সাহায্যের আবেদনের নামে প্রতারণা by পিয়াস সরকার
জাহিদ
হাসান। বয়স ১২। রংপুর রেলওয়ে স্টেশন বস্তিতে তার বাস। স্টেশনেই বাদাম
বিক্রি করে সংসার চালায়। কিন্তু তার এক পা নেই। প্রায় বছর খানেক আগে ট্রেন
লাইনে পা কাটা যায়। ফেসবুকে সেই ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে নজরে আসে অনেকের। পাশে
দাঁড়ায় বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা জাহিদের চিকিৎসার পুরো ব্যয়ভার
বহন করে। সেইসঙ্গে প্রচারণায় নামে আল শাহরিয়ার নামে স্থানীয় এক যুবক।
ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় সাহায্যের আবেদন। চলে ফেসবুকে বুস্টিং। সেসব পোস্টের
নিচে বেশ কিছু কমেন্টে চোখ পড়ে। সেগুলো টাকার পরিমাণ দিয়ে লেখা বিকাশে টাকা
পাঠালাম। সেসব পোস্ট হিসেব করে দেখা যায়, সাহায্য উঠেছে প্রায় ১ লাখ ১২
হাজার ৮শ’ ২৩ টাকা। পোস্টে দেয়া ৪টি বিকাশ নম্বর। নম্বর ৪টির ২টি বন্ধ।
১টিতে ৩দিন ধরে ফোন দিয়ে ফোন ধরেননি কেউ। আর একটি নম্বরে ফোন দিয়ে কথা হয়
পরিচয় গোপন করে। তিনি শাহরিয়ার নামে পরিচয় দেন। তাকে বলা হয়, জাহিদের জন্য
কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করা হবে। কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি? তিনি জানান,
এর জন্য যে টাকা খরচ হবে তা আপনি পাঠিয়ে দেন। কিন্তু আমি নিজে তার চিকিৎসা
করাতে চাই। তখন তিনি বলেন, জাহিদের বাবা মা অনেক গরিব। শিক্ষা দীক্ষা নেই।
তারা আপনার এই প্রস্তাব মেনে নিবে না। ভয় পাবে। তিনি বারবার বলেন ২ লাখ
টাকা পাঠিয়ে দেন আমরাই ব্যবস্থা করব। আরেকটি নম্বর থেকে তার সঙ্গে ফের
যোগাযোগ হয়। রংপুরের একটি জনপ্রিয় দাতব্য সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে বলা,
জাহিদের পরিবারকে আমরা পুনর্বাসন করতে চাই। আপনার কাছে যে টাকা আছে তা
আমাদের সঙ্গে শেয়ার করলে আরো ভালোভাবে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
কিন্তু শাহরিয়ার বলেন, টাকা যা পেয়েছি তাতো সব দিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে তার
জন্য এখন আর কোন টাকা নেই। কত টাকা পেয়েছিলেন জানতে চাইলে উত্তর দেন ৫০
হাজার টাকার মতো। মোবাইল ফোনে কথা হয় জাহিদের বাবা মোহাম্মদ রহমানের সঙ্গে।
তিনি রংপুর শহরের একজন রিক্সাচালক। তিনি জানান, ছেলের চিকিৎসা খরচ বহন
করেছে অন্যরা। তার দিতে হয়নি কোন টাকা। আর শাহরিয়ার তাকে দিয়েছে ৩০ হাজার
টাকা। জাহিদ আগের মতো এখনো স্টেশনে বাদাম বিক্রি করে। শুধু পার্থক্য এখন
বগলের নিচে শোভা পায় একটি ক্র্যাচ। হাসপাতালের বিছানায় শোয়া ছোট্ট পারভিন
আক্তার। হাতে স্যালাইন লাগানো। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ২শ’ শব্দের সেই
স্ট্যাটাসের উদ্দেশ্য সাহায্যের আবেদন। ২য় শ্রেণির সেই শিক্ষার্থীকে
বাঁচাতে সেখানে দেয়া একটি বিকাশ নম্বর ও একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর।
