ভেবেছিলাম যদি একটি মানুষকেও বাঁচানো যায় -বনানীর হিরো একজন নাঈম by শুভ্র দেব
চারদিকে
বাঁচাও বাঁচাও আর্তি। সড়কে মানুষের আহাজারি। ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের
প্রাণপণ চেষ্টা। কিন্তু সবাই অসহায়। বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন ডালপালা
ছড়াচ্ছে। ধোঁয়াও আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে গোটা ভবন। এ ধোঁয়ার রেশ বাতাসে ছড়িয়ে
পড়ছে আশপাশে। কেউ কেউ হাত নেড়ে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন।
কেউবা উপর থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাফ দিচ্ছে নিচে। চোখের সামনে উপর থেকে লাফিয়ে পড়ছে বাঁচার জন্য। কিন্তু বাঁচা যে তার হলো না। হাজারো মানুষের চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা গেল। এ দৃশ্য দেখে সবাই কেঁদে ওঠে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন লম্বা পাইপ দিয়ে পানি দিচ্ছে। সময় যাচ্ছে গড়িয়ে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না। লম্বা পাইপের এক জায়গায় ছিদ্র। তা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। একটু পানিও সে সময় মহামূল্যবান। একটুও পানিও যেন বৃথা না যায়। আগুন নেভাতে যেন সাহায্য করে। তাইতো চোখের সামনে এ পানি অপচয় দেখে স্থির থাকতে পারেনি ছোট্ট নাঈম। পলিথিন পেঁচিয়ে সেখানে পা দিয়ে ঠেসে ধরে। চোখে মুখে তার অন্যরকম অভিব্যক্তি। তাইতো নাঈমের ছবি এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। সে এখন মানবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। গোটা দেশে সে এখন এক হিরো। ভালোবাসার হিরো। মানবতার হিরো। মনকে নাড়িয়ে দেয়ার হিরো। ওই মুহূর্তে তার এ কাজ এফআর ভবনে আটকে পড়াদের বাঁচানোর। আটকে পড়াদের আকুতি তার মনকে ছুঁয়ে গেছে। তাইতো ছোট্ট নাঈম তার সেরাটা দিয়ে এ চেষ্টা।
নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই হিরোর নাম মো. নাঈম ইসলাম। বনানীর অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে সে সবার হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। আট বছর বয়সী এই বালক মায়ের সঙ্গেই থাকে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলায়। ছোট বেলা থেকেই সে ঢাকায় থাকে। তার বাবা রুহুল আমীন ডাব বিক্রেতা ও মা নাজমা বেগম বাসা বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়। নাঈম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের আনন্দ স্কুলের পঞ্চশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর তার সাত বছর বয়সী বোন কাজল চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে অনেক দিন ধরে আলাদা থাকেন। অন্যের বাসায় কাজ করে তার মা যা আয় করেন তা দিয়েই চলে সংসার।
শুক্রবার অনেক খোঁজাখুুঁজির পর সকাল ১১টার দিকে দেখা মিলে নাঈমের। ওইদিন কি হয়েছিল জানতে চাইলে নাঈম বলে, অনেক মানুষ পুড়ে মরে গেছে। অনেক মানুষ বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল কিন্তু তাদের বাঁচানো যায়নি। ভেবেছিলাম সবাই সুস্থভাবে ঘরে ফিরে যাবে তা আর হয়নি। বাঁচার জন্য অনেকে উপর থেকে লাফ দিয়েছে। শুনেছি তারাও মরে গেছে। চোখের সামনে এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য আর কখনই দেখিনি। অগ্নিকাণ্ডের খবর কিভাবে তার কাছে পৌঁছায় এমন প্রশ্নে নাঈম জানায়, শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তার স্কুলে যেতে হয়। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটির পর সে বাসায় যায়। স্কুলের কাপড় খোলার আগেই তার মা তাকে জানান বনানীতে আগুন লেগেছে তাই টিভি চালানোর জন্য। টিভি চালানোর পর সে আগুন লাগার খবর পায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে দৌড়ে চলে আসে বনানী।
