ভারত ও পাকিস্তানের এখন জোরালো আলোচনায় বসার সময় by ভি সুদর্শন
সিমলা
চুক্তিকে কোনো না কোনোভাবে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করা হয়ে থাকতে পারে। আমরা
যদি একে সামনে এগুনোর নির্দেশিকা হিসেবে বলা অব্যাহতও রাখি, তবুও এটি মৃত
বিষয়। ১৯৭২ সালের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের
প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর মধ্যে সই হওয়া চুক্তিটি লঙ্ঘনেই বেশি
ব্যবহৃত হয়েছে। এতে দুই দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তাদের সম্পর্কের
মধ্যকার সঙ্ঘাতের অবসান করা হবে, তারা বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্প্রীতিপূর্ণ
সম্পর্ক বিকশিত করবে, উপমহাদেশে টেকসই শান্তি স্থাপন করবে। এতে বলা হয়, দুই
দেশের মধ্যকার যেকোনো সমস্যার চূড়ান্ত নিস্পত্তিতে কোনো পক্ষই একতরফাভাবে
পরিস্থিতি বদলাতে পারবে না, উভয় পক্ষকেই শান্তিপূর্ণ ও সম্প্রীতিপূর্ণ
সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য ক্ষতিকর সবকিছু বর্জন করতে হবে। এরপর এতে অকার্যকর
হলেও বেশ প্রশংসনীয় কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে
হাফিজ সাঈদ ও মাসুদ আজহার সন্ত্রাসী হিসেবে নয়, বরং পর্যটক হিসেবে ভারতে
যেতেন। নানা লঙ্ঘনের কারণে সিমলা চুক্তিটি পুরোপুরি বদলানো যেতে পারে।
বর্তমান সময়ে যৌক্তিকভাবেই ভারতের চেয়ে পাকিস্তানই ভারত ও কাশ্মির নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেশি বলে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দুই জাতির সন্ত্রাসবাদ নিয়েই বেশি আলোচনা করার কথা। কিন্তু ২০১১ সালে মুম্বাই বিস্ফোরণের পর তা শেষ হয়ে গেছে। তারপর থেকে পাকিস্তানের সাথে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী হচ্ছে না ভারত। সম্ভবত এ কারণেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২২ জুলাই ওভাল অফিসে জানিয়েছেন, তিনি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারত নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প বলেন, আমরা কিভাবে সহায়তা করতে পারি, তা আমরা ভেবে দেখছি। তবে আমি মনে করি, এটি এমন বিষয়, যা নিয়ে তাদেরকে একত্রিত করা যেতে পারে।
কার্গিলের সময় ক্লিনটনের ভূমিকা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো একটু বেশিই বলে ফেলেছেন। তবে কার্গিলে সিমলা চুক্তি লঙ্ঘনের সময় এক আমেরিকান প্রেসিডেন্টই পাকিস্তানি সৈন্যদের ফিরিয়ে নিতে সহায়তা করেছিলেন। ক্লিনটন এই অঞ্চলকে অভিহিত করতেন বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হিসেবে। কার্গিল যুদ্ধ বড় হতে শুরু করলে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি উভয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি শরিফকে বলেন নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ফিরে যেতে এবং বাজপেয়িকে বলেন রণাঙ্গন আর না বাড়াতে।
সিমলা চুক্তির ২৭তম বার্ষিকীতে, ১৯৯৯ সালের ২ জুলাই, ভারতীয় সেনাবাহিনী কার্গিলে ত্রিমুখী আক্রমণ শুরু করলে ক্লিনটনের শরণাপন্ন হন শরিফ। তিনি চান, আমেরিকা যাতে এতে হস্তক্ষেপ করে। এর জন্য তিনি তার পরিবারসহ ওয়াশিংটনে যেতে প্রস্তুত হয়েছিলেন যাতে প্রয়োজনে তিনি প্রবাসী প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন। ক্লিনটন প্রশাসনের দুই কূটনীতিবিদ, ব্রুস রিডেল ও স্ট্রব তালবট, এ ব্যাপারে মনমুগ্ধকর বর্ণনা দিয়েছেন। তারা লিখেছেন যে আমেরিকানরা শরিফকে বলেন, তিনি যদি নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করতে রাজি না থাকেন, তবে তিনি যেন না আসেন। শরিফ আমেরিকানদের বলেন যে তিনি যেকোনোভাবেই আসতে চান। বাজপেয়িকে প্রতিটি ঘটনা জানিয়ে যাচ্ছিলেন ক্লিনটন। বাজপেয়ি তখন শান্তির ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। তিনি বাস ট্রিপে লাহোর গিয়ে খুব ঝুঁকি নিয়েছিলেন, আর পাকিস্তান তাকে পুরস্কৃত করল এলওসি বদলানোর জন্য কার্গিল আক্রমণ করে সিমলা চুক্তি লঙ্ঘন করে। ক্লিনটনকে বাজপেয়ি বলেননি যে এটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়, কাজেই এ নিয়ে তার নাক গলানো উচিত নয়।
