শান্তি বিঘ্নিত না করেই আফগান যুদ্ধ শেষ করা প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের by ফরিদ জাকারিয়া
তালেবানের
সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য চুক্তিটি আফগানিস্তানে চলা ১৮ বছরের
অমীমাংসিত যুদ্ধের পর দেশটিতে বৃহত্তর স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করবে বলে
ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে এটি আফগান গৃহযুদ্ধও উস্কে দিতে পারে, সন্ত্রাসী
গ্রুপগুলোকে সাহসী করে তুলতে পারে, জাতিটি আরেক দশক গোলযোগে পতিত হতে
পারে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারো বিপুল সংখ্যায় যুদ্ধক্ষেত্রে বাহিনী
পাঠাতে হতে পারে। ২০১১ সালে ইরাক থেকে খুব তাড়াতাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের
প্রত্যাহারের ফলে এমন ঘটনাই ঘটেছে। সবকিছুই নির্ভর করছে, কিভাবে তা সামাল
দেয়া হবে। সমাধান নিহিত রয়েছে তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক
সমঝোতার ওপর, দ্রুত মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ওপর নয়।
বিশেষ দূত জালমি খালিলজাদ ও তালেবানের মধ্যে দোহা আলোচনার কর্তৃত্ব দিয়ে প্রেসিডেন্ট একটি ভালো কাজ করেছেন। আলোচনার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে আফগান সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা বিস্তৃত করা। পরিণাম হবে একটি জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন, যাতে বর্তমান আফগান সরকার ও তালেবান উভয়েই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটা অনেক দূরের বিষয় মনে হলেও তা ধাপে ধাপে, সময়ের পরিক্রমায় হতে পারে।
ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো এটা নিশ্চিত করা যে সৈন্য হ্রাস করার মতো কঠিন পরিশ্রমলব্ধ বিষয়ে ছাড় না দেয়া।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত রাইয়ান ক্রুকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে আমরা ভিয়েতনামের পুনরাবৃত্তিই দেখতে যাচ্ছি। উত্তর ভিয়েতনামের কাছে থেকে প্রত্যাহারের বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মার্কিন সৈন্য যাওয়া মাত্র উত্তর ভিয়েতনাম ওইসব সমঝোতা বাতিল করে দক্ষিণ ভিয়েতনাম আক্রমণ করে।
আফগানিস্তানে এমনটা না ঘটা নিশ্চিত করা যেতে পারে রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগাভাগি ও জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার বিলম্বিত করা। এর ফলে তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে বাধ্য হবে।
যুক্তরাষ্ট্র যখনই কোনো গেরিলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন প্রতিবারই প্রস্থান-কৌশল সমস্যার মুখোমুখি হয়। ১৯৬৯ সালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র রচনা করেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। যুক্তরাষ্ট্র চায় একটি ইতিবাচক লক্ষ্য। আর তা হলো ভূমি লাভ ও কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠা। আর গেরিলারা চায় নেতিবাচক লক্ষ্য। তা হলো বিঘ্নতা সৃষ্টি। যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করে সামরিক কৌশল, গেরিলারা করে মনোস্তাত্ত্বিক কৌশল এবং এর মাধ্যমে মার্কিন ইচ্ছাশক্তি শেষ করে দেয়া। না জিতে আমেরিকা হারে, আর না হেরে গেরিলারা জেতে।
তালেবান একটি গেরিলা অপারেশনের চেয়ে বেশি অগ্রসর হয়েছে। তারা কোনো কোনো এলাকায় আফগান জাতীয় সরকার থেকে আলাদা হয়ে তার নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে তাদের প্রধান কৌশল হলো যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর ট্রাম্প প্রায়ই স্বীকার করেন যে তিনি থেকে যাওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছেন। তালেবান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো চুক্তি হলে ট্রাম্পকে অবশ্যই ইঙ্গিত দিতে হবে যে তালেবান যদি চুক্তি লঙ্ঘন করে তবে তিনি আবার সৈন্য পাঠাবেন।
এমনটা ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে আফগানিস্তানের ব্যাপারে পাকিস্তানের মনোভাবে পরিবর্তনে। তালেবানের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন, সীমান্তজুড়ে তাদেরকে নিরাপদ অবস্থান দেয়ার ফলে তালেবানের শক্তি বাড়তে পেরেছে। নতুন পাকিস্তানি সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে আলোচনায় সহায়তা করেছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তার দেশ আফগানিস্তানকে স্থায়ী বিশৃঙ্খলায় রেখে আর ‘কৌশলগত গভীরতা’ বজায় রাখতে চায় না। তিনি যদি আন্তরিকভাবেই তা বলে থাকেন, তিনি যদি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তবে তা পুরো অঞ্চলে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
রোন্যাল্ড রিগ্যান বলেছিলেন, বিশ্বাস করো, তবে যাচাই করে। এবারের আলোচনার মূলমন্ত্রও এটা হতে পারে। প্রত্যেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ফায়দা হাসিল করতে চায় পরে প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের বোকা বনা উচিত নয়।
