রাজনীতির হ্যাকার by রোমান কুরজানিয়ারিক
বিবিসি
একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যার শিরোনাম হোয়াই উই নিড টু রিইনভেন্ট
ডেমোক্রেসি? কেন দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্রের পুনঃউদ্ভাবন প্রয়োজন? গত ১৯শে
মার্চ ২০১৯ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি লিখেছেন অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত রোমান কুরজানিয়ারিক।
তিনি স্বনামধন্য পাবলিক ফিলোসফার। বৃটিশ দৈনিক অবজারভারের মতে, মি. রোমান
ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় জনপ্রিয় দার্শনিকদের অন্যতম। রাজনৈতিক সমাজবিদ্যায়
অক্সফোর্ড থেকে পিএইচডি করেছেন। ওই নিবন্ধের শেষ কিস্তি প্রকাশিত হলো আজ।
লেখক রাজনীতির হ্যাকার বিষয়টিকে ‘ব্লাইন্ড স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে তার কথায় এই “অন্ধ কলঙ্কচিহ্নগুলো” সংখ্যায় এতটাই বেশি যে, আমাদের তা আসলে নজরে পড়ে না। এরপর তিনি নিজকে নিয়েই বলেন, এক দশক ধরে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে, যার গণতান্ত্রিক শাসন বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে, অথচ আমার কখনো এটা মনে হয়নি যে, যে প্রক্রিয়ায় অতীতের ক্রীতদাস কিংবা নারীদের ভোটাধিকার খর্ব করা হয়েছিল, সেভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভোটাধিকার হরণ করা হবে। আর এটাই বাস্তবতা। আর সে কারণেই বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার স্কুল শিশু যাদের অনেকেই এক সুইডিশ টিনএজার গ্রেট থানবার্গের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
তারা ধনী দেশগুলোর কর্ণকুহরে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আর সেটা হলো, কার্বন গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে অথচ তাদের সবারই কিন্তু যথেষ্ট রকম গণতান্ত্রিক পদ্ধতি রয়েছে। আর সেটাই তাদের ভয়েসলেস মানুষের জমে পরিণত করেছে। তারা তাদেরই সৃষ্ট রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ মুছে দিয়েছে।
এই দার্শনিকের মতে, সময় এসেছে এই অসুবিধাজনক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে। আর তা হলো আধুনিক গণতন্ত্র বিশেষ করে ধনী দেশগুলোতে যা ঘটছে, তা আমাদের ভবিষ্যৎকে উপনিবেশে পরিণত করার সামর্থ্য দিয়েছে। ধনীরা বর্তমানকেই নয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎকেও গিলছে। এটা ভবিষ্যৎ ঔপনিবেশিকীকরণ বটে! আমরা ভবিষ্যতের দিকে এমনভাবে তাকাবো, এটা যেন কোনো দূরবর্তী কলোনিয়াল আউটপোস্ট, যেখানে আমরা খুব সহজেই ইকোলজিক্যাল ডিগ্রেডেশন, প্রযুক্তিগত ঝুঁকি, পারমাণবিক বর্জ্য এবং জনগণের ওপরে চাপানো ঋণ ডাম্প করতে পারি। আমাদের এমনই স্বাধীনতা রয়েছে, এসব কিছু দিয়ে ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দেয়া। ব্রিটেন যখন অষ্টাদশ এবং উনবিংশ শতাব্দীতে অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশকে উপনিবেশে পরিণত করেছিল, তখন তারা একটা ডক্ট্রিন চালু করেছিল, সেটির নাম ছিল তেরা নুলিয়াস অর্থাৎ এই ভূখণ্ড কারো নয়। তারা তাদের সাম্রাজ্য বিজয় ডঙ্কা বাজাতে এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করেছে, যেন তারা সেখানে ছিলই না। সেখানে ছিল না তাদের জীবন। ছিল না তাদের ভূখণ্ডের ওপরে তাদের কোন দাবি।
