ব্রিটেনে ১৫ মিনিট বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের যে প্রভাব পড়েছে
ব্রিটেনে দুটো বিদ্যুৎ কেন্দ্র
ন্যাশনাল গ্রিড থেকে ১৫ মিনিটের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার পর হাজার-হাজার
ট্রেন যাত্রী আটকা পড়ে। কারণ ট্রেনগুলো বিদ্যুৎ চালিত।
বিদ্যুৎ
কেন্দ্রগুলো বেশ দ্রুততার সাথে ১৫ মিনিটের মধ্যে উৎপাদনে ফিরে আসে। কিন্তু
ট্রেন নেটওয়ার্ক সচল হতে কয়েক ঘণ্টার সময় লেগে যায়।
বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ট্রেন নেটওয়ার্কের সিগন্যাল এবং অভ্যন্তরীণ সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কয়েক
ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ ট্রেন লাইনে ফিরে আসলেও ততক্ষণে
যাত্রীরা গরমে অস্থির হয়ে যায়। ট্রেনের ভেতরে দমবন্ধ করা পরিস্থিতির তৈরি
হয়।
যেসব ট্রেনে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে সেগুলো হচ্ছে
জার্মানির তৈরি। ২০১৪ সালে এসব ট্রেন ব্রিটেনের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করা
হয়।
বিদ্যুৎ না থাকায় আটকে যায় ট্রেন। ফলে অনেক যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে যায়। |
বিদ্যুৎ চলে যাবার পর এসব ট্রেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাটারির সাহায্যে জরুরী সিস্টেম চালু রেখেছে।
কিন্তু বিদ্যুৎ ফিরে আসার পর ট্রেনগুলো পুনরায় চালু করা এতো সহজ ছিলনা।
চালকরা দেখতে পান, কোন কোন ক্ষেত্রে ট্রেনের কম্পিউটার সিস্টেম পুরোপুরি
বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সেটি ঠিক করার জন্য টেকনিশিয়ান আনতে হয়েছে।
বিদ্যুৎ
না থাকার সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল কিংস ক্রস স্টেশনে। কয়েক
ঘণ্টার জন্য সব ট্রেনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একজন যাত্রী বিবিসিকে বলেন,
তিনি যে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেটি এডিনবার্গ থেকে লন্ডনের কিংস
ক্রস স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছাতে ১৩ ঘণ্টা সময় লেগেছে। সাধারণত এটি পাঁচ
ঘণ্টারও কম সময় লাগে।
"মানুষজন নিজেরাই ট্রেন থেকে বের হয়ে যাবার হুমকি দিচ্ছিল। পাঁচ ঘণ্টা আগেই খাবার শেষ হয়ে যায়, " বলছিলেন সে যাত্রী।
বিদ্যুৎ
না থাকার সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে ব্রিটেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ
বিতরণ এলাকায়। এর ফলে পাঁচ লক্ষ মানুষের উপর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া লন্ডন
এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে তিন লক্ষ মানুষের উপর প্রভাব ফেলেছে বিদ্যুৎ
বিপর্যয়।
ট্রেন থেকে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করেন অনেক যাত্রী। |
নর্দার্ন পাওয়ার গ্রিড বলছে, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে
নিউক্যাসেল এয়ারপোর্ট এবং শহরের মেট্রো ব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়েছে।
এছাড়া উত্তর-পূর্ব লন্ডনে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও বন্ধ হয়ে যায়।
কেন বিদ্যুৎ বিপর্যয়?
কারিগরি
ত্রুটির কারণে বেডফোর্ডশায়ারে একটি গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৯ জুলাই
শুক্রবার বিকেল ৪:৫৮ মিনিটে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নিউ হর্নসি উপকূলে আরেকটি
বায়ু চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিকল হয়ে যায়। সে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির
টারবাইন ঘুরতে থাকলে সেখানকার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসছিলো না।
প্রায় একই সময়ে দুটো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এটিকে বেশ বিরল ঘটনা বলে উল্লেখ করেন জ্বালানী বিশেষজ্ঞ ডেভিড হান্টার।
তিনি বলেন, তদন্ত করলে হয়তো দেখা যেতে পারে যে একটির সাথে আরেকটির কোন সম্পর্ক নেই এবং ঘটনাটি কাকতালীয়।
বায়ু-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র কি দায়ী?
যেদিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিপর্যয় ঘটে সেদিন বেশ বাতাস ছিল। ব্রিটেনের
জাতীয় গ্রিডের পরিচালক ডানকান বার্ট বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে
যাবার সাথে বাতাসের বেগ পরিবর্তনের কোন সম্পর্ক নেই।
ট্রেনে আটকে পড়া যাত্রীদের জন্য পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। |
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানী - যেমন বায়ু-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র - জাতীয় গ্রিডের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
মি:
হান্টার বলেন, "গ্যাস এবং কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিকতর সুবিধা
আছে। যখন একটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন আরেকটি সে ঘাটতি পূরণ করে।"
সেক্ষেত্রে বায়ু-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র ততটা কার্যকরী নয়।
তিনি
বলেন, জাতীয় গ্রিড এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর
সাথে বেশি করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিন্তু শুক্রবারের বিদ্যুৎ
বিপর্যয়ের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে কিনা সেটি এখনো বলার সময় আসেনি।
জাতীয় গ্রিডের কিছু অংশ কেন বন্ধ হলো?
ব্রিটেনের
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের প্রবাহ সবসময় থাকতে হয় ৫০ হার্টস। যখন যোগান
কমে যায় এবং চাহিদা বাড়ে, তখন বিদ্যুতের প্রবাহ ৪৮.৯ হার্টসে নেমে আসে।
এটা গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অনেক নিচে।
মি: হান্টার বলেন, এ পরিস্থিতি বিপদজনক হতে পারে। এর ফলে ব্রিটেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে।
কিংস ক্রস স্টেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। |
No comments