ভারতের অর্থনীতি কীভাবে সামলাবেন মোদি?
ঐতিহাসিক
জয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদি। এখনো চতুর্দিক থেকে মোদির জয়জয়কারের ধ্বনি মিলাতে পারেনি, তার আগেই
অর্থনীতিবিদদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। অর্থনীতির জন্য সামনে যে কঠিন দিন আসছে,
মোদি কি পারবেন সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে? বিবিসি অনলাইনের এক
প্রতিবেদনে এ প্রশ্ন উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, মোদি কি সত্যিই প্রতিশ্রুত
সংশোধনগুলোকে বাস্তব রূপ দিতে পারবেন?
প্রথম মেয়াদে কী করেছিলেন মোদি?
মোদির প্রথম মেয়াদে মিশ্র অর্থনৈতিক রেকর্ড দেখা যায়। ব্যাংকিং খাতকে বাঁচাতে নতুন করে দেউলিয়া আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু সাহসী সংস্কার করেছেন তিনি। তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় ভারত বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা করার সূচক বা ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে ২০১৪ সালের ১৩৪তম অবস্থান থেকে ২০১৭ সালে ৭৭তম অবস্থানে উঠে এসেছে। ওই সময় ভারত বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়।
তবে মোদির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কালোটাকা প্রতিহত করতে তিন-চতুর্থাংশ রুপি বাজেয়াপ্ত করা। বদলি নোট হাতে না রেখেই এমন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে সাময়িকভাবে পঙ্গু হয়ে যায় ভারতের অর্থনীতি। চাকরির বাজারে দেখা দেয় তীব্র মন্দা। নতুনভাবে জাতীয় পর্যায়ে পণ্য ও সেবা কর (জেএসটি) উদ্যোগ নিলে শুরুতে সেটিও খুব একটা সহজ হয়নি। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই কর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই কর চাপিয়ে দেওয়ার কারণে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছেন লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী।
সুরজিৎ ভাল্লার মতো ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের ধারণা, সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন মোদিকে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দেবে। ভাল্লা বলেন, এই বিশাল জনরায়ের কথা বিবেচনা করে আগামী পাঁচ বছরে মোদির কাছ থেকে আরও সাহসী সংস্কার আশা করাই যায়।
তবে তত্ত্ব আর বাস্তব যে এক নয়, তা সরকারের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন থেকে সহজেই বোঝা যায়। ২০১৮ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা গত প্রায় ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড করে।
চাকরির বাজারে মোদির ভূমিকা কী হবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া উচিত মোদির। তাঁর স্বপ্নের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প উৎপাদনে বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হলেও বাস্তবে মিশ্র ফলাফল দেখা গেছে।
মুম্বাইভিত্তিক আদিত্য বিড়লা গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ অজিত রানাদের বিশ্বাস, বৈদেশিক বাজারের প্রতি বেশি মনোযোগ দিলে আন্তর্জাতিক চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। রানাদে বলেন, রপ্তানি আর উৎপাদন ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। উৎপাদন না বাড়ালে রপ্তানি খাতে উন্নতি করা সম্ভব নয়।
নির্মাণ, পর্যটন, টেক্সটাইল ও কৃষির মতো শ্রমনির্ভর খাত নতুন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
মোদি কি পারবেন অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে?
চীনের ঠিক উল্টো পথ ধরে ১৫ বছর ধরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকাংশেই অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক মাস ধরে অভ্যন্তরীণ ভোক্তার ব্যয় কমে গেছে বলে ।
সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কমসংখ্যক গাড়ি, ট্রাক্টর, মোটরসাইকেল এবং স্কুটার বিক্রি হয়েছে গত বছর। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চাহিদা বেড়েছে। হিন্দুস্তান ইউনিলিভার জানিয়েছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে আয়ে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে তাঁদের। গ্রাহকেরা যে আসলেই অর্থ সংকটে ভুগে ব্যয় করতে পারছেন না, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এগুলো।
নরেন্দ্র মোদির ইশতেহারে বলা হয়েছে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আয়কর কমিয়ে তাঁদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো হবে। তবে বর্তমানে ভারতের অর্থনীতির যে দশা, তাতে বাজেট অনুযায়ী সরকারি আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমাতে কঠোর হতে হবে মোদিকে। ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতিকে মন্থর বিষের সঙ্গে তুলনা করেছেন অর্থনীতিবিদেরা।
কৃষকেরা কি সাহায্য পাবেন?
প্রথম মেয়াদ থেকে মোদির জন্য চলমান এক চ্যালেঞ্জের নাম কৃষি সংকট। দেশজুড়ে কৃষকেরা শস্যের মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছেন।
প্রান্তিক কৃষকদের আরও অনেক বেশি সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে বাজারের সঙ্গে মিল রেখে কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা চিন্তা করলে এ খাতে যে পরিমাণ বাজেটের প্রয়োজন হবে, তা জোগান দিতে গেলে রীতিমতো হিমশিম খাবে সরকার।
ভারত সরকারের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ইলা পাটনায়েক বলেন, কৃষকদের স্বাধীনতা দিতে পারলে গোটা ব্যবস্থা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ কৃষক কার কাছে তাঁর ফসল বিক্রি করবেন, সে স্বাধীনতা তাঁকে দিতে হবে। এতে রাষ্ট্রনির্ধারিত স্বল্পমূল্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে দরদাম করে শস্যের জন্য ন্যায্য অর্থ আদায় করতে পারবেন চাষিরা।
কী করা উচিত আর কী করা প্রয়োজন, বাজেটের কথা মাথায় রেখে সে হিসাব মেলাতে গিয়ে মোদি সরকারকে যে ভালোই হ্যাপা পোহাতে হবে, সে রকম ইঙ্গিতই দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদেরা।
প্রথম মেয়াদে কী করেছিলেন মোদি?