আন্তঃপ্রজন্ম চোর: আর আজ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, টেম্পাস নুলিয়াস। এর অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যৎ একটি “শূন্য সময়”। এটি এমন একটি টেরিটরি বা ভূখণ্ড যার উপর কারো কোনো দাবি নেই এবং সেখানে কোনো অধিবাসী বসবাস করবে না। ভবিষ্যতের সেই সাম্রাজ্য হবে মনুষ্যহীন, যা আমরা দখলে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। লেখক বলেছেন গণতন্ত্রকে পুনঃউদ্ভাবন করা তাই আজ একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। তাকে বর্তমানের সংক্ষিপ্তবাদ বা স্বল্পমেয়াদিবাদের রাহু থেকে বের করে আনা দরকার। আমরা যে আন্তঃপ্রজন্ম চুরি করছি, সেই বিষয়টির দিকে নজর দেয়া দরকার। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে যেভাবে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের উপনিবেশ বানিয়ে চলছি, সেদিকে নজর দেয়া। আমার বিশ্বাস এটা করাই সব থেকে জরুরি। এই সমকালীন বিশ্বে এটাই সব থেকে জরুরি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। এমনকি কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন যে, গণতন্ত্র মৌলিকভাবে এতটাই অদূরদর্শী যে, আমরা সদাশয় স্বৈরশাসনে ভালো থাকবো। আমরা স্বৈরশাসক বন্দনায় মুখর হয়ে উঠছি। মানবতা যে বহুমুখী সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, তা মোকাবিলায় নজর দেয়ার প্রতি আমাদের সবার পক্ষে তাগিদদানকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্টিন রিজ। যিনি ‘ক্রিটিকাল লং টার্ম চ্যালেঞ্জেস’ লিখেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বায়োলজিক্যাল অস্ত্রের ছড়িয়ে পড়া রোধ, তার কথায় কেবলমাত্র ‘একজন এনলাইটেনড স্বৈরশাসকই নিশ্চিত করতে পারেন। তিনিই পারেন একবিংশ শতাব্দীর নিরাপদ পরিভ্রমণ নেতৃত্ব দিতে।
আমি যখন তাকে সমপ্রতি একটি পাবলিক ফোরামে প্রশ্ন করলাম যে আপনি যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটা নীতিগত প্রেসক্রিপশন হিসেবে ডিক্টেটরশিপকে স্বাগত জানাচ্ছেন, সেটা সম্ভবত আপনি কৌতুক করে বলছেন। তার উত্তরে মার্টিন রিজ বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে আমি আসলে আধা সিরিয়াস।”
তিনি তখন চীনের উদাহরণ দিলেন। বললেন যে, কর্তৃত্ববাদী একটি রাষ্ট্র এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তারা অবিশ্বাস্যভাবে সফল হয়েছে এবং তারাই ব্যাপকভাবে সৌরশক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম অডিয়েন্সের মানে দর্শকসারিতে অনেকেই মাথা নেড়ে তার সঙ্গে একমত পোষণ করলেন। অবশ্য আমি তাদের একজন ছিলাম না।
ইতিহাসে উদাহরণ কম: আসলে ইতিহাসে এমন উদাহরণ কমই রয়েছে, যেখানে স্বৈরশাসকরা দীর্ঘ সময় ধরে উদারনৈতিক মেজাজে থেকেছেন কিংবা এনলাইটেনড থেকেছেন। উদাহরণ হিসেবে চীনের মানবাধিকারের রেকর্ডের কথা উল্লেখ করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার অনুকূলে সাক্ষ্য-প্রমাণ খুবই সামান্য যে, তারা দীর্ঘমেয়াদে ভালো চিন্তা করতে পেরেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের চেয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা দেয়ার রেকর্ড তাদেরই খুব রয়েছে। তবে স্বৈরশাসক চীন ভালো করেছে আর গণতান্ত্রিক সুইডেন খারাপ করেছে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়।
উদাহরণ দিয়ে বলা যায় সুইডেন নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে তার বৈদ্যুতিক চাহিদার শতকরা ৬০ ভাগ পূরণ করছে। সেজন্য তাদের কোনো স্বৈরশাসকের দরকার পড়েনি। বরং যার স্বৈরশাসক রয়েছে, সেই চীন এভাবে বিদ্যুতের যোগান দিয়েছে মাত্র ২৬ শতাংশ।
