বৌদ্ধ মতবাদের আঘাতে রক্তাক্ত শ্রীলংকার মুসলিমরা by আনা পারারাজাসিঙ্গম
ইস্টার
সানডের বোমা হামলার পর শ্রীলংকা আরও ভঙ্গুর, ক্ষতবিক্ষত ও মেরুকরণের শিকার
হয়েছে কারণ দেশের মুসলিমদের উপর এখন হামলা হচ্ছে আর তারা সংখ্যাগুরু
সিংহলী বৌদ্ধদের সহিংসতার শিকার হচ্ছে।
যদিও ইস্টার সানডেতে হামলার শিকার হয়েছিল খ্রিস্টানরা, কিন্তু এখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে হামলা ও সহিংসতা চলছে, সেখানে সবার সামনে রয়েছে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যারা মুসলিম বিরোধী সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছিল, তারা এখন ইস্টার সানডের কারণে মুসলিম বিরোধী সহিংসতা চালানোর ক্ষেত্রে বড় একটা অজুহাত পেয়ে গেছে।
মুসলিম-বিরোধী সহিংসতা দমনে নজর দিচ্ছে না রাষ্ট্র
ইস্টার সানডে হামলার পর প্রিভেনশান অব টেররিজম অ্যাক্টের অধীনে শত শত মুসলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আইনে ওয়ারেন্ট বা তথ্য প্রমাণ ছাড়াই গ্রেফতার ও বন্দি করে রাখার অধিকার দেয়া হয়েছে পুলিশকে। ২৩ মে সিংহলী বৌদ্ধপন্থী পত্রিকা হিসেবে পরিচিত দিভাইনা তাদের প্রথম পাতায় একটি রিপোর্ট ছাপে যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, একজন মুসলিম চিকিৎসক ৪০০০ বৌদ্ধ নারীকে বন্ধ্যা করে দিয়েছেন। দুই দিন পর, এই অভিযোগের কোন প্রমাণ না পাওয়া সত্বেও সেগু শিহাবদিন মোহাম্মদ শাফি নামের ওই ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশ তখন অভিযোগের তথ্য প্রমাণ সরবরাহের আহ্বান জানায়।
পরিস্থিতির আরও অবনতি হয় যখন উত্তেজিত জনতা বেশ কিছু মুসলিমের সম্পত্তি ধ্বংস করে।
প্রথমবারের মতো মুসলিম নেতারা সম্মিলিতভাবে এর প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন। সরকারের মন্ত্রীদের পদ থেকে এবং দুই প্রদেশের গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তারা। ক্যাবিনেটের সিনিয়র সদস্য ও শ্রীলংকা মুসলিম কংগ্রেসের (এসএলএমএম) নেতা রাউফ হাকিম জানিয়েছেন যে, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের দমনে সরকার কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সরকারকে চাপ দেয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে তারা পদত্যাগ করেছেন।
সহিংসতা দমনে সরকারের অনীহার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে, যখন চলমান মুসলিম-বিরোধী সহিংসতার মধ্যেই গত ২৩ মে বিবিএসের প্রধান গালাগোদা আত্থে নানাসারা থেরোকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা ঘোষণা করে মুক্তি দেন। মুসলিম বিরোধী সহিংসতা উসকে দেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সিংহলী বৌদ্ধদের আধিপত্য
রাউফ হাকিমের দাবি হলো উগ্র জাতীয়তাবাদীদের নিয়ন্ত্রণের কোন চেষ্টা হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং সে কারণের সংখ্যালঘুদের ক্ষতি বাড়বে এবং সেটা বিরোধীদের হাতকে আরও শক্তিশালী করবে। এর কারণ হলো শ্রীলংকার উত্তর-ঔপনিবেশিক ইতিহাস এমন আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে যে, সেখানে সিংহলী বৌদ্ধদের আধিপত্যকে সমর্থন করা হয়েছে। এবং যে দলই এই আদর্শের প্রতি ‘দুর্বলতা’ দেখিয়েছে, পরের নির্বাচনে তারা অসুবিধায় পড়ে গেছে।
সিংহলীদের আধিপত্য