নীলফামারী জেলার ডোমারে বাড়ি মেয়েটির। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
মেয়েটি মৃত্যুবরণ করে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। প্রায় ৮ মাস আগে। মেডিকেলের
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের উদ্যোগে সংগ্রহ করা হয়েছিলো অর্থ। সেই অর্থেই হয়েছিলো
মেয়েটির চিকিৎসা। ইন্টার্ন চিকিৎসক শামস ইসলাম কনক বলেন, আমরা সেই
সাহায্যের আবেদন ছড়িয়ে পড়া নম্বরে সেসময় একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। যে অর্থ
পেয়েছেন তা আমাদের দেন। আমরা উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। কিন্তু তিনি
টালাবাহানা করতে থাকেন। এভাবে আর কোন টাকা আমাদের হাতে দেয়নি সে। আর
কিছুদিন পর মেয়েটি মৃত্যু বরণ করে। আর সেই সাহায্যের আবেদনটি এমনভাবে ছড়িয়ে
পড়েছিলো যে, সবার ধারণা তৈরি হয় আমরাই এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছি। এই চিকিৎসক
বলেন, আমার জানা মতে সে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমার এক পরিচিত
ব্যক্তিই দিয়েছিলো ৫০ হাজার টাকা। সেই নম্বরে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আর পারভিনের বাবা দরিদ্র কৃষক আবুল হোসেন জানান, মেয়ের চিকিৎসার পিছনে অনেক
টাকা খরচ হয় তার। এছাড়াও তিনি জানান, চিকিৎসার সময় ডাক্তাররা সহযোগীতা
করেছিলেন এছাড়া কোন টাকা পাননি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকের বদৌলতে সাহায্যের আবেদন ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। আবার মোবাইল ব্যাংকিং’র কারণে সাহায্য প্রাপ্তিও ঘটছে দ্রুত। ফলে বাড়ছে প্রতারণা। বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত সাহায্য প্রার্থীরা। আবার পটুয়াখালী মির্জপুরের ইয়ার উদ্দিন খলিফা মাদরাসা ও এতিমখানার নামে লাল গোল বাক্স চোখে পড়ে সর্বত্র। এই বাক্স রাজধানীর পাশাপাশি ছড়িয়ে আছে সারাদেশে। রাজধানীর কাওরার বাজারে একটি চায়ের দোকানে দেখা মেলে এই দান বাক্স। চা দোকানদার বলেন, এই বাক্স খোলা হয় প্রতিমাসে। এই বাক্স থেকে টাকা ওঠে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দেয়া হয় তাকে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই টাকার একাংশ দিতে হয় উপর মহলে। উপর মহল কে জানতে চাইলে চুপ হয়ে যান তিনি। প্রশাসনের হাতে যায় কিনা এমন প্রশ্নের জাবাবে মৌন সম্মতি দেন। আবার এই দান বাক্সের রয়েছে সিন্ডিকেট। নিয়ন্ত্রিত হয় কিছু ব্যক্তি দ্বারা। সেই চায়ের দোকানদারের কাছে নম্বর নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা। দোকানদার রশিদ নাম বললেও তিনি মোবাইলে নাম বলেন তরিকুল ইসলাম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে রাজধানীর কয়েকটি বিশ্বিবিদ্যালয়ের সামনে কয়েকটি নতুন বাক্স লাগানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রথমে না বললেও পরে জানান, ২০টা বাক্স লাগাতে পারবেন। এজন্য তাকে দিতে হবে প্রথমে ২০ হাজার টাকা। এরপর প্রতিমাসে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা করে। আর বছর দু’বার কিছু পরিমাণ টাকা দিতে হবে এতিম খানায়।
