মাদকের জমজমাট ব্যবসা
মাদকের
ছোবলে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে সারা দেশ। পাহাড়ি পল্লী থেকে শুরু করে
গ্রামগঞ্জের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়েছে এর প্রভাব। তবে বসে নেই আইনশৃঙ্খলা
বাহিনী।
দিনরাত অভিযান চালাচ্ছে। তারই কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো।
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ার পৌরসভার মাদকপাড়া খ্যাত ‘৮ নং ও ৯ নং ওয়ার্ডের’ শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা এখনো অধরা রয়ে গেছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানের মুখেও ওইসব ইয়াবা কারবারিরা আড়ালে চলে গেলেও বন্ধ হয়নি তাদের ইয়াবার ব্যবসা। মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন কৌশলে রুট বদল করে বীরবেশে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় সময় র্যাব ও পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। চকরিয়ার ইয়াবা ব্যবসার নেপথ্যে কারা তাদের পাকড়াও করতে পুলিশের অভিযানও অব্যাহত রেখেছে।
মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে চকরিয়ায় ইয়াবা কারবারিদের আইনের জালে আটকানোর দাবি জানান সচেতন মহল। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত আছেন। তাদের একবিন্দু ছাড় দেয়া হবে না। আইনের আওতায় পাকড়াও করা হবে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে পুলিশ ও র্যাব’র মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক কারবারিরা নিজেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে শীর্ষ অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে। এদের সবাই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তেমনি চকরিয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কয়েকটি গ্রামে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আস্তানা রয়েছে। ওই ওয়ার্ডের ভাঙ্গারমুখ এলাকায় কয়েকটি সিন্ডিকেটের ইয়াবা গডফাদাররা মূল হোতা হিসেবে কাজ করছেন বলে জানান এলাকাবাসী। তাদের সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য বিভিন্ন সময় ইয়াবাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছে।
ওই সিন্ডিকেটের একজন মাদক কারবারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে শীর্ষ গডফাদার হিসেবে তালিকাভুক্ত। মূলত পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ এলাকাটি এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ‘আড়ত ঘর’ হিসেবে চিহ্নিত। কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসে। এরপর সড়ক, সাগর, আকাশপথ ও পাহাড়ি পথে ইয়াবা চালান সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
এ কারণে কক্সবাজারের প্রবেশমুখ চকরিয়া হয়ে বিভিন্ন জায়গা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ইয়াবা কারবারিরা বেছে নিয়েছে। টেকনাফের ইয়াবা গডফাদারদের মতো চকরিয়ায় কয়েকজন শীর্ষ গডফাদার রয়েছে। এদের মূল আস্তানা এখন ভাঙ্গারমুখ। চিরিংগায় কয়েকটি এলাকা আগে মাদকপাড়া হিসেবে খ্যাত থাকলেও, তারা এখন পুলিশি অভিযান এড়াতে পাশর্^বর্তী ৯ নং ওয়ার্ডকে বেছে নিয়েছে।
চকরিয়ায় ইয়াবা ব্যবসা করে অনেক মাদক ব্যবসায়ী রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। চকরিয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের অনেক ইয়াবা কারবারি গাড়ি-বাড়ি কোটি কোটি মালিক বনে গেছেন। আলিশান বাড়িও নির্মাণ করেছে। এমন কথা এখন পুরো চকরিয়া জুড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অভিব্যক্তি তুলে ধরছেন সাধারণ মানুষ।
সাধারণ মানুষের আলাপচারিতায় উঠে আসছে অল্প সময়ে এত টাকা মালিত বনে যাওয়ার উৎস কোথায়! আরো নানা কথা। তাদের সম্পদের বিষয়ে তদন্তে নামার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল।
সাধারণ মানুষের দাবি, যারা মাদকের বিস্তার ছড়িয়ে দেশ ও যুব সমাজকে ধ্বংস করছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। চকরিয়ার ভাঙ্গারমুখ, খুঁটাখালী ও বদরখালীসহ আরো কয়েকটি পয়েন্টে ইয়াবার চালান হাতবদল হয়। চকরিয়ায় বসে কয়েকজন গডফাদার টেকনাফ থেকে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এসব ইয়াবা কারবারিদের অনেকে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকবার তাদের বাড়িতেও অভিযান চালায়।
সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের শীর্ষ গডফাদাররা এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। ওই গডফাদারের বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। তারা ফেরারি আসামিও। ওই ইয়াবা গডফাদারদের সঙ্গে সব সময় বন্দুকধারী থাকায় সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরতে না পারায় সাধারণ মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এই নিয়ে সাধারণ মানুষ নানা প্রশ্ন তুলছে।
তবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে চকরিয়ার শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হিসেবে নাম উঠে এসেছে। কয়েকজন গডফাদারের নামও আছে ওই তালিকায়। সংস্থাগুলোর তালিকায় তাদের অনেক সহযোগীদের নামও রয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মাদকের প্রসার ও বেচাকেনা ঠেকাতে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সারা দেশের মতো চকরিয়ায়ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে থানা পুলিশ।
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃড়খলা বাহিনী দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি অভিযানে রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গঠিত টাস্ক ফোর্স। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে গঠিত টাস্ক ফোর্স মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে (২ এপ্রিল) নগরীর দারোগাপাড়া ও মরিয়মপাড়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ১১৩ বোতল ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার, একটি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, রিভলবারের ১৩ পিস গুলি ও শর্টগানের ১৭ পিস গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া মাদক বিক্রির ১১ হাজার ৫শ’ টাকা ও মাদক ব্যবসায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল আর ওয়ান মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী মা মনিকা সরকার (৪৫) ও ছেলে রূপক সরকার (২৫) ও মুদি দোকানদার আব্দুল হামিদ (৪৫) কে আটক করা হয়। অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হওয়ায় প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছেন। অভিযানের সময় খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিঃ পরিচালক আবুল হোসেন, উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (দণি) মোহাম্মদ এহশান শাহ, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান খান, খুলনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিরিন আক্তার, গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভীন আক্তার, ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক মোহাম্মদ হাওলাদার সিরাজুল ইসলাম, ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক মো. সাইফুর রহমান রানাসহ গঠিত টাস্ক ফোসের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরীর দারোগাপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় বাসিন্দা মৃৃত সৈয়দ আলীর ছেলে হামিদ স্টোরের দোকানের মালিক আব্দুল হামিদকে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী হামিদ মুদি দোকানের আড়ালে ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছিলেন। এরপর ৫৮ নং খানজাহান আলী রোডে মরিয়ম পাড়ায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ওই এলাকার বাসিন্দা এ্যানোটনি সরকারের স্ত্রী মনিকা সরকার ও তার ছেলে রূপক সরকারকে ৬৩ বোতল ফেনসিডিল, এক বোতল বিদেশি মদ, বিয়ার, একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, রিভলবারের ১৩ পিস ও সর্টগানের ১৭ পিস গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়।
উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক বিক্রেতার পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে। আটক মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের আইনের মামলা দায়ের করা হবে।
খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভীন আক্তার বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে আমরা নিরস্ত্রভাবে অভিযান পরিচালনা করি। বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকে। অভিযানে গেলে যদি কোনো মাদক বিক্রেতা আমাদের ওপর হামলা চালায় আমাদের তখন করণীয় কিছুই থাকে না, কারণ আমার নিরস্ত্র অবস্থায় অভিযান পরিচালনা করি। তারপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ অভিযানে আমাদের যেতে হচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের যৌথভাবে গঠিত মাদকবিরোধী টাস্ক ফোর্স এর একটি টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মাদকের চালান ও পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
