ছাদে যাওয়া সম্ভব নয়, দোয়া করেন: -মৃত্যুর আগে ভাইকে হাফেজ মনির by মরিয়ম চম্পা
হাফেজ
মনির হোসেন সরদার। ছোটবেলা থেকেই মার্জিত ও শান্ত স্বভাবের। যেকোনো
পরিস্থিতিতে নিজেকে ধীরস্থির রাখতেন। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত নিজেকে
শান্ত রেখেছেন তিনি। অবশেষে আগুনের উত্তাপ সইতে না পেরে তারের সাহায্যে
নামতে গিয়ে ১০ তলা থেকে নিচে পড়ে মারা যান দুজন সহকর্মীসহ মনির। ঘটনার দিন
নিহত মনিরের বড়ভাই মোয়াজ্জেম তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক
স্ট্যাটাসে লিখেন, বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ২৮শে মার্চ
আনুমানিক দুপুর ১২:৩০ মিনিট। আমি ছোটভাই মনিরকে ফোন করে জানতে পারলাম আগুন
৮ম তলা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ছোটভাই মনির ১০ম তলায় আটকে আছে।
আমি বললাম ভাই তুমি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হলেও ছাদে উঠে যাও। ভাই বললো সম্ভব নয়। দোয়া করেন। তারপর সময় টিভির লাইভে দেখছিলাম দমকল বাহিনীর অসহায়ত্ব। আর দেখতে পেলাম আগুন ৯, ১০, ১১ তলায় পৌঁছে গেছে। তখন ভাইয়ের মৃত্যু অনুভব করে যন্ত্রণায় আমি নিজেই প্রতি মুহূর্তে একবার করে মৃত্যুবরণ করছিলাম।
মনিরের বড়ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ঘটনার দিন আনুমানিক দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ভাগ্নি ফোন করে জানায় ছোট মামা মনির আগুনে আটকা পড়েছে। তুমি মামার জন্য দোয়া করো এবং সবাইকে বলো। এর পরপরই ছোটভাই মনিরকে ফোন দেই। জানতে চাই, কি অবস্থা? মনির বলেন, আগুন তো ৮ তলা পর্যন্ত চলে আসছে। আমি ১০ তলায় আটকা পড়েছি। তখন আমি বলি, বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে তুমি এখনো ১০ তলায় কেন? নিচে যেহেতু আগুন তাই তুমি তাড়াতাড়ি ছাদে চলে যাও। তখন মনির জানায়, ছাদে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কালো ধোঁয়া এবং গভীর অন্ধকার ভেদ করে ২২ তলা উপরে উঠা সম্ভব না। একটা পর্যায়ে মনির আর কোনো কথা বলতে পারছিল না। তখন আমি শেষবারের মতো বলি, তুমি এখনো সর্বশক্তি দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করো। মনির বললো, একেবারেই সম্ভব না। দোয়া করেন। এর কিছুক্ষণ পর মনিরকে আবারো ফোন দেই। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করছিল না। এ সময় মেজোভাইকে জানালাম মনিরকে ফোনে পাচ্ছি না। তখন মেজোভাই জানায় একটু আগে মনিরের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মনির বলেছেন, আগুন ১০ তলা পর্যন্ত চলে আসছে। জানালা খুলেছি। সামনের দিক থেকে ভেন্টিলেশনের জন্য চেষ্টা করছি। ঠিক ওই মুহূর্তে আমার পুরোনো কলিগ আতাউরকে ফোন দেই। সে মনিরের সঙ্গে একত্রে চাকরি করতো। আতাউরকে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করে খুব জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে, হ্যালো! এরপর আর কোনো কথা বলেনি। পুরোনো আরেক কলিগ কামরুল আতাউরকে ফোন দিলে আতাউর তার সঙ্গে খুব এলোমেলোভাবে কথা বলেছে। তার কথা সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। দুপুর আড়াইটায় আমার মেজোভাই জানায় মনিরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের ফ্লোর অত্যন্ত গরম হয়ে গেছে। গরমে সে দম নিতে পারছে না। এরপর আর তাকে কোনোভাবেই ফোনে পাওয়া যায়নি। তখন আমি টেলিভিশন লাইভে দেখছি আগুন ৯ তলা টপকে ১০ তলা পর্যন্ত উঠে গেছে। এর কিছুক্ষণ পর ১১ তলায় আগুন চলে আসে। তখন আমি ধরে নেই যে, আমার ছোটভাই মনির আর জীবিত নেই। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয় কিন্তু ভাইকে আর ফোনে পাচ্ছি না। এ সময় ছোট বোন বাসসের সাংবাদিক সাজেদা বেগম সাজু কুর্মিটোলা হাসপাতালে চলে যায়। তখন সাজুকে বলি তুমি কুর্মিটোলা নয় ইউনাইটেড হাসপাতালে যাও। ওখানে তিনটি ডেডবডি রয়েছে। তুমি গিয়ে চেক করে দেখো ওখানে মনিরের ডেডবডি আছে কি না। এ সময় সাজু আমার ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, কেন ওই ডেডবডির ভেতরে আমার ভাইকে খুঁজতে বলেন। বোনকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছিল না যে মনির আর বেঁচে নেই। আমার এক সহকর্মী ইউনাইটেড হাসপাতালে গিয়ে নিশ্চিত করেন ওখানে মনিরসহ হেরিটেজের মোট তিন জনের মৃত্যুদেহ রয়েছে। নিহত তিন জনই শেষ মুহূর্তে আগুনের তাপ সইতে না পেরে বিদ্যুতের তার বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন। নামার একপর্যায়ে তারা হাত ফসকে নিচে পড়ে যায় এবং তারা তিন জনই ঘটনাস্থলে মারা যায়। তাদের শরীরে পোড়া কোনো চিহ্ন ছিল না। শুধুমাত্র পা, মাথা মুখ ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ৫২ বছর বয়সি মনির হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস কোম্পানির সিনিয়র সেলস অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদর। ৯ ভাই বোনের মধ্যে মনির ভাইদের সবার ছোট। মনির কোরআনের হাফেজ ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৮৬ সালে সৌদি আরব চলে যায়। সেখানে প্রথমে সৌদি এয়ারলাইন্সে তার চাকরি হয়। পরবর্তীতে সৌদি আরবে সেনাবাহিনীদের একটি ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ফিলিপাইনের এক নার্সের সঙ্গে পরিচয়ের পর তারা বিয়ে করেন। সেই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর মনির আর বিয়ে করেন নি। ২০০৮ সালে মনির ঢাকায় চলে আসেন। দেশে এসে বড় ভাইয়ের একটি ট্রাভেল এজেন্সি দেখাশোনা করতেন। এরপর হেরিটেজ এয়ার কোম্পানিতে চাকরি হয়। টঙ্গিতে তার নিজের বাড়ি ও ঢাকায় থাকা অন্য ভাই বোনদের বাসা থেকে নিয়মিত অফিস করতেন।
আমি বললাম ভাই তুমি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হলেও ছাদে উঠে যাও। ভাই বললো সম্ভব নয়। দোয়া করেন। তারপর সময় টিভির লাইভে দেখছিলাম দমকল বাহিনীর অসহায়ত্ব। আর দেখতে পেলাম আগুন ৯, ১০, ১১ তলায় পৌঁছে গেছে। তখন ভাইয়ের মৃত্যু অনুভব করে যন্ত্রণায় আমি নিজেই প্রতি মুহূর্তে একবার করে মৃত্যুবরণ করছিলাম।
মনিরের বড়ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ঘটনার দিন আনুমানিক দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ভাগ্নি ফোন করে জানায় ছোট মামা মনির আগুনে আটকা পড়েছে। তুমি মামার জন্য দোয়া করো এবং সবাইকে বলো। এর পরপরই ছোটভাই মনিরকে ফোন দেই। জানতে চাই, কি অবস্থা? মনির বলেন, আগুন তো ৮ তলা পর্যন্ত চলে আসছে। আমি ১০ তলায় আটকা পড়েছি। তখন আমি বলি, বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে তুমি এখনো ১০ তলায় কেন? নিচে যেহেতু আগুন তাই তুমি তাড়াতাড়ি ছাদে চলে যাও। তখন মনির জানায়, ছাদে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কালো ধোঁয়া এবং গভীর অন্ধকার ভেদ করে ২২ তলা উপরে উঠা সম্ভব না। একটা পর্যায়ে মনির আর কোনো কথা বলতে পারছিল না। তখন আমি শেষবারের মতো বলি, তুমি এখনো সর্বশক্তি দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করো। মনির বললো, একেবারেই সম্ভব না। দোয়া করেন। এর কিছুক্ষণ পর মনিরকে আবারো ফোন দেই। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করছিল না। এ সময় মেজোভাইকে জানালাম মনিরকে ফোনে পাচ্ছি না। তখন মেজোভাই জানায় একটু আগে মনিরের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মনির বলেছেন, আগুন ১০ তলা পর্যন্ত চলে আসছে। জানালা খুলেছি। সামনের দিক থেকে ভেন্টিলেশনের জন্য চেষ্টা করছি। ঠিক ওই মুহূর্তে আমার পুরোনো কলিগ আতাউরকে ফোন দেই। সে মনিরের সঙ্গে একত্রে চাকরি করতো। আতাউরকে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করে খুব জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে, হ্যালো! এরপর আর কোনো কথা বলেনি। পুরোনো আরেক কলিগ কামরুল আতাউরকে ফোন দিলে আতাউর তার সঙ্গে খুব এলোমেলোভাবে কথা বলেছে। তার কথা সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। দুপুর আড়াইটায় আমার মেজোভাই জানায় মনিরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের ফ্লোর অত্যন্ত গরম হয়ে গেছে। গরমে সে দম নিতে পারছে না। এরপর আর তাকে কোনোভাবেই ফোনে পাওয়া যায়নি। তখন আমি টেলিভিশন লাইভে দেখছি আগুন ৯ তলা টপকে ১০ তলা পর্যন্ত উঠে গেছে। এর কিছুক্ষণ পর ১১ তলায় আগুন চলে আসে। তখন আমি ধরে নেই যে, আমার ছোটভাই মনির আর জীবিত নেই। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয় কিন্তু ভাইকে আর ফোনে পাচ্ছি না। এ সময় ছোট বোন বাসসের সাংবাদিক সাজেদা বেগম সাজু কুর্মিটোলা হাসপাতালে চলে যায়। তখন সাজুকে বলি তুমি কুর্মিটোলা নয় ইউনাইটেড হাসপাতালে যাও। ওখানে তিনটি ডেডবডি রয়েছে। তুমি গিয়ে চেক করে দেখো ওখানে মনিরের ডেডবডি আছে কি না। এ সময় সাজু আমার ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, কেন ওই ডেডবডির ভেতরে আমার ভাইকে খুঁজতে বলেন। বোনকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছিল না যে মনির আর বেঁচে নেই। আমার এক সহকর্মী ইউনাইটেড হাসপাতালে গিয়ে নিশ্চিত করেন ওখানে মনিরসহ হেরিটেজের মোট তিন জনের মৃত্যুদেহ রয়েছে। নিহত তিন জনই শেষ মুহূর্তে আগুনের তাপ সইতে না পেরে বিদ্যুতের তার বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন। নামার একপর্যায়ে তারা হাত ফসকে নিচে পড়ে যায় এবং তারা তিন জনই ঘটনাস্থলে মারা যায়। তাদের শরীরে পোড়া কোনো চিহ্ন ছিল না। শুধুমাত্র পা, মাথা মুখ ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ৫২ বছর বয়সি মনির হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস কোম্পানির সিনিয়র সেলস অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদর। ৯ ভাই বোনের মধ্যে মনির ভাইদের সবার ছোট। মনির কোরআনের হাফেজ ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৮৬ সালে সৌদি আরব চলে যায়। সেখানে প্রথমে সৌদি এয়ারলাইন্সে তার চাকরি হয়। পরবর্তীতে সৌদি আরবে সেনাবাহিনীদের একটি ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ফিলিপাইনের এক নার্সের সঙ্গে পরিচয়ের পর তারা বিয়ে করেন। সেই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর মনির আর বিয়ে করেন নি। ২০০৮ সালে মনির ঢাকায় চলে আসেন। দেশে এসে বড় ভাইয়ের একটি ট্রাভেল এজেন্সি দেখাশোনা করতেন। এরপর হেরিটেজ এয়ার কোম্পানিতে চাকরি হয়। টঙ্গিতে তার নিজের বাড়ি ও ঢাকায় থাকা অন্য ভাই বোনদের বাসা থেকে নিয়মিত অফিস করতেন।
No comments