মোদির প্রথম মেয়াদে মিশ্র অর্থনৈতিক রেকর্ড দেখা যায়। ব্যাংকিং খাতকে বাঁচাতে নতুন করে দেউলিয়া আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু সাহসী সংস্কার করেছেন তিনি। তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় ভারত বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা করার সূচক বা ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে ২০১৪ সালের ১৩৪তম অবস্থান থেকে ২০১৭ সালে ৭৭তম অবস্থানে উঠে এসেছে। ওই সময় ভারত বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়।
তবে মোদির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কালোটাকা প্রতিহত করতে তিন-চতুর্থাংশ রুপি বাজেয়াপ্ত করা। বদলি নোট হাতে না রেখেই এমন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে সাময়িকভাবে পঙ্গু হয়ে যায় ভারতের অর্থনীতি। চাকরির বাজারে দেখা দেয় তীব্র মন্দা। নতুনভাবে জাতীয় পর্যায়ে পণ্য ও সেবা কর (জেএসটি) উদ্যোগ নিলে শুরুতে সেটিও খুব একটা সহজ হয়নি। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই কর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই কর চাপিয়ে দেওয়ার কারণে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছেন লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী।
সুরজিৎ ভাল্লার মতো ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের ধারণা, সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন মোদিকে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দেবে। ভাল্লা বলেন, এই বিশাল জনরায়ের কথা বিবেচনা করে আগামী পাঁচ বছরে মোদির কাছ থেকে আরও সাহসী সংস্কার আশা করাই যায়।
তবে তত্ত্ব আর বাস্তব যে এক নয়, তা সরকারের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন থেকে সহজেই বোঝা যায়। ২০১৮ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা গত প্রায় ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড করে।
চাকরির বাজারে মোদির ভূমিকা কী হবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া উচিত মোদির। তাঁর স্বপ্নের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প উৎপাদনে বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হলেও বাস্তবে মিশ্র ফলাফল দেখা গেছে।
মুম্বাইভিত্তিক আদিত্য বিড়লা গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ অজিত রানাদের বিশ্বাস, বৈদেশিক বাজারের প্রতি বেশি মনোযোগ দিলে আন্তর্জাতিক চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। রানাদে বলেন, রপ্তানি আর উৎপাদন ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। উৎপাদন না বাড়ালে রপ্তানি খাতে উন্নতি করা সম্ভব নয়।
নির্মাণ, পর্যটন, টেক্সটাইল ও কৃষির মতো শ্রমনির্ভর খাত নতুন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
মোদি কি পারবেন অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে?
চীনের ঠিক উল্টো পথ ধরে ১৫ বছর ধরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকাংশেই অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক মাস ধরে অভ্যন্তরীণ ভোক্তার ব্যয় কমে গেছে বলে ।
সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কমসংখ্যক গাড়ি, ট্রাক্টর, মোটরসাইকেল এবং স্কুটার বিক্রি হয়েছে গত বছর। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চাহিদা বেড়েছে। হিন্দুস্তান ইউনিলিভার জানিয়েছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে আয়ে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে তাঁদের। গ্রাহকেরা যে আসলেই অর্থ সংকটে ভুগে ব্যয় করতে পারছেন না, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এগুলো।
নরেন্দ্র মোদির ইশতেহারে বলা হয়েছে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আয়কর কমিয়ে তাঁদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো হবে। তবে বর্তমানে ভারতের অর্থনীতির যে দশা, তাতে বাজেট অনুযায়ী সরকারি আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমাতে কঠোর হতে হবে মোদিকে। ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতিকে মন্থর বিষের সঙ্গে তুলনা করেছেন অর্থনীতিবিদেরা।
কৃষকেরা কি সাহায্য পাবেন?
প্রথম মেয়াদ থেকে মোদির জন্য চলমান এক চ্যালেঞ্জের নাম কৃষি সংকট। দেশজুড়ে কৃষকেরা শস্যের মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছেন।
প্রান্তিক কৃষকদের আরও অনেক বেশি সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে বাজারের সঙ্গে মিল রেখে কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা চিন্তা করলে এ খাতে যে পরিমাণ বাজেটের প্রয়োজন হবে, তা জোগান দিতে গেলে রীতিমতো হিমশিম খাবে সরকার।
ভারত সরকারের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ইলা পাটনায়েক বলেন, কৃষকদের স্বাধীনতা দিতে পারলে গোটা ব্যবস্থা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ কৃষক কার কাছে তাঁর ফসল বিক্রি করবেন, সে স্বাধীনতা তাঁকে দিতে হবে। এতে রাষ্ট্রনির্ধারিত স্বল্পমূল্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে দরদাম করে শস্যের জন্য ন্যায্য অর্থ আদায় করতে পারবেন চাষিরা।
কী করা উচিত আর কী করা প্রয়োজন, বাজেটের কথা মাথায় রেখে সে হিসাব মেলাতে গিয়ে মোদি সরকারকে যে ভালোই হ্যাপা পোহাতে হবে, সে রকম ইঙ্গিতই দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদেরা।
মোদির প্রথম মেয়াদে বিভিন্ন সময় দেশজুড়ে কৃষকদের বিক্ষোভ চলেছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে |
No comments