আটক মাদক ব্যবসায়ী রূপক সরকার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, যশোরে কসমেটিক ব্যবসায়ী আয়েশা নামে এক পাইকারি ফেনসিডিল বিক্রেতার কাছ থেকে এই ফেনসিডিল চালানটি খুলনায় আনা হয়েছে। মরিয়মপাড়া এলাকার বাসিন্দা জানান, হিমো নামে জনৈক ব্যক্তি এই এলাকায় মাদকের নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত রয়েছে। সে এই এলাকায় তার সহযোগিদের দিয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানা ব্যবসার পরিচালনা করে আসছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জনৈক হিমু তার সহযোগীদের মাধ্যমে মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মাদকের ছোবল এখন কুলাউড়ার আদিবাসী পল্লীগুলোতে। সমতলে মাদকের ক্রমবর্ধমান অবাধ ছড়াছড়ি থাকলেও বর্তমানে কুলাউড়া উপজেলার আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়ি পল্লী (পুঞ্জি) গুলোতে এখন হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি কম থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অতিসহজেই পুঞ্জিগুলোতে মাদকের রমরমা ব্যবসা নির্ভয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। মাদকের বিস্তার নিয়ে আদিবাসী পুঞ্জির এক হেডম্যান কুলাউড়া থানায় লিখিত একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারত থেকে মদ, ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকসামগ্রী অতি সহজেই আসছে। যা কুলাউড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। কুলাউড়ার ৩১টি আদিবাসী পুঞ্জিতে খাসিয়া-গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস দীর্ঘদিন থেকে। কিছুদিন থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা এসব মাদকসামগ্রী পাহাড়ে নিয়ে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এতে মাদক সেবন করে আদিবাসী পুঞ্জিগুলোতে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীরাও মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। মাদক সেবন করে অনেকে মাতলামি করে, আবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। যারফলে তাদের পারিবারিক বন্ধনেও প্রভাব ফেলছে। তবে সচেতন আদিবাসীরা পুঞ্জিগুলোতে মাদক নিরসনে গণস্বাক্ষর সংবলিত লিখিত অভিযোগ কুলাউড়া থানাসহ প্রশাসনের অন্যান্য দপ্তরে দিয়েছেন। এসব অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, কর্মধা ইউনিয়নের সাহেব টিলাপুঞ্জির বাসিন্দা জেনেন স্নাল (৫০) দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশ্যে মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক সামগ্রী বিক্রি করে আসছে। চা-বাগানের চিহ্নিত এক মদ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঁতাত করে তার পুঞ্জিতে মাদকদ্রব্যের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন। এতে কেউ প্রতিবাদ করলে জেনেন স্নাল হুমকি প্রদান করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী আমুলী পুঞ্জির হেডম্যান ও আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন (কুবরাজ) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রত্যুষ আশাক্রা বলেন, মাদক থেকে আমাদের প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে সকলকে সচেতন হতে হবে। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের সম্প্রদায়ের দু’-একজন মাদক বিক্রয়ে পাহাড়ি এলাকায় উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছেন। মাদক নির্মূলে আমুলী, পুঁটিছড়া, নূনছড়া ও ভালাইমা পুঞ্জির দেড় শতাধিক আদিবাসীর গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছি। আমরা পাহাড়ে মাদকের ছোবল চাই না।
অভিযোগের বিষয়ে সাহেব টিলা পুঞ্জির জেনেন স্নাল প্রথমে বলেন, মদ বিক্রির বৈধ কাগজপত্র আছে। পরে কথা পাল্টে বলেন, এগারো জনের একটা পারমিট রাঙ্গিছড়া চা-বাগানের নরসামলু রাজভরের কাছ থেকে নিয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে মদ বিক্রি করে আসছি। আমি নিজে মদ খাই এবং মানুষদের মদ খাওয়াই।
কর্মধা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, কুলাউড়া থানার এসআই সানাউল্ল্যাহ বলেন, পাহাড়ি গহীন এলাকা হওয়ায় সেখানে যেতে পারিনি। তবে নরসামলু রাজভরের ছেলে একটা কাগজ দিয়ে গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
