কে হচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী?
নির্বাচন
মানেই খেলা। দেশে দেশে এটাই যেন একমাত্র সত্য। এই যেমন ভারতে চলছে বহুমুখী
রশি টানাটানি। রাজনীতিক থেকে শুরু করে বলিউডি তারকা, বলতে গেলে সবাই
নেমেছেন এ রশি টানাটানিতে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ
বলে বিবেচিত ভারতের নির্বাচনের দিকে চোখ সবার, যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী মে
মাসে। তার আগেই অবশ্য আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরেক দেশ
ইসরায়েলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। একেবারে দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে সময়। এ
অবস্থায় নানা খেলা চলবে এটাই স্বাভাবিক।
ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই খেলা এখন পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই খেলে যাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি জয় নিশ্চিত করতে পারবেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গান্টজকে ধরাশায়ী করতে নানামাত্রিক প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। এই তো কিছুদিন আগেই তিনি বলেছেন, ‘গান্টজ যদি নিজের ফোনকেই নিরাপদ না রাখতে পারেন, তবে দেশকে নিরাপদ রাখবেন কী করে?’ মোক্ষম প্রশ্ন নিঃসন্দেহে। আর ইসরায়েলের মতো দেশের জন্য তো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটি। কারণ দেশটির ভোটারদের কাছে দেশের নিরাপত্তাই সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয়।
ঘটনার শুরু একটি প্রচার থেকে। ভোটের মাত্র কয়েক দিন আগে হঠাৎ করেই ইসরায়েলে প্রচার হলো যে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী বেনি গান্টজের সেলফোনের তথ্য হ্যাক করেছে ইরান, যেখানে এমন কিছু ছবি রয়েছে, যা গান্টজের জন্য ভীষণ অস্বস্তিকর। বেনি গান্টজ নিজে এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভোটের আগে রাজনৈতিক এই গল্প হালে বেশ পানি পেয়েছে। এই গল্প চাউর হওয়ার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর করা প্রশ্নটি, গল্পটির নির্মাতা হিসেবে তাঁকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ইসরায়েলিদের কাছে নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিবেচনায় প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন নেতানিয়াহু। গত এক দশক ধরে তিনি ইসরায়েলকে নিরাপদ রেখেছেন। কিন্তু অনেকেই আবার তাঁকে অপছন্দ করেন, তাঁর দুর্নীতি ও বিভাজনের রাজনীতির জন্য। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তও হয়েছে। আর এটিই বড় সুযোগ তৈরি করেছে বেনি গান্টজের জন্য। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাবেক এই চিফ অব স্টাফের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। রাজনীতিতে নতুন হলেও তাঁর ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট দল নেতানিয়াহুর লিকুদ দলের সঙ্গে বেশ ভালোই লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছে। ফলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নামটি কিছু মহলে বেশ ভালোভাবেই উচ্চারিত হচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের নির্বাচনে নিরাপত্তার বিষয়টিই প্রধান হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি গান্টজের উপদেষ্টাও মনে করেন, নির্বাচনে জয় পেতে হলে নেতানিয়াহুর গা থেকে মিস্টার সিকিউরিটি তকমাটি আগে সরাতে হবে। গান্টজ নিজেও বিষয়টি বেশ ভালোভাবে বোঝেন। এ কারণেই জন–আস্থা তৈরি করতে সাবেক দুই সেনাপ্রধান গাবি আশকেনাজি ও মোশে ইয়ালুনকে তিনি রানিং মেট করেছেন। নির্বাচনী প্রচারের শুরুতেই তাঁর প্রচার শিবির যে চারটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, তার তিনটিতেই তাঁকে লৌহমানব হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর এই উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার সময় তাঁর নেতৃত্ব কতটা নিষ্ঠুর ছিল, তাই তুলে ধরা হয়েছে কোনো রাখঢাক না রেখেই। ২০১২ ও ২০১৪ সালে গাজায় দুটি যুদ্ধে ইসরায়েল বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন গান্টজ। ভিডিওতে গান্টজের সাফল্য হিসেবে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী নির্মূল’, ‘শত্রু ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া’ ইত্যাদি কথা বলা হচ্ছে। আর সবশেষে ভিডিওর বয়ানে গান্টজের জন্য প্রশংসাবাক্য হিসেবে আসছে, ‘(ওই হামলায়) গাজার কিছু অংশ প্রস্তর যুগে ফিরে গিয়েছিল।’ সত্যিই কী দারুণ প্রচার! একটি ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে কী করে গাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা হামাসের শীর্ষ নেতাকে ড্রোন হামলায় হত্যা করা হয়েছিল।
ঠান্ডা মাথার কমান্ডার হিসেবে বেনি গান্টজের বেশ পরিচিতি রয়েছে ইসরায়েলে। সামরিক বাহিনীতে তাঁকে ‘প্রিন্স’ নামেও ডাকা হয়। কারণ তিনি খুব কম সময়ে দ্রুত পদোন্নতি পেয়েছিলেন। দ্রুত উত্থানের কারণে তাঁকে সৌভাগ্যবানও বিবেচনা করা হয়। নির্বাচনী প্রচারের জন্য প্রকাশ করা চতুর্থ ভিডিওতে আগের তিন ভিডিওর বয়ানের ঠিক বিপরীত বয়ান হাজির করেছেন গান্টজ। সেখানে তিনি বলছেন, শান্তির পথে এগোনোতে কোনো লজ্জা নেই। একদিকে লৌহমানব, অন্যদিকে শান্তিকামী! বলার অপেক্ষা রাখে না যে যুদ্ধবাজ ও শান্তিকামী উভয় পক্ষকেই তিনি পাশে চাইছেন। এ ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে ভিডিওতে। বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনে হামলার সময় তাঁর মা তাঁকে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের খাদ্য নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয়! সামরিক বাহিনীর প্রধান থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তিনি সব স্তরের মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
ইকোনমিস্ট বলছে, গান্টজের অবস্থান রাজনীতির মধ্যপন্থায়। তাঁর বাবা ছিলেন লেবার পার্টির বাম ঘরানার নেতা। তাঁর সন্তান হিসেবে তিনি অবস্থান নিচ্ছেন মধ্যপন্থায়। তাঁর দলের অন্য নেতাদের দৃষ্টিতে গান্টজ হচ্ছেন ‘নিরাপত্তা বিষয়ে প্রখর ও কূটনীতিতে উদার’ ভাবধারার। তেল আবিবের থিংক ট্যাংক ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ প্রস্তাবিত একটি শান্তি পরিকল্পনায় তাঁর সমর্থন রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে এমন একটি কাঠামো তৈরি হবে, যাতে দীর্ঘ মেয়াদে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। তবে তাঁর নির্বাচনী মেনিফেস্টো এ বিষয়ে অস্পষ্ট। সেখানে ফিলিস্তিনের সঙ্গে আরও বিভাজনের কথাই বলা হচ্ছে। যদিও নির্বাচিত হলে গান্টজ নতুন করে শান্তি আলোচনা শুরু করবেন বলেই মনে করা হচ্ছে, যা ২০১৪ সালের পর থেমে যায়।
গান্টজ শান্তি আলোচনা শুরু করবেন, এমন মনে করার কারণও রয়েছে। কারণ এরই মধ্যে তিনি নেতানিয়াহুর করা জাতিরাষ্ট্র আইন সংশোধনের কথা বলেছেন। ওই আইনে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল শুধু ‘ইহুদি’ হিসেবেই বিবেচিত হবে বলে বলা হয়েছে। গান্টজ এই আইন সংশোধন করে সবার জন্য সমানাধিকার নিশ্চিত করতে চান। তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে খুব বেশি কথা বলতে চান না গান্টজ। কারণ নেতানিয়াহুর প্রচার শিবির গান্টজকে ‘দুর্বল বামপন্থী’ হিসেবে চিত্রিত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। তাই গান্টজও তাঁর প্রচারের স্লোগান হিসেবে বলছেন, ‘সর্বাগ্রে ইসরায়েল।’
সব মিলিয়ে ইসরায়েলের নির্বাচনে আরব বিশ্বে বিদ্যমান সংকট ও ইসরায়েলের তথাকথিত নিরাপত্তার বিষয়টি এমনভাবে মুখ্য হয়ে উঠেছে যে প্রচারে দুই পক্ষই নিজের আক্রমণাত্মক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে তৎপর। বিষয়টি রীতিমতো কদর্য হয়ে উঠেছে। গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে কে কতটা নির্মম, তাই হয়ে উঠেছে এই প্রচারের মূল। নেতানিয়াহু অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কিছুটা বিপাকে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন কেনার সময় ৪৪ লাখ ডলার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গান্টজ এ বিষয়টিকেই পাখির চোখ করেছেন। অন্যদিকে নেতানিয়াহু গান্টজকে দুর্বল হিসেবে চিত্রিত করতেই সব শক্তি নিয়োগ করেছেন। শেষ পর্যন্ত কে শেষ হাসি হাসবেন তা এখনো কেউ জানে না। তবে অনেকেই ‘সৌভাগ্যবান’ হিসেবে পরিচিত বেনি গান্টজের ‘ঠান্ডা মাথা’র দিকেই তাকিয়ে আছেন।
ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই খেলা এখন পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই খেলে যাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি জয় নিশ্চিত করতে পারবেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গান্টজকে ধরাশায়ী করতে নানামাত্রিক প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। এই তো কিছুদিন আগেই তিনি বলেছেন, ‘গান্টজ যদি নিজের ফোনকেই নিরাপদ না রাখতে পারেন, তবে দেশকে নিরাপদ রাখবেন কী করে?’ মোক্ষম প্রশ্ন নিঃসন্দেহে। আর ইসরায়েলের মতো দেশের জন্য তো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটি। কারণ দেশটির ভোটারদের কাছে দেশের নিরাপত্তাই সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয়।
ঘটনার শুরু একটি প্রচার থেকে। ভোটের মাত্র কয়েক দিন আগে হঠাৎ করেই ইসরায়েলে প্রচার হলো যে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী বেনি গান্টজের সেলফোনের তথ্য হ্যাক করেছে ইরান, যেখানে এমন কিছু ছবি রয়েছে, যা গান্টজের জন্য ভীষণ অস্বস্তিকর। বেনি গান্টজ নিজে এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভোটের আগে রাজনৈতিক এই গল্প হালে বেশ পানি পেয়েছে। এই গল্প চাউর হওয়ার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর করা প্রশ্নটি, গল্পটির নির্মাতা হিসেবে তাঁকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ইসরায়েলিদের কাছে নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিবেচনায় প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন নেতানিয়াহু। গত এক দশক ধরে তিনি ইসরায়েলকে নিরাপদ রেখেছেন। কিন্তু অনেকেই আবার তাঁকে অপছন্দ করেন, তাঁর দুর্নীতি ও বিভাজনের রাজনীতির জন্য। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তও হয়েছে। আর এটিই বড় সুযোগ তৈরি করেছে বেনি গান্টজের জন্য। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাবেক এই চিফ অব স্টাফের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। রাজনীতিতে নতুন হলেও তাঁর ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট দল নেতানিয়াহুর লিকুদ দলের সঙ্গে বেশ ভালোই লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছে। ফলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নামটি কিছু মহলে বেশ ভালোভাবেই উচ্চারিত হচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের নির্বাচনে নিরাপত্তার বিষয়টিই প্রধান হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি গান্টজের উপদেষ্টাও মনে করেন, নির্বাচনে জয় পেতে হলে নেতানিয়াহুর গা থেকে মিস্টার সিকিউরিটি তকমাটি আগে সরাতে হবে। গান্টজ নিজেও বিষয়টি বেশ ভালোভাবে বোঝেন। এ কারণেই জন–আস্থা তৈরি করতে সাবেক দুই সেনাপ্রধান গাবি আশকেনাজি ও মোশে ইয়ালুনকে তিনি রানিং মেট করেছেন। নির্বাচনী প্রচারের শুরুতেই তাঁর প্রচার শিবির যে চারটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, তার তিনটিতেই তাঁকে লৌহমানব হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর এই উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার সময় তাঁর নেতৃত্ব কতটা নিষ্ঠুর ছিল, তাই তুলে ধরা হয়েছে কোনো রাখঢাক না রেখেই। ২০১২ ও ২০১৪ সালে গাজায় দুটি যুদ্ধে ইসরায়েল বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন গান্টজ। ভিডিওতে গান্টজের সাফল্য হিসেবে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী নির্মূল’, ‘শত্রু ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া’ ইত্যাদি কথা বলা হচ্ছে। আর সবশেষে ভিডিওর বয়ানে গান্টজের জন্য প্রশংসাবাক্য হিসেবে আসছে, ‘(ওই হামলায়) গাজার কিছু অংশ প্রস্তর যুগে ফিরে গিয়েছিল।’ সত্যিই কী দারুণ প্রচার! একটি ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে কী করে গাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা হামাসের শীর্ষ নেতাকে ড্রোন হামলায় হত্যা করা হয়েছিল।
