‘এশিয়ান যুগ’ এবং চীন ও ভারতের ভূমিকা by রবি বুথথালিঙ্গম
কিছু
সভ্যতা বা জাতি কেন বিকশিত হয় এবং অন্যরা কেন ম্লান হয়ে পড়ে? এর একটি জবাব
আছে অধ্যাপক যোশেফ নিধামের কাছে। চীনের বিজ্ঞান ও সভ্যতা নিয়ে ব্যাপক
গবেষণার কারণে চীনা লোকজনের কাছে তিনি বেশ সুপরিচিত। বিশ্বখ্যাত চীনবিদ
হওয়ার আগে তিনি ছিলেন বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে দীর্ঘ
মেয়াদে বিবর্তন যুক্তি মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করবে। চীনা ইতিহাস নিয়ে তার
গবেষণাই তাকে সভ্যতাগত সফলতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রতিযোগিতা ও
সহযোগিতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাকে চিহ্নিত করার দিকে পরিচালিত
করে। যেসব জাতি ও সাম্রাজ্য এ ধরনের ভারসাম্য অর্জন করেছে, তাদের
প্রতিবেশীরা (ও এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বীরাও) গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে
পারে: খুব বেশি প্রতিযোগিতা ধ্বংসকর, খুব কম বিরোধ সৃষ্টিশীল। একইভাবে খুব
বেশি সহযোগিতা নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করে, আর খুব সামান্য নির্ভরতা সৃষ্টি করে
বিচ্ছিন্নতা। ফলে নিধামের দূরদৃষ্টি কিভাবে ভারত-চীন সম্পর্কে প্রয়োগ করা
যায়?
প্রথমত কোনো জাতিকে বিকশিত হতে হলে এর নেতাদের অবশ্যই তাদের দেশের জন্য উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ভিশন থাকতে হবে। এটা চীন ও ভারতের উভয়ের মধ্যেই স্পষ্টভাবে বিদ্যমান রয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের ‘চীনা স্বপ্ন’ দর্শন ও চীনা জাতীয় নব-উদ্দীপনা চীনা জনগণকে আলোড়িত করেছে। ভারতে সদ্য পুনঃনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘নয়া ভারত’ বিষয়ক তার দর্শন ইতোমধ্যেই জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। আর তার দেশের ৫০ ভাগের বেশি লোকের বয়স ২৫ বছরের নিচে।
দ্বিতীয়ত, মৌলিকভাবে চীন ও ভারতের ভিশন একে অপরের সাথে সঙ্ঘাতমূলক নয়। উভয়ের ভিশনেই তাদের জনগণের সমৃদ্ধি ও সার্বিক কল্যাণের দিকে নজর দেয়া হয়েছে। উভয় জাতিই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তি ও পারস্পরিক সমঝোতার ভাষায় কথা বলে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চীন-ভারত সহযোগিতার জন্য শক্তিশালী উদ্দীপক হলো উভয় দেশের প্রতি জোরালো বহিরাগত হুমকির অস্তিত্ব।
এসব হুমকি ভূ-রাজনৈতিক নয়, বরং সেগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী রোগের মতো অস্তিত্বগত। উভয়টিই বিপুল সংখ্যায় বিশ্বের জনসংখ্যা হ্রাস করে দিতে পারে। উল্লেখ্য, দুই দেশের মোট জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ ভাগ।
ভারত ও চীনের ভিশন সঙ্ঘাতমূলক না হলেও দুই দেশ কি তাদের নিজ নিজ লক্ষ্য অর্জনের জন্য এমন কোনো পদক্ষেপ কি গ্রহণ করবে যার ফলে তাদের মধ্যে সঙ্ঘাতের সৃষ্টি হয়? বস্তুত এমনটা হয়েছে, এ ধরনের সমস্যার অনেক উদাহরণ রয়েছে। এসব ইস্যু সত্যিই ব্যবস্থাপনাযোগ্য। আর অস্তিত্বগত হুমকিকে পরাজিত করার জন্য মূল লক্ষ্যের দিকে তাকানো ছাড়াই তারা তা করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ় অর্থনৈতিক শক্তি ও চরম বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন।
এ কারণে মারাত্মক মতপার্থক্য এড়িয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতির মাধ্যমে প্রতিযোগিতা/সহযোগিতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার দিকেই মনোযোগী হতে হবে চীন ও ভারতকে। আফ্রিকার একটি প্রবাদবাক্য আছে: দরজায় যখন ঝড় আঘাত হানছে, তখন কোনো পারিবারিক কলহ নয়।
