চিকিৎসায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুন নাহারের অনন্য নজির by কাজী সোহাগ
একসময়
গান গাইতেন, শুনতেন। কিন্তু এখন আর এসব কিছুই সম্ভব হয় না। কারণ দিনের
কর্মঘণ্টার বেশির ভাগ সময় কাটে অপারেশন টেবিলে। যমে-মানুষে টানাটানির
মাঝখানে থাকেন তিনি। এতে বেশির ভাগ সময়ই সফল হয়েছেন। অসংখ্য মৃতপ্রায়
শিশুকে বাঁচিয়েছেন প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে। তাইতো জীবনের আশা ছেড়ে
দেয়া অনেক শিশুর পরিবারের সঙ্গে রয়েছে তার আবেগের সম্পর্ক, অনুভূতির
সম্পর্ক। এ কারণে অসংখ্য সদ্যজাত শিশুর নামকরণ করতে হয়েছে তাকে।
তার এ ধরনের সফলতার পেছনেও রয়েছে আরেক গল্প। তিনি শিশুদের বাঁচাতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। নিয়েছেন উচ্চ প্রশিক্ষণ। আর এটা করতে গিয়েই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। আইসিইউ এর টেবিল থেকে ফিরে এসেছেন। পেয়েছেন নতুন জীবন।
এরপর থেকে নতুন উদ্যমে নামেন শিশুদের বাঁচাতে। গল্পটি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুন নাহার ফাতেমা বেগমের। শিশুদের জটিল হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ হওয়ায় এ বছর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ঢকা ক্যান্টনমেন্টের কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে (সিএমএইচ) মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার জীবনের গল্প, কাজের সফলতা। সিলেট জেলার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাকশাইল গ্রামের কৃতীসন্তান তিনি। সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় ব্যক্তিগত কৃতিত্বের কারণে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার একমাত্র গৌরবোজ্জ্বল উদাহরণ নুরুন নাহার ফাতেমা বেগম। দীর্ঘদিন ধরে অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি।
স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে মানবজমিনকে তিনি বলেন, এককথায় আমি অভিভূত। মহান আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করি। তিনি বলেন, কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমার জন্য স্বাধীনতা পদকের স্বপ্নদ্রষ্টা আর্মি মেডিকেল কোরের পথিকৃৎ শ্রদ্ধেয় ডিজিএম স্যারের প্রতি। চিকিৎসা সেবার শুরুর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এর আগে সৌদি আরবের প্রিন্স সুলতান কার্ডিয়াক সেন্টারে ২ বছর কাজ করেছি। ১৯৯৬ সালে সেখানে যাই এবং ১৯৯৮ সালে ফিরে আসি।
সেটা ছিল অনেক কষ্টের একটি ট্রেনিং। সকাল ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। কারণ এই বিষয়টি অনেক জটিল।
বাংলাদেশে এটা ছিল না। আমি দেখলাম বাংলাদেশে এমন অনেক ছোট বাচ্চা জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। তাদের বাঁচানোর জন্য যে টেকনোলজি তা অত্যন্ত কঠিন ছিল। তখন ভেবেছি এই টেকনোলজি যদি আমি শিখতে পারি এবং বাংলাদেশে নিয়ে যেতে পারি তাহলে এমন অনেক বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, শিশুদের যে হার্টে রোগ হয় তখন মানুষ এটা বিশ্বাস করতো না। ধারণাও ছিল না। ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা বেগম জানান, অসংখ্য শিশুর অপারেশন করেছি। বাবা, মা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমন মৃতপ্রায় বাচ্চাদের অপারেশন করে তাদের সুস্থ করতে পেরেছি। আর প্রতিটি অপারেশনের আগে আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চেয়েছি। অনেক বাচ্চার নামকরণ করতে হয়েছে আমাকে।
জন্মের ২ থেকে তিন দিনের মধ্যে অপারেশন করতে হয়েছে এমন শিশুর সংখ্যা অনেক। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজারের মতো ইন্টারভেনশন (জন্মগত হৃদরোগ) করেছি। যেটা বিশ্বের যে কোনো উন্নত সেন্টারের সঙ্গে আমরা তুলনা করতে পারি। প্রফেসর ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা বাংলাদেশের প্রথম পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট এবং তিনি প্রথম জন্মগত শিশু হৃদরোগের ইন্টারভেনশন চালু করেন ও ধারণা দেন। তখন বুক কেটে হার্ট সার্জারি চিকিৎসা একমাত্র বিকল্প পথ ছিল। তিনি ১৯৯৮ সালে সিএমএইচ ঢাকায় পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল বাংলাদেশের প্রথম পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্ট। এখানে শিশু কার্ডিয়াক ইমারজেন্সি এবং শিশু কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশন সহ সব ধরনের জরুরি রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশের সকল শিশুর জন্য ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা চালু করেন। যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম শিশু হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। দরিদ্র শিশুরা যাতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ না করে সেই লক্ষ্যে তার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন দাতব্য কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিনি বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রচেষ্টায় এফসিপিএস পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি কোর্স চালু হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। তিনি সর্বশেষ আবিষ্কৃৃত শিশু হৃদরোগের ইন্টারভেনশন সমূহ নিজস্ব প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে একীভূত করেন। এর অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ঢাকায় সর্বপ্রথম সাউথ এশিয়ার মেলোডি পালমোনারি ভাল্ব প্রতিস্থাপন হয়।
তিনি বিশ্বের প্রায় ২১টি দেশ থেকে শিশু হৃদরোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রযুক্তি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগকে উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। তার প্রচেষ্টায় সিএমএইচ ঢাকার শিশু বিভাগ দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিভাগগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। তার এসব সফলতার পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ ঘটনা। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, যখন সৌদি আরবে ট্রেনিং করতে গিয়েছিলাম তখন অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কারণ এই টেকনোলজি বাংলাদেশে নেই। আমার মনে একটাই টার্গেট ছিল যেভাবেই হোক এটা আমাকে শিখতে হবে এবং বাংলাদেশে নিয়ে যেতে হবে। ট্রেনিংয়ের একপর্যায়ে অধিক পরিশ্রমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি।
ভেনটিলেটর ছাড়াও অনেকদিন আইসিইউতে ছিলাম। তখন আমার বাঁচারও কোনো আশা ছিল না। তখন আমার বস এসে আমাকে বকা দিয়ে বলেন, তুমি কি তোমার জীবন দিয়ে কাজ শিখবে নাকি। অসুস্থতার সময় সবাই বলে আমি হয়তো মারা যাবো। পরে যখন বেঁচে গেলাম তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আমি এই সাবজেক্ট কখনই ছাড়বো না। এ থেকে যা শিখবো তা মানুষের কাজে লাগাবো। ওই সময় তো আমি নাও বাঁচতে পারতাম। আল্লাহ্ যে আমাকে জীবনটা দিয়েছেন তা কাজে লাগাতে অনেক চ্যারিটি কাজ বা অন্যান্য কাজ করে থাকি। নুরুন নাহার ফাতেমা বেগমের মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত ইন্টারভেশনগুলো হচ্ছে- বেলুন এট্রিয়াল সেপটোসটোমি, পেটেন্ট ডাকটাস আরটারিওসাস কয়েল অকলুশন, এট্রিয়াল সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার, ভেট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার, পেটেন্ট ডাকটাস আরটারিওসাস ডিভাইস ক্লোজার, মাসকুলার ভেট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার, পেরিম্ব্রেনাস ভেটিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার, রাইট ভেনট্রিকেল আউটফ্লো ট্রাক্ট স্টানটিং, পেটেন্ট ডাকটাস আরটারিওসাস স্টানটিং, করোনারি ফিসটুলা কয়েল অকলুশন, করোনারি স্টানটিং, ভেট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার (এমপ্লাজার ডিভাইস অকলুডার দ্বারা), পেটেন্ট ডাকটাস আরটারিওসাস ডিভাইস ক্লোজার (এমপ্লাজার ডিভাইস অকলুডার দ্বারা), দক্ষিন এশিয়ায় প্রথম পালমোনারি ভাল্ব প্রতিস্থাপন (বৈদেশিক প্রক্টোর সহ), দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম পালমোনারি ভাল্ব (নিজস্ব প্রচেষ্টায়)।