দিনরাত অভিযান চালাচ্ছে। তারই কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো।
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ার পৌরসভার মাদকপাড়া খ্যাত ‘৮ নং ও ৯ নং ওয়ার্ডের’ শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা এখনো অধরা রয়ে গেছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানের মুখেও ওইসব ইয়াবা কারবারিরা আড়ালে চলে গেলেও বন্ধ হয়নি তাদের ইয়াবার ব্যবসা। মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন কৌশলে রুট বদল করে বীরবেশে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় সময় র্যাব ও পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। চকরিয়ার ইয়াবা ব্যবসার নেপথ্যে কারা তাদের পাকড়াও করতে পুলিশের অভিযানও অব্যাহত রেখেছে।
মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে চকরিয়ায় ইয়াবা কারবারিদের আইনের জালে আটকানোর দাবি জানান সচেতন মহল। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত আছেন। তাদের একবিন্দু ছাড় দেয়া হবে না। আইনের আওতায় পাকড়াও করা হবে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে পুলিশ ও র্যাব’র মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক কারবারিরা নিজেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে শীর্ষ অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে। এদের সবাই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তেমনি চকরিয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কয়েকটি গ্রামে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আস্তানা রয়েছে। ওই ওয়ার্ডের ভাঙ্গারমুখ এলাকায় কয়েকটি সিন্ডিকেটের ইয়াবা গডফাদাররা মূল হোতা হিসেবে কাজ করছেন বলে জানান এলাকাবাসী। তাদের সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য বিভিন্ন সময় ইয়াবাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছে।
ওই সিন্ডিকেটের একজন মাদক কারবারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে শীর্ষ গডফাদার হিসেবে তালিকাভুক্ত। মূলত পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ এলাকাটি এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ‘আড়ত ঘর’ হিসেবে চিহ্নিত। কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসে। এরপর সড়ক, সাগর, আকাশপথ ও পাহাড়ি পথে ইয়াবা চালান সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
এ কারণে কক্সবাজারের প্রবেশমুখ চকরিয়া হয়ে বিভিন্ন জায়গা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ইয়াবা কারবারিরা বেছে নিয়েছে। টেকনাফের ইয়াবা গডফাদারদের মতো চকরিয়ায় কয়েকজন শীর্ষ গডফাদার রয়েছে। এদের মূল আস্তানা এখন ভাঙ্গারমুখ। চিরিংগায় কয়েকটি এলাকা আগে মাদকপাড়া হিসেবে খ্যাত থাকলেও, তারা এখন পুলিশি অভিযান এড়াতে পাশর্^বর্তী ৯ নং ওয়ার্ডকে বেছে নিয়েছে।
চকরিয়ায় ইয়াবা ব্যবসা করে অনেক মাদক ব্যবসায়ী রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। চকরিয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের অনেক ইয়াবা কারবারি গাড়ি-বাড়ি কোটি কোটি মালিক বনে গেছেন। আলিশান বাড়িও নির্মাণ করেছে। এমন কথা এখন পুরো চকরিয়া জুড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অভিব্যক্তি তুলে ধরছেন সাধারণ মানুষ।
সাধারণ মানুষের আলাপচারিতায় উঠে আসছে অল্প সময়ে এত টাকা মালিত বনে যাওয়ার উৎস কোথায়! আরো নানা কথা। তাদের সম্পদের বিষয়ে তদন্তে নামার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল।
সাধারণ মানুষের দাবি, যারা মাদকের বিস্তার ছড়িয়ে দেশ ও যুব সমাজকে ধ্বংস করছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। চকরিয়ার ভাঙ্গারমুখ, খুঁটাখালী ও বদরখালীসহ আরো কয়েকটি পয়েন্টে ইয়াবার চালান হাতবদল হয়। চকরিয়ায় বসে কয়েকজন গডফাদার টেকনাফ থেকে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এসব ইয়াবা কারবারিদের অনেকে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকবার তাদের বাড়িতেও অভিযান চালায়।
সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের শীর্ষ গডফাদাররা এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। ওই গডফাদারের বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। তারা ফেরারি আসামিও। ওই ইয়াবা গডফাদারদের সঙ্গে সব সময় বন্দুকধারী থাকায় সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরতে না পারায় সাধারণ মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এই নিয়ে সাধারণ মানুষ নানা প্রশ্ন তুলছে।
তবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে চকরিয়ার শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হিসেবে নাম উঠে এসেছে। কয়েকজন গডফাদারের নামও আছে ওই তালিকায়। সংস্থাগুলোর তালিকায় তাদের অনেক সহযোগীদের নামও রয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মাদকের প্রসার ও বেচাকেনা ঠেকাতে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সারা দেশের মতো চকরিয়ায়ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে থানা পুলিশ।
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃড়খলা বাহিনী দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি অভিযানে রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গঠিত টাস্ক ফোর্স। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে গঠিত টাস্ক ফোর্স মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে (২ এপ্রিল) নগরীর দারোগাপাড়া ও মরিয়মপাড়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ১১৩ বোতল ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার, একটি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, রিভলবারের ১৩ পিস গুলি ও শর্টগানের ১৭ পিস গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া মাদক বিক্রির ১১ হাজার ৫শ’ টাকা ও মাদক ব্যবসায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল আর ওয়ান মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী মা মনিকা সরকার (৪৫) ও ছেলে রূপক সরকার (২৫) ও মুদি দোকানদার আব্দুল হামিদ (৪৫) কে আটক করা হয়। অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হওয়ায় প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছেন। অভিযানের সময় খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিঃ পরিচালক আবুল হোসেন, উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (দণি) মোহাম্মদ এহশান শাহ, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান খান, খুলনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিরিন আক্তার, গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভীন আক্তার, ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক মোহাম্মদ হাওলাদার সিরাজুল ইসলাম, ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক মো. সাইফুর রহমান রানাসহ গঠিত টাস্ক ফোসের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরীর দারোগাপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় বাসিন্দা মৃৃত সৈয়দ আলীর ছেলে হামিদ স্টোরের দোকানের মালিক আব্দুল হামিদকে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী হামিদ মুদি দোকানের আড়ালে ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছিলেন। এরপর ৫৮ নং খানজাহান আলী রোডে মরিয়ম পাড়ায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ওই এলাকার বাসিন্দা এ্যানোটনি সরকারের স্ত্রী মনিকা সরকার ও তার ছেলে রূপক সরকারকে ৬৩ বোতল ফেনসিডিল, এক বোতল বিদেশি মদ, বিয়ার, একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, রিভলবারের ১৩ পিস ও সর্টগানের ১৭ পিস গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়।
উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক বিক্রেতার পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে। আটক মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের আইনের মামলা দায়ের করা হবে।
খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভীন আক্তার বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে আমরা নিরস্ত্রভাবে অভিযান পরিচালনা করি। বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকে। অভিযানে গেলে যদি কোনো মাদক বিক্রেতা আমাদের ওপর হামলা চালায় আমাদের তখন করণীয় কিছুই থাকে না, কারণ আমার নিরস্ত্র অবস্থায় অভিযান পরিচালনা করি। তারপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ অভিযানে আমাদের যেতে হচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের যৌথভাবে গঠিত মাদকবিরোধী টাস্ক ফোর্স এর একটি টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মাদকের চালান ও পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