তৃতীয়ত, ভারত ও চীন কিভাবে এ ধরনের অর্থনৈতিক পেশীশক্তি ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন নির্মাণ করতে পারে? শুরুতে বিশ্বের প্রথম ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দুই দেশের প্রয়োজন বিশ্বব্যাংকের ভাষায় পিপিপির আলোকে ব্যাপক ও গভীর অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা। এ ব্যাপারে ভারত আছে সুবিধাজনক অবস্থায়। দেশটির অর্থনীতির চীনের এক-পঞ্চমাংশ। তারা উন্নয়ন রেখায় এক দশক পিছিয়ে আছে। ফলে চীনা বিনিয়োগ, উদ্যোগ ও প্রযুক্তি থেকে ভারত উপকৃত হতে পারে। আবার দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে ভারতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে চীন কিভাবে লাভবান হতে পারে, তার ৫টি ক্ষেত্র এখানে উল্লেখ করছি।
প্রথমত, চীনা প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উচ্চাভিলাষী, এটি ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। তবে এটি চীনের সার্বিক ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে দ্রুত। চীনের অভ্যন্তরীণ ঋণ, অতিরিক্ত সামর্থ্য ও উচ্চ মূলধনের ফলাফল অনুপাত বিশ্লেষণ করলে এর মানে হবে এই যে চীনের ভবিষ্যত বিনিয়োগ অবশ্যই হবে কম ঝুঁকিপূর্ণ ও অনেক বেশি মুনাফামূলক। ভারত এসব শর্ত পূরণ করতে পারবে। ভারত অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ গ্রহণ করতে পারবে, রাজনৈতিকভাবে সে স্থিতিশীল। দেশটির আর্থিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত, আইনগত কাঠামোর ফলে এখানে বিনিয়োগে ঝুঁকি কম। ভারতের বিশাল বাজারও লাভজনক বিবেচিত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, চীন একটি জটিল দেশ এবং অন্য দিক থেকে ভারতও তাই। তবে চীনা শিল্প, বিশেষ করে টেলিকম ও ই-কমার্স দেখিয়ে দিয়েছে, তারা কিভাবে চীনের জন্য লাভজনক হতে পারে। চীনও ভারতে উৎপাদিত সামগ্রী থেকে ফায়দা হাসিল করতে পারে।
তৃতীয়ত, আঞ্চলিক পর্যায়ে রিজিওন্যাল কমপ্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) চীন, ভারত, জাপান ও আসিয়ান দেশগুলোর জন্য ভালো সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। এই অঞ্চল ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম গতির প্রবৃদ্ধি সৃষ্টি করেছে।
চতুর্থত, আঞ্চলিক পর্যায়ে চীন ও ভারতের কানেকটিভিটি ও অবকাঠামো অনেক কম ব্যয়ে অর্জন করতে পারে। তখন প্রতিবেশী দেশগুলো দেখবে যে এই দুই দেশ সহযোগিতা যেমন করতে পারে, প্রতিযোগিতাও করতে পারে। এটা হবে সবার জন্য মূল্যবান ও নতুন অভিজ্ঞতা।
সবশেষে আসে আধুনিক বিজ্ঞানের কথা। নিধামের ইতিহাসের মতো এটিই আমাদের একই শিক্ষা দেয়। জেন মেশিন নামের বইতে নোবেল পুরস্কারজয়ী রসায়নবিদ অধ্যাপক বেনকি রামকৃষ্ণান বলেছেন, প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার মধ্যে পার্থক্য খুব একটা পরিষ্কার নয়। এমনকি বিজ্ঞানীরা যখন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, তখন আসলে তারা একজনে অপরজনের আবিষ্কারের সহায়তা গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে তারা একে অপরকে সাহায্য করে।
অর্থাৎ পানির দুষ্প্রাপ্যতা, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ নগরায়ন, রোগের বোঝা, বয়স/জেন্ডার ভারসাম্যহীনতাসহ নানা অভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় চীন ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বিপুল ক্ষেত্র রয়ে গেছে। কেবল বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনই ওইসব অস্তিত্বগত সমস্যা মোকাবিলার জন্য অভিন্ন ও ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের প্রবল উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি মহাকাশবিষয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে, তবে ভারত ও চীন কেন এ ধরনের সহযোগিতায় ইতস্ততা করবে?
