এরশাদ একটুও বদলাননি! by সাজেদুল হক
বয়স
হয়েছে। শরীরটাও ভালো নেই। অসুখে-বিসুখে কাবু। কিন্তু রাজনীতির মাঠের
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটুও বদলাননি। সকাল-বিকাল সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের যে
খ্যাতি তা তিনি ধরে রেখেছেন। সর্বশেষ নাটকীয়তা তৈরি করলেন ভাই জিএম কাদেরকে
নিয়ে। কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে বহিষ্কারের পর ফের আবিষ্কার হয়েছেন কাদের।
তাকে পুরনো পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এখন দেখার বিষয় বাকি পদগুলোও তিনি ফিরে পান কি-না?
বছরের শুরুর দিকে এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উইলের প্রচলন ঘটান। লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানান, তার অবর্তমানে জিএম কাদেরই হবেন জাপার প্রধান। সেসময় দলে এ নিয়ে চাপান-উতোর তৈরি হয়। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ কোনো মন্তব্য করেননি। ৯০ পেরুনো এরশাদের শারীরিক অবস্থারও বেশ কয়েকবার অবনতি ঘটে। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেন তিনি। কো-চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি জিএম কাদেরকে সংসদে বিরোধী দলের উপনেতাও বানানো হয়। দলে সরকার ও রওশনপন্থি অংশ এতে ক্ষুব্ধ হয়। তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। একাধিক সূত্র বলছে, একটি পার্টিতে জিএম কাদেরের অংশ গ্রহণ তাদের জন্য সে সুযোগ নিয়ে আসে। ঢাকায় নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং বৃটিশ হাইকমিশনারের সম্মানে এ পার্টির আয়োজন করেছিলেন বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা। এতে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাশাপাশি জিএম কাদেরও অংশ নেন। কাদের অবশ্য বলেছেন, এরশাদের অনুমোদন নিয়েই তিনি ওই পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে জাপার সরকারপন্থি অংশ এ ইস্যুতে চাপ তৈরি করে এরশাদের ওপর। তিনিও রাতারাতি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
জিএম কাদেরকে ব্যর্থ উল্লেখ করে প্রথমে তাকে সরিয়ে দেন কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে। পরে সরান সংসদের উপনেতার পদ থেকে। রওশন এরশাদ ফিরেন উপনেতার পদে। যদিও আগের সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। সব সম্ভবের এদেশে অবশ্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। নতুন এই বাস্তবতায় জিএম কাদেরের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন দলের উত্তরাঞ্চলের নেতারা। তারা কাদেরকে পদে ফেরাতে আলটিমেটাম দেন। এরই মধ্যে তাদের দাবি আংশিক মেনে নেয়া হয়েছে। ১২ দিনের মাথায় এরশাদ তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করেন।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, মূলত ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিতে দুটি বলয় তৈরি হয়। এরশাদ সে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু রওশনসহ জাপার একটি বড় অংশ এরশাদের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচনে থেকে যায়। মূলত সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই তারা ওই সিদ্ধান্ত নেন। হাসপাতাল নামক আধুনিক কারাগারে জায়গা হয় এরশাদের। সেসময় এরশাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন ভাই জিএম কাদের। এতে তার ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। সেই বিরোধের জেরই মূলত এখন পর্যন্ত টেনে চলছেন কাদের।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী খুরশীদা বেগম বিবিসি বাংলাকে বলেন, জাতীয় পার্টিতে এখনও এরশাদকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই। এ সত্ত্বেও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের কারণেই দলটিতে এক ধরনের সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মধ্যে যে বিরোধ চলছে সেটা সব দলেই থাকে। দলে যদি তেমন কেউ থাকতো অন্যদের প্রভাবিত করার মতো তাহলে এরশাদ হয়তো এভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। এখানে বিষয়টিতো পূর্ব নির্ধারিত। তারপরেও বিরোধী পক্ষ আছে। তাদের মধ্যে হয়তো নেতা হওয়ারও ইচ্ছা আছে। জিএম কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, নেতৃত্ব মোটামুটি ঠিকই ছিল। আমাকে নিয়ে অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। নেতাকর্মীদের আস্থা আছে আমার প্রতি। চেয়ারম্যানও জানেন। তাই টানাপড়েনটা সমস্যা মনে করছি না। তবে ভালো হয়েছে যে এটা এখনই প্রকাশ হয়ে গেছে।
শেষ কথা: পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এমনিতেই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। সবাই জানেন কী হবে। ভোটে লোকের কোনো আগ্রহ নেই। সেখানে জাতীয় পার্টিও মৃতপ্রায়। উপজেলা নির্বাচনে কোথাও এ দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। অনেকেই বলেন, এ দলে এখন কর্মীর চেয়ে নেতা বেশি। আর নেতারা লিপ্ত পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় রাখার চেষ্টা করছেন এরশাদ।
এখন দেখার বিষয় বাকি পদগুলোও তিনি ফিরে পান কি-না?
