বন্ধ হচ্ছে না বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধ পাথর উত্তোলন by সাবিবুর রহমান সাবিব
মাটির
নিচে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হওয়ার জন্য ভূমিধস ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে
পড়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বেড়ে চললেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ
ড্রিল ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন। এসব মেশিন দিয়ে পাথর
উত্তোলন করে ইতিমধ্যে কেউ কেউ কোটিপতি ও কেউ কেউ লাখপতি হলেও অনেক এলাকা
ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পঞ্চগড় সদর উপজেলার কিছু এলাকা ও তেঁতুলিয়া উপজেলার
বহু এলাকায় ১০০ থেকে ১৫০ মিটার গভীর হাজার হাজার গর্তের সৃষ্টির পাশাপাশি
উন্মুক্ত ও অপরিকল্পিতভাবে পাথর তোলার জন্য শত শত একর জমি অনাবাদি হয়ে
পড়েছে। সহজে অর্থবিত্তশালী হওয়ার জন্য মেশিন মালিক ও অন্য সংশ্লিষ্টরা
পরিবেশ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠার কারণে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও
প্রকৃতিতে দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি এরই মধ্যে করতোয়া,
ডাহুকসহ কয়েকটি নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এক শ্রেণির অর্থলোভী ও সুযোগ
সন্ধানী লোকজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও পাথর বালু
সমিতির কিছু নেতাকর্মীর সহযোগিতায় ৩৫ থেকে ৪০ হর্সের ড্রেজার ও বোমা মেশিন
বিভিন্ন নদী, নদী তীরবর্তী এলাকা, সমতল খাসজমি ও ফসলি জমিসহ পুকুরে বসিয়ে
পাথর তুলছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার কিছু এলাকায় বিশেষ করে ডাহুক, সাও ও করতোয়া
নদীর বুক চিরে রাত ১১টা থেকে সকাল পর্যন্ত এমনকি কখনো দিনদুপুরেও চলছে
প্রায় ৩০০ ড্রিল ড্রেজার ও বোমা মেশিন। ভজনপুর থেকে শুরু করে কালিয়ামনি,
জয়গুণজোত, ঝালেঙ্গীগছ, শিবচন্ডি, ধান শুকা, পীরের ডাঙ্গা, আঠারো খাড়ি,
শিয়াল খাওয়া, শুকানী ইত্যাদি এলাকা এমনকি ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত করতোয়া ও
সাও নদীতে পাথর তোলা হচ্ছে। নিচু এলাকা ছাড়াও সিপাহীপাড়ার লিচুবাগান,
ভদ্রেশ্বর, ফকিরহাট, গোলান্দিগছ, গণাগছ, ঘগার খাল, কুকুরমুহা, শান্তিনগর,
কীর্তনপাড়া প্রভৃতি সীমান্ত এলাকার সমতল ভূমি থেকেও ড্রেজার দিয়ে পাথর তোলা
হচ্ছে।
অথচ সীমান্ত এলাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে সকল প্রকার পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নিকটস্থ বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাতে কোনো বাধা দিচ্ছেন না বলে এলাকার লোকজন অভিযোগ করে জানিয়েছে সারারাত উচ্চ শব্দে ড্রেজার চলার জন্য ওইসব এলাকার দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষেরা ঘুমাতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে ড্রিল ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটির গভীর থেকে পাথর উত্তোলন করায় তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় মাটির নিচে হাজার হাজার গর্ত তৈরি হয়েছে। ডাহুক, করতোয়াসহ কিছু নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ভূমিকম্পে ভূমিধস ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, এভাবে পাথর উত্তোলনে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। ওই জমিতে দীর্ঘদিন কোনো ফসল হবে না এমনকি বন্যায়ও তলিয়ে যেতে পারে এলাকাগুলো। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সময়ে সদর উপজেলার মীরগড়, সাতমেরা ও জিয়াবাড়ি এলাকায় বেশকিছু ড্রিল ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। এখনো কাকপাড়া, ভেলকুপাড়া ও প্রধানপাড়া এলাকার কয়েকটি স্থানে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র মতে, এক সময় যারা ড্রেজারের শ্রমিক ছিল তারাই এখন ড্রেজার মেশিনের মালিক। এদের পেছনে মূল ইন্ধনদাতা ও সিন্ডিকেটের মূল হোতা ভজনপুর এলাকার আবু বক্কর, গণাগছ এলাকার এসারুল ইসলাম ও শালবাহান এলাকার শেখ ফরিদ। এরা এখন কোটিপতি। অন্য সুবিধাভোগীরা হয়েছে লাখপতি। মেশিন চালুর আগে সন্ধ্যার পর ড্রেজার মালিকদের পুলিশের পক্ষে সবুজ সংকেত দেয়া হয়। স্থানীয় লাইনম্যানরা পুলিশসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করতে প্রতি রাতে মেশিনপ্রতি নেয় ৮ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৩০০ মেশিন থেকে এক রাতে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এ টাকা পরদিন সুবিধাভোগীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। বক্কর নামের এক সিন্ডিকেট নেতা নিজেই ছিল পাথর শ্রমিক। এখন সে কোটিপতি। তার রয়েছে আলিসান বাড়ি। এছাড়াও পাঁচটি ট্রাক্টর, নিজস্ব ওয়ার্কশপ ছাড়াও রয়েছে নামে বেনামে কয়েক কোটি টাকার জমি। ১০০টির বেশি ড্রেজারে তার শেয়ার রয়েছে। এখন সে নিজেই পরিচালনা করছে কোটি কোটি টাকার পাথর ব্যবসা। এসারুল এক সময় দিন মজুরের কাজ করতো। দুটি ট্রাক্টর, জমি, পাথরের ব্যবসাসহ এখন সে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। আর শেখ ফরিদও আগে ছিল শ্রমিক।
এভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ নানাভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ স্থানীয় মানুষ। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, প্রতিবাদী নাটক মঞ্চস্থ, সড়ক অবরোধ, ফেসবুকে প্রতিবাদসহ নানাভাবে প্রতিবাদ হয়েছে। তবুও বন্ধ হচ্ছিল না। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাগ্রত তেঁতুলিয়া’র উদ্যোগে ড্রেজার মেশিন বিরোধী ব্যাপক প্রতিবাদ চলে। এক পর্যায়ে তারা তেঁতুলিয়া চৌরাস্তায় সম্মিলিত প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়। তখন নড়েচড়ে উঠে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু পরে তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়ে।
জেলা পাথর বালু ব্যবসায়ী যৌথ ফেডারেশনের সভাপতি হাসিবুল হক প্রধান বলেন, আমরা ড্রেজার ও বোমা মেশিন বিরোধী। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ড্রেজার ও বোমা মেশিনের সঙ্গে যারা জড়িত ও সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা করে সম্প্রতি তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানিউল ফেরদৌস তালিকা পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তালিকাটি অসম্পূর্ণ। তালিকায় ড্রেজার বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের নাম দেয়া হয়নি। চুনোপুটিদের নাম দেয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
অথচ সীমান্ত এলাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে সকল প্রকার পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নিকটস্থ বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাতে কোনো বাধা দিচ্ছেন না বলে এলাকার লোকজন অভিযোগ করে জানিয়েছে সারারাত উচ্চ শব্দে ড্রেজার চলার জন্য ওইসব এলাকার দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষেরা ঘুমাতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে ড্রিল ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটির গভীর থেকে পাথর উত্তোলন করায় তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় মাটির নিচে হাজার হাজার গর্ত তৈরি হয়েছে। ডাহুক, করতোয়াসহ কিছু নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ভূমিকম্পে ভূমিধস ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, এভাবে পাথর উত্তোলনে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। ওই জমিতে দীর্ঘদিন কোনো ফসল হবে না এমনকি বন্যায়ও তলিয়ে যেতে পারে এলাকাগুলো। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সময়ে সদর উপজেলার মীরগড়, সাতমেরা ও জিয়াবাড়ি এলাকায় বেশকিছু ড্রিল ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। এখনো কাকপাড়া, ভেলকুপাড়া ও প্রধানপাড়া এলাকার কয়েকটি স্থানে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র মতে, এক সময় যারা ড্রেজারের শ্রমিক ছিল তারাই এখন ড্রেজার মেশিনের মালিক। এদের পেছনে মূল ইন্ধনদাতা ও সিন্ডিকেটের মূল হোতা ভজনপুর এলাকার আবু বক্কর, গণাগছ এলাকার এসারুল ইসলাম ও শালবাহান এলাকার শেখ ফরিদ। এরা এখন কোটিপতি। অন্য সুবিধাভোগীরা হয়েছে লাখপতি। মেশিন চালুর আগে সন্ধ্যার পর ড্রেজার মালিকদের পুলিশের পক্ষে সবুজ সংকেত দেয়া হয়। স্থানীয় লাইনম্যানরা পুলিশসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করতে প্রতি রাতে মেশিনপ্রতি নেয় ৮ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৩০০ মেশিন থেকে এক রাতে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এ টাকা পরদিন সুবিধাভোগীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। বক্কর নামের এক সিন্ডিকেট নেতা নিজেই ছিল পাথর শ্রমিক। এখন সে কোটিপতি। তার রয়েছে আলিসান বাড়ি। এছাড়াও পাঁচটি ট্রাক্টর, নিজস্ব ওয়ার্কশপ ছাড়াও রয়েছে নামে বেনামে কয়েক কোটি টাকার জমি। ১০০টির বেশি ড্রেজারে তার শেয়ার রয়েছে। এখন সে নিজেই পরিচালনা করছে কোটি কোটি টাকার পাথর ব্যবসা। এসারুল এক সময় দিন মজুরের কাজ করতো। দুটি ট্রাক্টর, জমি, পাথরের ব্যবসাসহ এখন সে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। আর শেখ ফরিদও আগে ছিল শ্রমিক।
এভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ নানাভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ স্থানীয় মানুষ। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, প্রতিবাদী নাটক মঞ্চস্থ, সড়ক অবরোধ, ফেসবুকে প্রতিবাদসহ নানাভাবে প্রতিবাদ হয়েছে। তবুও বন্ধ হচ্ছিল না। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাগ্রত তেঁতুলিয়া’র উদ্যোগে ড্রেজার মেশিন বিরোধী ব্যাপক প্রতিবাদ চলে। এক পর্যায়ে তারা তেঁতুলিয়া চৌরাস্তায় সম্মিলিত প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়। তখন নড়েচড়ে উঠে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু পরে তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়ে।
জেলা পাথর বালু ব্যবসায়ী যৌথ ফেডারেশনের সভাপতি হাসিবুল হক প্রধান বলেন, আমরা ড্রেজার ও বোমা মেশিন বিরোধী। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ড্রেজার ও বোমা মেশিনের সঙ্গে যারা জড়িত ও সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা করে সম্প্রতি তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানিউল ফেরদৌস তালিকা পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তালিকাটি অসম্পূর্ণ। তালিকায় ড্রেজার বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের নাম দেয়া হয়নি। চুনোপুটিদের নাম দেয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
No comments