ভারতের জন্য মার্কিন-ইরান উত্তেজনার অর্থ কি by টিসিএ রাঘবন
যুক্তরাষ্ট্র
ও ইরানের মধ্যে যেভাবে উত্তেজনা বাড়ছে, সেখানে পরিচিত একটা ধারা নজরে আসে।
কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এতে করে দুই দেশ বা এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের
জন্য ঝুঁকি কিছু কমে গেছে। হরমুজ প্রণালী এবং পারস্য বা আরব সাগর দিয়ে তেল
পরিবহনের ব্যাপারে একটা স্থায়ী উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, কারণ মার্কিন-ইরান
উত্তেজনা এই অঞ্চলকে স্থায়ী চরম উত্তেজনার অঞ্চলে পরিণত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে যে, ইরান তেল ট্যাঙ্কারে হামলা করেছে বা হামলায়
উসকানি দিয়েছে, অতিরিক্ত নৌ মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে তারা, এরপর ইরান কর্তৃক
মার্কিন ড্রোন ভূপাতিতের ঘটনায় এ অঞ্চলে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে,
যেটা নিকট অতীতে কখনও দেখা যায়নি।
ওয়াশিংটন জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্রোগ্রাম অব অ্যাকশান (জেসিপিওএ) থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যাওয়ায় যে সমস্যা শুরু হয়েছে, সেখানে নতুন সংযোজন হলো বর্তমান মার্কিন-ইরান সঙ্কট। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ইরান ছাড়া চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য ছয়টি দেশ হলো চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের ঐতিহাসিক ত্রুটিপূর্ণ সম্পর্ক শুধরানোর পথে এটা ছিল একটা উল্লেখযোগ্য অর্জন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি বদলে যায়। ২০১৮ সালের মে মাসে তিনি একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও এ অঞ্চলে তাদের মিত্র – বিশেষ করে সৌদি আরব ও ইসরাইলের কাছে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য ইরানকে নিরস্ত রাখাটা একটা প্রধান ইস্যু। ইরানের নেতৃবৃন্দের কাছে বর্তমান পরিস্থিতিটা তাদের উপরে আরোপিত চাপটাকে আরও বাড়ানোর একটা কৌশল মাত্র, ১৯৭৯ সাল থেকেই যে চাপটা তারা মোকাবেলা করে আসছে। ইরানের বিপ্লবের যে অর্জন সেটাকে ব্যর্থ করার জন্যই এটা করা হচ্ছে বলে ইরানের নেতৃবৃন্দ মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের কাছে, লেবাননে হিজবুল্লাহর শক্ত অবস্থান, আরব বিশ্বে প্রায় এক সহস্রাব্দের মধ্যে একটা প্রধান শিয়া রাষ্ট্রের (ইরাক) আবির্ভাব, সিরিয়ায় ক্ষমতার পালাবদলের চেষ্টার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ, এবং ইয়েমেনে সৌদি আরবের দীর্ঘস্থায়ী সামরিক তৎপরতার মাধ্যমে আরব বিশ্বে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিষয়টি প্রকট হয়ে উঠেছে। ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের অব্যাহত বিরোধিতা সত্বেও এই ভূরাজনৈতিক অর্জন লাভ করেছে ইরান, যেগুলো মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ব্যর্থ নীতির বহিপ্রকাশ।
ট্রাম্পের দৃষ্টিকোণ থেকে জেসিপিওএ প্রচেষ্টা ছিল ত্রুটিপূর্ণ এবং নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জন্য প্রযুক্তি সংগ্রহের যে সক্ষমতা ইরানের রয়েছে, সেটার কারণে তেহরানের নেতৃত্বাধীন শিয়া গোষ্ঠির শক্তি একটা অপ্রতিরোধ্য গতি পেয়ে যাবে।
ইরানের দিক থেকে এই ইস্যুটা এ রকম: পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা এবং সেটাকে ব্যবহার করে ইরানের ঐতিহ্যগত শত্রুদের আঞ্চলিক শক্তি অর্জনের চেষ্টা। তেহরানের দৃষ্টিতে, ইরানের ১৯৭৯ সালের বিপ্লব মেনে নেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যে অনীহা, সেটাই ইরানকে নিয়ে বর্তমানের ও অতীতের সমস্ত সঙ্কটের মূল কারণ। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় ইরানের মানসিকতা আরও কঠিন হয়েছে। তাছাড়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণেও তারা কষ্ট করছে, বিশেষ করে ইরানের তেল আমদানিকারক দেশগুলোর উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সেটা ইরানের ক্ষতি করছে।