বছরের শুরুর দিকে এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উইলের প্রচলন ঘটান। লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানান, তার অবর্তমানে জিএম কাদেরই হবেন জাপার প্রধান। সেসময় দলে এ নিয়ে চাপান-উতোর তৈরি হয়। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ কোনো মন্তব্য করেননি। ৯০ পেরুনো এরশাদের শারীরিক অবস্থারও বেশ কয়েকবার অবনতি ঘটে। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেন তিনি। কো-চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি জিএম কাদেরকে সংসদে বিরোধী দলের উপনেতাও বানানো হয়। দলে সরকার ও রওশনপন্থি অংশ এতে ক্ষুব্ধ হয়। তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। একাধিক সূত্র বলছে, একটি পার্টিতে জিএম কাদেরের অংশ গ্রহণ তাদের জন্য সে সুযোগ নিয়ে আসে। ঢাকায় নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং বৃটিশ হাইকমিশনারের সম্মানে এ পার্টির আয়োজন করেছিলেন বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা। এতে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাশাপাশি জিএম কাদেরও অংশ নেন। কাদের অবশ্য বলেছেন, এরশাদের অনুমোদন নিয়েই তিনি ওই পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে জাপার সরকারপন্থি অংশ এ ইস্যুতে চাপ তৈরি করে এরশাদের ওপর। তিনিও রাতারাতি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
জিএম কাদেরকে ব্যর্থ উল্লেখ করে প্রথমে তাকে সরিয়ে দেন কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে। পরে সরান সংসদের উপনেতার পদ থেকে। রওশন এরশাদ ফিরেন উপনেতার পদে। যদিও আগের সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। সব সম্ভবের এদেশে অবশ্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। নতুন এই বাস্তবতায় জিএম কাদেরের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন দলের উত্তরাঞ্চলের নেতারা। তারা কাদেরকে পদে ফেরাতে আলটিমেটাম দেন। এরই মধ্যে তাদের দাবি আংশিক মেনে নেয়া হয়েছে। ১২ দিনের মাথায় এরশাদ তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করেন।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, মূলত ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিতে দুটি বলয় তৈরি হয়। এরশাদ সে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু রওশনসহ জাপার একটি বড় অংশ এরশাদের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচনে থেকে যায়। মূলত সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই তারা ওই সিদ্ধান্ত নেন। হাসপাতাল নামক আধুনিক কারাগারে জায়গা হয় এরশাদের। সেসময় এরশাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন ভাই জিএম কাদের। এতে তার ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। সেই বিরোধের জেরই মূলত এখন পর্যন্ত টেনে চলছেন কাদের।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী খুরশীদা বেগম বিবিসি বাংলাকে বলেন, জাতীয় পার্টিতে এখনও এরশাদকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই। এ সত্ত্বেও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের কারণেই দলটিতে এক ধরনের সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মধ্যে যে বিরোধ চলছে সেটা সব দলেই থাকে। দলে যদি তেমন কেউ থাকতো অন্যদের প্রভাবিত করার মতো তাহলে এরশাদ হয়তো এভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। এখানে বিষয়টিতো পূর্ব নির্ধারিত। তারপরেও বিরোধী পক্ষ আছে। তাদের মধ্যে হয়তো নেতা হওয়ারও ইচ্ছা আছে। জিএম কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, নেতৃত্ব মোটামুটি ঠিকই ছিল। আমাকে নিয়ে অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। নেতাকর্মীদের আস্থা আছে আমার প্রতি। চেয়ারম্যানও জানেন। তাই টানাপড়েনটা সমস্যা মনে করছি না। তবে ভালো হয়েছে যে এটা এখনই প্রকাশ হয়ে গেছে।
শেষ কথা: পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এমনিতেই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। সবাই জানেন কী হবে। ভোটে লোকের কোনো আগ্রহ নেই। সেখানে জাতীয় পার্টিও মৃতপ্রায়। উপজেলা নির্বাচনে কোথাও এ দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। অনেকেই বলেন, এ দলে এখন কর্মীর চেয়ে নেতা বেশি। আর নেতারা লিপ্ত পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় রাখার চেষ্টা করছেন এরশাদ।
No comments