সিংহলী বৌদ্ধদের আধিপত্যের কারণে অসুবিধায় থাকা শ্রীলংকান মুসলিমরা তাদের অধিকারের দাবি না জানিয়ে বরং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে নিজেদের সম্প্রদায়ের জন্য ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করছে। সিংহলী-প্রধান দুই রাজনৈতিক দল মধ্য বামপন্থী শ্রীলংকা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি) এবং ডান-ঘেঁষা ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) উভয়ের কাছেই এই অবস্থানটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। মুসলিম নেতারা এই দলগুলোকে মুসলিম ভোটারদের ভোটগুলো পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে এবং প্রতিদানে তারা সরকারে অংশ নিয়েছে। পরে, এই ভোট ব্যাংকগুলো আগের দলগুলোর সাথে থাকেনি বরং নিজেদের একটা মুসলিম দল শ্রীলংকা মুসলিম কংগ্রেসের (এসএলএমএম) সাথে চলে এসেছে। যে দল এসএলএমএমকে বেশি সুবিধা দেবে, তাদেরকে সরকার গঠনে সহায়তা করেছে এসএলএমএম। কোন বামপন্থী, মধ্যমপন্থী বা ডানপন্থী আদর্শের কাছে দায়বদ্ধ থাকেনি তারা। শ্রীলংকা রাষ্ট্র ও তামিল জনগণের মধ্যে যুদ্ধের সময় মুসলিম সম্প্রদায় সিংহলী প্রধান রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের এ কৌশল তাদেরকে যুদ্ধের সময় টিকে থাকতে সহায়তা করে এবং তাদের বিকাশেও সহায়তা করে।
বৌদ্ধদের বিজয়াকাঙ্ক্ষা
শ্রীলংকা রাষ্ট্রের তামিল-বিরোধী পদক্ষেপ – যার মধ্যে আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ রয়েছে, এই পদক্ষেপের যৌক্তিকতা হলো পাবলিক সার্ভিস ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের প্রতিনিধিত্ব আনুপাতিক হারে হয়নি। অন্যদিকে মুসলিম-বিরোধী মনোভাব গড়ে ওঠার কারণ হলো সিংহলী বৌদ্ধদের চেয়ে মুসলিমদের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং এ কারণে সিংহলী বৌদ্ধরা তাদের আধিপত্য হারাতে পারে। সেই সাথে, এটাও মনে করা হয় যে, জনসংখ্যার অনুপাতের চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করেছে মুসলিমরা এবং তারা মানুষকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছে, এবং তারা একটা বিচ্ছিন্ন গ্রুপ যারা শ্রীলংকার মূলধারার সংস্কৃতির সাথে মিশতে পারেনি।
আধিপত্য, অলীক ধারণা এবং বিজয়ের আকাঙ্ক্ষার কারণে শ্রীলংকার বৌদ্ধরা হয়তো মুসলিমদের বিরুদ্ধে আরও সহিংসতাকে উসকে দেবে, যেটা শ্রীলংকার ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে হয়তো আরও দুর্বল করে দিতে পারে।
যদিও ইস্টার সানডেতে হামলার শিকার হয়েছিল খ্রিস্টানরা, কিন্তু এখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে হামলা ও সহিংসতা চলছে, সেখানে সবার সামনে রয়েছে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যারা মুসলিম বিরোধী সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছিল, তারা এখন ইস্টার সানডের কারণে মুসলিম বিরোধী সহিংসতা চালানোর ক্ষেত্রে বড় একটা অজুহাত পেয়ে গেছে।
মুসলিম-বিরোধী সহিংসতা দমনে নজর দিচ্ছে না রাষ্ট্র
ইস্টার সানডে হামলার পর প্রিভেনশান অব টেররিজম অ্যাক্টের অধীনে শত শত মুসলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আইনে ওয়ারেন্ট বা তথ্য প্রমাণ ছাড়াই গ্রেফতার ও বন্দি করে রাখার অধিকার দেয়া হয়েছে পুলিশকে। ২৩ মে সিংহলী বৌদ্ধপন্থী পত্রিকা হিসেবে পরিচিত দিভাইনা তাদের প্রথম পাতায় একটি রিপোর্ট ছাপে যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, একজন মুসলিম চিকিৎসক ৪০০০ বৌদ্ধ নারীকে বন্ধ্যা করে দিয়েছেন। দুই দিন পর, এই অভিযোগের কোন প্রমাণ না পাওয়া সত্বেও সেগু শিহাবদিন মোহাম্মদ শাফি নামের ওই ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশ তখন অভিযোগের তথ্য প্রমাণ সরবরাহের আহ্বান জানায়।
পরিস্থিতির আরও অবনতি হয় যখন উত্তেজিত জনতা বেশ কিছু মুসলিমের সম্পত্তি ধ্বংস করে।
প্রথমবারের মতো মুসলিম নেতারা সম্মিলিতভাবে এর প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন। সরকারের মন্ত্রীদের পদ থেকে এবং দুই প্রদেশের গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তারা। ক্যাবিনেটের সিনিয়র সদস্য ও শ্রীলংকা মুসলিম কংগ্রেসের (এসএলএমএম) নেতা রাউফ হাকিম জানিয়েছেন যে, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের দমনে সরকার কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সরকারকে চাপ দেয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে তারা পদত্যাগ করেছেন।