নাঈম বলে, ঘটনাস্থলে আসার পর দেখি হাজার হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছে। আমার অবস্থান ছিল আরএফ ভবনের পেছনের অংশে। চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। নিঃশ্বাস নেয়ার উপায় ছিল না। বাতাসে ভেসে আসছে শুধু পোড়া গন্ধ। আগুন লাগা ভবনের উপরে নিচে কান্না আর চিৎকারের শব্দ। ভবনের উপর তলা থেকে মানুষ বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছিল। তাদের বাঁচার আকুতি দেখে মনে হচ্ছিল কিছু একটা করি। কিন্তু কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মানুষের চাপাচাপির মধ্যে দাঁড়াতেও পারছিলাম না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একদিকে আগুন নেভানোর চেষ্টা আর অন্যদিকে ভবনের মধ্যে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন। অন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যখন আমি আগুনের তাণ্ডব দেখছিলাম তখন আমার পায়ের পাশে ফায়ার সার্ভিসের একটি পানির পাইপ ছিল। ওই পাইপ লিক হয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছিল। তাই প্রথমে আমি হাত দিয়ে ওই পাইপ চেপে ধরেছিলাম। কিন্তু আমার ছোট হাত দিয়ে পানি আটকাতে পারছিলাম না। পরে একটি পলিথিন সংগ্রহ করে সেটি দিয়ে পাইপ পেঁচিয়ে পা দিয়ে চাপ দিয়ে ধরি। ভেবেছিলাম এক ফোঁটা পানিও যাতে নষ্ট না হয়। এক ফোঁটা পানি আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেন কাউকে জীবিত রাখে। নাঈম বলে, পাইপ চাপ দিয়ে ধরে শুধু সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছিলাম। ভেবেছিলাম যদি একটি মানুষকে অন্তত বাঁচানো যায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি সেখানে ছিলাম। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বাসায় ফিরে গেছি।
তবে নিজের ভাইরাল হওয়া ছবি সম্পর্কে কিছুই জানতো না বলে জানিয়েছে নাঈম। অথচ ঘটনার পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাইপ চেপে ধরা নাঈমের ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। লাখ লাখ মানুষ ভালোবেসে তার ছবি ছড়িয়ে দিয়েছে নেট দুনিয়ায়। ঘটনাস্থলে অনেকেই যখন সেলফি ও ভিডিও করা নিয়ে ব্যস্ত। তখন মানবিক এই কাজের জন্য সে গোটা দেশের সব মহলের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, নাঈম ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে দিয়েছে। ভাইরাল হওয়া ছবির প্রসঙ্গে নাঈম বলে, বনানীর আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হওয়ার পর আমি বাসায় যাই। তখন বস্তির মালিকের ভাগ্নে মেহেদি তার মোবাইলে একটি ছবি দেখিয়ে বলে আমার ছবি ফেসবুকে আসছে। তিনি আরো জানান, সেই ছবি লাখ লাখ মানুষ দেখতেছে। মানবিক ওই কাজ করার জন্য সবাই আমাকে বাহবা দিচ্ছে। নাঈম বলে, আমি জানি না কে আমার ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছে। ছবি দেখে প্রথম আমার খুব ভয় লেগেছিল। যদি কিছু হয় এই ভেবে। পরে সবাই যখন আমাকে বললো আমার এই কাজটির জন্য সবাই আমার প্রশংসা করছে তখন আর ভয় করেনি।
লেখাপড়ার পাশাপাশি নাঈমের সময় কাটে খেলাধুলা ও পুলিশের সঙ্গে। তার স্বপ্ন লেখাপড়া করে বড় পুলিশ অফিসার হয়ে জনগণের সেবা করা। পুলিশের সঙ্গে মেলামেশাটাও তার অনেক দিনের। গুলশান-১ ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। গত তিন বছর ধরে সে ওই ট্রাফিক বক্সে আসা যাওয়া করে। গুলশান এলাকার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক ইকবাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, নাঈমকে আমরা অনেক আগে থেকেই চিনি। আমাদের সঙ্গে প্রায়ই সময় কাটায়। আমরা যা খাই সে তা খায়। অনেক সময় দেখা যায়, সে নিজে থেকে আমাদের গাড়ি পরিষ্কার করে দেয়। দোকান থেকে কিছু আনার কথা বললে এনে দেয়। আবার পরিচিত যে কেউ কোনো কাজের জন্য বাসা বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে চলে যায়। ইকবাল হোসেন বলেন, নাঈম অনেক মিশুক প্রকৃতির।
এজন্য সবাই তাকে ভালোবাসে। তার মা নাজমা বেগমও আমাদের এখানে আসেন। তিনি আমাদের বলে দিয়েছেন আমরা কেউ যেন তাকে টাকা পয়সা না দেই। শুধু যেন লেখাপড়া করে এই উৎসাহ দেই। এরপর থেকে আমরা তাকে লেখাপড়ার কথাই বলি। আর বনানীর অগ্নিকাণ্ডের দিন সে যে কাজ করেছে এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার এমন মানবিক কাজের জন্য ধন্যবান নয় ভালোবাসাই দেয়া যায়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈমের মানবিক কাজ ও লেখাপড়া করে পুলিশ অফিসার হওয়ার ইচ্ছার কথা জেনে তার দায়িত্ব নিয়েছেন এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। ওমর ফারুক সামি নামের ওই প্রবাসীর বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জে। তিনি নাঈমকে পাঁচ হাজার ডলার ও লেখাপড়ার যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন। গতকাল এই প্রবাসী জানান, তিনি নাঈমের কাজে খুবই খুশি হয়েছেন। তিনি জেনেছেন সে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। তার স্বপ্ন পুলিশ অফিসার হওয়া। তাই তার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তিনি এ দায়িত্ব নিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে পাঁচ হাজার ডলার তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।