১৯৮৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া নুরুন নাহার ফাতেমা বেগমের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আজহারউদ্দিন আহমেদ। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মার্জিয়া তাবাস্সুম প্রকৌশলী হলেও বর্তমানে লন্ডনে কাজ করছেন ব্যাংকার হিসেবে। আর ছোট মেয়ে মাশিয়া মাইশা আহমদ যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটিতে মেডিকেলের ওপর পড়াশেনা করছেন।
তার এ ধরনের সফলতার পেছনেও রয়েছে আরেক গল্প। তিনি শিশুদের বাঁচাতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। নিয়েছেন উচ্চ প্রশিক্ষণ। আর এটা করতে গিয়েই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। আইসিইউ এর টেবিল থেকে ফিরে এসেছেন। পেয়েছেন নতুন জীবন।
এরপর থেকে নতুন উদ্যমে নামেন শিশুদের বাঁচাতে। গল্পটি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুন নাহার ফাতেমা বেগমের। শিশুদের জটিল হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ হওয়ায় এ বছর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ঢকা ক্যান্টনমেন্টের কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে (সিএমএইচ) মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার জীবনের গল্প, কাজের সফলতা। সিলেট জেলার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাকশাইল গ্রামের কৃতীসন্তান তিনি। সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় ব্যক্তিগত কৃতিত্বের কারণে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার একমাত্র গৌরবোজ্জ্বল উদাহরণ নুরুন নাহার ফাতেমা বেগম। দীর্ঘদিন ধরে অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি।
স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে মানবজমিনকে তিনি বলেন, এককথায় আমি অভিভূত। মহান আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করি। তিনি বলেন, কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমার জন্য স্বাধীনতা পদকের স্বপ্নদ্রষ্টা আর্মি মেডিকেল কোরের পথিকৃৎ শ্রদ্ধেয় ডিজিএম স্যারের প্রতি। চিকিৎসা সেবার শুরুর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এর আগে সৌদি আরবের প্রিন্স সুলতান কার্ডিয়াক সেন্টারে ২ বছর কাজ করেছি। ১৯৯৬ সালে সেখানে যাই এবং ১৯৯৮ সালে ফিরে আসি।
সেটা ছিল অনেক কষ্টের একটি ট্রেনিং। সকাল ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। কারণ এই বিষয়টি অনেক জটিল।
বাংলাদেশে এটা ছিল না। আমি দেখলাম বাংলাদেশে এমন অনেক ছোট বাচ্চা জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। তাদের বাঁচানোর জন্য যে টেকনোলজি তা অত্যন্ত কঠিন ছিল। তখন ভেবেছি এই টেকনোলজি যদি আমি শিখতে পারি এবং বাংলাদেশে নিয়ে যেতে পারি তাহলে এমন অনেক বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, শিশুদের যে হার্টে রোগ হয় তখন মানুষ এটা বিশ্বাস করতো না। ধারণাও ছিল না। ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা বেগম জানান, অসংখ্য শিশুর অপারেশন করেছি। বাবা, মা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমন মৃতপ্রায় বাচ্চাদের অপারেশন করে তাদের সুস্থ করতে পেরেছি। আর প্রতিটি অপারেশনের আগে আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চেয়েছি। অনেক বাচ্চার নামকরণ করতে হয়েছে আমাকে।
জন্মের ২ থেকে তিন দিনের মধ্যে অপারেশন করতে হয়েছে এমন শিশুর সংখ্যা অনেক। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজারের মতো ইন্টারভেনশন (জন্মগত হৃদরোগ) করেছি। যেটা বিশ্বের যে কোনো উন্নত সেন্টারের সঙ্গে আমরা তুলনা করতে পারি। প্রফেসর ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা বাংলাদেশের প্রথম পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট এবং তিনি প্রথম জন্মগত শিশু হৃদরোগের ইন্টারভেনশন চালু করেন ও ধারণা দেন। তখন বুক কেটে হার্ট সার্জারি চিকিৎসা একমাত্র বিকল্প পথ ছিল। তিনি ১৯৯৮ সালে সিএমএইচ ঢাকায় পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল বাংলাদেশের প্রথম পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্ট। এখানে শিশু কার্ডিয়াক ইমারজেন্সি এবং শিশু কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশন সহ সব ধরনের জরুরি রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশের সকল