আশা করা যায়, দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা/সহযোগিতার ভারসাম্য পুনঃনির্ধারণ করতে পারে, চীন-ভারত সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রে শক্তিশালী ও সৃষ্টিশীল আইডিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
>>>লেখক: কোষাধ্যাক্ষ, অনারারি ফেলো, ইনস্টিটিউট অব চায়নিজ স্টাডিজ, দিল্লি
প্রথমত কোনো জাতিকে বিকশিত হতে হলে এর নেতাদের অবশ্যই তাদের দেশের জন্য উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ভিশন থাকতে হবে। এটা চীন ও ভারতের উভয়ের মধ্যেই স্পষ্টভাবে বিদ্যমান রয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের ‘চীনা স্বপ্ন’ দর্শন ও চীনা জাতীয় নব-উদ্দীপনা চীনা জনগণকে আলোড়িত করেছে। ভারতে সদ্য পুনঃনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘নয়া ভারত’ বিষয়ক তার দর্শন ইতোমধ্যেই জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। আর তার দেশের ৫০ ভাগের বেশি লোকের বয়স ২৫ বছরের নিচে।
দ্বিতীয়ত, মৌলিকভাবে চীন ও ভারতের ভিশন একে অপরের সাথে সঙ্ঘাতমূলক নয়। উভয়ের ভিশনেই তাদের জনগণের সমৃদ্ধি ও সার্বিক কল্যাণের দিকে নজর দেয়া হয়েছে। উভয় জাতিই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তি ও পারস্পরিক সমঝোতার ভাষায় কথা বলে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চীন-ভারত সহযোগিতার জন্য শক্তিশালী উদ্দীপক হলো উভয় দেশের প্রতি জোরালো বহিরাগত হুমকির অস্তিত্ব।
এসব হুমকি ভূ-রাজনৈতিক নয়, বরং সেগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী রোগের মতো অস্তিত্বগত। উভয়টিই বিপুল সংখ্যায় বিশ্বের জনসংখ্যা হ্রাস করে দিতে পারে। উল্লেখ্য, দুই দেশের মোট জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ ভাগ।
ভারত ও চীনের ভিশন সঙ্ঘাতমূলক না হলেও দুই দেশ কি তাদের নিজ নিজ লক্ষ্য অর্জনের জন্য এমন কোনো পদক্ষেপ কি গ্রহণ করবে যার ফলে তাদের মধ্যে সঙ্ঘাতের সৃষ্টি হয়? বস্তুত এমনটা হয়েছে, এ ধরনের সমস্যার অনেক উদাহরণ রয়েছে। এসব ইস্যু সত্যিই ব্যবস্থাপনাযোগ্য। আর অস্তিত্বগত হুমকিকে পরাজিত করার জন্য মূল লক্ষ্যের দিকে তাকানো ছাড়াই তারা তা করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ় অর্থনৈতিক শক্তি ও চরম বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন।
এ কারণে মারাত্মক মতপার্থক্য এড়িয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতির মাধ্যমে প্রতিযোগিতা/সহযোগিতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার দিকেই মনোযোগী হতে হবে চীন ও ভারতকে। আফ্রিকার একটি প্রবাদবাক্য আছে: দরজায় যখন ঝড় আঘাত হানছে, তখন কোনো পারিবারিক কলহ নয়।
তৃতীয়ত, ভারত ও চীন কিভাবে এ ধরনের অর্থনৈতিক পেশীশক্তি ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন নির্মাণ করতে পারে? শুরুতে বিশ্বের প্রথম ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দুই দেশের প্রয়োজন বিশ্বব্যাংকের ভাষায় পিপিপির আলোকে ব্যাপক ও গভীর অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা। এ ব্যাপারে ভারত আছে সুবিধাজনক অবস্থায়। দেশটির অর্থনীতির চীনের এক-পঞ্চমাংশ। তারা উন্নয়ন রেখায় এক দশক পিছিয়ে আছে। ফলে চীনা বিনিয়োগ, উদ্যোগ ও প্রযুক্তি থেকে ভারত উপকৃত হতে পারে। আবার দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে ভারতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে চীন কিভাবে লাভবান হতে পারে, তার ৫টি ক্ষেত্র এখানে উল্লেখ করছি।