কেউবা উপর থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাফ দিচ্ছে নিচে। চোখের সামনে উপর থেকে লাফিয়ে পড়ছে বাঁচার জন্য। কিন্তু বাঁচা যে তার হলো না। হাজারো মানুষের চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা গেল। এ দৃশ্য দেখে সবাই কেঁদে ওঠে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন লম্বা পাইপ দিয়ে পানি দিচ্ছে। সময় যাচ্ছে গড়িয়ে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না। লম্বা পাইপের এক জায়গায় ছিদ্র। তা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। একটু পানিও সে সময় মহামূল্যবান। একটুও পানিও যেন বৃথা না যায়। আগুন নেভাতে যেন সাহায্য করে। তাইতো চোখের সামনে এ পানি অপচয় দেখে স্থির থাকতে পারেনি ছোট্ট নাঈম। পলিথিন পেঁচিয়ে সেখানে পা দিয়ে ঠেসে ধরে। চোখে মুখে তার অন্যরকম অভিব্যক্তি। তাইতো নাঈমের ছবি এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। সে এখন মানবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। গোটা দেশে সে এখন এক হিরো। ভালোবাসার হিরো। মানবতার হিরো। মনকে নাড়িয়ে দেয়ার হিরো। ওই মুহূর্তে তার এ কাজ এফআর ভবনে আটকে পড়াদের বাঁচানোর। আটকে পড়াদের আকুতি তার মনকে ছুঁয়ে গেছে। তাইতো ছোট্ট নাঈম তার সেরাটা দিয়ে এ চেষ্টা।
নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই হিরোর নাম মো. নাঈম ইসলাম। বনানীর অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে সে সবার হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। আট বছর বয়সী এই বালক মায়ের সঙ্গেই থাকে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলায়। ছোট বেলা থেকেই সে ঢাকায় থাকে। তার বাবা রুহুল আমীন ডাব বিক্রেতা ও মা নাজমা বেগম বাসা বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়। নাঈম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের আনন্দ স্কুলের পঞ্চশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর তার সাত বছর বয়সী বোন কাজল চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে অনেক দিন ধরে আলাদা থাকেন। অন্যের বাসায় কাজ করে তার মা যা আয় করেন তা দিয়েই চলে সংসার।
শুক্রবার অনেক খোঁজাখুুঁজির পর সকাল ১১টার দিকে দেখা মিলে নাঈমের। ওইদিন কি হয়েছিল জানতে চাইলে নাঈম বলে, অনেক মানুষ পুড়ে মরে গেছে। অনেক মানুষ বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল কিন্তু তাদের বাঁচানো যায়নি। ভেবেছিলাম সবাই সুস্থভাবে ঘরে ফিরে যাবে তা আর হয়নি। বাঁচার জন্য অনেকে উপর থেকে লাফ দিয়েছে। শুনেছি তারাও মরে গেছে। চোখের সামনে এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য আর কখনই দেখিনি। অগ্নিকাণ্ডের খবর কিভাবে তার কাছে পৌঁছায় এমন প্রশ্নে নাঈম জানায়, শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তার স্কুলে যেতে হয়। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটির পর সে বাসায় যায়। স্কুলের কাপড় খোলার আগেই তার মা তাকে জানান বনানীতে আগুন লেগেছে তাই টিভি চালানোর জন্য। টিভি চালানোর পর সে আগুন লাগার খবর পায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে দৌড়ে চলে আসে বনানী।
নাঈম বলে, ঘটনাস্থলে আসার পর দেখি হাজার হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছে। আমার অবস্থান ছিল আরএফ ভবনের পেছনের অংশে। চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। নিঃশ্বাস নেয়ার উপায় ছিল না। বাতাসে ভেসে আসছে শুধু পোড়া গন্ধ। আগুন লাগা ভবনের উপরে নিচে কান্না আর চিৎকারের শব্দ। ভবনের উপর তলা থেকে মানুষ বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছিল। তাদের বাঁচার আকুতি দেখে মনে হচ্ছিল কিছু একটা করি। কিন্তু কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মানুষের চাপাচাপির মধ্যে দাঁড়াতেও পারছিলাম না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একদিকে আগুন নেভানোর চেষ্টা আর অন্যদিকে ভবনের মধ্যে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন। অন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যখন