রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মিয়ানমারকে মূল্য পরিশোধে বাধ্য করতে পারে বাংলাদেশ by মাউং জারনি
জাতিসংঘ
আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের ক্রিস সিদোতি, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত
বাংলাদেশের হাই কমিশনার ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞরা ১২ লাখ রোহিঙ্গা
উদ্বাস্তুকে মিয়ানমারে তাদের বাড়িঘরে ফেরানোর চ্যালেঞ্জটি মোকাবিলার উপায়
নিয়ে আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে লন্ডনে সমবেত হয়েছিলেন।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের তাদের মূল স্থানে পুনর্বাসন নিয়ে মিয়ানমার ‘মিথ্যাচার’ করছে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন দাবি করার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দুই দেশ ২০১৮ সালের অক্টোবরে পুনর্বাসন নিয়ে একটি চু্ক্তিতে সই করলেও জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশের অস্তিত্ব নেই।
প্রত্যাবাসনের জন্য যে ৮০০ গ্রাম প্রয়োজন, তার মধ্যে মাত্র দুটিতে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখানেই সমস্যাটি নিহিত। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদি, ব্যাপকভিত্তিক উপস্থিতি বজায় রাখা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উদ্বাস্তু জনসংখ্যার অস্তিত্বগত প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। উদ্বাস্তু ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবদুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য যে ৯২০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য চাওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ২২ ভাগ পাওয়া গেছে।
রোহিঙ্গা গণহত্যা থেকে রক্ষা পাওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান ও খাওয়ানোটা বাংলাদেশের জন্য বড় একটি বোঝা।
তাছাড়া, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেয়াটা হবে মিয়ানমারের গণহত্যাকে বৈধতা দেয়া। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমার উত্তর রাখাইন রাজ্যের আবাসিক লোকজনের বিরুদ্ধে নৃশংস সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ওই সময় থেকে মিয়ানমারের সামরিক, বেসামরিক- সব ধরনের সরকারই সব পন্থায় সব ধরনের সহিংস পন্থা অবলম্বন করে আসছে। গত চার দশক ধরে মিয়ানমারে বিরামহীনভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র-পরিচালিত নির্যাতন চলছে।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘ দিনের ভয়
মিয়ানমারকে পুরোপুরি বৌদ্ধ রাষ্ট্র বানানো ও ‘বাঙালি’ অনুপ্রবেশকারীদের নির্মূল করতেই রাখাইনে গণহত্যা চালানো হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো, যারা রোহিঙ্গাদের ধ্বংস করতে ব্যাপক নির্মূল অভিযান পরিচালনা করেছে, তারা কেন রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে এত সহজে রাজি হবে? রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারের মধ্যে যেসব জটিলতা রয়েছে, সেগুলোর অবসান না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে নিতে চাইবে না। আন্তর্জাতিক সুরক্ষা, নাগরিকত্ব পুনর্বহাল ও মৌলিক নাগরিক অধিকারের ব্যবস্থা না করা হলে রোহিঙ্গাদের পক্ষেও ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
তাহলে ঢাকার কৌশল কী হওয়া উচিত? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন, তার একটি হলো মিয়ানমারে উত্তর রাখাইন রাজ্যের ভেতরে নিরাপদ জোন প্রতিষ্ঠা।
আন্তর্জাতিক তদারকিতে এমন একটি অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে রোহিঙ্গারা নিরাপদ প্রত্যাবর্তন করতে পারবে বলে আশা করা যেতে পারে।
বলা নিস্প্রয়োজন, মিয়ানমার এ ধরনের আইডিয়ার তীব্র বিরোধিতা করবে। মিয়ানমার কর্মকর্তারা সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়ে ইতোমধ্যেই প্রকাশ্যেই ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
অন্তর্বর্তী সম্ভাবনা
দ্বিতীয়ত, একটি অন্তর্বর্তী সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে ঢাকা। তা হলো গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা।
এই দাবি হওয়া উচিত আশু পদক্ষেপগুলোর অংশবিশেষ। ঢাকা থেকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের কাছে প্রস্তাব পাঠানো যায়। মালয়েশিয়াও প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের জন্য একই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
এর বিকল্প পথ রয়েছে আরেকটি। তা হলো গণহত্যার বিচার ও জবাবদিহিতার আইনগত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টির জন্য গাম্বিয়ার নেতৃত্ব ওআইসি যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তাতে যোগ দিতে পারে ঢাকা।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই বলেছে, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল।
বাংলাদেশের উচিত হবে এখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মিয়ানমারের কাছ থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধের জন্য চাপ দেয়া।