শরিফ চেয়েছিলেন, সৈন্য প্রত্যাহারের বিনিময়ে কাশ্মিরের একটি সময়-নির্দিষ্ট সমাধানের প্রতিশ্রুতি লাভ করেন। এতে ক্লিনটন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিলেন, তাকে যেন ব্ল্যাকমেইল করা না হয়। তাদের মধ্যে আলোচনার বিরতিতে ক্লিনটন বাজপেয়িকে সব কথা জানান। তিনি বাজপেয়ির কাছে জানতে চান, তিনি কী চান। শরিফের সাথে আবার আলোচনার সময় ক্লিনটন তাকে বলেন, পাকিস্তান যদি প্রত্যাহার না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করবে এবং তারা পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছে। শরিফ বলেন, তিনি তার জীবন নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। তবে তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সৈন্য প্রত্যাহার করতে রাজি হন। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বাজপেয়িকে খবরটি জানান। ভারতের জন্য কার্গিল থেকে পাকিস্তানকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের আভাস
প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন কি মধ্যস্ততা করেছিলেন? নাকি তিনি হস্তক্ষেপ করেছিলেন? নাকি তিনি সিমলা চু্ক্তির দ্বিপক্ষীয় সমাধানের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন? ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্ত করার আগে ভারতকে একটি ভাবার বিষয় দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, আমরা কিছু সত্যিই ভালো খবর দিচ্ছি। আমি মনে করি, বিষয়টি সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। অনেক দিন ধরেই তা চলছে। এর সমাপ্তি হওয়া উচিত। আমরা তাদেরকে সহায়তা করছি।
আমাদের স্বীকার করে নিতেই হবে যে সিমলা চুক্তি সই করার পর দুনিয়া অনেক বদলে গেছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর পশ্চিম সীমান্তে দখল করা ভূমি ফিরিয়ে দিয়েছে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন এলওসি অনেক দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাব নিয়ে এখন খুব বেশি আলোচনা হয় না। এখন বেশি আলোচনা হয় সিয়াচেন, স্যার ক্রিক, ওয়ালার ব্যারেজ প্রশ্নে সমন্বিত সংলাপ পদ্ধতি নিয়ে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক চুক্তি হওয়া অনেক দিন ধরে ঝুলে রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সূত্রই যদি অগ্রসর হওয়ার পথ হয়, তাহলে এখনই সেই সময় নয় কি?
বর্তমান সময়ে যৌক্তিকভাবেই ভারতের চেয়ে পাকিস্তানই ভারত ও কাশ্মির নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেশি বলে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দুই জাতির সন্ত্রাসবাদ নিয়েই বেশি আলোচনা করার কথা। কিন্তু ২০১১ সালে মুম্বাই বিস্ফোরণের পর তা শেষ হয়ে গেছে। তারপর থেকে পাকিস্তানের সাথে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী হচ্ছে না ভারত। সম্ভবত এ কারণেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২২ জুলাই ওভাল অফিসে জানিয়েছেন, তিনি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারত নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প বলেন, আমরা কিভাবে সহায়তা করতে পারি, তা আমরা ভেবে দেখছি। তবে আমি মনে করি, এটি এমন বিষয়, যা নিয়ে তাদেরকে একত্রিত করা যেতে পারে।
কার্গিলের সময় ক্লিনটনের ভূমিকা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো একটু বেশিই বলে ফেলেছেন। তবে কার্গিলে সিমলা চুক্তি লঙ্ঘনের সময় এক আমেরিকান প্রেসিডেন্টই পাকিস্তানি সৈন্যদের ফিরিয়ে নিতে সহায়তা করেছিলেন। ক্লিনটন এই অঞ্চলকে অভিহিত করতেন বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হিসেবে। কার্গিল যুদ্ধ বড় হতে শুরু করলে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি উভয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি শরিফকে বলেন নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ফিরে যেতে এবং বাজপেয়িকে বলেন রণাঙ্গন আর না বাড়াতে।