আমি আগুনের তাণ্ডব দেখছিলাম তখন আমার পায়ের পাশে ফায়ার সার্ভিসের একটি পানির পাইপ ছিল। ওই পাইপ লিক হয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছিল। তাই প্রথমে আমি হাত দিয়ে ওই পাইপ চেপে ধরেছিলাম। কিন্তু আমার ছোট হাত দিয়ে পানি আটকাতে পারছিলাম না। পরে একটি পলিথিন সংগ্রহ করে সেটি দিয়ে পাইপ পেঁচিয়ে পা দিয়ে চাপ দিয়ে ধরি। ভেবেছিলাম এক ফোঁটা পানিও যাতে নষ্ট না হয়। এক ফোঁটা পানি আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেন কাউকে জীবিত রাখে। নাঈম বলে, পাইপ চাপ দিয়ে ধরে শুধু সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছিলাম। ভেবেছিলাম যদি একটি মানুষকে অন্তত বাঁচানো যায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি সেখানে ছিলাম। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বাসায় ফিরে গেছি।
তবে নিজের ভাইরাল হওয়া ছবি সম্পর্কে কিছুই জানতো না বলে জানিয়েছে নাঈম। অথচ ঘটনার পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাইপ চেপে ধরা নাঈমের ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। লাখ লাখ মানুষ ভালোবেসে তার ছবি ছড়িয়ে দিয়েছে নেট দুনিয়ায়। ঘটনাস্থলে অনেকেই যখন সেলফি ও ভিডিও করা নিয়ে ব্যস্ত। তখন মানবিক এই কাজের জন্য সে গোটা দেশের সব মহলের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, নাঈম ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে দিয়েছে। ভাইরাল হওয়া ছবির প্রসঙ্গে নাঈম বলে, বনানীর আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হওয়ার পর আমি বাসায় যাই। তখন বস্তির মালিকের ভাগ্নে মেহেদি তার মোবাইলে একটি ছবি দেখিয়ে বলে আমার ছবি ফেসবুকে আসছে। তিনি আরো জানান, সেই ছবি লাখ লাখ মানুষ দেখতেছে। মানবিক ওই কাজ করার জন্য সবাই আমাকে বাহবা দিচ্ছে। নাঈম বলে, আমি জানি না কে আমার ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছে। ছবি দেখে প্রথম আমার খুব ভয় লেগেছিল। যদি কিছু হয় এই ভেবে। পরে সবাই যখন আমাকে বললো আমার এই কাজটির জন্য সবাই আমার প্রশংসা করছে তখন আর ভয় করেনি।
লেখাপড়ার পাশাপাশি নাঈমের সময় কাটে খেলাধুলা ও পুলিশের সঙ্গে। তার স্বপ্ন লেখাপড়া করে বড় পুলিশ অফিসার হয়ে জনগণের সেবা করা। পুলিশের সঙ্গে মেলামেশাটাও তার অনেক দিনের। গুলশান-১ ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। গত তিন বছর ধরে সে ওই ট্রাফিক বক্সে আসা যাওয়া করে। গুলশান এলাকার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক ইকবাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, নাঈমকে আমরা অনেক আগে থেকেই চিনি। আমাদের সঙ্গে প্রায়ই সময় কাটায়। আমরা যা খাই সে তা খায়। অনেক সময় দেখা যায়, সে নিজে থেকে আমাদের গাড়ি পরিষ্কার করে দেয়। দোকান থেকে কিছু আনার কথা বললে এনে দেয়। আবার পরিচিত যে কেউ কোনো কাজের জন্য বাসা বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে চলে যায়। ইকবাল হোসেন বলেন, নাঈম অনেক মিশুক প্রকৃতির।
এজন্য সবাই তাকে ভালোবাসে। তার মা নাজমা বেগমও আমাদের এখানে আসেন। তিনি আমাদের বলে দিয়েছেন আমরা কেউ যেন তাকে টাকা পয়সা না দেই। শুধু যেন লেখাপড়া করে এই উৎসাহ দেই। এরপর থেকে আমরা তাকে লেখাপড়ার কথাই বলি। আর বনানীর অগ্নিকাণ্ডের দিন সে যে কাজ করেছে এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার এমন মানবিক কাজের জন্য ধন্যবান নয় ভালোবাসাই দেয়া যায়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈমের মানবিক কাজ ও লেখাপড়া করে পুলিশ অফিসার হওয়ার ইচ্ছার কথা জেনে তার দায়িত্ব নিয়েছেন এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। ওমর ফারুক সামি নামের ওই প্রবাসীর বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জে। তিনি নাঈমকে পাঁচ হাজার ডলার ও লেখাপড়ার যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন। গতকাল এই প্রবাসী জানান, তিনি নাঈমের কাজে খুবই খুশি হয়েছেন। তিনি জেনেছেন সে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। তার স্বপ্ন পুলিশ অফিসার হওয়া। তাই তার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তিনি এ দায়িত্ব নিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে পাঁচ হাজার ডলার তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।
No comments