এ ধরনের আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হলে অন্যান্য রাষ্ট্রও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মূল অভিযান পরিচালনা করতে ভয় পাবে। অপরাধকারী রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারকে অবশ্যই তার অপরাধের জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এবং তা করতে হবে আক্ষরিকভাবেই।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের তাদের মূল স্থানে পুনর্বাসন নিয়ে মিয়ানমার ‘মিথ্যাচার’ করছে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন দাবি করার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দুই দেশ ২০১৮ সালের অক্টোবরে পুনর্বাসন নিয়ে একটি চু্ক্তিতে সই করলেও জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশের অস্তিত্ব নেই।
প্রত্যাবাসনের জন্য যে ৮০০ গ্রাম প্রয়োজন, তার মধ্যে মাত্র দুটিতে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখানেই সমস্যাটি নিহিত। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদি, ব্যাপকভিত্তিক উপস্থিতি বজায় রাখা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উদ্বাস্তু জনসংখ্যার অস্তিত্বগত প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। উদ্বাস্তু ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবদুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য যে ৯২০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য চাওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ২২ ভাগ পাওয়া গেছে।
রোহিঙ্গা গণহত্যা থেকে রক্ষা পাওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান ও খাওয়ানোটা বাংলাদেশের জন্য বড় একটি বোঝা।
তাছাড়া, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেয়াটা হবে মিয়ানমারের গণহত্যাকে বৈধতা দেয়া। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমার উত্তর রাখাইন রাজ্যের আবাসিক লোকজনের বিরুদ্ধে নৃশংস সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ওই সময় থেকে মিয়ানমারের সামরিক, বেসামরিক- সব ধরনের সরকারই সব পন্থায় সব ধরনের সহিংস পন্থা অবলম্বন করে আসছে। গত চার দশক ধরে মিয়ানমারে বিরামহীনভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র-পরিচালিত নির্যাতন চলছে।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘ দিনের ভয়
মিয়ানমারকে পুরোপুরি বৌদ্ধ রাষ্ট্র বানানো ও ‘বাঙালি’ অনুপ্রবেশকারীদের নির্মূল করতেই রাখাইনে গণহত্যা চালানো হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো, যারা রোহিঙ্গাদের ধ্বংস করতে ব্যাপক নির্মূল অভিযান পরিচালনা করেছে, তারা কেন রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে এত সহজে রাজি হবে? রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারের মধ্যে যেসব জটিলতা রয়েছে, সেগুলোর অবসান না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে নিতে চাইবে না। আন্তর্জাতিক সুরক্ষা, নাগরিকত্ব পুনর্বহাল ও মৌলিক নাগরিক অধিকারের ব্যবস্থা না করা হলে রোহিঙ্গাদের পক্ষেও ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
তাহলে ঢাকার কৌশল কী হওয়া উচিত? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন, তার একটি হলো মিয়ানমারে উত্তর রাখাইন রাজ্যের ভেতরে নিরাপদ জোন প্রতিষ্ঠা।
আন্তর্জাতিক তদারকিতে এমন একটি অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে রোহিঙ্গারা নিরাপদ প্রত্যাবর্তন করতে পারবে বলে আশা করা যেতে পারে।
বলা নিস্প্রয়োজন, মিয়ানমার এ ধরনের আইডিয়ার তীব্র বিরোধিতা করবে। মিয়ানমার কর্মকর্তারা সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়ে ইতোমধ্যেই প্রকাশ্যেই ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
অন্তর্বর্তী সম্ভাবনা
দ্বিতীয়ত, একটি অন্তর্বর্তী সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে ঢাকা। তা হলো গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা।
এই দাবি হওয়া উচিত আশু পদক্ষেপগুলোর অংশবিশেষ। ঢাকা থেকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের কাছে প্রস্তাব পাঠানো যায়। মালয়েশিয়াও প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের জন্য একই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
এর বিকল্প পথ রয়েছে আরেকটি। তা হলো গণহত্যার বিচার ও জবাবদিহিতার আইনগত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টির জন্য গাম্বিয়ার নেতৃত্ব ওআইসি যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তাতে যোগ দিতে পারে ঢাকা।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই বলেছে, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল।
বাংলাদেশের উচিত হবে এখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মিয়ানমারের কাছ থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধের জন্য চাপ দেয়া।
এ ধরনের আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হলে অন্যান্য রাষ্ট্রও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মূল অভিযান পরিচালনা করতে ভয় পাবে। অপরাধকারী রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারকে অবশ্যই তার অপরাধের জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এবং তা করতে হবে আক্ষরিকভাবেই।
No comments