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মন্ত্রণালয়: আমি মনে করি আসলে অনেক পথ খোলা। বর্তমান পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অনেকগুলো মৌলিক দিক রয়েছে। বহু দেশ ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে নাগরিকদের ভবিষ্যতের প্রতি সতর্ক থাকতে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফিনল্যান্ড তার একটি উদাহরণ। দেশটির সংসদীয় কমিটি রয়েছে, তার নাম পার্লামেন্টারি কমিটি ফর দ্য ফিউচার। তার কাজ হচ্ছে আগামী প্রজন্মের ওপরে বর্তমানে প্রণীত আইন গুলোর কি প্রভাব পড়ে তা খতিয়ে দেখা। ২০০১ এবং ২০০৬ সালের মধ্যে ইসরাইলের ন্যায়পাল ছিল। তার নাম “অম্বুডসম্যান ফর ফিউচার জেনারেশন”।
এটি সমপ্রতি বিলুপ্ত করা হয়েছে এটা ভেবে যে তারা বর্তমান আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে সামপ্রতিককালের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ওয়েলস। ওয়েলসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘ফিউচার জেনারেশন কমিশনার’, কমিশনারের নাম সোফি হাউ এবং এই দপ্তর সৃষ্টি করা হয়েছে ২০১৫ সালে। ওয়েল বিয়িং ফর ফিউচার জেনারেশনস অ্যাক্টের আওতায় এই কমিশনের ভূমিকা হচ্ছে, তারা বিভিন্ন সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে। বিশেষ করে পরিবেশগত সুরক্ষা এবং চাকরিগত স্কিমের বিষয়ে তারা এমনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, যা অন্ততপক্ষে আগামী ৩০ বছর পরে কি প্রভাব পড়ে সেটা বিবেচনায় নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এখন এ ধরনের একটি সংস্থা সমগ্র ব্রিটেনের জন্য গড়ে তোলার দাবি উঠেছে।
২০১৮ সালে মার্টিন রিজের সমর্থনে একটি নতুন সংস্থা গড়ে উঠেছে। তার নাম অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর ফিউচার জেনারেশনস’। এর সুবিধা হচ্ছে মার্টিন বসে আছেন লর্ডস সভায়। এখনো পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর তার কিছুটা হলেও আস্থা আছে বলেই প্রতীয়মান হয়। যদিও এসব উদ্যোগ বেশ সমালোচিত হচ্ছে কারণ একে খুব বেশি সংস্কারবাদী মনে করা হয়। আর তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব খুবই সামান্য। বিশিষ্ট কানাডীয় পরিবেশবাদী ডেভিড সুজুকি একটি বিকল্প প্রস্তাব হাজির করেছেন। তিনি বলেছেন, কানাডায় বর্তমানে যে নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের দ্বারা যে পার্লামেন্ট চলছে, সেটা আর চলবে না। সারা দেশ থেকে বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা হবে একটা বিকল্প নাগরিক সংসদ। এই সংসদ সদস্যদের কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না। বিকল্প সংসদ ৬ বছর ক্ষমতায় থাকবে। এবং সুজুকির দৃষ্টিতে এ ধরনের একটি সংসদ গঠন করা সম্ভব হলে তারা আসলে একটা ‘পলিটিক্যাল জুরি সার্ভিসের’ ভূমিকা পালন করবে এবং তারা অধিকতর কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ো ডাইভারসিটির ক্ষতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তারা আর যাই হোক আগামী নির্বাচনে জিততে হবে এরকম মানসিকতা নিয়ে থাকবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের একটা নাগরিক পার্লামেন্ট কি ভবিষ্যত প্রজন্মের জুতো পায়ে দিয়ে এবং কার্যকরভাবে তাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে?
