বিশ্বকাপে ব্যতিক্রমী বাংলার ‘বাঘ’
বাংলাদেশ
ক্রিকেটের সুপারফ্যান শোয়েব আলী (৩১)। তিনি ঢাকায় একজন কার মেকানিক। খুব
বেশি আয় নয় তার। কিন্তু স্বপ্ন তার বিশাল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেখানে,
সেখানেই হাজির শোয়েব আলী। তিনি সারা শরীরে বাঘের শরীরের আদলে পেইন্ট করেন।
মুখও বাদ যায় না। এ জন্য খ্যাতি পেয়েছেন।
সবাই তাকে এখন মডেল হিসেবে চেনেন। বাংলাদেশের ম্যাচের সময় টাইগাররা যখন মাঠের মধ্যে রণে লিপ্ত, তখন গ্যারারিতে হুঙ্কার ছাড়েন শোয়েব, যেন সুন্দরবনের বাঘ গর্জন করছে। তার এই নেশা মেটাতে গিয়ে অনেক সময় তাকে আহত হতে হয়েছে। উৎকোচ দিতে হয়েছে। সর্বোপরি তিনি সারাজীবনে যা সঞ্চয় করেছেন, তার সবটা খরচ করে দিতে কার্পণ্য করেন না। তাতে শোয়েব আলীর কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি টাইগারদের খেলা দেখেন মাঠে বসে। তাদের উৎসাহ দেন, যেন বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করেন।
তিনি মানেন খেলায় উত্থান-পতন আছে। জয় পরাজয় আছে। তাই বলে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তিনি থাকবেন না, তাই কী হয়! নিজেকে স্থির করেছেন। এই বিশ্বকাপেও তিনি ফিকচারে নিজেকে হাজির করছেন, যেখানে রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হচ্ছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশি ফাস্ট বোলার শাহাদত হোসেনের গাড়ি মেরামত করে দিয়েছেন শোয়েব আলী। ওই শাহাদতই তার ক্রিকেট নেশা দেখে প্রথম খেলার একটি টিকেট দিয়েছেন শোয়েবকে। বিষয়টিকে ল্যান্ডমার্ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এর আগে এশিয়া কাপে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে যদিও শচীন টেন্ডুলকর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শততম সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ বিষয়ে শোয়েব বলেন, ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জেতার পর আমি গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে আনন্দ ধরে রাখতে পারিনি। অবিরাম কেঁদেছি। আনন্দেও মানুষ কাঁদে সেই প্রথম অনুভব করলাম। ওই সময় আমি ভারতীয় বিখ্যাত ফ্যান সুধীর গৌতমকে দেখতে পাই। তার শরীর ভারতের জাতীয় পতাকায় রাঙানো। তাকে ভারতের ম্যাচ হলেই সারা বিশ্বে দেখা যায়। তাকে দেখে আমিও সেদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও তার মতো হবো। বাংলাদেশ যেখানেই খেলুক আমি সেখানে হাজির থাকবো।
শোয়েব আলী ১৩ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেন। তারপর থেকে তিনি দেশে মাত্র একটি খেলা মিস করেছেন। বিদেশে খুব একটা মিস করেননি। ফলে বিষয়টি তার জীবনে নিয়ে আসে এক অ্যাডভেঞ্চার। শোয়েব আলী ২০১৩ সালে প্রথম বিদেশে বাংলাদেশে খেলা উপভোগ করেন। তিনি দেখতে পান শ্রীলঙ্কায় টেস্টে প্রথম পরাজয় ঠেকাতে বাংলাদেশকে। খেলাটি কৃতিত্বপূর্ণ ড্রতে শেষ হয়। ওই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় আটটি টেস্ট ম্যাচ হেরেছে। এর মধ্যে সাতটি হেরেছে ইনিংসে। ওই ম্যাচ দেখতে তিনি পকেটে মাত্র ২৫০ ডলার নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা। সেখানে শ্রীলঙ্কান এক ভক্তের সঙ্গে একটি গ্যারেজে ঘুমিয়েছেন বেশ কয়েক রাত। ওই সময় তাকে খাদ্য কেনার জন্য অর্থ দিয়েছিলেন বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা ও কর্মকর্তারা।