আফগানিস্তানে অনেক কিছু অর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৪০ বছরের গৃহযুদ্ধ ও তালেবান শাসনের পর দেশটি এখন ভদ্র দেশ। একটি উদারণ দেয়া যেতে পারে। তালেবান শাসনে প্রায় ১০ লাখ আফগান শিশু স্কুলে যেত। বর্তমানে যায় ৯০ লাখের বেশি। তালেবানের আশ্রয় থাকা সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। বর্তমানে আমেরিকার মূল্য, ১৪ হাজার সৈন্য, আগের মতো নয়। যুক্তরাষ্ট্র নতুন চুক্তির পর ৮ থেকে ৯ হাজার সৈন্য আফগানিস্তানে রাখতে পারে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। কিন্তু তার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে যে সে কেবল যুদ্ধের সমাপ্তিই ঘটাবে না, সেইসাথে শান্তিও প্রতিষ্ঠা করবে।
বিশেষ দূত জালমি খালিলজাদ ও তালেবানের মধ্যে দোহা আলোচনার কর্তৃত্ব দিয়ে প্রেসিডেন্ট একটি ভালো কাজ করেছেন। আলোচনার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে আফগান সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা বিস্তৃত করা। পরিণাম হবে একটি জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন, যাতে বর্তমান আফগান সরকার ও তালেবান উভয়েই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটা অনেক দূরের বিষয় মনে হলেও তা ধাপে ধাপে, সময়ের পরিক্রমায় হতে পারে।
ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো এটা নিশ্চিত করা যে সৈন্য হ্রাস করার মতো কঠিন পরিশ্রমলব্ধ বিষয়ে ছাড় না দেয়া।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত রাইয়ান ক্রুকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে আমরা ভিয়েতনামের পুনরাবৃত্তিই দেখতে যাচ্ছি। উত্তর ভিয়েতনামের কাছে থেকে প্রত্যাহারের বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মার্কিন সৈন্য যাওয়া মাত্র উত্তর ভিয়েতনাম ওইসব সমঝোতা বাতিল করে দক্ষিণ ভিয়েতনাম আক্রমণ করে।
আফগানিস্তানে এমনটা না ঘটা নিশ্চিত করা যেতে পারে রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগাভাগি ও জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার বিলম্বিত করা। এর ফলে তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে বাধ্য হবে।
যুক্তরাষ্ট্র যখনই কোনো গেরিলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন প্রতিবারই প্রস্থান-কৌশল সমস্যার মুখোমুখি হয়। ১৯৬৯ সালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র রচনা করেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। যুক্তরাষ্ট্র চায় একটি ইতিবাচক লক্ষ্য। আর তা হলো ভূমি লাভ ও কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠা। আর গেরিলারা চায় নেতিবাচক লক্ষ্য। তা হলো বিঘ্নতা সৃষ্টি। যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করে সামরিক কৌশল, গেরিলারা করে মনোস্তাত্ত্বিক কৌশল এবং এর মাধ্যমে মার্কিন ইচ্ছাশক্তি শেষ করে দেয়া। না জিতে আমেরিকা হারে, আর না হেরে গেরিলারা জেতে।
তালেবান একটি গেরিলা অপারেশনের চেয়ে বেশি অগ্রসর হয়েছে। তারা কোনো কোনো এলাকায় আফগান জাতীয় সরকার থেকে আলাদা হয়ে তার নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে তাদের প্রধান কৌশল হলো যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর ট্রাম্প প্রায়ই স্বীকার করেন যে তিনি থেকে যাওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছেন। তালেবান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো চুক্তি হলে ট্রাম্পকে অবশ্যই ইঙ্গিত দিতে হবে যে তালেবান যদি চুক্তি লঙ্ঘন করে তবে তিনি আবার সৈন্য পাঠাবেন।
এমনটা ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে আফগানিস্তানের ব্যাপারে পাকিস্তানের মনোভাবে পরিবর্তনে। তালেবানের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন, সীমান্তজুড়ে তাদেরকে নিরাপদ অবস্থান দেয়ার ফলে তালেবানের শক্তি বাড়তে পেরেছে। নতুন পাকিস্তানি সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে আলোচনায় সহায়তা করেছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তার দেশ আফগানিস্তানকে স্থায়ী বিশৃঙ্খলায় রেখে আর ‘কৌশলগত গভীরতা’ বজায় রাখতে চায় না। তিনি যদি আন্তরিকভাবেই তা বলে থাকেন, তিনি যদি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তবে তা পুরো অঞ্চলে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
রোন্যাল্ড রিগ্যান বলেছিলেন, বিশ্বাস করো, তবে যাচাই করে। এবারের আলোচনার মূলমন্ত্রও এটা হতে পারে। প্রত্যেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ফায়দা হাসিল করতে চায় পরে প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের বোকা বনা উচিত নয়।
আফগানিস্তানে অনেক কিছু অর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৪০ বছরের গৃহযুদ্ধ ও তালেবান শাসনের পর দেশটি এখন ভদ্র দেশ। একটি উদারণ দেয়া যেতে পারে। তালেবান শাসনে প্রায় ১০ লাখ আফগান শিশু স্কুলে যেত। বর্তমানে যায় ৯০ লাখের বেশি। তালেবানের আশ্রয় থাকা সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। বর্তমানে আমেরিকার মূল্য, ১৪ হাজার সৈন্য, আগের মতো নয়। যুক্তরাষ্ট্র নতুন চুক্তির পর ৮ থেকে ৯ হাজার সৈন্য আফগানিস্তানে রাখতে পারে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। কিন্তু তার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে যে সে কেবল যুদ্ধের সমাপ্তিই ঘটাবে না, সেইসাথে শান্তিও প্রতিষ্ঠা করবে।
No comments