তাকে এই মুহুর্তে ২০ হাজার টাকা দেয়া সম্ভব না। বাক্স লাগানোর পর আপনাকে টাকা দেয়া হবে বললে, তিনি বলেন তাহলে ভাই টাকা জোগাড় করে ফোন দিয়েন। ব্যবসা করবেন খালি হাতে। তা কি আর হয়।
দৈনিক মানবজমিন অফিসে প্রায়শই আসে কিছু সাহায্যের আবেদন। এমন দুটি আবেদন বিবেচনা করে দেখা হয়। আবেদন দুটি আসে ৭ই মে ও ১২ই মে। একটি আসে নমতিয়াপাড়া, মোল্লা, নারায়ণগঞ্জ থেকে। পরেরটি বোয়াদ্দা, বন্দর নারায়নগঞ্জ থেকে। প্রথম আবেদন পত্রটি আসে ১০ বছরের মেয়ে শাহিনা আক্তারের জন্য। প্রয়োজন ৬০ হাজার টাকা। আর পরেরটি ১৭ বছর বয়সী নাহিদার হার্টের বাল্ব নষ্ট। প্রয়োজন ২ লাখ টাকা ৩৫ হাজার টাকা। দুটি চিঠির খামের উপরের হাতের লেখা একই। চিঠি দুটির আবেদন কম্পোজ করা হলেও লেখার ধরণ প্রায় একই।
আবার তাদের প্রদত্ত প্রেসক্রিশনের ফটোকপিতে মেলে গড়বড়। দুই প্রেসক্রিপশনে রোগীর নামের হাতের লেখা একই। আর ডাক্তারের হাতের লেখা আলাদা। শাহিনা ও নাহিদা লেখায়া যে ‘এ’ দুটি মিলে যায় শতভাগ। আর প্রেসক্রিপশন দুটি আলাদা হাতে লেখা এবং তাদের হাতের লেখাতে ‘এ’ অক্ষরটি সম্পূর্ন ভিন্ন। আবার যে ছবি দুটি পাঠানো হয়েছে দুটি ছবিই একই। কিছুটা ঝাপসা। আর ছবির উপরে প্রিন্টের দাগ একই পাশে। এথেকে ধারণা করা যায় হয়ত একই প্রিন্টার থেকে প্রিন্ট করা। আর স্ট্রাপলের পিনের সাইজও একই।
আবেদন ফর্মের নম্বরে যোগাযোগ করলে প্রথমে কিছুতেই পরিচয় দিতে চাননি। পরে সাহায্যের আবেদনের কথা বললে, তারপর পরিচয় দেন শহিনার মামা। আর ভাগ্নির চিকিৎসার জন্য টাকার ব্যবস্থা হয়নি বলেও জানান তিনি। আর পরের জনের সঙ্গে কথায় বোঝা যায় একই ব্যক্তির কণ্ঠস্বর। তিনি প্রথমে ভুল নম্বরে ফোন দেয়া হয়েছে বলে জানান। অন্য একটি নম্বর থেকে ফোন দেয়া হলে তখন তিনি সাহায্যের আবেদনের কথা শিকার করেন এবং পত্রিকার প্রকাশের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু পরক্ষণেই গলার স্বর পরিচিত মনে হওয়ায় আবার জানান, ভুল নম্বরে ফোন দেয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকের বদৌলতে সাহায্যের আবেদন ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। আবার মোবাইল ব্যাংকিং’র কারণে সাহায্য প্রাপ্তিও ঘটছে দ্রুত। ফলে বাড়ছে প্রতারণা। বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত সাহায্য প্রার্থীরা। আবার পটুয়াখালী মির্জপুরের ইয়ার উদ্দিন খলিফা মাদরাসা ও এতিমখানার নামে লাল গোল বাক্স চোখে পড়ে সর্বত্র। এই বাক্স রাজধানীর পাশাপাশি ছড়িয়ে আছে সারাদেশে। রাজধানীর কাওরার বাজারে একটি চায়ের দোকানে দেখা মেলে এই দান বাক্স। চা দোকানদার বলেন, এই বাক্স খোলা হয় প্রতিমাসে। এই বাক্স থেকে টাকা ওঠে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দেয়া