কিন্তু বিপর্যয় ঘটে একই বছর জিম্বাবুয়ে সফরের সময়। শোয়েব আলী জিম্বাবুয়ে যাওয়ার সময় তার ভিসা সংক্রান্ত সব ডকুমেন্ট ফেলে যান ঢাকা বিমানবন্দরে। জিম্বাবুয়ের হারারেতে, অভিবাসন বিষয়ক কর্তৃপক্ষ তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখনই কৌশল অবলম্বন শুরু করেন শোয়েব আলী। কী করেছিলেন ওই মুহূর্তে? শুনুন শোয়েব আলীর জবানিতে, শুধু একটি ফোনকল করার অনুমতি দিতে একজন কর্মকর্তার হাতে ১০ ডলার ঘুষ ধরিয়ে দিলাম। তারপর ফোনে বাংলাদেশ টিমের কর্মকর্তাদের জানালাম আমার অবস্থা। তখন তারা ছিলেন প্রশিক্ষণ মাঠে। প্রতিশ্রুতি দিলেন আমাকে কোনো সাহায্য করতে পারেন কি না। তখন আমার মনে হলো, একজন অসুস্থ মানুষকে অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা দেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না। আমি দেয়ালের সঙ্গে সজোরে মাথা আঘাত করে পড়ে গেলাম।
এমন অভিনয় করলাম যাতে তারা মনে করে আমি কিছু সময়ের জন্য বেহুঁশ হয়ে গেছি। শোয়েব বলেন, বিমানবন্দরেই একটি রাত কাটালাম। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা আমার ডকুমেন্টে আনালেন এবং আমাকে নিয়ে গেলেন হারারে।
এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশি এই ক্রিকেটপাগল ভক্তের আরো আছে কাহিনী। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য তাকে ভিসা দিচ্ছিল না অস্ট্রেলিয়া। তবে এখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তাকে খেলা দেখার জন্য স্পন্সর করে। এতে তিনি খুশি। তিনি আশা করেন ইংল্যান্ডে তার উপস্থিতিতে ভালো করবে দল। শোয়েব বলেন, আমি যখন মাঠে খেলা দেখতে যাই, তখন বেশির ভাগ ম্যাচই জেতে বাংলাদেশ। আশা করি, একই রকম সৌভাগ্য তাদের জন্য বহন করতে পারবো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে।
নিজের শরীরে, মুখে বাঘের মতো করে পেইন্ট ব্যবহার করার জন্য তার স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে তাকে। তা সত্ত্বেও শোয়েব আলী থামবেন না। তিনি মুখ, শরীরে রঙ লাগিয়ে নিজেকে ‘বাঘ’ বানিয়েই ছাড়বেন। সেই বাঘকে এবারও দেখা যাবে ইংল্যান্ডে। শোয়েব বলেন, অনেক মানুষ আমাকে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, এভারে পেইন্ট করানোতে ত্বকের ক্যানসার হবে। কিন্তু তাতে আমি কুচ পরোয়া করি না। আমার দেশের চেয়ে বড়, গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না।
সবাই তাকে এখন মডেল হিসেবে চেনেন। বাংলাদেশের ম্যাচের সময় টাইগাররা যখন মাঠের মধ্যে রণে লিপ্ত, তখন গ্যারারিতে হুঙ্কার ছাড়েন শোয়েব, যেন সুন্দরবনের বাঘ গর্জন করছে। তার এই নেশা মেটাতে গিয়ে অনেক সময় তাকে আহত হতে হয়েছে। উৎকোচ দিতে হয়েছে। সর্বোপরি তিনি সারাজীবনে যা সঞ্চয় করেছেন, তার সবটা খরচ করে দিতে কার্পণ্য করেন না। তাতে শোয়েব আলীর কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি টাইগারদের খেলা দেখেন মাঠে বসে। তাদের উৎসাহ দেন, যেন বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করেন।
তিনি মানেন খেলায় উত্থান-পতন আছে। জয় পরাজয় আছে। তাই বলে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তিনি থাকবেন না, তাই কী হয়! নিজেকে স্থির করেছেন। এই বিশ্বকাপেও তিনি ফিকচারে নিজেকে হাজির করছেন, যেখানে রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হচ্ছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশি ফাস্ট বোলার শাহাদত হোসেনের গাড়ি মেরামত করে দিয়েছেন শোয়েব আলী। ওই শাহাদতই তার ক্রিকেট নেশা দেখে প্রথম খেলার একটি টিকেট দিয়েছেন শোয়েবকে। বিষয়টিকে ল্যান্ডমার্ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এর আগে এশিয়া কাপে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে যদিও শচীন টেন্ডুলকর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শততম সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ বিষয়ে শোয়েব বলেন, ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জেতার পর আমি গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে আনন্দ ধরে রাখতে পারিনি। অবিরাম কেঁদেছি। আনন্দেও মানুষ কাঁদে সেই প্রথম অনুভব করলাম। ওই সময় আমি ভারতীয় বিখ্যাত ফ্যান সুধীর গৌতমকে দেখতে পাই। তার শরীর ভারতের জাতীয় পতাকায় রাঙানো। তাকে ভারতের ম্যাচ হলেই সারা বিশ্বে দেখা যায়। তাকে দেখে আমিও সেদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও তার মতো হবো। বাংলাদেশ যেখানেই খেলুক আমি সেখানে হাজির থাকবো।