জাপানে একটি নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে তার নাম ফিউচার ডিজাইন। তারা যে প্রশ্নগুলো তুলছে তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছে অর্থনীতিবিদরা। মি. তাতশিজো সাইজও ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যানিটি এন্ড নেচার’ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন পৌরসভাগুলোতে নাগরিক সংসদ গঠন করছেন। এক গ্রুপ অংশগ্রহণকারী বর্তমানের বাসিন্দা হিসেবে এবং আরেক গ্রুপ তারা ২০৬০ সালের পরবর্তী ‘ফিউচার রেসিডেন্টস’ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন। আর যখন এই সংসদ বসছে, তখন ভবিষ্যতের বাসিন্দা সাংসদরা বিশেষ ধরনের পোশাক পরিধান করছেন, যাতে তাদের এই কল্পনাশক্তি কিছুটা জীবন্ত হয়ে ওঠে। এবং এই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের সমীক্ষা দেখাচ্ছে যে, ভবিষ্যতের নাগরিকরা নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি এবং প্রগতিশীল নগর পরিকল্পনা করতে সক্ষম। এরা রেডিক্যাল থাকবে। জাপানি এই উদ্যোগের মূল কথা হলো, কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যায়ে মিনিস্ট্রি অফ দ্য ফিউচার বা ভবিষ্যৎ মন্ত্রণালয় গঠন করা। এবং স্থানীয় সরকারগুলোর মধ্যে ডিপার্টমেন্ট অফ দ্য ফিউচার তৈরি করা। যাদের কাজ হবে নাগরিকদের জন্য নীতিনির্ধারণী মডেল তৈরি করা।
ফিউচার ডিজাইনের এই ধারণা সৃষ্টিতে আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে “সেভেন্থ জেনারেশন প্রিন্সিপল”। কতিপয় নেটিভ আমেরিকান এটা উদযাপন করছে। সেখানে তারা সপ্তম প্রজন্ম পরে অর্থাৎ এখন থেকে দেড় শ বছর পরের প্রজন্মের ওপর কি প্রভাব পড়বে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে তারা নীতি নির্ধারণ করছে।
এ ধরনের চিন্তা-ভাবনার আলোকে আমেরিকায় “আওয়ার চিল্ড্রেনস ট্রাস্ট” এর আইনি লড়াই এর কথা উল্লেখ করা যায়। ২০ বছর বা তার কাছাকাছি বয়সী কিশোররা একটা আইনি লড়াইয়ে নেমেছে। এই ট্রাস্টের মূল স্লোগান হচ্ছে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ এবং স্থিতিশীল জলবায়ু নিশ্চিত করা। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে তারা সবাই কিশোর। তারা মার্কিন সরকারের ওইসব নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যেখানে জলবায়ু নীতি সংশ্লিষ্ট। তারা বলছে যে এখন যেভাবে জলবায়ুর ক্ষতি করা হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে তাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে ।
লস অ্যাঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশ আইন বিষয়ক অধ্যাপক অ্যান কার্লসন ভক্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, এটা চৌকস মেধাবী বাচ্চাদের একটি কাজ। তারা ভবিষ্যতের প্লানেট কি হবে, সে নিয়ে তারা যুক্তিতর্ক দিচ্ছে। এতে যদি তারা সফল হয়, তাহলে আগামীদিনের প্রজন্মের যে সাংবিধানিক অধিকার, তা চূড়ান্তভাবে স্বীকৃত হবে।
এরপর লেখক প্রশ্ন তুলেছেন, এই সব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা শেষ পর্যন্ত আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে? আমরা একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছি। এটা খুবই স্পষ্ট যে, আগামী প্রজন্মের অধিকার এবং তাদের স্বার্থ সুরক্ষার যে আন্দোলন তা বৈশ্বিক মাত্রা পেতে চলেছে এবং সামনের দিনগুলোতে এসব বিষয় গতি পাবে। তার কারণ হলো পরিবেশগত বিপর্যয় এবং প্রযুক্তিগত ঝুঁকি এতটাই বড় হয়ে উঠছে এবং এতটাই ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি । এতে কোনো সন্দেহ নেই যে একজন স্বৈরশাসককে মহান করে দেখানোর কোনো দরকার নেই। এসব সমস্যা থেকে বেরোনোর উপায় স্বৈরশাসনে নিহিত নয়। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংকট নিরসনের একমাত্র বিকল্প এটা নয়। গণতন্ত্র বহুরূপী পথ খুঁজে নিয়েছে এবং বহুবার পুন উদ্ভাবিত হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রিকের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র থেকে আমরা দেখেছি, প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে। পরবর্তী গণতান্ত্রিক বিপ্লব আসন্ন। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষমতায়ন এবং ভবিষ্যতের অউপনিবেশেকিকরণের প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। এটাও বলা চলে সেটা ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দিগন্তে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।
লেখক রাজনীতির হ্যাকার বিষয়টিকে ‘ব্লাইন্ড স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে তার কথায় এই “অন্ধ কলঙ্কচিহ্নগুলো” সংখ্যায় এতটাই বেশি যে, আমাদের তা আসলে নজরে পড়ে না। এরপর তিনি নিজকে নিয়েই বলেন, এক দশক ধরে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে, যার গণতান্ত্রিক শাসন বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে, অথচ আমার কখনো এটা মনে হয়নি যে, যে প্রক্রিয়ায় অতীতের ক্রীতদাস কিংবা নারীদের ভোটাধিকার খর্ব করা হয়েছিল, সেভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভোটাধিকার হরণ করা হবে। আর এটাই বাস্তবতা। আর সে কারণেই বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার স্কুল শিশু যাদের অনেকেই এক সুইডিশ টিনএজার গ্রেট থানবার্গের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
তারা ধনী দেশগুলোর কর্ণকুহরে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আর সেটা হলো, কার্বন গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে অথচ তাদের সবারই কিন্তু যথেষ্ট রকম গণতান্ত্রিক পদ্ধতি রয়েছে। আর সেটাই তাদের ভয়েসলেস মানুষের জমে পরিণত করেছে। তারা তাদেরই সৃষ্ট রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ মুছে দিয়েছে।
এই দার্শনিকের মতে, সময় এসেছে এই অসুবিধাজনক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে। আর তা হলো আধুনিক গণতন্ত্র বিশেষ করে ধনী দেশগুলোতে যা ঘটছে, তা আমাদের ভবিষ্যৎকে উপনিবেশে পরিণত করার সামর্থ্য দিয়েছে। ধনীরা বর্তমানকেই নয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎকেও গিলছে। এটা ভবিষ্যৎ ঔপনিবেশিকীকরণ বটে! আমরা ভবিষ্যতের দিকে এমনভাবে তাকাবো, এটা যেন কোনো দূরবর্তী কলোনিয়াল আউটপোস্ট, যেখানে আমরা খুব সহজেই ইকোলজিক্যাল ডিগ্রেডেশন, প্রযুক্তিগত ঝুঁকি, পারমাণবিক বর্জ্য এবং জনগণের ওপরে চাপানো ঋণ ডাম্প করতে পারি। আমাদের এমনই স্বাধীনতা রয়েছে, এসব কিছু দিয়ে ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দেয়া। ব্রিটেন যখন অষ্টাদশ এবং উনবিংশ শতাব্দীতে অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশকে উপনিবেশে পরিণত করেছিল, তখন তারা একটা ডক্ট্রিন চালু করেছিল, সেটির নাম ছিল তেরা নুলিয়াস অর্থাৎ এই ভূখণ্ড কারো নয়। তারা তাদের সাম্রাজ্য বিজয় ডঙ্কা বাজাতে এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করেছে, যেন তারা সেখানে ছিলই না। সেখানে ছিল না তাদের জীবন। ছিল না তাদের ভূখণ্ডের ওপরে তাদের কোন দাবি।