হয় তাকে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই টাকার একাংশ দিতে হয় উপর মহলে। উপর মহল কে জানতে চাইলে চুপ হয়ে যান তিনি। প্রশাসনের হাতে যায় কিনা এমন প্রশ্নের জাবাবে মৌন সম্মতি দেন। আবার এই দান বাক্সের রয়েছে সিন্ডিকেট। নিয়ন্ত্রিত হয় কিছু ব্যক্তি দ্বারা। সেই চায়ের দোকানদারের কাছে নম্বর নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা। দোকানদার রশিদ নাম বললেও তিনি মোবাইলে নাম বলেন তরিকুল ইসলাম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে রাজধানীর কয়েকটি বিশ্বিবিদ্যালয়ের সামনে কয়েকটি নতুন বাক্স লাগানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রথমে না বললেও পরে জানান, ২০টা বাক্স লাগাতে পারবেন। এজন্য তাকে দিতে হবে প্রথমে ২০ হাজার টাকা। এরপর প্রতিমাসে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা করে। আর বছর দু’বার কিছু পরিমাণ টাকা দিতে হবে এতিম খানায়।
তাকে এই মুহুর্তে ২০ হাজার টাকা দেয়া সম্ভব না। বাক্স লাগানোর পর আপনাকে টাকা দেয়া হবে বললে, তিনি বলেন তাহলে ভাই টাকা জোগাড় করে ফোন দিয়েন। ব্যবসা করবেন খালি হাতে। তা কি আর হয়।
দৈনিক মানবজমিন অফিসে প্রায়শই আসে কিছু সাহায্যের আবেদন। এমন দুটি আবেদন বিবেচনা করে দেখা হয়। আবেদন দুটি আসে ৭ই মে ও ১২ই মে। একটি আসে নমতিয়াপাড়া, মোল্লা, নারায়ণগঞ্জ থেকে। পরেরটি বোয়াদ্দা, বন্দর নারায়নগঞ্জ থেকে। প্রথম আবেদন পত্রটি আসে ১০ বছরের মেয়ে শাহিনা আক্তারের জন্য। প্রয়োজন ৬০ হাজার টাকা। আর পরেরটি ১৭ বছর বয়সী নাহিদার হার্টের বাল্ব নষ্ট। প্রয়োজন ২ লাখ টাকা ৩৫ হাজার টাকা। দুটি চিঠির খামের উপরের হাতের লেখা একই। চিঠি দুটির আবেদন কম্পোজ করা হলেও লেখার ধরণ প্রায় একই।
আবার তাদের প্রদত্ত প্রেসক্রিশনের ফটোকপিতে মেলে গড়বড়। দুই প্রেসক্রিপশনে রোগীর নামের হাতের লেখা একই। আর ডাক্তারের হাতের লেখা আলাদা। শাহিনা ও নাহিদা লেখায়া যে ‘এ’ দুটি মিলে যায় শতভাগ। আর প্রেসক্রিপশন দুটি আলাদা হাতে লেখা এবং তাদের হাতের লেখাতে ‘এ’ অক্ষরটি সম্পূর্ন ভিন্ন। আবার যে ছবি দুটি পাঠানো হয়েছে দুটি ছবিই একই। কিছুটা ঝাপসা। আর ছবির উপরে প্রিন্টের দাগ একই পাশে। এথেকে ধারণা করা যায় হয়ত একই প্রিন্টার থেকে প্রিন্ট করা। আর স্ট্রাপলের পিনের সাইজও একই।
আবেদন ফর্মের নম্বরে যোগাযোগ করলে প্রথমে কিছুতেই পরিচয় দিতে চাননি। পরে সাহায্যের আবেদনের কথা বললে, তারপর পরিচয় দেন শহিনার মামা। আর ভাগ্নির চিকিৎসার জন্য টাকার ব্যবস্থা হয়নি বলেও জানান তিনি। আর পরের জনের সঙ্গে কথায় বোঝা যায় একই ব্যক্তির কণ্ঠস্বর। তিনি প্রথমে ভুল নম্বরে ফোন দেয়া হয়েছে বলে জানান। অন্য একটি নম্বর থেকে ফোন দেয়া হলে তখন তিনি সাহায্যের আবেদনের কথা শিকার করেন এবং পত্রিকার প্রকাশের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু পরক্ষণেই গলার স্বর পরিচিত মনে হওয়ায় আবার জানান, ভুল নম্বরে ফোন দেয়া হয়েছে।
No comments