ভারতের জন্য মূল প্রশ্ন হলো কিভাবে তারা এই পরস্পরবিরোধী দাবির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করবে এবং একই সাথে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করবে। ইরানের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা এবং নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা একটি দিক। অন্যদিকে, উপসাগরীয় আরব দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের স্বার্থ রক্ষা করা। আরব অঞ্চলে বৃহৎ সহযোগিতামূলক ফ্রেমওয়ার্ক না থাকার কারণে ভারত এখন একটা দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেছে, কারণ এ অঞ্চলে বহু গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে ভারতের।
ওয়াশিংটন জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্রোগ্রাম অব অ্যাকশান (জেসিপিওএ) থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যাওয়ায় যে সমস্যা শুরু হয়েছে, সেখানে নতুন সংযোজন হলো বর্তমান মার্কিন-ইরান সঙ্কট। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ইরান ছাড়া চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য ছয়টি দেশ হলো চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের ঐতিহাসিক ত্রুটিপূর্ণ সম্পর্ক শুধরানোর পথে এটা ছিল একটা উল্লেখযোগ্য অর্জন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি বদলে যায়। ২০১৮ সালের মে মাসে তিনি একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও এ অঞ্চলে তাদের মিত্র – বিশেষ করে সৌদি আরব ও ইসরাইলের কাছে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য ইরানকে নিরস্ত রাখাটা একটা প্রধান ইস্যু। ইরানের নেতৃবৃন্দের কাছে বর্তমান পরিস্থিতিটা তাদের উপরে আরোপিত চাপটাকে আরও বাড়ানোর একটা কৌশল মাত্র, ১৯৭৯ সাল থেকেই যে চাপটা তারা মোকাবেলা করে আসছে। ইরানের বিপ্লবের যে অর্জন সেটাকে ব্যর্থ করার জন্যই এটা করা হচ্ছে বলে ইরানের নেতৃবৃন্দ মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের কাছে, লেবাননে হিজবুল্লাহর শক্ত অবস্থান, আরব বিশ্বে প্রায় এক সহস্রাব্দের মধ্যে একটা প্রধান শিয়া রাষ্ট্রের (ইরাক) আবির্ভাব, সিরিয়ায় ক্ষমতার পালাবদলের চেষ্টার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ, এবং ইয়েমেনে সৌদি আরবের দীর্ঘস্থায়ী সামরিক তৎপরতার মাধ্যমে আরব বিশ্বে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিষয়টি প্রকট হয়ে উঠেছে। ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের অব্যাহত বিরোধিতা সত্বেও এই ভূরাজনৈতিক অর্জন লাভ করেছে ইরান, যেগুলো মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ব্যর্থ নীতির বহিপ্রকাশ।
ট্রাম্পের দৃষ্টিকোণ থেকে জেসিপিওএ প্রচেষ্টা ছিল ত্রুটিপূর্ণ এবং নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জন্য প্রযুক্তি সংগ্রহের যে সক্ষমতা ইরানের রয়েছে, সেটার কারণে তেহরানের নেতৃত্বাধীন শিয়া গোষ্ঠির শক্তি একটা অপ্রতিরোধ্য গতি পেয়ে যাবে।
ইরানের দিক থেকে এই ইস্যুটা এ রকম: পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা এবং সেটাকে ব্যবহার করে ইরানের ঐতিহ্যগত শত্রুদের আঞ্চলিক শক্তি অর্জনের চেষ্টা। তেহরানের দৃষ্টিতে, ইরানের ১৯৭৯ সালের বিপ্লব মেনে নেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যে অনীহা, সেটাই ইরানকে নিয়ে বর্তমানের ও অতীতের সমস্ত সঙ্কটের মূল কারণ। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় ইরানের মানসিকতা আরও কঠিন হয়েছে। তাছাড়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণেও তারা কষ্ট করছে, বিশেষ করে ইরানের তেল আমদানিকারক দেশগুলোর উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সেটা ইরানের ক্ষতি করছে।
ভারতের জন্য মূল প্রশ্ন হলো কিভাবে তারা এই পরস্পরবিরোধী দাবির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করবে এবং একই সাথে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করবে। ইরানের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা এবং নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা একটি দিক। অন্যদিকে, উপসাগরীয় আরব দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের স্বার্থ রক্ষা করা। আরব অঞ্চলে বৃহৎ সহযোগিতামূলক ফ্রেমওয়ার্ক না থাকার কারণে ভারত এখন একটা দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেছে, কারণ এ অঞ্চলে বহু গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে ভারতের।
No comments