আন্তঃপ্রজন্ম চোর: আর আজ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, টেম্পাস নুলিয়াস। এর অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যৎ একটি “শূন্য সময়”। এটি এমন একটি টেরিটরি বা ভূখণ্ড যার উপর কারো কোনো দাবি নেই এবং সেখানে কোনো অধিবাসী বসবাস করবে না। ভবিষ্যতের সেই সাম্রাজ্য হবে মনুষ্যহীন, যা আমরা দখলে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। লেখক বলেছেন গণতন্ত্রকে পুনঃউদ্ভাবন করা তাই আজ একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। তাকে বর্তমানের সংক্ষিপ্তবাদ বা স্বল্পমেয়াদিবাদের রাহু থেকে বের করে আনা দরকার। আমরা যে আন্তঃপ্রজন্ম চুরি করছি, সেই বিষয়টির দিকে নজর দেয়া দরকার। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে যেভাবে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের উপনিবেশ বানিয়ে চলছি, সেদিকে নজর দেয়া। আমার বিশ্বাস এটা করাই সব থেকে জরুরি। এই সমকালীন বিশ্বে এটাই সব থেকে জরুরি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। এমনকি কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন যে, গণতন্ত্র মৌলিকভাবে এতটাই অদূরদর্শী যে, আমরা সদাশয় স্বৈরশাসনে ভালো থাকবো। আমরা স্বৈরশাসক বন্দনায় মুখর হয়ে উঠছি। মানবতা যে বহুমুখী সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, তা মোকাবিলায় নজর দেয়ার প্রতি আমাদের সবার পক্ষে তাগিদদানকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্টিন রিজ। যিনি ‘ক্রিটিকাল লং টার্ম চ্যালেঞ্জেস’ লিখেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বায়োলজিক্যাল অস্ত্রের ছড়িয়ে পড়া রোধ, তার কথায় কেবলমাত্র ‘একজন এনলাইটেনড স্বৈরশাসকই নিশ্চিত করতে পারেন। তিনিই পারেন একবিংশ শতাব্দীর নিরাপদ পরিভ্রমণ নেতৃত্ব দিতে।
আমি যখন তাকে সমপ্রতি একটি পাবলিক ফোরামে প্রশ্ন করলাম যে আপনি যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটা নীতিগত প্রেসক্রিপশন হিসেবে ডিক্টেটরশিপকে স্বাগত জানাচ্ছেন, সেটা সম্ভবত আপনি কৌতুক করে বলছেন। তার উত্তরে মার্টিন রিজ বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে আমি আসলে আধা সিরিয়াস।”
তিনি তখন চীনের উদাহরণ দিলেন। বললেন যে, কর্তৃত্ববাদী একটি রাষ্ট্র এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তারা অবিশ্বাস্যভাবে সফল হয়েছে এবং তারাই ব্যাপকভাবে সৌরশক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম অডিয়েন্সের মানে দর্শকসারিতে অনেকেই মাথা নেড়ে তার সঙ্গে একমত পোষণ করলেন। অবশ্য আমি তাদের একজন ছিলাম না।
ইতিহাসে উদাহরণ কম: আসলে ইতিহাসে এমন উদাহরণ কমই রয়েছে, যেখানে স্বৈরশাসকরা দীর্ঘ সময় ধরে উদারনৈতিক মেজাজে থেকেছেন কিংবা এনলাইটেনড থেকেছেন। উদাহরণ হিসেবে চীনের মানবাধিকারের রেকর্ডের কথা উল্লেখ করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার অনুকূলে সাক্ষ্য-প্রমাণ খুবই সামান্য যে, তারা দীর্ঘমেয়াদে ভালো চিন্তা করতে পেরেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের চেয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা দেয়ার রেকর্ড তাদেরই খুব রয়েছে। তবে স্বৈরশাসক চীন ভালো করেছে আর গণতান্ত্রিক সুইডেন খারাপ করেছে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়।