সহিংসতা দমনে সরকারের অনীহার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে, যখন চলমান মুসলিম-বিরোধী সহিংসতার মধ্যেই গত ২৩ মে বিবিএসের প্রধান গালাগোদা আত্থে নানাসারা থেরোকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা ঘোষণা করে মুক্তি দেন। মুসলিম বিরোধী সহিংসতা উসকে দেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সিংহলী বৌদ্ধদের আধিপত্য
রাউফ হাকিমের দাবি হলো উগ্র জাতীয়তাবাদীদের নিয়ন্ত্রণের কোন চেষ্টা হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং সে কারণের সংখ্যালঘুদের ক্ষতি বাড়বে এবং সেটা বিরোধীদের হাতকে আরও শক্তিশালী করবে। এর কারণ হলো শ্রীলংকার উত্তর-ঔপনিবেশিক ইতিহাস এমন আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে যে, সেখানে সিংহলী বৌদ্ধদের আধিপত্যকে সমর্থন করা হয়েছে। এবং যে দলই এই আদর্শের প্রতি ‘দুর্বলতা’ দেখিয়েছে, পরের নির্বাচনে তারা অসুবিধায় পড়ে গেছে।
সিংহলীদের আধিপত্য
সিংহলী বৌদ্ধদের আধিপত্যের কারণে অসুবিধায় থাকা শ্রীলংকান মুসলিমরা তাদের অধিকারের দাবি না জানিয়ে বরং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে নিজেদের সম্প্রদায়ের জন্য ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করছে। সিংহলী-প্রধান দুই রাজনৈতিক দল মধ্য বামপন্থী শ্রীলংকা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি) এবং ডান-ঘেঁষা ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) উভয়ের কাছেই এই অবস্থানটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। মুসলিম নেতারা এই দলগুলোকে মুসলিম ভোটারদের ভোটগুলো পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে এবং প্রতিদানে তারা সরকারে অংশ নিয়েছে। পরে, এই ভোট ব্যাংকগুলো আগের দলগুলোর সাথে থাকেনি বরং নিজেদের একটা মুসলিম দল শ্রীলংকা মুসলিম কংগ্রেসের (এসএলএমএম) সাথে চলে এসেছে। যে দল এসএলএমএমকে বেশি সুবিধা দেবে, তাদেরকে সরকার গঠনে সহায়তা করেছে এসএলএমএম। কোন বামপন্থী, মধ্যমপন্থী বা ডানপন্থী আদর্শের কাছে দায়বদ্ধ থাকেনি তারা। শ্রীলংকা রাষ্ট্র ও তামিল জনগণের মধ্যে যুদ্ধের সময় মুসলিম সম্প্রদায় সিংহলী প্রধান রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের এ কৌশল তাদেরকে যুদ্ধের সময় টিকে থাকতে সহায়তা করে এবং তাদের বিকাশেও সহায়তা করে।
বৌদ্ধদের বিজয়াকাঙ্ক্ষা
শ্রীলংকা রাষ্ট্রের তামিল-বিরোধী পদক্ষেপ – যার মধ্যে আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ রয়েছে, এই পদক্ষেপের যৌক্তিকতা হলো পাবলিক সার্ভিস ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের প্রতিনিধিত্ব আনুপাতিক হারে হয়নি। অন্যদিকে মুসলিম-বিরোধী মনোভাব গড়ে ওঠার কারণ হলো সিংহলী বৌদ্ধদের চেয়ে মুসলিমদের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং এ কারণে সিংহলী বৌদ্ধরা তাদের আধিপত্য হারাতে পারে। সেই সাথে, এটাও মনে করা হয় যে, জনসংখ্যার অনুপাতের চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করেছে মুসলিমরা এবং তারা মানুষকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছে, এবং তারা একটা বিচ্ছিন্ন গ্রুপ যারা শ্রীলংকার মূলধারার সংস্কৃতির সাথে মিশতে পারেনি।
আধিপত্য, অলীক ধারণা এবং বিজয়ের আকাঙ্ক্ষার কারণে শ্রীলংকার বৌদ্ধরা হয়তো মুসলিমদের বিরুদ্ধে আরও সহিংসতাকে উসকে দেবে, যেটা শ্রীলংকার ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে হয়তো আরও দুর্বল করে দিতে পারে।
No comments