শিশুর জন্য ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা চালু করেন। যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম শিশু হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। দরিদ্র শিশুরা যাতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ না করে সেই লক্ষ্যে তার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন দাতব্য কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিনি বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রচেষ্টায় এফসিপিএস পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি কোর্স চালু হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। তিনি সর্বশেষ আবিষ্কৃৃত শিশু হৃদরোগের ইন্টারভেনশন সমূহ নিজস্ব প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে একীভূত করেন। এর অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ঢাকায় সর্বপ্রথম সাউথ এশিয়ার মেলোডি পালমোনারি ভাল্ব প্রতিস্থাপন হয়।
তিনি বিশ্বের প্রায় ২১টি দেশ থেকে শিশু হৃদরোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রযুক্তি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগকে উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। তার প্রচেষ্টায় সিএমএইচ ঢাকার শিশু বিভাগ দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিভাগগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। তার এসব সফলতার পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ ঘটনা। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, যখন সৌদি আরবে ট্রেনিং করতে গিয়েছিলাম তখন অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কারণ এই টেকনোলজি বাংলাদেশে নেই। আমার মনে একটাই টার্গেট ছিল যেভাবেই হোক এটা আমাকে শিখতে হবে এবং বাংলাদেশে নিয়ে যেতে হবে। ট্রেনিংয়ের একপর্যায়ে অধিক পরিশ্রমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি।
ভেনটিলেটর ছাড়াও অনেকদিন আইসিইউতে ছিলাম। তখন আমার বাঁচারও কোনো আশা ছিল না। তখন আমার বস এসে আমাকে বকা দিয়ে বলেন, তুমি কি তোমার জীবন দিয়ে কাজ শিখবে নাকি। অসুস্থতার সময় সবাই বলে আমি হয়তো মারা যাবো। পরে যখন বেঁচে গেলাম তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আমি এই সাবজেক্ট কখনই ছাড়বো না। এ থেকে যা শিখবো তা মানুষের কাজে লাগাবো। ওই সময় তো আমি নাও বাঁচতে পারতাম। আল্লাহ্ যে আমাকে জীবনটা দিয়েছেন তা কাজে লাগাতে অনেক চ্যারিটি কাজ বা অন্যান্য কাজ করে থাকি। নুরুন নাহার ফাতেমা বেগমের মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত ইন্টারভেশনগুলো হচ্ছে- বেলুন এট্রিয়াল সেপটোসটোমি, পেটেন্ট ডাকটাস আরটারিওসাস কয়েল অকলুশন, এট্রিয়াল সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার, ভেট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার, পেটেন্ট ডাকটাস আরটারিওসাস ডিভাইস ক্লোজার, মাসকুলার ভেট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার, পেরিম্ব্রেনাস ভেটিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার, রাইট ভেনট্রিকেল আউটফ্লো ট্রাক্ট স্টানটিং, পেটেন্ট ডাকটাস আরটারিওসাস স্টানটিং, করোনারি ফিসটুলা কয়েল অকলুশন, করোনারি স্টানটিং, ভেট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট ডিভাইস ক্লোজার (এমপ্লাজার ডিভাইস অকলুডার দ্বারা), পেটেন্ট ডাকটাস আরটারিওসাস ডিভাইস ক্লোজার (এমপ্লাজার ডিভাইস অকলুডার দ্বারা), দক্ষিন এশিয়ায় প্রথম পালমোনারি ভাল্ব প্রতিস্থাপন (বৈদেশিক প্রক্টোর সহ), দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম পালমোনারি ভাল্ব (নিজস্ব প্রচেষ্টায়)।
১৯৮৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া নুরুন নাহার ফাতেমা বেগমের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আজহারউদ্দিন আহমেদ। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মার্জিয়া তাবাস্সুম প্রকৌশলী হলেও বর্তমানে লন্ডনে কাজ করছেন ব্যাংকার হিসেবে। আর ছোট মেয়ে মাশিয়া মাইশা আহমদ যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটিতে মেডিকেলের ওপর পড়াশেনা করছেন।
No comments