আটক মাদক ব্যবসায়ী রূপক সরকার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, যশোরে কসমেটিক ব্যবসায়ী আয়েশা নামে এক পাইকারি ফেনসিডিল বিক্রেতার কাছ থেকে এই ফেনসিডিল চালানটি খুলনায় আনা হয়েছে। মরিয়মপাড়া এলাকার বাসিন্দা জানান, হিমো নামে জনৈক ব্যক্তি এই এলাকায় মাদকের নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত রয়েছে। সে এই এলাকায় তার সহযোগিদের দিয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানা ব্যবসার পরিচালনা করে আসছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জনৈক হিমু তার সহযোগীদের মাধ্যমে মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মাদকের ছোবল এখন কুলাউড়ার আদিবাসী পল্লীগুলোতে। সমতলে মাদকের ক্রমবর্ধমান অবাধ ছড়াছড়ি থাকলেও বর্তমানে কুলাউড়া উপজেলার আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়ি পল্লী (পুঞ্জি) গুলোতে এখন হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি কম থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অতিসহজেই পুঞ্জিগুলোতে মাদকের রমরমা ব্যবসা নির্ভয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। মাদকের বিস্তার নিয়ে আদিবাসী পুঞ্জির এক হেডম্যান কুলাউড়া থানায় লিখিত একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারত থেকে মদ, ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকসামগ্রী অতি সহজেই আসছে। যা কুলাউড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। কুলাউড়ার ৩১টি আদিবাসী পুঞ্জিতে খাসিয়া-গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস দীর্ঘদিন থেকে। কিছুদিন থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা এসব মাদকসামগ্রী পাহাড়ে নিয়ে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এতে মাদক সেবন করে আদিবাসী পুঞ্জিগুলোতে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীরাও মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। মাদক সেবন করে অনেকে মাতলামি করে, আবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। যারফলে তাদের পারিবারিক বন্ধনেও প্রভাব ফেলছে। তবে সচেতন আদিবাসীরা পুঞ্জিগুলোতে মাদক নিরসনে গণস্বাক্ষর সংবলিত লিখিত অভিযোগ কুলাউড়া থানাসহ প্রশাসনের অন্যান্য দপ্তরে দিয়েছেন। এসব অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, কর্মধা ইউনিয়নের সাহেব টিলাপুঞ্জির বাসিন্দা জেনেন স্নাল (৫০) দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশ্যে মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক সামগ্রী বিক্রি করে আসছে। চা-বাগানের চিহ্নিত এক মদ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঁতাত করে তার পুঞ্জিতে মাদকদ্রব্যের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন। এতে কেউ প্রতিবাদ করলে জেনেন স্নাল হুমকি প্রদান করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী আমুলী পুঞ্জির হেডম্যান ও আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন (কুবরাজ) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রত্যুষ আশাক্রা বলেন, মাদক থেকে আমাদের প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে সকলকে সচেতন হতে হবে। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের সম্প্রদায়ের দু’-একজন মাদক বিক্রয়ে পাহাড়ি এলাকায় উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছেন। মাদক নির্মূলে আমুলী, পুঁটিছড়া, নূনছড়া ও ভালাইমা পুঞ্জির দেড় শতাধিক আদিবাসীর গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছি। আমরা পাহাড়ে মাদকের ছোবল চাই না।
অভিযোগের বিষয়ে সাহেব টিলা পুঞ্জির জেনেন স্নাল প্রথমে বলেন, মদ বিক্রির বৈধ কাগজপত্র আছে। পরে কথা পাল্টে বলেন, এগারো জনের একটা পারমিট রাঙ্গিছড়া চা-বাগানের নরসামলু রাজভরের কাছ থেকে নিয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে মদ বিক্রি করে আসছি। আমি নিজে মদ খাই এবং মানুষদের মদ খাওয়াই।
কর্মধা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, কুলাউড়া থানার এসআই সানাউল্ল্যাহ বলেন, পাহাড়ি গহীন এলাকা হওয়ায় সেখানে যেতে পারিনি। তবে নরসামলু রাজভরের ছেলে একটা কাগজ দিয়ে গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
No comments