উদাহরণ দিয়ে বলা যায় সুইডেন নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে তার বৈদ্যুতিক চাহিদার শতকরা ৬০ ভাগ পূরণ করছে। সেজন্য তাদের কোনো স্বৈরশাসকের দরকার পড়েনি। বরং যার স্বৈরশাসক রয়েছে, সেই চীন এভাবে বিদ্যুতের যোগান দিয়েছে মাত্র ২৬ শতাংশ।
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মন্ত্রণালয়: আমি মনে করি আসলে অনেক পথ খোলা। বর্তমান পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অনেকগুলো মৌলিক দিক রয়েছে। বহু দেশ ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে নাগরিকদের ভবিষ্যতের প্রতি সতর্ক থাকতে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফিনল্যান্ড তার একটি উদাহরণ। দেশটির সংসদীয় কমিটি রয়েছে, তার নাম পার্লামেন্টারি কমিটি ফর দ্য ফিউচার। তার কাজ হচ্ছে আগামী প্রজন্মের ওপরে বর্তমানে প্রণীত আইন গুলোর কি প্রভাব পড়ে তা খতিয়ে দেখা। ২০০১ এবং ২০০৬ সালের মধ্যে ইসরাইলের ন্যায়পাল ছিল। তার নাম “অম্বুডসম্যান ফর ফিউচার জেনারেশন”।
এটি সমপ্রতি বিলুপ্ত করা হয়েছে এটা ভেবে যে তারা বর্তমান আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে সামপ্রতিককালের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ওয়েলস। ওয়েলসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘ফিউচার জেনারেশন কমিশনার’, কমিশনারের নাম সোফি হাউ এবং এই দপ্তর সৃষ্টি করা হয়েছে ২০১৫ সালে। ওয়েল বিয়িং ফর ফিউচার জেনারেশনস অ্যাক্টের আওতায় এই কমিশনের ভূমিকা হচ্ছে, তারা বিভিন্ন সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে। বিশেষ করে পরিবেশগত সুরক্ষা এবং চাকরিগত স্কিমের বিষয়ে তারা এমনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, যা অন্ততপক্ষে আগামী ৩০ বছর পরে কি প্রভাব পড়ে সেটা বিবেচনায় নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এখন এ ধরনের একটি সংস্থা সমগ্র ব্রিটেনের জন্য গড়ে তোলার দাবি উঠেছে।
২০১৮ সালে মার্টিন রিজের সমর্থনে একটি নতুন সংস্থা গড়ে উঠেছে। তার নাম অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর ফিউচার জেনারেশনস’। এর সুবিধা হচ্ছে মার্টিন বসে আছেন লর্ডস সভায়। এখনো পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর তার কিছুটা হলেও আস্থা আছে বলেই প্রতীয়মান হয়। যদিও এসব উদ্যোগ বেশ সমালোচিত হচ্ছে কারণ একে খুব বেশি সংস্কারবাদী মনে করা হয়। আর তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব খুবই সামান্য। বিশিষ্ট কানাডীয় পরিবেশবাদী ডেভিড সুজুকি একটি বিকল্প প্রস্তাব হাজির করেছেন। তিনি বলেছেন, কানাডায় বর্তমানে যে নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের দ্বারা যে পার্লামেন্ট চলছে, সেটা আর চলবে না। সারা দেশ থেকে বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা হবে একটা বিকল্প নাগরিক সংসদ। এই সংসদ সদস্যদের কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না। বিকল্প সংসদ ৬ বছর ক্ষমতায় থাকবে। এবং সুজুকির দৃষ্টিতে এ ধরনের একটি সংসদ গঠন করা সম্ভব হলে তারা আসলে একটা ‘পলিটিক্যাল জুরি সার্ভিসের’ ভূমিকা পালন করবে এবং তারা অধিকতর কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ো ডাইভারসিটির ক্ষতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তারা আর যাই হোক আগামী নির্বাচনে জিততে হবে এরকম মানসিকতা নিয়ে থাকবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের একটা নাগরিক পার্লামেন্ট কি ভবিষ্যত প্রজন্মের জুতো পায়ে দিয়ে এবং কার্যকরভাবে তাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে?
