এখন আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো। আমার একমাত্র ছেলেটা
এভাবে চলে যেতে পারলো? কতটা কষ্ট পেয়ে আমার ছেলেটা মারা গেছে বুঝাতে পারব
না।
ডেঙ্গু রোগে নিজের একমাত্র সন্তান হারানোর পর এভাবেই বিলাপ করছিলেন রবিউল ইসলাম রাব্বির মা মাসুমা বেগম।
মো. বাচ্চু খান ও মাসুমা বেগমের একমাত্র সন্তান রবিউল ইসলাম রাব্বি (২৫)। তাদের বাড়ি ফরিদপুর সদরে। বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় থাকতেন। শেওড়া পাড়ায় তার বাবার একটি দর্জির দোকান আছে। রাব্বি ফরিদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিউট থেকে রেফ্রিজেটর এন্ড এয়ারকন্ডিশনারে ডিপ্লোমা শেষ করেছে কয়েক বছর আগে। চলতি বছরে ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি স্যামসাং সার্ভিসিং সেন্টারে চাকরি করত। দুই বছর আগে তার বাবা মা পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ে দেন। চাকরি, লেখাপড়া ও পরিবার নিয়ে বেশ ভালই চলছিল রাব্বির পরিবার। কিন্তু হঠাৎ সে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। ৯দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গতকাল দুপুর ১২টায় না ফেরার দেশে চলে গেছে রাব্বি। একমাত্র সন্তান হওয়াতে তাকে নিয়েই পরিবারের সব স্বপ্ন ছিল। তাকে হারিয়ে পরিবারে সব স্বপ্ন মিইয়ে গেছে। সব কিছু যেন অন্ধকার হয়ে গেছে।
রাব্বির বাবা বাচ্চু খান মানবজমিনকে বলেন, ২৩শে জুলাই মঙ্গলবার সকালের নাস্তা করে রাব্বি অফিসে গিয়েছিল। দুপুরে বাসায় এসে খাবার খেয়ে আবার অফিসে যায়। বিকাল থেকেই তার পচন্ড জ্বর আসে। জ্বরের মাত্রা ছিল ১০৩/১০৪ ডিগ্রি। রাতেই তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। চিকিৎসক তাকে নাপা ওষুধ ও তরল খাবার খাওয়ানোর কথা বলেন এবং কয়েকটি পরীক্ষা নীরিক্ষা করার কথা বলেন। পরেরদিন ওই টেস্ট করানোর পর ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করে দেখা যায় সেটা ১ লাখ ৩৮ হাজারে নেমে এসেছে। দ্বিতীয় টেস্ট করে দেখা যায় প্লাটিলেট ৫০ হাজারে নেমেছে। পরের পরীক্ষায় সেটা আরও কমে ২৯ হাজারে নামে।
এভাবে কয়েক দিন যাবার পর বৃস্পতিবার তার জ্বর কমে গিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। শুরু হয় পাতলা পায়খানা এবং পেট ফোলা। অবস্থা বেগতিক দেখে শুক্রবার তাকে নিয়ে ভর্তি করি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। ১৮ থেকে ১৯ বার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর সেটি বন্ধ হয়। তারপর তার প্রশ্রাব বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকরা তার পুরুষাঙ্গ দিয়ে পাইপ ঢুকানোয় রক্তপাত শুরু হয়। এতে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পরে তাকে আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। টানা তিন দিন আইসিইউতে থাকার পর তাকে বাইরে আনা হয়। এরপর চিকিৎসকরা বলেন তার কিডনিতে সমস্যা তাই কিডনি হাসপাতালে নিতে হবে। বুধবার কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে কিডনি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
রাব্বির স্ত্রী জেরিন পারভিন অন্তরা বলেন, সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে আমার স্বামীকে নিয়ে আসি। এখানে আসার পর এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষ। আবার লিফটে করে এক তলা থেকে আরেক তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরকম করতে করতে আমার স্বামী মারা গেছেন। এখানে চিকিৎসা শুরু হবার আগে নিয়মনীতি মানতে মানতে সময় শেষ। চিকিৎসা শুরু করলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত। রাব্বির মা মাসুমা বেগম বলেন, আমার ছেলে যখন আইসিইউতে ছিল তখন সেখান থেকে তাকে বের করার জন্য খুব তাড়া দিয়েছিল। সে বলত আমাকে তাড়াতাড়ি বের কর। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি বাঁচতে চাই। যখন তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে বের করে ঢাকা মেডিকেলে আনা হচ্ছিলো তখন তাকে খুশি খুশি লাগছিল। তার হয়তো মনে হচ্ছিলো সে বেঁচে যাবে। কিন্তু তা আর হল না। বরং হাসপাতালে আনার পরপরই মারা গেলো। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমার ছেলেটা শরবত, স্যালাইন ছাড়া আর কিছুই খায় নি। না খেয়েই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। ডেঙ্গুতে যেন আর কোন বাবা মায়ের কোল খালি না হয়।