সিমলা চুক্তির ২৭তম বার্ষিকীতে, ১৯৯৯ সালের ২ জুলাই, ভারতীয় সেনাবাহিনী কার্গিলে ত্রিমুখী আক্রমণ শুরু করলে ক্লিনটনের শরণাপন্ন হন শরিফ। তিনি চান, আমেরিকা যাতে এতে হস্তক্ষেপ করে। এর জন্য তিনি তার পরিবারসহ ওয়াশিংটনে যেতে প্রস্তুত হয়েছিলেন যাতে প্রয়োজনে তিনি প্রবাসী প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন। ক্লিনটন প্রশাসনের দুই কূটনীতিবিদ, ব্রুস রিডেল ও স্ট্রব তালবট, এ ব্যাপারে মনমুগ্ধকর বর্ণনা দিয়েছেন। তারা লিখেছেন যে আমেরিকানরা শরিফকে বলেন, তিনি যদি নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করতে রাজি না থাকেন, তবে তিনি যেন না আসেন। শরিফ আমেরিকানদের বলেন যে তিনি যেকোনোভাবেই আসতে চান। বাজপেয়িকে প্রতিটি ঘটনা জানিয়ে যাচ্ছিলেন ক্লিনটন। বাজপেয়ি তখন শান্তির ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। তিনি বাস ট্রিপে লাহোর গিয়ে খুব ঝুঁকি নিয়েছিলেন, আর পাকিস্তান তাকে পুরস্কৃত করল এলওসি বদলানোর জন্য কার্গিল আক্রমণ করে সিমলা চুক্তি লঙ্ঘন করে। ক্লিনটনকে বাজপেয়ি বলেননি যে এটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়, কাজেই এ নিয়ে তার নাক গলানো উচিত নয়।
শরিফ চেয়েছিলেন, সৈন্য প্রত্যাহারের বিনিময়ে কাশ্মিরের একটি সময়-নির্দিষ্ট সমাধানের প্রতিশ্রুতি লাভ করেন। এতে ক্লিনটন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিলেন, তাকে যেন ব্ল্যাকমেইল করা না হয়। তাদের মধ্যে আলোচনার বিরতিতে ক্লিনটন বাজপেয়িকে সব কথা জানান। তিনি বাজপেয়ির কাছে জানতে চান, তিনি কী চান। শরিফের সাথে আবার আলোচনার সময় ক্লিনটন তাকে বলেন, পাকিস্তান যদি প্রত্যাহার না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করবে এবং তারা পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছে। শরিফ বলেন, তিনি তার জীবন নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। তবে তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সৈন্য প্রত্যাহার করতে রাজি হন। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বাজপেয়িকে খবরটি জানান। ভারতের জন্য কার্গিল থেকে পাকিস্তানকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের আভাস
প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন কি মধ্যস্ততা করেছিলেন? নাকি তিনি হস্তক্ষেপ করেছিলেন? নাকি তিনি সিমলা চু্ক্তির দ্বিপক্ষীয় সমাধানের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন? ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্ত করার আগে ভারতকে একটি ভাবার বিষয় দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, আমরা কিছু সত্যিই ভালো খবর দিচ্ছি। আমি মনে করি, বিষয়টি সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। অনেক দিন ধরেই তা চলছে। এর সমাপ্তি হওয়া উচিত। আমরা তাদেরকে সহায়তা করছি।
আমাদের স্বীকার করে নিতেই হবে যে সিমলা চুক্তি সই করার পর দুনিয়া অনেক বদলে গেছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর পশ্চিম সীমান্তে দখল করা ভূমি ফিরিয়ে দিয়েছে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন এলওসি অনেক দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাব নিয়ে এখন খুব বেশি আলোচনা হয় না। এখন বেশি আলোচনা হয় সিয়াচেন, স্যার ক্রিক, ওয়ালার ব্যারেজ প্রশ্নে সমন্বিত সংলাপ পদ্ধতি নিয়ে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক চুক্তি হওয়া অনেক দিন ধরে ঝুলে রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সূত্রই যদি অগ্রসর হওয়ার পথ হয়, তাহলে এখনই সেই সময় নয় কি?
১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তিতে সই করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো |
No comments