জাপানে একটি নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে তার নাম ফিউচার ডিজাইন। তারা যে প্রশ্নগুলো তুলছে তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছে অর্থনীতিবিদরা। মি. তাতশিজো সাইজও ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যানিটি এন্ড নেচার’ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন পৌরসভাগুলোতে নাগরিক সংসদ গঠন করছেন। এক গ্রুপ অংশগ্রহণকারী বর্তমানের বাসিন্দা হিসেবে এবং আরেক গ্রুপ তারা ২০৬০ সালের পরবর্তী ‘ফিউচার রেসিডেন্টস’ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন। আর যখন এই সংসদ বসছে, তখন ভবিষ্যতের বাসিন্দা সাংসদরা বিশেষ ধরনের পোশাক পরিধান করছেন, যাতে তাদের এই কল্পনাশক্তি কিছুটা জীবন্ত হয়ে ওঠে। এবং এই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের সমীক্ষা দেখাচ্ছে যে, ভবিষ্যতের নাগরিকরা নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি এবং প্রগতিশীল নগর পরিকল্পনা করতে সক্ষম। এরা রেডিক্যাল থাকবে। জাপানি এই উদ্যোগের মূল কথা হলো, কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যায়ে মিনিস্ট্রি অফ দ্য ফিউচার বা ভবিষ্যৎ মন্ত্রণালয় গঠন করা। এবং স্থানীয় সরকারগুলোর মধ্যে ডিপার্টমেন্ট অফ দ্য ফিউচার তৈরি করা। যাদের কাজ হবে নাগরিকদের জন্য নীতিনির্ধারণী মডেল তৈরি করা।
ফিউচার ডিজাইনের এই ধারণা সৃষ্টিতে আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে “সেভেন্থ জেনারেশন প্রিন্সিপল”। কতিপয় নেটিভ আমেরিকান এটা উদযাপন করছে। সেখানে তারা সপ্তম প্রজন্ম পরে অর্থাৎ এখন থেকে দেড় শ বছর পরের প্রজন্মের ওপর কি প্রভাব পড়বে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে তারা নীতি নির্ধারণ করছে।
এ ধরনের চিন্তা-ভাবনার আলোকে আমেরিকায় “আওয়ার চিল্ড্রেনস ট্রাস্ট” এর আইনি লড়াই এর কথা উল্লেখ করা যায়। ২০ বছর বা তার কাছাকাছি বয়সী কিশোররা একটা আইনি লড়াইয়ে নেমেছে। এই ট্রাস্টের মূল স্লোগান হচ্ছে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ এবং স্থিতিশীল জলবায়ু নিশ্চিত করা। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে তারা সবাই কিশোর। তারা মার্কিন সরকারের ওইসব নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যেখানে জলবায়ু নীতি সংশ্লিষ্ট। তারা বলছে যে এখন যেভাবে জলবায়ুর ক্ষতি করা হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে তাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে ।
লস অ্যাঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশ আইন বিষয়ক অধ্যাপক অ্যান কার্লসন ভক্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, এটা চৌকস মেধাবী বাচ্চাদের একটি কাজ। তারা ভবিষ্যতের প্লানেট কি হবে, সে নিয়ে তারা যুক্তিতর্ক দিচ্ছে। এতে যদি তারা সফল হয়, তাহলে আগামীদিনের প্রজন্মের যে সাংবিধানিক অধিকার, তা চূড়ান্তভাবে স্বীকৃত হবে।
এরপর লেখক প্রশ্ন তুলেছেন, এই সব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা শেষ পর্যন্ত আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে? আমরা একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছি। এটা খুবই স্পষ্ট যে, আগামী প্রজন্মের অধিকার এবং তাদের স্বার্থ সুরক্ষার যে আন্দোলন তা বৈশ্বিক মাত্রা পেতে চলেছে এবং সামনের দিনগুলোতে এসব বিষয় গতি পাবে। তার কারণ হলো পরিবেশগত বিপর্যয় এবং প্রযুক্তিগত ঝুঁকি এতটাই বড় হয়ে উঠছে এবং এতটাই ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি । এতে কোনো সন্দেহ নেই যে একজন স্বৈরশাসককে মহান করে দেখানোর কোনো দরকার নেই। এসব সমস্যা থেকে বেরোনোর উপায় স্বৈরশাসনে নিহিত নয়। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংকট নিরসনের একমাত্র বিকল্প এটা নয়। গণতন্ত্র বহুরূপী পথ খুঁজে নিয়েছে এবং বহুবার পুন উদ্ভাবিত হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রিকের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র থেকে আমরা দেখেছি, প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে। পরবর্তী গণতান্ত্রিক বিপ্লব আসন্ন। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষমতায়ন এবং ভবিষ্যতের অউপনিবেশেকিকরণের প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। এটাও বলা চলে সেটা ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দিগন্তে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।
No comments