ডেঙ্গু রোগে নিজের একমাত্র সন্তান হারানোর পর এভাবেই বিলাপ করছিলেন রবিউল ইসলাম রাব্বির মা মাসুমা বেগম।
মো. বাচ্চু খান ও মাসুমা বেগমের একমাত্র সন্তান রবিউল ইসলাম রাব্বি (২৫)। তাদের বাড়ি ফরিদপুর সদরে। বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় থাকতেন। শেওড়া পাড়ায় তার বাবার একটি দর্জির দোকান আছে। রাব্বি ফরিদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিউট থেকে রেফ্রিজেটর এন্ড এয়ারকন্ডিশনারে ডিপ্লোমা শেষ করেছে কয়েক বছর আগে। চলতি বছরে ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি স্যামসাং সার্ভিসিং সেন্টারে চাকরি করত। দুই বছর আগে তার বাবা মা পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ে দেন। চাকরি, লেখাপড়া ও পরিবার নিয়ে বেশ ভালই চলছিল রাব্বির পরিবার। কিন্তু হঠাৎ সে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। ৯দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গতকাল দুপুর ১২টায় না ফেরার দেশে চলে গেছে রাব্বি। একমাত্র সন্তান হওয়াতে তাকে নিয়েই পরিবারের সব স্বপ্ন ছিল। তাকে হারিয়ে পরিবারে সব স্বপ্ন মিইয়ে গেছে। সব কিছু যেন অন্ধকার হয়ে গেছে।
রাব্বির বাবা বাচ্চু খান মানবজমিনকে বলেন, ২৩শে জুলাই মঙ্গলবার সকালের নাস্তা করে রাব্বি অফিসে গিয়েছিল। দুপুরে বাসায় এসে খাবার খেয়ে আবার অফিসে যায়। বিকাল থেকেই তার পচন্ড জ্বর আসে। জ্বরের মাত্রা ছিল ১০৩/১০৪ ডিগ্রি। রাতেই তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। চিকিৎসক তাকে নাপা ওষুধ ও তরল খাবার খাওয়ানোর কথা বলেন এবং কয়েকটি পরীক্ষা নীরিক্ষা করার কথা বলেন। পরেরদিন ওই টেস্ট করানোর পর ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করে দেখা যায় সেটা ১ লাখ ৩৮ হাজারে নেমে এসেছে। দ্বিতীয় টেস্ট করে দেখা যায় প্লাটিলেট ৫০ হাজারে নেমেছে। পরের পরীক্ষায় সেটা আরও কমে ২৯ হাজারে নামে।
এভাবে কয়েক দিন যাবার পর বৃস্পতিবার তার জ্বর কমে গিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। শুরু হয় পাতলা পায়খানা এবং পেট ফোলা। অবস্থা বেগতিক দেখে শুক্রবার তাকে নিয়ে ভর্তি করি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। ১৮ থেকে ১৯ বার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর সেটি বন্ধ হয়। তারপর তার প্রশ্রাব বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকরা তার পুরুষাঙ্গ দিয়ে পাইপ ঢুকানোয় রক্তপাত শুরু হয়। এতে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পরে তাকে আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। টানা তিন দিন আইসিইউতে থাকার পর তাকে বাইরে আনা হয়। এরপর চিকিৎসকরা বলেন তার কিডনিতে সমস্যা তাই কিডনি হাসপাতালে নিতে হবে। বুধবার কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে কিডনি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
রাব্বির স্ত্রী জেরিন পারভিন অন্তরা বলেন, সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে আমার স্বামীকে নিয়ে আসি। এখানে আসার পর এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষ। আবার লিফটে করে এক তলা থেকে আরেক তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরকম করতে করতে আমার স্বামী মারা গেছেন। এখানে চিকিৎসা শুরু হবার আগে নিয়মনীতি মানতে মানতে সময় শেষ। চিকিৎসা শুরু করলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত। রাব্বির মা মাসুমা বেগম বলেন, আমার ছেলে যখন আইসিইউতে ছিল তখন সেখান থেকে তাকে বের করার জন্য খুব তাড়া দিয়েছিল। সে বলত আমাকে তাড়াতাড়ি বের কর। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি বাঁচতে চাই। যখন তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে বের করে ঢাকা মেডিকেলে আনা হচ্ছিলো তখন তাকে খুশি খুশি লাগছিল। তার হয়তো মনে হচ্ছিলো সে বেঁচে যাবে। কিন্তু তা আর হল না। বরং হাসপাতালে আনার পরপরই মারা গেলো। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমার ছেলেটা শরবত, স্যালাইন ছাড়া আর কিছুই খায় নি। না খেয়েই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। ডেঙ্গুতে যেন আর কোন বাবা মায়ের কোল খালি না হয়।
No comments