ঠান্ডা মাথার কমান্ডার হিসেবে বেনি গান্টজের বেশ পরিচিতি রয়েছে ইসরায়েলে। সামরিক বাহিনীতে তাঁকে ‘প্রিন্স’ নামেও ডাকা হয়। কারণ তিনি খুব কম সময়ে দ্রুত পদোন্নতি পেয়েছিলেন। দ্রুত উত্থানের কারণে তাঁকে সৌভাগ্যবানও বিবেচনা করা হয়। নির্বাচনী প্রচারের জন্য প্রকাশ করা চতুর্থ ভিডিওতে আগের তিন ভিডিওর বয়ানের ঠিক বিপরীত বয়ান হাজির করেছেন গান্টজ। সেখানে তিনি বলছেন, শান্তির পথে এগোনোতে কোনো লজ্জা নেই। একদিকে লৌহমানব, অন্যদিকে শান্তিকামী! বলার অপেক্ষা রাখে না যে যুদ্ধবাজ ও শান্তিকামী উভয় পক্ষকেই তিনি পাশে চাইছেন। এ ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে ভিডিওতে। বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনে হামলার সময় তাঁর মা তাঁকে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের খাদ্য নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয়! সামরিক বাহিনীর প্রধান থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তিনি সব স্তরের মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
ইকোনমিস্ট বলছে, গান্টজের অবস্থান রাজনীতির মধ্যপন্থায়। তাঁর বাবা ছিলেন লেবার পার্টির বাম ঘরানার নেতা। তাঁর সন্তান হিসেবে তিনি অবস্থান নিচ্ছেন মধ্যপন্থায়। তাঁর দলের অন্য নেতাদের দৃষ্টিতে গান্টজ হচ্ছেন ‘নিরাপত্তা বিষয়ে প্রখর ও কূটনীতিতে উদার’ ভাবধারার। তেল আবিবের থিংক ট্যাংক ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ প্রস্তাবিত একটি শান্তি পরিকল্পনায় তাঁর সমর্থন রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে এমন একটি কাঠামো তৈরি হবে, যাতে দীর্ঘ মেয়াদে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। তবে তাঁর নির্বাচনী মেনিফেস্টো এ বিষয়ে অস্পষ্ট। সেখানে ফিলিস্তিনের সঙ্গে আরও বিভাজনের কথাই বলা হচ্ছে। যদিও নির্বাচিত হলে গান্টজ নতুন করে শান্তি আলোচনা শুরু করবেন বলেই মনে করা হচ্ছে, যা ২০১৪ সালের পর থেমে যায়।
গান্টজ শান্তি আলোচনা শুরু করবেন, এমন মনে করার কারণও রয়েছে। কারণ এরই মধ্যে তিনি নেতানিয়াহুর করা জাতিরাষ্ট্র আইন সংশোধনের কথা বলেছেন। ওই আইনে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল শুধু ‘ইহুদি’ হিসেবেই বিবেচিত হবে বলে বলা হয়েছে। গান্টজ এই আইন সংশোধন করে সবার জন্য সমানাধিকার নিশ্চিত করতে চান। তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে খুব বেশি কথা বলতে চান না গান্টজ। কারণ নেতানিয়াহুর প্রচার শিবির গান্টজকে ‘দুর্বল বামপন্থী’ হিসেবে চিত্রিত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। তাই গান্টজও তাঁর প্রচারের স্লোগান হিসেবে বলছেন, ‘সর্বাগ্রে ইসরায়েল।’
সব মিলিয়ে ইসরায়েলের নির্বাচনে আরব বিশ্বে বিদ্যমান সংকট ও ইসরায়েলের তথাকথিত নিরাপত্তার বিষয়টি এমনভাবে মুখ্য হয়ে উঠেছে যে প্রচারে দুই পক্ষই নিজের আক্রমণাত্মক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে তৎপর। বিষয়টি রীতিমতো কদর্য হয়ে উঠেছে। গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে কে কতটা নির্মম, তাই হয়ে উঠেছে এই প্রচারের মূল। নেতানিয়াহু অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কিছুটা বিপাকে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন কেনার সময় ৪৪ লাখ ডলার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গান্টজ এ বিষয়টিকেই পাখির চোখ করেছেন। অন্যদিকে নেতানিয়াহু গান্টজকে দুর্বল হিসেবে চিত্রিত করতেই সব শক্তি নিয়োগ করেছেন। শেষ পর্যন্ত কে শেষ হাসি হাসবেন তা এখনো কেউ জানে না। তবে অনেকেই ‘সৌভাগ্যবান’ হিসেবে পরিচিত বেনি গান্টজের ‘ঠান্ডা মাথা’র দিকেই তাকিয়ে আছেন।
No comments