রাশিয়া-ভারত-পাকিস্তান: পরিবর্তিত সমীকরণ
রাশিয়া
যখন আফগানিস্তান দখল করেছিল, ভারত তখন ছিল সমাজবাদী ক্যাম্পে এবং
আফগানিস্তানে তখন তারা প্রবেশের চেষ্টা করেছিল; এখন যুক্তরাষ্ট্র যখন আবার
দেশটি দখল করেছে, ভারত তখন পুঁজিবাদী ক্যাম্পে। দুইবারই ভারতকে ডুবন্ত
পক্ষের সাথে যুক্ত হতে হয়েছে।
কিন্তু আফগানিস্তানে প্রবেশের এই চেষ্টা করতে গিয়ে রাশিয়ার মতো বাস্তববাদী অংশীদারকে হারিয়েছে ভারত। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ভারতের যে গভীর সম্পর্ক ছিল, সেখানে উভয়েরই একটা সমাজবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। ট্যাঙ্ক থেকে নিয়ে জঙ্গি বিমান – ভারতকে সব রকমের সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছিল তারা। ১৯৭১ সালে ভারত-সোভিয়েত চুক্তির কারণেই বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের সাহস পেয়েছিল ভারত। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল সময়কালে ভারতে নিজেদের একটি কে-৪৩ পারমাণবিক শক্তি চালিত ক্রুজ মিসাইল সাবমেরিনও মোতায়েন রেখেছিল রাশিয়া, যেটা ছিল দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের একটা উজ্জ্বল উদাহরণ। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের সাথে সাথেই ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা চীনের সামনে নিজেকে দুর্বল ভাবতে শুরু করলো ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তানের সাথেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইউ-টার্ন নিলো ভারত।
এই বাঁক বদলের কারণে নব্বইয়ের দশকে ইন্দো-রাশিয়ান অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুরো ভেঙ্গে পড়লো। সামরিক ও প্রযুক্তিগত সমঝোতাও ধসে গেলো। আজ যদিও সামরিক সরঞ্জাম কেনার মাত্রা বাড়িয়েছে ভারত, কিন্তু সম্পর্কের সেই মাত্রাটা আর ফিরে আসেনি।
এই পরিবর্তিত ভূ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে রাশিয়া। তারা এখন একে অন্যের উদ্বেগে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে। যেমন, পুতিন ২০১৬ সালে চীনে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, দক্ষিণ চীন সাগরে বাইরের হস্তক্ষেপে শুধু ক্ষতিই বাড়বে। আর অন্যদিকে, চীনের আনুষ্ঠানিক অবস্থান হলো রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগগুলোকে পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিবেচনায় নেয়া উচিত।
আবার আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র সফল হলে সেটা রাশিয়ার জন্য নেতিবাচক হতো। তালেবান ও পাকিস্তানে তাদের সমর্থকদের জন্যও সেটা ভালো হতো না। রাশিয়া এখানে এমন একটা পথ বেছে নিয়েছে, সেটা বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যের মধ্যে তাদের স্বার্থ হাসিল করবে। ফলে দক্ষিণ এশিয়াকে ভারতের দৃষ্টিতে না দেখে, আফগান প্রিজমের ভেতর দিয়ে এ অঞ্চলকে দেখার কৌশল নিয়েছে রাশিয়া। ফলে রাশিয়া এখানে ২০১৬ সালে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে এবং আফগান শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে, যেটাকে তারা বলছে ‘মস্কো প্রসেস’।
মজার ব্যাপার হলো প্রথম বৈঠকে রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান অংশ নিয়েছিল। পরে অনেক উত্থান পতনের পর ২০১৭ সালে এসে আফগান সরকার, ভারত ও মধ্য এশিয়ার কিছু দেশ এতে যুক্ত হয়। পরের বছর তালেবানদেরও সমমানের পক্ষ হিসেবে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এবং সে কারণে কাবুল বৈঠক বয়কট করে।
আফগানিস্তানের ব্যাপারে রাশিয়া-পাকিস্তান সহযোগিতার অর্থ হলো সেখান থেকে ভারতের স্বার্থকে দূর করে দেয়া। এখানে ভারত নিজেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে, কারণ তারাই একমাত্র দেশ যারা তালেবানদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করেনি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ও ইরান সবাই আলোচনায় অংশ নিয়েছে। নাকি তালেবানরাই ভারতের সাথে আলোচনায় আগ্রহী নয়?
