ফিরোজ রশিদের পুত্রবধূর ‘আত্মহত্যা’র চেষ্টা, নানা রহস্য by শুভ্র দেব

মেরিনা
তিন বছর আগে স্বামী কাজী শোয়েব রশিদের কাছ থেকে নিজেই ডিভোর্স নেন মেরিনা শোয়েব। এরপর স্বামীর ধানমণ্ডির বাসা থেকে চলে যান বাবা সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারীর বাসায়। সেখানে ঠাঁই না পেয়ে আবার ফিরে আসেন শোয়েব রশিদের বাসায়। ছেলে-মেয়ের সঙ্গে থাকার আকুতি  জানালে শোয়েব রশিদের পরিবার তা মেনে নেয়। এরপর থেকে ছেলে এবং মেয়ের সঙ্গে ওই বাড়িতেই থাকতেন মেরিনা। গত রোববার রাতে ওই বাড়ির একটি কক্ষ থেকে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। মেরিনা শোয়েব জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশিদের পুত্রবধু।
ফিরোজ রশীদের পরিবারের দাবি মেরিনা নিজের শরীরে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে এ ঘটনা নিয়ে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালে নেয়ার পর প্রথমে জানানো হয়েছিল তার পিঠে গুলি লেগেছে। কিন্তু পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পিঠে নয় তার পেটে গুলি লেগে পিঠে গিয়ে ঠেকেছে। এছাড়া ডিভোর্স নেয়ার দুই বছর পর কেনো তিনি আত্মহত্যা চেষ্টা করেছেন এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। 
ফিরোজ রশীদের পরিবারের দাবি, মাঝে মধ্যে মেরিনা আত্মহত্যা করে মরে যাবার হুমকি দিতেন। অবশেষে রোববার রাতে তিনি স্বামীর লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি চিকিৎসাধীন।
২৮ বছর আগে শোয়েব রশীদের সঙ্গে মেরিনার বিয়ে হয়েছিল। তাদের ২০ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ১১ বছরের এক ছেলে আছে। মেয়ে এ লেভেল শেষ করেছে আর ছেলে স্কুলে পড়ছে। মেয়ের সঙ্গেই তিনি একই রুমে থাকতেন। একই বাসায় থাকলেও শোয়েব রশীদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। পুলিশসূত্র তাদের তদন্ত ও মেরিনার পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাত ৮টার দিকে ধানমন্ডির ৯/এ বাড়িতে। ঘটনার সময় মেরিনার ছেলে-মেয়ে, শাশুড়ী ও দেবর বাসায় ছিলেন। মেরিনার ছেলে ও দেবর ঘরের মধ্যেই ক্রিকেট খেলছিলেন। মেয়ে অন্য ঘরে ছিল আর মেরিনা তার কক্ষে একাই অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তার মেয়ে ঘরে গিয়ে দেখে মেরিনা মাটিতে পড়ে আছেন।  আর পাশেই পড়ে আছে একটি পিস্তল। ঘটনার পর মেরিনার মেয়ে ফোন করে তার দাদা ফিরোজ রশীদ বাবা শোয়েব রশীদকে ঘটনাটি জানায়। ফোন পেয়ে তারা সবাই ছুটে আসেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা এখনও আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। তার শরীর থেকে গুলি বের করা যায়নি। ল্যাবএইড হাসপাতালের কর্পোরেট কমিউনিকেশন শাখার এজিএম সাইফুর রহমান লেনিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মেরিনা শোয়েবের শরীরে চারজন চিকিৎসক মিলে একটি অস্ত্রপচার করেছেন। তবে তার শরীর থেকে গুলি বের করা যায়নি। আইসিইউতে থাকলেও তার লাইফ সাপোর্ট খোলে দেয়া হয়েছে। গুলির কারণে পেটের ভেতরে যেসব ড্যামেজ হয়েছিল সেগুলো সারানো হয়েছে। তবে তাকে এখনি আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। সারতে আর কয়েকদিন সময় লাগবে। এদিকে মেরিনার পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন গণমাধ্যমে এমন খবর এলেও  পুলিশের দাবি, পিঠে নয় গুলি লেগেছে নাভির একটু উপরে আর সেটি পিঠে গিয়ে ঠেকেছে।  মেরিনা নিজেই আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তারা ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আব্দুল্লাহেল কাফি গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, আমরা তদন্ত করে জানতে পেরেছি, মেরিনা শোয়েবের স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগটা ভাল ছিল না। এতে করে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তার দুই সন্তান, স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তার ছেলে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ও মেয়ে প্রাপ্ত বয়ষ্ক। দুজনের কথার মধ্যে কিছু গড়মিল আছে। মেয়েটা বলেছে ঘটনার সময় সে অন্য রুমে টিভি দেখছিল। গুলির শব্দ শুনে সে ওই রুমে যায়। আবার তারা এটাও দাবি করছে  মেরিনা তাদের বাবার রুম থেকে পিস্তল এনে নিজেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে। পিস্তলটি কাজী শোয়েব রশীদের নামে লাইসেন্স করা। তিনি বলেন, আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখেছি ওই সময় বাইরে থেকে কেউ বা তার স্বামী ভেতরে যান নি। তাই আমাদের ধারণা তিনি নিজেই আত্মহত্যার উদ্দেশ্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে এরপরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি ঘটনার সঙ্গে অন্য কোন বিষয় জড়িত আছে কিনা। 
মেরিনার বাবা সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, স্বামীর সঙ্গে আমার মেয়ের বনিবনা ছিল না। বনিবনা থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না। আমি সকালে মেয়েকে আইসিইউতে গিয়ে দেখা করেছি। সে আমাকে চিনতে পারলেও তার সঙ্গে কোন কথা হয়নি। জামাতা শোয়েবের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সে নাকি তখন বাড়িতে ছিল না। এছাড়া আমরা থানায় কোন মামলা করিনি তবে একটি অভিযোগ দিয়েছি। এদিকে, একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাতকারে মেরিনার বাবা বলেছেন, তার মেয়ে ও তার স্বামী উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলাচল করে। এজন্য তাদের মধ্যে বনিবনা ছিল না। তাই সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। মেরিনার স্বামী কাজী শোয়েব রশীদ বলেন, ঘটনার সময় আমি অফিসে ছিলাম। আমার মেয়েই আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়।

No comments

Powered by Blogger.