শোয়েব আলী ১৩ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেন। তারপর থেকে তিনি দেশে মাত্র একটি খেলা মিস করেছেন। বিদেশে খুব একটা মিস করেননি। ফলে বিষয়টি তার জীবনে নিয়ে আসে এক অ্যাডভেঞ্চার। শোয়েব আলী ২০১৩ সালে প্রথম বিদেশে বাংলাদেশে খেলা উপভোগ করেন। তিনি দেখতে পান শ্রীলঙ্কায় টেস্টে প্রথম পরাজয় ঠেকাতে বাংলাদেশকে। খেলাটি কৃতিত্বপূর্ণ ড্রতে শেষ হয়। ওই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় আটটি টেস্ট ম্যাচ হেরেছে। এর মধ্যে সাতটি হেরেছে ইনিংসে। ওই ম্যাচ দেখতে তিনি পকেটে মাত্র ২৫০ ডলার নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা। সেখানে শ্রীলঙ্কান এক ভক্তের সঙ্গে একটি গ্যারেজে ঘুমিয়েছেন বেশ কয়েক রাত। ওই সময় তাকে খাদ্য কেনার জন্য অর্থ দিয়েছিলেন বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা ও কর্মকর্তারা।
কিন্তু বিপর্যয় ঘটে একই বছর জিম্বাবুয়ে সফরের সময়। শোয়েব আলী জিম্বাবুয়ে যাওয়ার সময় তার ভিসা সংক্রান্ত সব ডকুমেন্ট ফেলে যান ঢাকা বিমানবন্দরে। জিম্বাবুয়ের হারারেতে, অভিবাসন বিষয়ক কর্তৃপক্ষ তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখনই কৌশল অবলম্বন শুরু করেন শোয়েব আলী। কী করেছিলেন ওই মুহূর্তে? শুনুন শোয়েব আলীর জবানিতে, শুধু একটি ফোনকল করার অনুমতি দিতে একজন কর্মকর্তার হাতে ১০ ডলার ঘুষ ধরিয়ে দিলাম। তারপর ফোনে বাংলাদেশ টিমের কর্মকর্তাদের জানালাম আমার অবস্থা। তখন তারা ছিলেন প্রশিক্ষণ মাঠে। প্রতিশ্রুতি দিলেন আমাকে কোনো সাহায্য করতে পারেন কি না। তখন আমার মনে হলো, একজন অসুস্থ মানুষকে অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা দেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না। আমি দেয়ালের সঙ্গে সজোরে মাথা আঘাত করে পড়ে গেলাম।
এমন অভিনয় করলাম যাতে তারা মনে করে আমি কিছু সময়ের জন্য বেহুঁশ হয়ে গেছি। শোয়েব বলেন, বিমানবন্দরেই একটি রাত কাটালাম। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা আমার ডকুমেন্টে আনালেন এবং আমাকে নিয়ে গেলেন হারারে।
এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশি এই ক্রিকেটপাগল ভক্তের আরো আছে কাহিনী। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য তাকে ভিসা দিচ্ছিল না অস্ট্রেলিয়া। তবে এখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তাকে খেলা দেখার জন্য স্পন্সর করে। এতে তিনি খুশি। তিনি আশা করেন ইংল্যান্ডে তার উপস্থিতিতে ভালো করবে দল। শোয়েব বলেন, আমি যখন মাঠে খেলা দেখতে যাই, তখন বেশির ভাগ ম্যাচই জেতে বাংলাদেশ। আশা করি, একই রকম সৌভাগ্য তাদের জন্য বহন করতে পারবো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে।
নিজের শরীরে, মুখে বাঘের মতো করে পেইন্ট ব্যবহার করার জন্য তার স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে তাকে। তা সত্ত্বেও শোয়েব আলী থামবেন না। তিনি মুখ, শরীরে রঙ লাগিয়ে নিজেকে ‘বাঘ’ বানিয়েই ছাড়বেন। সেই বাঘকে এবারও দেখা যাবে ইংল্যান্ডে। শোয়েব বলেন, অনেক মানুষ আমাকে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, এভারে পেইন্ট করানোতে ত্বকের ক্যানসার হবে। কিন্তু তাতে আমি কুচ পরোয়া করি না। আমার দেশের চেয়ে বড়, গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না।
No comments