আফগান-ইরান সমাধানের ব্যাপারে ভারতের যে একতরফা অবস্থান, সেখানে আঞ্চলিক পক্ষগুলোর স্বার্থ ও নিরাপত্তা উদ্বেগকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সে কারণে তারা এ অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। সবকিছু যদি এভাবেই চলতে থাকে, এবং যতক্ষণ না ভারত আফগানিস্তানের ব্যাপারে তাদের বিচ্ছিন্নতার নীতি পরিত্যাগ করতে রাজি হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পরস্পরের কাছাকাছি আসার সুযোগ রয়েছে, আর তাদের সাথে থাকবে চীন ও রাশিয়া। আর রাশিয়া যেহেতু পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সরাসরি প্রতিবেশী, আর তাদের মাঝখানে বন্ধুত্বপূর্ণ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে, সে কারণে এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটি স্থলপথে ভারতের রাশিয়ায় যাওয়াকে প্রায় অসম্ভব করে তুলবে। ভারতের জন্য রাশিয়ায় পৌঁছার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম পথ হলো সেখানে দক্ষিণ চীন সাগর এবং নর্দার্ন সি রুট।
কিন্তু আফগানিস্তানে প্রবেশের এই চেষ্টা করতে গিয়ে রাশিয়ার মতো বাস্তববাদী অংশীদারকে হারিয়েছে ভারত। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ভারতের যে গভীর সম্পর্ক ছিল, সেখানে উভয়েরই একটা সমাজবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। ট্যাঙ্ক থেকে নিয়ে জঙ্গি বিমান – ভারতকে সব রকমের সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছিল তারা। ১৯৭১ সালে ভারত-সোভিয়েত চুক্তির কারণেই বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের সাহস পেয়েছিল ভারত। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল সময়কালে ভারতে নিজেদের একটি কে-৪৩ পারমাণবিক শক্তি চালিত ক্রুজ মিসাইল সাবমেরিনও মোতায়েন রেখেছিল রাশিয়া, যেটা ছিল দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের একটা উজ্জ্বল উদাহরণ। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের সাথে সাথেই ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা চীনের সামনে নিজেকে দুর্বল ভাবতে শুরু করলো ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তানের সাথেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইউ-টার্ন নিলো ভারত।
এই বাঁক বদলের কারণে নব্বইয়ের দশকে ইন্দো-রাশিয়ান অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুরো ভেঙ্গে পড়লো। সামরিক ও প্রযুক্তিগত সমঝোতাও ধসে গেলো। আজ যদিও সামরিক সরঞ্জাম কেনার মাত্রা বাড়িয়েছে ভারত, কিন্তু সম্পর্কের সেই মাত্রাটা আর ফিরে আসেনি।
এই পরিবর্তিত ভূ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে রাশিয়া। তারা এখন একে অন্যের উদ্বেগে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে। যেমন, পুতিন ২০১৬ সালে চীনে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, দক্ষিণ চীন সাগরে বাইরের হস্তক্ষেপে শুধু ক্ষতিই বাড়বে। আর অন্যদিকে, চীনের আনুষ্ঠানিক অবস্থান হলো রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগগুলোকে পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিবেচনায় নেয়া উচিত।
আবার আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র সফল হলে সেটা রাশিয়ার জন্য নেতিবাচক হতো। তালেবান ও পাকিস্তানে তাদের সমর্থকদের জন্যও সেটা ভালো হতো না। রাশিয়া এখানে এমন একটা পথ বেছে নিয়েছে, সেটা বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যের মধ্যে তাদের স্বার্থ হাসিল করবে। ফলে দক্ষিণ এশিয়াকে ভারতের দৃষ্টিতে না দেখে, আফগান প্রিজমের ভেতর দিয়ে এ অঞ্চলকে দেখার কৌশল নিয়েছে রাশিয়া। ফলে রাশিয়া এখানে ২০১৬ সালে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে এবং আফগান শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে, যেটাকে তারা বলছে ‘মস্কো প্রসেস’।
মজার ব্যাপার হলো প্রথম বৈঠকে রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান অংশ নিয়েছিল। পরে অনেক উত্থান পতনের পর ২০১৭ সালে এসে আফগান সরকার, ভারত ও মধ্য এশিয়ার কিছু দেশ এতে যুক্ত হয়। পরের বছর তালেবানদেরও সমমানের পক্ষ হিসেবে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এবং সে কারণে কাবুল বৈঠক বয়কট করে।
আফগানিস্তানের ব্যাপারে রাশিয়া-পাকিস্তান সহযোগিতার অর্থ হলো সেখান থেকে ভারতের স্বার্থকে দূর করে দেয়া। এখানে ভারত নিজেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে, কারণ তারাই একমাত্র দেশ যারা তালেবানদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করেনি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ও ইরান সবাই আলোচনায় অংশ নিয়েছে। নাকি তালেবানরাই ভারতের সাথে আলোচনায় আগ্রহী নয়?
আফগান-ইরান সমাধানের ব্যাপারে ভারতের যে একতরফা অবস্থান, সেখানে আঞ্চলিক পক্ষগুলোর স্বার্থ ও নিরাপত্তা উদ্বেগকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সে কারণে তারা এ অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। সবকিছু যদি এভাবেই চলতে থাকে, এবং যতক্ষণ না ভারত আফগানিস্তানের ব্যাপারে তাদের বিচ্ছিন্নতার নীতি পরিত্যাগ করতে রাজি হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পরস্পরের কাছাকাছি আসার সুযোগ রয়েছে, আর তাদের সাথে থাকবে চীন ও রাশিয়া। আর রাশিয়া যেহেতু পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সরাসরি প্রতিবেশী, আর তাদের মাঝখানে বন্ধুত্বপূর্ণ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে, সে কারণে এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটি স্থলপথে ভারতের রাশিয়ায় যাওয়াকে প্রায় অসম্ভব করে তুলবে। ভারতের জন্য রাশিয়ায় পৌঁছার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম পথ হলো সেখানে দক্ষিণ চীন সাগর এবং নর্দার্ন সি রুট।
No comments