প্রথমত, চীনা প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উচ্চাভিলাষী, এটি ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। তবে এটি চীনের সার্বিক ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে দ্রুত। চীনের অভ্যন্তরীণ ঋণ, অতিরিক্ত সামর্থ্য ও উচ্চ মূলধনের ফলাফল অনুপাত বিশ্লেষণ করলে এর মানে হবে এই যে চীনের ভবিষ্যত বিনিয়োগ অবশ্যই হবে কম ঝুঁকিপূর্ণ ও অনেক বেশি মুনাফামূলক। ভারত এসব শর্ত পূরণ করতে পারবে। ভারত অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ গ্রহণ করতে পারবে, রাজনৈতিকভাবে সে স্থিতিশীল। দেশটির আর্থিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত, আইনগত কাঠামোর ফলে এখানে বিনিয়োগে ঝুঁকি কম। ভারতের বিশাল বাজারও লাভজনক বিবেচিত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, চীন একটি জটিল দেশ এবং অন্য দিক থেকে ভারতও তাই। তবে চীনা শিল্প, বিশেষ করে টেলিকম ও ই-কমার্স দেখিয়ে দিয়েছে, তারা কিভাবে চীনের জন্য লাভজনক হতে পারে। চীনও ভারতে উৎপাদিত সামগ্রী থেকে ফায়দা হাসিল করতে পারে।
তৃতীয়ত, আঞ্চলিক পর্যায়ে রিজিওন্যাল কমপ্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) চীন, ভারত, জাপান ও আসিয়ান দেশগুলোর জন্য ভালো সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। এই অঞ্চল ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম গতির প্রবৃদ্ধি সৃষ্টি করেছে।
চতুর্থত, আঞ্চলিক পর্যায়ে চীন ও ভারতের কানেকটিভিটি ও অবকাঠামো অনেক কম ব্যয়ে অর্জন করতে পারে। তখন প্রতিবেশী দেশগুলো দেখবে যে এই দুই দেশ সহযোগিতা যেমন করতে পারে, প্রতিযোগিতাও করতে পারে। এটা হবে সবার জন্য মূল্যবান ও নতুন অভিজ্ঞতা।
সবশেষে আসে আধুনিক বিজ্ঞানের কথা। নিধামের ইতিহাসের মতো এটিই আমাদের একই শিক্ষা দেয়। জেন মেশিন নামের বইতে নোবেল পুরস্কারজয়ী রসায়নবিদ অধ্যাপক বেনকি রামকৃষ্ণান বলেছেন, প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার মধ্যে পার্থক্য খুব একটা পরিষ্কার নয়। এমনকি বিজ্ঞানীরা যখন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, তখন আসলে তারা একজনে অপরজনের আবিষ্কারের সহায়তা গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে তারা একে অপরকে সাহায্য করে।
অর্থাৎ পানির দুষ্প্রাপ্যতা, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ নগরায়ন, রোগের বোঝা, বয়স/জেন্ডার ভারসাম্যহীনতাসহ নানা অভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় চীন ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বিপুল ক্ষেত্র রয়ে গেছে। কেবল বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনই ওইসব অস্তিত্বগত সমস্যা মোকাবিলার জন্য অভিন্ন ও ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের প্রবল উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি মহাকাশবিষয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে, তবে ভারত ও চীন কেন এ ধরনের সহযোগিতায় ইতস্ততা করবে?
আশা করা যায়, দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা/সহযোগিতার ভারসাম্য পুনঃনির্ধারণ করতে পারে, চীন-ভারত সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রে শক্তিশালী ও সৃষ্টিশীল আইডিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
>>>লেখক: কোষাধ্যাক্ষ, অনারারি ফেলো, ইনস্টিটিউট অব চায়নিজ স্টাডিজ, দিল্লি
No comments